সংস্কারের অপেক্ষায় ইয়েমেনের নারীরা
ইয়েমেন
খুবই রক্ষণশীল একটি দেশ। এখানকার সমাজে আদিবাসী ঐতিহ্যই বেশি অনুসৃত হয়।
আর দশটি রক্ষণশীল সমাজের মতোই ইয়েমেনে নারীদের উপস্থিতি প্রায় অদৃশ্য। দেশ,
সমাজ নিয়ে তাদের কোনো কথাই শোনা যায় না। রাজধানী সানার রাস্তায় অল্প কিছু
নারীর উপস্থিতি দেখা যায়। তাদের সবাই আপাদমস্তক বোরখায় আবৃত থাকেন। ২০১১
সালের সরকারবিরোধী বিক্ষোভের অগ্রভাগে কট্টর রক্ষণশীল ওই সমাজের নারীদের
সরব উপস্থিতি দেখা গেছে। আরব বসন্ত নাম পাওয়া ওই আন্দোলনের জেরে তৎকালীন
প্রেসিডেন্ট আলি আবদুল্লাহ সালেহ সরকারের পতন হয়। ইয়েমেনি নারীরাও বলছেন,
ওই আন্দোলনে তাদের উপস্থিতি ছিল ব্যতিক্রমী। ফাইজা আল সুলেইমানি নামের এক
নারী বলেন, 'ওই ঘটনা ছিল আমার জীবনের একটি টার্নিং পয়েন্ট।' ফাইজাও আর দশজন
ইয়েমেনি নারীর মতো। দুটি চোখ ছাড়া পুরো শরীর আবৃত তার। তারপরও ওই
আন্দোলনটি তার মতো হাজারো নারীর জন্য একটি টার্নিং পয়েন্ট হয়ে দেখা
দিয়েছিল। পরিবারের সম্মতি ছাড়াই রাস্তায় নেমেছিলেন ক্ষুব্ধ ফাইজা। এ জন্য
পরিবারের ক্ষোভের ঝড়-ঝাপটাও সামলাতে হয় তাকে। ফাইজা বলেন, 'রাস্তায়ও আমাকে
নিরাপত্তা বাহিনীর লাঠিপেটা সইতে হয়েছে।' তিনি বলেন, 'এটি আমাকে সত্যি
বিস্মিত করেছে। আমাদের সংস্কৃতিতে পুরুষরা কখনোই নারীদের প্রকাশ্যে আঘাত
করেন না। ফলে ওই ঘটনা যখন ঘটল, আমি বেশ ধাক্কা খেয়েছিলাম। যে লোকটি আমার
গাড়িতে উঠে পিটিয়েছিল, সে বলল, 'ফাইজা, তুমি যা করছ তা বন্ধ করাই ভালো
হবে।' কিন্তু আমি ছিলাম দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। আন্দোলনের সেই দিনগুলো নিয়ে অন্য
নারীর মতো ফাইজাও গর্বিত। আবার ওই নারীদের মতো এ নিয়ে হতাশাও রয়েছে তার।
তিনি বলেন, 'একবুক আশা নিয়ে আমরা এখানে (আন্দোলনে) এসেছিলাম। আমরা অনেক
ত্যাগও স্বীকার করেছি।' ফাইজা আরও বলেন, 'আমরা অনেক লোককে হারিয়েছি। আমার
ছয় বন্ধু এখানে জীবন দিয়েছে। তারা ইয়েমেনের জন্য, নিজের সন্তান ও পরিবারের
জন্য একটি সুন্দর স্বপ্ন দেখত। কিন্তু তা অর্জিত হয়নি। কিছুই পাল্টায়নি।'
ফাইজার হতাশার যথেষ্ট কারণ রয়েছে।
২০১১ সালের পর ইয়েমেনের পরিস্থিতি আরও খারাপের দিকে গেছে। বিশ্বব্যাংকের মতে, দেশটির তরুণ বেকারের সংখ্যা ৪০ শতাংশের মতো। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) হিসেবে ইয়েমেনের জনসংখ্যার প্রায় অর্ধেকই দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করে। প্রতি দুটির মধ্যে একটি শিশু অপুষ্টিতে ভোগে। ইয়েমেন টাইমস পত্রিকার সম্পাদক নাদিয়া সাকাফ বলেন, 'ইয়েমেনে জীবনযাত্রা সব সময়ই কঠিন। পরিবর্তনের এ সময়ে জীবন আরও কঠিন হয়েছে।' নারীদের জন্য পরিস্থিতি আরও কঠিন। বিশ্ব অর্থনীতি ফোরামের জরিপ অনুযায়ী, লিঙ্গীয় সমতার হিসেবে ইয়েমেন বিশ্বের সবচেয়ে বাজে দেশ। বেশিরভাগ নারীই সেখানে নিরক্ষর; অর্ধেকের বেশি নারীর বিয়ে হয় বয়স ১৮ বছরে পড়ার আগেই। ইয়েমেনের মানবাধিকারবিষয়ক মন্ত্রী হোরিয়া মাশহুর জানালেন, দেশটিতে ৯ থেকে ১১ বছর বয়সেই মেয়েদের বিয়ে হয়ে যায়। ১৪-১৫ বছর বয়সে তারা গর্ভধারণ করে। ফলে প্রসবকালীন মৃত্যুর ঘটনাও ঘটছে নিয়মিত। অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে বাসর রাতেই বালিকাবধূদের মৃত্যুর ঘটনাও দেশটিতে নতুন কিছু নয়। এসব বিয়ের বেশিরভাগই ঘটে দরিদ্র পরিবারে। অর্থনৈতিক সুবিধা পেতে পাত্রের বয়সও দেখা হয় না। সামাজিক বৈষম্য ও বঞ্চনাই ২০১১ সালে রক্ষণশীল সমাজের নারীদের রাস্তায় নেমে আসতে বাধ্য করেছিল। কিন্তু তাদের আশা পূরণ হয়নি। গোঁড়া সমাজে পরিবর্তনের গতি খুবই ধীর। হোরিয়া মাশহুরের মতে, রাজনৈতিক সদিচ্ছা থাকলে এসব সমস্যার খুব সহজেই সমাধান সম্ভব। ২০০৯ সালে মেয়েদের বিয়ের নূ্যনতম বয়স ১৭ বছর করার প্রস্তাব পার্লামেন্টে পাস হয়। কিন্তু ইসলামী আইনের লঙ্ঘনের অজুহাতে কট্টর এমপিদের বাধায় তা আইনে পরিণত হয়নি। হোরিয়া মাশহুর বলেন, 'এখানে অনেক রক্ষণশীল; এমনকি উগ্র এমপি আছেন, যাদের কারণে এ ধরনের আইন করা যায় না। তারা সংখ্যায় কম কিন্তু খুব প্রভাবশালী।'
২০১১ সালের পর ইয়েমেনের পরিস্থিতি আরও খারাপের দিকে গেছে। বিশ্বব্যাংকের মতে, দেশটির তরুণ বেকারের সংখ্যা ৪০ শতাংশের মতো। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) হিসেবে ইয়েমেনের জনসংখ্যার প্রায় অর্ধেকই দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করে। প্রতি দুটির মধ্যে একটি শিশু অপুষ্টিতে ভোগে। ইয়েমেন টাইমস পত্রিকার সম্পাদক নাদিয়া সাকাফ বলেন, 'ইয়েমেনে জীবনযাত্রা সব সময়ই কঠিন। পরিবর্তনের এ সময়ে জীবন আরও কঠিন হয়েছে।' নারীদের জন্য পরিস্থিতি আরও কঠিন। বিশ্ব অর্থনীতি ফোরামের জরিপ অনুযায়ী, লিঙ্গীয় সমতার হিসেবে ইয়েমেন বিশ্বের সবচেয়ে বাজে দেশ। বেশিরভাগ নারীই সেখানে নিরক্ষর; অর্ধেকের বেশি নারীর বিয়ে হয় বয়স ১৮ বছরে পড়ার আগেই। ইয়েমেনের মানবাধিকারবিষয়ক মন্ত্রী হোরিয়া মাশহুর জানালেন, দেশটিতে ৯ থেকে ১১ বছর বয়সেই মেয়েদের বিয়ে হয়ে যায়। ১৪-১৫ বছর বয়সে তারা গর্ভধারণ করে। ফলে প্রসবকালীন মৃত্যুর ঘটনাও ঘটছে নিয়মিত। অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে বাসর রাতেই বালিকাবধূদের মৃত্যুর ঘটনাও দেশটিতে নতুন কিছু নয়। এসব বিয়ের বেশিরভাগই ঘটে দরিদ্র পরিবারে। অর্থনৈতিক সুবিধা পেতে পাত্রের বয়সও দেখা হয় না। সামাজিক বৈষম্য ও বঞ্চনাই ২০১১ সালে রক্ষণশীল সমাজের নারীদের রাস্তায় নেমে আসতে বাধ্য করেছিল। কিন্তু তাদের আশা পূরণ হয়নি। গোঁড়া সমাজে পরিবর্তনের গতি খুবই ধীর। হোরিয়া মাশহুরের মতে, রাজনৈতিক সদিচ্ছা থাকলে এসব সমস্যার খুব সহজেই সমাধান সম্ভব। ২০০৯ সালে মেয়েদের বিয়ের নূ্যনতম বয়স ১৭ বছর করার প্রস্তাব পার্লামেন্টে পাস হয়। কিন্তু ইসলামী আইনের লঙ্ঘনের অজুহাতে কট্টর এমপিদের বাধায় তা আইনে পরিণত হয়নি। হোরিয়া মাশহুর বলেন, 'এখানে অনেক রক্ষণশীল; এমনকি উগ্র এমপি আছেন, যাদের কারণে এ ধরনের আইন করা যায় না। তারা সংখ্যায় কম কিন্তু খুব প্রভাবশালী।'
No comments