সরকারের কথায় ও কাজে মিল থাকতে হবে- খালেদা জিয়া কি অন্তরীণ?
বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে অন্তরীণ রাখা হয়েছে কি না, সেই বিষয়ে সরকারের কাছ থেকে একটি আনুষ্ঠানিক ব্যাখ্যা প্রত্যাশিত।
সংসদীয়
গণতন্ত্রে বিরোধীদলীয় নেতাকে ছায়া প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দেখা হয় এবং তাঁকে
সেভাবেই দেখতে হবে। কোনো গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় পরিস্থিতি এমন হতে পারে না
যে গণতন্ত্র বাঁচাতে ছায়া প্রধানমন্ত্রীকে অঘোষিতভাবে অন্তরীণ করে রাখতে
হবে। সরকারের নীতিনির্ধারকেরা অহর্নিশ আপ্তবাক্য উচ্চারণ করেন যে আইনের
ঊর্ধ্বে কেউ নন। কিন্তু তাঁরা ভুলে যান, এর প্রবক্তাদের জন্যও কথাটি
পুরোপুরি সত্য।
যদি যুক্তি দেওয়া হয় যে বিনা অনুমতিতে আয়োজিত সমাবেশে যোগদানের অধিকার বিরোধী দলের নেতার ছিল না, তাহলেও এটা জনগণের চোখে প্রতীয়মান হতে হবে যে তাঁর প্রতি কেবল আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। কিন্তু বাস্তবতা তা নয়। গত ২৯ ডিসেম্বর থেকে বিরোধীদলীয় নেতার আইনগত অবস্থান কী, তা প্রশ্নের ঊর্ধ্বে নয়। এটা পরিহাসমূলক যে তাঁর অবস্থান প্রশ্নে উপযুক্ত সরকারি কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে ব্যাখ্যা না এলেও ক্ষমতাসীন দলের নেতা কিংবা মন্ত্রীদের কাছ থেকে সময়ে সময়ে অসামঞ্জস্যপূর্ণ মন্তব্য করা হচ্ছে।
বিএনপির তরফ থেকে খালেদা জিয়াকে গৃহবন্দী উল্লেখ করা হলেও তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু বলেছেন, তিনি গৃহবন্দী নন। তাঁর যুক্তি: ‘গৃহবন্দী করতে হলে প্রজ্ঞাপন জারি করতে হয়। এ ধরনের কিছু হয়নি।’ তাঁর কথায় মনে হবে, এই রাষ্ট্রে আইনের বাইরে কিছু ঘটে না। আবার পরিবেশ ও বনমন্ত্রী বলেছেন, খালেদা জিয়া নিজেই নিজেকে অন্তরীণ করে রেখেছেন। দুই মন্ত্রীর মন্তব্যে ফারাক আছে। যেকোনো নাগরিক তাঁর বাসায় স্বেচ্ছায় অবস্থান করলে তাঁকে কেউ নিজেকে অন্তরীণ রাখা বলে না। এ ক্ষেত্রে তথ্যমন্ত্রীর দাবি সত্য বলে মনে করা যেত, যদি বিরোধীদলীয় নেতার বাসার প্রধান ফটকের দুই পাশে বালুভর্তি ট্রাক নববর্ষের প্রথম দিনটিতেও না থাকত। উপরন্তু তাঁর সঙ্গে সাক্ষাতের পর বিএনপির নেতাদের আটকের ঘটনাও অভাবনীয়।
বিরোধী দলের নেতাকে কথিত শান্তি ও স্থিতির প্রতি হুমকি বিবেচনা করেই আইন এড়িয়ে বলপ্রয়োগ চলছে। তিনি কবে বাসা থেকে বের হতে পারেন, এমন প্রশ্নের জবাবে পুলিশের দায়িত্বপ্রাপ্ত একজন কর্মকর্তা বলেছেন, সেটা ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা জানেন। আবার এ কথাও সত্য, খালেদা জিয়া এমন ভাবমূর্তি গড়ে তুলেছেন, যে কারণে তাঁর বর্তমান অবস্থান নিয়ে জল্পনা-কল্পনা সৃষ্টি হওয়ার মতো সুযোগও তৈরি করে রাখা হয়েছে। গৃহবন্দী অবস্থাটি সংগঠনের আনুষ্ঠানিক বিবৃতিতেও দাবি করা হয়নি।
চার দিন পরে গতকাল অবশ্য স্পিকারের হস্তক্ষেপ চাওয়া হয়েছে। আজ দেখা করা হবে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে। স্পিকার স্বতঃপ্রণোদিত হয়েও এ বিষয়ে খোঁজ নিতে পারতেন, কিন্তু তিনি নেননি, এটাই বাস্তবতা। তবে খালেদা জিয়া অন্তরীণ নন, সেটা সরকারকে শুধু কথায় নয়, কাজেও প্রমাণ দিতে হবে।
No comments