বিশ্বসেরা সাহিত্য সাময়িকী by অর্পিতা নুজহাত
সাহিত্য পত্রিকা বা সাময়িকী বৃহত্তর অর্থে
সাহিত্যের পর্যায়ক্রমিক বা ধারাবাহিক একটি প্রকাশনা। সাহিত্য সমালোচনা, বই
পর্যালোচনা, লেখকের জীবনী, সাক্ষাৎকার, গদ্য, ছোট গল্প, কবিতা ও প্রবন্ধ
প্রকাশসহ শিল্পকলা, সাহিত্য, দর্শন, রাজনীতি, সমাজচিন্তা ও নিরীক্ষামূলক
লেখালেখি প্রকাশ করা হয় সাহিত্য পত্রিকা বা সাময়িকীতে। সাহিত্য পত্রিকা
বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই অলাভজনক, কিন্তু এর পরিবর্তে বিভিন্ন ধরনের বড় ও
বাণিজ্যিক পত্রিকার সঙ্গে একটি বৈপরীত্য রয়েছে। এর মধ্যে বেশিরভাগই
অপ্রাতিষ্ঠানিক। দীর্ঘ সময় ধরে প্রকাশ হচ্ছে এমন কয়েকটি বিশ্ববিখ্যাত
সাহিত্য পত্রিকা নিয়ে আজকের আয়োজন। এমন আরও অনেক সাহিত্য পত্রিকা বা
সাময়িকী রয়েছে, যেগুলো নিয়ে স্বল্প পরিসরে আলোচনা সম্ভব নয়।
দ্য প্যারিস রিভিউwww.theparisreview.org
দ্য প্যারিস রিভিউ। বিশ্বজুড়ে খ্যাতি রয়েছে ত্রৈমাসিক এ ম্যাগাজিনটির। শিল্প-সাহিত্যের সব শাখাতেই বিচরণ এর। এটি প্রথম প্রকাশ হয় ১৯৫৩ সাল থেকে। ইংরেজি ভাষার এ পত্রিকাটি নিউইয়র্ক থেকে প্রকাশিত হচ্ছে। ওয়েবসাইট www.theparisreview.org। বর্তমানে এর সম্পাদক হচ্ছেন লরিন স্টেইন। বিশ্বের অন্যতম সেরা এ সাময়িকীটিতে লিখেছেন বিশ্বের বেশিরভাগ সেরা লেখক। কালে কালে প্যারিস রিভিউ নিজেকে বিশ্বের সেরা সাহিত্য ম্যাগাজিনগুলোর অন্যতম হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে।
জ্যাক কেরুয়াক। ফিলিপ লারকিন, ভিএস নাইপল, ফিলিপ রথ, আদ্রিয়ানো রিচ, ইতালো ক্যালভিনো, স্যামুয়েল বেকেট, নর্ডিন গর্ডিমার, জাঁ জ্যানেট রবার্ট ব্লাই থেকে শুরু করে বিশ্বের হালের উঠতি লেখকরা! কে লেখেননি এতে_ প্যারিস রিভিউর ধারাবাহিক পর্যালোচনাগুলো বিশ্বের বোদ্ধা ও পাঠক মহলে অত্যন্ত গুরুত্ব পেয়ে আসছে। এ ছাড়াও 'রাইটার্স অ্যাট ওয়ার্ক' সিরিজে এজরা পাউন্ড আর্নেস্ট হেমিংওয়ে, ট্রুম্যান ক্যাপোটি, জোয়ান ডিডিওন, টিএস ইলিয়ট, রালফ এলিসন, উইলিয়াম ফকনার, আরউইন শ, এলিজাবেথ বিশপ এবং ভ্লাদিমির নভোকভসহ বিশ্বের সেরা কবি-লেখকরা এ সিরিজে লিখেছেন। এই রিভিউ বিশ্বের সাংস্কৃতিক সংরক্ষণ ইতিহাসে একক সবচেয়ে ধারাবাহিক ও উল্লেখযোগ্য হিসেবে ধরা হয়।
প্যারিস রিভিউ প্রথম প্রকাশের সময় এক ঘোষণায় বলা হয়, প্যারিস রিভিউ সৃজনশীল কর্ম কথাসাহিত্য এবং কবিতার ওপর জোর দিয়ে থাকবে, তবে অবশ্যই সমালোচনা বাদ দিয়ে নয়। নিছক সমালোচনার জন্য সমালোচনা নয়। একটি ছোট্ট রুমে প্রথম পত্রিকাটির কাজ শুরু হয়। মজার বিষয় হচ্ছে, এর কর্মীদের কাউকে অফিসের চাবি দেওয়া হয়নি। তাই কেউ যদি দেরি করে আসতেন তবে তাকে কয়েক ধাপ দেয়াল বেয়ে উঠে জানালা দিয়ে প্রবেশ করতে হতো।
