দুর্ভোগে সাধারণ মানুষ
বাংলাদেশের অর্থনীতিতে অনেক সূচক
উৎসাহব্যঞ্জক_ এমন খবরে সাধারণ মানুষ বা আম জনতার তেমন কিছু আসে যায় না।
জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার কতটা বেড়েছে, আমদানি-রফতানি বাণিজ্যের চিত্র কেমন,
রেমিট্যান্স প্রবাহ কী দাঁড়িয়েছে, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ পরিস্থিতি কেমন_
এসব খবর সব শ্রেণী ও পেশার মানুষের জীবনকেই প্রভাবিত করতে পারে। বিদ্যুৎ
উৎপাদনে রেকর্ড কিংবা শেয়ারবাজারে নতুন করে বিপর্যয়রোধে দৈনন্দিন লেনদেনের
সঙ্গে যুক্ত ব্রোকারদের আগের মতো ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে রাখা হবে না_ এসব
খবরকেও তাদের জন্য গুরুত্বহীন বলা যাবে না। কিন্তু সবকিছু ছাপিয়ে বেশিরভাগ
মানুষের কাছে প্রাধান্য পায় বাজারদর এবং নিত্যদিনের জীবনকে প্রভাবিত করার
মতো অর্থনৈতিক বিষয়াদি। খ্রিস্টীয় বছর ২০১৪ সালের শুরুর দিনে কনজুমারস
অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ বা ক্যাব জানিয়েছে_ বিদায়ী বছরে রাজধানীতে
পণ্যমূল্য বেড়েছে ১২ দশমিক ১৭ শতাংশ। এর প্রভাব প্রতিটি মানুষের জীবনে পড়তে
বাধ্য। তাদের রিপোর্টে দেশের অন্যান্য স্থানের তথ্য না থাকলেও বলা যায়,
সর্বত্রই কিন্তু জিনিসপত্রের দাম কমবেশি এ হারে বেড়েছে। আলোচিত বছরের
আরেকটি বিষয়ের প্রতি দৃষ্টি দিলে দেখা যাবে, দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির যে হার
তার চেয়েও বিপুলসংখ্যক নারী-পুরুষ বিশেষ করে জনগোষ্ঠীর ওপরে এর বিরূপ
প্রভাব অনুভূত হয়েছে অনেক বেশি। ২০১৩ সালে প্রায় বছরজুড়েই দেশে বিরাজ করেছে
রাজনৈতিক অস্থিরতা। হরতাল-অবরোধে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড দারুণভাবে
বিপর্যস্ত। কৃষকরা ধান-গম-সবজিসহ অন্যান্য পণ্য উৎপাদন করেছেন। কিন্তু
যোগাযোগ ব্যবস্থা বিঘি্নত হওয়ার কারণে ঠিকভাবে বাজারে পেঁৗছাতে পারেনি। ফলে
তারা অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। অন্যদিকে সরবরাহ ব্যবস্থা বিঘি্নত
হওয়ার কারণে ভোক্তারাও বেশি দাম দিয়ে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য কিনতে বাধ্য
হয়েছে। রাজনৈতিক কর্মসূচির কারণে বিপুলসংখ্যক শ্রমজীবী মানুষ তাদের
উপার্জনের অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়েছে। ফলে তাদের ক্রয়ক্ষমতা দারুণভাবে কমে
গেছে। এর বিরূপ প্রভাব পড়েছে উৎপাদক এবং পাইকারি ও খুচরা ব্যবসায়ীদের ওপর।
বিনিয়োগ কার্যক্রমেও আগ্রহ দেখা যায়নি উদ্যোক্তাদের। এ পথে চলা মানেই চরম
ঝুঁকি, সেটা বুঝতে অর্থনৈতিক বিশেষজ্ঞ হওয়ার দরকার নেই। নতুন বছরে
পরিস্থিতির উন্নতি ঘটবে, এমন আশা অন্তত এ মুহূর্তে করা যাচ্ছে না। বছরটি
শুরু হয়েছে বিরোধীদের ডাকা টানা অবরোধ কর্মসূচিতে। এ কর্মসূচিতে সাধারণ
মানুষের দিক থেকে তেমন সাড়া পরিলক্ষিত হচ্ছে না বটে, কিন্তু জনজীবন যে
যথেষ্টই বিপর্যস্ত সেটা কেউ অস্বীকার করতে পারবে না। ব্যবসায়ী ও শিল্পপতিরা
বারবার রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে সমঝোতার আহ্বান জানাচ্ছেন। হরতাল-অবরোধের
মতো কর্মনাশা কর্মসূচি না দিতে অনুরোধ করে চলেছেন। তারা সাদা পতাকা হাতে
রাজপথে নেমেছেন। সভা-সমাবেশ করছেন। সংবাদপত্র-টেলিভিশনে আকুতি জানাচ্ছেন।
কিন্তু তাতে সাড়া মিলছে না। আগামী রোববার দশম জাতীয় সংসদের নির্বাচন। অতীতে
নির্বাচন শেষ হলেই সার্বিক আর্থ-সামাজিক পরিস্থিতিতে স্বস্তি নেমে আসতে
দেখা গেছে। কিন্তু এবারে তেমনটি ঘটবে, সে আশাবাদ পোষণ করার মতো মানুষ খুব
বেশি মিলবে না। বরং সবার মনেই শঙ্কা_ কী জানি কী হতে চলেছে। এভাবে চলতে
থাকলে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড বিঘি্নত হতে থাকবে এবং এর প্রভাবে বিশেষভাবে
ক্ষতিগ্রস্ত হতে থাকবে নিম্ন ও মধ্যবিত্ত জনগোষ্ঠীর জীবন। বাংলাদেশ দ্রুত
মধ্য আয়ের দেশে পরিণত হতে চলেছে_ দেশ-বিদেশের অর্থনীতির পণ্ডিতদের এমন
সুন্দর কথা তাদের কাছে কোনোভাবেই অর্থবহ হবে না।
No comments