গুম বাড়ছে বাংলাদেশে
প্রায় এক বছর আগে রাজধানীর বসুন্ধরা এলাকা
থেকে কালো পোশাক পরা কিছু লোক জোর করে তুলে নিয়ে যায় বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী
দলের (বিএনপি) স্থানীয় নেতা সাজেদুল ইসলাম সুমনকে। তার পর থেকে এখন
পর্যন্ত তিনি কোথায় আছেন কেউ জানে না। ঘটনার প্রত্যদর্শীরা বলেন, আধা
সামরিক বাহিনী র্যাবের পোশাক পরা কিছু লোক সুমন ও অন্য ছয়জনকে মাথা ঢেকে
জোর করে তাদের গাড়িতে তুলে নিয়ে যায়। এর মধ্যে ছিলেন সুমনের ঘনিষ্ঠ আত্মীয়
তানভির। তাদেরকে গাড়িতে তুলে নেয়ার পর পরই গাড়ি ঘটনাস্থল থেকে দ্রুত চলে
যায়। এ জন্য আন্তর্জাতিক মানবাধিকারবিষয়ক সংস্থা অ্যামনেস্টি
ইন্টারন্যাশনালের বাংলাদেশ গবেষক আব্বাস ফয়েজ বলেন, নিরাপত্তা রাকারীদের
বিষয়ে বাংলাদেশ সরকারকে সুদূরপ্রসারী ও কঠোর অবস্থান নিতে হবে। এসব মামলায়
তাদের জবাবদিহির যে অভাব রয়েছে তার ইতি ঘটাতে হবে। অপহৃত সাজেদুল ইসলাম
সুমনের ছোট বোন সানজিদা বলেন, ভাইয়াকে তুলে নেয়ার আধা ঘণ্টার মধ্যে আমার মা
ও পরিবারের অন্য সদস্যরা উত্তরায় র্যাব-১ অফিসে যান। কিন্তু সেখানকার
ডিউটি অফিসার এ ঘটনায় র্যাব জড়িত থাকার কথা অস্বীকার করেন। তিনি আরো বলেন,
সুমন কোথায় থাকতে পারেন সে বিষয়ে কোনো তথ্য নেই তাদের কাছে। ওই ঘটনার পর
অপহৃতদের কাউকেই আর দেখা যায়নি। ওই দিকে সুমন অপহরণের পর পরিবারের সদস্যরা
র্যাবের কাছে কোনো সদুত্তর না পেয়ে থানায় যান। সেখানেও তারা একই জবাব পান।
এমনকি তাদেরকে লিখিত অভিযোগ দিতেও দেয়া হয়নি।
গতকাল অনলাইন আল জাজিরায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এসব কথা বলা হয়। ‘ফোর্সড ডিজঅ্যাপেয়ারেনসেস সার্জ ইন বাংলাদেশ’ শীর্ষক এ প্রতিবেদনটির লেখক ডেভিড বার্গম্যান। এতে বলা হয়েছে, স্থানীয় মানবাধিকারবিষয়ক সংগঠন অধিকার-এর মতে গত দুই বছরে আইনপ্রয়োগকারী সংস্থাগুলো বাংলাদেশে অপহরণ করেছে ৭৫ জনকে। এর মধ্যে ২৮ জন অপহরণের পর ফিরে এসেছেন। ১২ জনকে পাওয়া গেছে মৃত অবস্থায়। বাকি ৩৫ জন এখনো নিখোঁজ। প্রত্যদর্শীরা এসব অপহরণের জন্য দায়ী করেছেন র্যাব অথবা পুলিশের গোয়েন্দা শাখাকে।
মানবাধিকারবিষয়ক সংগঠন আইন ও সালিস কেন্দ্রের মতে, আগের একই সময়ের তুলনায় গুম দ্বিগুণের চেয়ে বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে। এ বছরের এপ্রিলে শীতল্যা নদী থেকে উদ্ধার করা হয় সাতজনের লাশ। তাদেরকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছিল। এ ঘটনার চার দিন আগে তাদেরকে অপহরণ করেছিল র্যাবের কিছু সদস্য। এ ঘটনায় দেশজুড়ে তোলপাড় হয়। হাইকোর্টের বিরল হস্তেেপ র্যাবের ৯ সদস্য এখন আটক আছেন। তদন্ত চলছে পুলিশের। অধিকার-এর সম্পাদক আদিলুর রহমান খান বলেন, এমন গুমের সাথে পুলিশ বা অন্য কোনো তদন্তকারী সংস্থার