এর প্রথম প্রকাশক ছিলেন প্রিন্স সদরুদ্দিন আগা খান। রিভিউর প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক হিউমস মাতিসিঁ। অর্থ সংকটে ভাড়া বকেয়ার কারণে প্রায়ই অফিস পরিবর্তন করতে হতো তাদের। এ ছাড়া পানি, বিদ্যুৎ, টেলিফোনসহ বিভিন্ন সেবা বন্ধ করে দেওয়া তো ছিল প্রায় নিত্যঘটনা। প্যারিস থেকে এটি প্রথম যুক্তরাষ্ট্রে স্থানান্তর করা হয় ১৯৭৩ সালে। নিউইয়র্ক সিটির প্লিম্পটনের ৭২ স্ট্রিট অ্যাপার্টমেন্টের বেসমেন্ট ও প্রথম তলা তারা স্থায়ী প্রধান অফিস হিসেবে নেয়। ২০০৭ সালে নিউইয়র্ক টাইমসে এক নিবন্ধে দাবি করা হয় মাতিসি ছিলেন সিআইএর চর।
টাইম ম্যাগাজিন একে ইতিহাসের সেরা লিটল ম্যাগাজিন হিসেবে উল্লেখ করে। বুকার জয়ী লেখক মার্গারেট অ্যাটউড বলেন, ২০ শতকে সত্যিকারের হাতেগোনা কয়েকটি সাহিত্য পত্রিকার একটি দ্য প্যারিস রিভিউ। আর ২১ শতকে তো বটেই।
প্রথমদিকে যেসব কবি-লেখকের সাক্ষাৎকার ছাপে তারা, তার মধ্যে আছেন ডবি্লউএইচ অডেন, জন ব্যারিম্যান, সৌল নর্দন, হোর্হে লুইস বোরহেস, উইলিয়াম এস বারোজ, ট্রুম্যান ক্যাপোটি, জন শিভার, আইজাক ডিনেসেন, টিএস এলিয়ট, রবার্ট ফ্রস্ট, অ্যালেন গিন্সবার্গ, আর্নেস্ট হেমিংওয়ে, জ্যাক কেরুয়াক, হেনরি মিলার, ডরোথি পার্কার, হ্যারল্ড পিন্টার, এজরা পাউন্ড, আরউইনশ, জন আপডাইক, কার্ট ভনগার্ট উইলিয়াম, কার্লোস উইলিয়ামসসহ অনেকে।
সাম্প্রতিক সময়ে উডি অ্যালেন, মায়া অ্যাঞ্জেলু, জেমস বল্ডউইন এলিজাবেথ বিশপ, রে ব্রাডবুরি, জোসেফ ব্রডস্কি, রেমন্ড কার্ভার সিমাস হিনি, মিলান কুন্ডেরা, মারিও ভার্গাস য়োসা, গ্যাব্রিয়েল গার্সিয়া মার্কেজ, আর্থার মিলার, হারুকি মুরাকামি, ফিলিপ রথ, সালমান রুশদী, লিডিয়া ডেভিস উল্লেখযোগ্য।
হারপারস ম্যাগাজিনwww.harpers.org
শিল্প, সাহিত্য ও সংস্কৃতিবিষয়ক বিশ্বের অন্যতম মাসিক পত্রিকা হারপারস ম্যাগাজিন। এর সম্পাদক এলেন রোজেনবার্গ। ১৮৫০ সালে নিউইয়র্ক থেকে এটি যাত্রা শুরু করে। হারপার ম্যাগাজিন ফাউন্ডেশন থেকে এটি প্রকাশ করা হয়। হারপার বাজার হারপার কলিন্সেরসহ প্রতিষ্ঠান। এটি বর্তমানে ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হয়ে আসছে বিশ্বের এমন পত্রিকাগুলোর মধ্যে এটি দ্বিতীয় প্রাচীনতম। প্রথম সংখ্যায় এটি ছাপা হয় সাড়ে সাত হাজার কপি, যার সবই বিক্রি হয়ে যায়। ৬ মাসের মধ্যেই এর প্রচার সংখ্যা ৫০ হাজার ছাড়িয়ে যায়। হারপারের লেখকরা হচ্ছেন_ চার্লস বাউডেন, নোয়াম চমস্কি, উইনস্টন চার্চিল, স্টিফেন এ ডগলাস, রবার্ট ফ্রস্ট, শেইমুর হার্স, হেনরি জেমস, নাওমি ক্লেইন, জ্যাক লন্ডন, স্ট্যানলি মিলগ্র্যাম, জন স্টুয়ার্ট মিল, জন মুর, সিলভিয়া প্লাথ, থিওডোর রুজভেল্ট, জে ডি সালিঙ্গার, জেন স্মাইলি, জেডি স্মিথ, জন স্টেইনব্যাক, হেনরি এল খাজা, আলফ্রেড টমাস, সুসান স্ট্রেইট, সারা টিসডেল, হান্টার এস থম্পসন, মার্ক টোয়েন, রেবেকা কার্টিস, জন আপডাইক. কার্ট ভনগার্ট, ডেভিড ফস্টার ওয়ালেস, ই বি হোয়াইট, উড্রো উইলসন প্রমুখ।
নিউইয়র্কার ম্যাগাজিনww.newyorker.com/magazine