যেকোনো রকম সম্পৃক্ততা অত্যন্ত অস্বাভাবিক। যেসব মানুষকে গুম করা হয়েছে তাদের বেশির ভাগই বিরোধী রাজনৈতিক দলের সাথে সক্রিয়ভাবে জড়িত। সাজেদুল ইসলাম সুমন ছিলেন ঢাকার শাহীনবাগ এলাকার বিএনপির একজন গুরুত্বপূর্ণ নেতা। তার বোন সানজিদা বিশ্বাস করেন, রাজনীতি করার কারণেই তার ভাইকে অপহরণ করা হয়েছে। নিজের এলাকায় সুমন ভালো একজন রাজনৈতিক সংগঠক ছিলেন। নিজেদের পরিবারের অবস্থা প্রকাশ করতে এমন গুমের শিকার পরিবারগুলো এখন একজোট হওয়ার চেষ্টা করছে। সুমনের মা এ জন্য নতুন একটি গ্রুপ গড়ে তোলার চেষ্টা করছেন। এর নাম দেয়া হয়েছে ‘মাদারস কল’ বা মায়ের ডাক। এ েেত্র সুমনের মাকে সহায়তা করছেন সানজিদা। যেসব ব্যক্তিকে আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার লোকজন অপহরণ করেছে তাদেরকে নিয়ে এ সংগঠন দাঁড় করানো হচ্ছে। ৬০ বছর বয়সী অবসরপ্রাপ্ত শিক রুহুল আমিন চৌধুরী। তার ছেলে আদনান চৌধুরীকে আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার কর্মকর্তারা জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তুলে নিয়ে যায়। এ ঘটনা ঘটে ২০১৩ সালের ৫ ডিসেম্বর। ওই দিন মধ্যরাতের দিকে শাহীনবাগের বাসা থেকে তাকে তুলে নেয়া হয়। তার বাড়িতে বেশ কিছু লোক প্রবেশ করে সে রাতে। এ সময় তাদের অনেকে ছিল সশস্ত্র। কারো কারো পরনে ছিল র্যাবের পোশাক। রুহুল আমিন চৌধুরী বলেন, তারা আমার কাছে জানতে চায় আমার ছেলের বেডরুম কোনটি। আমি তাদেরকে দেখিয়ে দিই। তারপর তারা আমাকে আমার রুমে বসতে বলে। তারা আমার টিনশেডের বাসার সব রুম তল্লাশি করে। তারা বলে, আমরা আদনানকে নিয়ে যাচ্ছি। সে পরদিন সকালে ফিরে আসবে। সুমনের মতো আদনানও বিএনপির রাজনীতির সাথে যুক্ত ছিলেন। সকালে আদনান ফিরে না এলে তার বাবা উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন। তিনি বলেন, এ সময় তিনি র্যাব কার্যালয়সহ বিভিন্ন আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার অফিসে, গোয়েন্দা অফিসে ও থানায় গেছেন। কিন্তু কেউই তাকে কোনো তথ্য দিতে পারেনি। রুহুল আমিন বলেন, কেউ আমার সন্তানের খোঁজ দিতে না পারায় আমি হতাশ হয়ে পড়ি। যখন আমি দেখেছি, এলাকার অন্য মানুষ দেখেছে কিভাবে আদনানকে নিয়ে যাওয়া হয়েছে তখন কিভাবে র্যাব ও অন্যরা মিথ্যা বলতে পারে? তারা তো আমার ছেলেকে ফেরত দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। তারা আমার সাথে প্রতারণা করেছে। উচ্চশিার জন্য মালয়েশিয়া যাওয়ার কথা ছিল আদনানের। ৫ ডিসেম্বর শুধু আদনানকেই নিয়ে যাওয়া হয়নি, বিএনপির আরেকজন সমর্থক কাওসার আহমেদকেও তুলে নেয়া হয়। তারপর থেকে তাদের কাউকেই আর দেখা যায়নি। এসব ঘটনায় জড়িত থাকার কথা অস্বীকার করেছে র্যাব। র্যাবের মিডিয়া ও লিগ্যাল উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার মুফতি মাহমুদ খান বলেন, এসব ঘটনায় র্যাব মোটেও জড়িত নয়। মানুষ বলতে পারে, তারা র্যাবের গাড়ি দেখেছে। কিন্তু ঘটনা তা নয়। যখন আমরা কাউকে আটক করি তাদেরকে আমরা আইনি পদপে নিতে তুলে দিই পুলিশের কাছে। এ মাসের শুরুর দিকে বাংলাদেশে গুম বৃদ্ধির নিন্দা জানিয়েছে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল। এ সংস্থার বাংলাদেশ গবেষক আব্বাস ফয়েজ বলেন, নিরাপত্তা রাকারীরা গুমের জন্য দায়ী থাকলেও তারা তা অস্বীকার করে। এটা একটি বিরক্তিকর প্রবণতা। বাংলাদেশে গুমের ঘটনার তদন্ত বিরল ঘটনা। যথারীতি পুলিশ মামলা নিতে অস্বীকৃতি জানায়। তবে মামলা তখনই নেয় যদি আদালত তদন্ত করার নির্দেশ দেন। তারপরও পুলিশ খুব সামান্যই তদন্ত করে।
গতকাল অনলাইন আল জাজিরায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এসব কথা বলা হয়। ‘ফোর্সড ডিজঅ্যাপেয়ারেনসেস সার্জ ইন বাংলাদেশ’ শীর্ষক এ প্রতিবেদনটির লেখক ডেভিড বার্গম্যান। এতে বলা হয়েছে, স্থানীয় মানবাধিকারবিষয়ক সংগঠন অধিকার-এর মতে গত দুই বছরে আইনপ্রয়োগকারী সংস্থাগুলো বাংলাদেশে অপহরণ করেছে ৭৫ জনকে। এর মধ্যে ২৮ জন অপহরণের পর ফিরে এসেছেন। ১২ জনকে পাওয়া গেছে মৃত অবস্থায়। বাকি ৩৫ জন এখনো নিখোঁজ। প্রত্যদর্শীরা এসব অপহরণের জন্য দায়ী করেছেন র্যাব অথবা পুলিশের গোয়েন্দা শাখাকে।
মানবাধিকারবিষয়ক সংগঠন আইন ও সালিস কেন্দ্রের মতে, আগের একই সময়ের তুলনায় গুম দ্বিগুণের চেয়ে বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে। এ বছরের এপ্রিলে শীতল্যা নদী থেকে উদ্ধার করা হয় সাতজনের লাশ। তাদেরকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছিল। এ ঘটনার চার দিন আগে তাদেরকে অপহরণ করেছিল র্যাবের কিছু সদস্য। এ ঘটনায় দেশজুড়ে তোলপাড় হয়। হাইকোর্টের বিরল হস্তেেপ র্যাবের ৯ সদস্য এখন আটক আছেন। তদন্ত চলছে পুলিশের। অধিকার-এর সম্পাদক আদিলুর রহমান খান বলেন, এমন গুমের সাথে পুলিশ বা অন্য কোনো তদন্তকারী সংস্থার যেকোনো রকম সম্পৃক্ততা অত্যন্ত অস্বাভাবিক। যেসব মানুষকে গুম করা হয়েছে তাদের বেশির ভাগই বিরোধী রাজনৈতিক দলের সাথে সক্রিয়ভাবে জড়িত। সাজেদুল ইসলাম সুমন ছিলেন ঢাকার শাহীনবাগ এলাকার বিএনপির একজন গুরুত্বপূর্ণ নেতা। তার বোন সানজিদা বিশ্বাস করেন, রাজনীতি করার কারণেই তার ভাইকে অপহরণ করা হয়েছে। নিজের এলাকায় সুমন ভালো একজন রাজনৈতিক সংগঠক ছিলেন। নিজেদের পরিবারের অবস্থা প্রকাশ করতে এমন গুমের শিকার পরিবারগুলো এখন একজোট হওয়ার চেষ্টা করছে। সুমনের মা এ জন্য নতুন একটি গ্রুপ গড়ে তোলার চেষ্টা করছেন। এর নাম দেয়া হয়েছে ‘মাদারস কল’ বা মায়ের ডাক। এ েেত্র সুমনের মাকে সহায়তা করছেন সানজিদা। যেসব ব্যক্তিকে আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার লোকজন অপহরণ করেছে তাদেরকে নিয়ে এ সংগঠন দাঁড় করানো হচ্ছে। ৬০ বছর বয়সী অবসরপ্রাপ্ত শিক রুহুল আমিন চৌধুরী। তার ছেলে আদনান চৌধুরীকে আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার কর্মকর্তারা জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তুলে নিয়ে যায়। এ ঘটনা ঘটে ২০১৩ সালের ৫ ডিসেম্বর। ওই দিন মধ্যরাতের দিকে শাহীনবাগের বাসা থেকে তাকে তুলে নেয়া হয়। তার বাড়িতে বেশ কিছু লোক প্রবেশ করে সে রাতে। এ সময় তাদের অনেকে ছিল সশস্ত্র। কারো কারো পরনে ছিল র্যাবের পোশাক। রুহুল আমিন চৌধুরী বলেন, তারা আমার কাছে জানতে চায় আমার ছেলের বেডরুম কোনটি। আমি তাদেরকে দেখিয়ে দিই। তারপর তারা আমাকে আমার রুমে বসতে বলে। তারা আমার টিনশেডের বাসার সব রুম তল্লাশি করে। তারা বলে, আমরা আদনানকে নিয়ে যাচ্ছি। সে পরদিন সকালে ফিরে আসবে। সুমনের মতো আদনানও বিএনপির রাজনীতির সাথে যুক্ত ছিলেন। সকালে আদনান ফিরে না এলে তার বাবা উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন। তিনি বলেন, এ সময় তিনি র্যাব কার্যালয়সহ বিভিন্ন আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার অফিসে, গোয়েন্দা অফিসে ও থানায় গেছেন। কিন্তু কেউই তাকে কোনো তথ্য দিতে পারেনি। রুহুল আমিন বলেন, কেউ আমার সন্তানের খোঁজ দিতে না পারায় আমি হতাশ হয়ে পড়ি। যখন আমি দেখেছি, এলাকার অন্য মানুষ দেখেছে কিভাবে আদনানকে নিয়ে যাওয়া হয়েছে তখন কিভাবে র্যাব ও অন্যরা মিথ্যা বলতে পারে? তারা তো আমার ছেলেকে ফেরত দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। তারা আমার সাথে প্রতারণা করেছে। উচ্চশিার জন্য মালয়েশিয়া যাওয়ার কথা ছিল আদনানের। ৫ ডিসেম্বর শুধু আদনানকেই নিয়ে যাওয়া হয়নি, বিএনপির আরেকজন সমর্থক কাওসার আহমেদকেও তুলে নেয়া হয়। তারপর থেকে তাদের কাউকেই আর দেখা যায়নি। এসব ঘটনায় জড়িত থাকার কথা অস্বীকার করেছে র্যাব। র্যাবের মিডিয়া ও লিগ্যাল উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার মুফতি মাহমুদ খান বলেন, এসব ঘটনায় র্যাব মোটেও জড়িত নয়। মানুষ বলতে পারে, তারা র্যাবের গাড়ি দেখেছে। কিন্তু ঘটনা তা নয়। যখন আমরা কাউকে আটক করি তাদেরকে আমরা আইনি পদপে নিতে তুলে দিই পুলিশের কাছে। এ মাসের শুরুর দিকে বাংলাদেশে গুম বৃদ্ধির নিন্দা জানিয়েছে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল। এ সংস্থার বাংলাদেশ গবেষক আব্বাস ফয়েজ বলেন, নিরাপত্তা রাকারীরা গুমের জন্য দায়ী থাকলেও তারা তা অস্বীকার করে। এটা একটি বিরক্তিকর প্রবণতা। বাংলাদেশে গুমের ঘটনার তদন্ত বিরল ঘটনা। যথারীতি পুলিশ মামলা নিতে অস্বীকৃতি জানায়। তবে মামলা তখনই নেয় যদি আদালত তদন্ত করার নির্দেশ দেন। তারপরও পুলিশ খুব সামান্যই তদন্ত করে।
No comments