বিশ্বব্যাপী বহুল আলোচিত ম্যাগাজিন নিউইয়র্কার। বলা হয়ে থাকে, এটি বিশ্বের প্রথম সফল সাহিত্য ম্যাগাজিন। এটি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন হ্যারল্ড রস এবং জেইন গ্রান্টা দম্পতি। ১৯২৫ সাল থেকে প্রকাশিত এই সাহিত্য জার্নালটি পাঠকদের দিয়ে আসছে ভিন্ন স্বাদ। গত ৮ দশকে এই ম্যাগাজিনটিতে লিখেছেন ইবি হোয়াইট, ডরোথি পার্কার, উইলিয়াম বাটলার, ইয়েটস, জন শিভার, ভ্লাদিমির নভোকভের মতো বিখ্যাত লেখক। কার্টুন ছেপে বিশ্বব্যাপী বেশ কয়েকবার আলোড়ন সৃষ্টি করেছে নিউইয়র্কার। বর্তমানে পত্রিকাটির সম্পাদক রেমনিক। এর প্রচার সংখ্যা ১০ লাখের বেশি। সাহিত্যের সব শাখা ছোটগল্প, কবিতা, উপন্যাস, স্যাটায়ার, কার্টুনসহ সব ধরনের লেখা প্রকাশ করে নিউইয়র্কার। যদিও এর প্রাথমিক উদ্দেশ্য ছিল লেখকদের ভিন্ন স্বাদের হাস্যরসাত্মক লেখার মাধ্যমে সাহিত্য পাঠে আগ্রহী করে তোলা।
টিনহাউস ম্যাগাজিনwww.tinhouse.com
১৯৯৯ সালে প্রথম প্রকাশিত হয় ত্রৈমাসিক এই সাহিত্য পত্রিকাটি। বর্তমানে এর সম্পাদক জয় ম্যাককরমিক। টিন হাউস কথাসাহিত্য এবং কবিতা উভয় প্রকাশ করলেও বিখ্যাত লেখকদের অপ্রকাশিত লেখা প্রকাশে সক্রিয় ও গুরুত্বপূর্ণ একটি সাহিত্য পত্রিকা হিসেবে চিহ্নিত। এ ছাড়াও ব্যতিক্রমী ও উপেক্ষিত লেখকদের লেখা প্রকাশ করে পত্রিকাটি। ফলে স্বল্প সময়ের মধ্যে বেশ জনপ্রিয়তা লাভ করে এটি।
গ্রান্টাwww.granta.com
যুক্তরাজ্য থেকে প্রকাশিত সাহিত্য পত্রিকা গ্রান্টা। ১৮৮৯ সাল থেকে এটি ধারাবাহিকভাবে প্রকাশ করে আসছেন কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা। এখান থেকেই টেড হিউজেস, সিলভিয়া প্লাথ, স্টিভ স্মিথের মতো কবি-লেখক উঠে এসেছেন। ১৯৭০ সালে অর্থ সংকটের কারণে এটি বন্ধ হয়ে গেলেও আবার প্রকাশ শুরু হয় ১৯৭৯ সালে। ২০০৪ সালে এর প্রচার সংখ্যা ৪৭ হাজার ছাড়িয়ে যায়। গ্রান্টা তরুণ সাহিত্য পুরস্কার অত্যন্ত মর্যাদাপূর্ণ পুরস্কার হিসেবে প্রতিষ্ঠিত। রমেশ গুনসেকারা, বেল্গক মরিসন, অরুন্ধতী রায় এবং জেডি স্মিথ, হানিফ কুরেইশি, বেন ওকরিসহ অনেকেই এ পুরস্কার পেয়েছেন। এই ম্যাগাজিনটিতে লিখেছেন সালমান রুশদি, জুলিয়ান বার্নাস, মিলান কুন্দেরা, গ্যাব্রিয়েল গার্সিয়া মার্কেজ, এডমন্ড হোয়াইট, রেমন্ড কার্ভার, জর্জ স্টেনারসহ হালের বিখ্যাত লেখক।
দ্য আটলান্টিকwww.theatlantic.com/magazine
আমেরিকার বোস্টন থেকে প্রকাশিত সাহিত্য পত্রিকা দ্য আটলান্টিক। মাসিক পত্রিকাটি প্রথম প্রকাশিত হয় ১৮৫৭ সালে। গত দেড়শ' বছর ধরে সুনামের সঙ্গে কাজ করে আসছে আটলান্টিক। তবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এটিতে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে আন্তর্জাতিক রাজনীতি। বর্তমানে এর সম্পাদক জন বেনেট। আটলান্টিকের নিবন্ধনকৃত নিয়মিত ৪ লাখ পাঠক রয়েছে। এটিতে প্রকাশিত হয়েছে উইলিয়াম পার্কার, চার্লস চেসনাট, এমিলি ডিকেনসনের মতো লেখকদের লেখা। এ ছাড়া পত্রিকাটি ২০০১ সাল পর্যন্ত মার্ক টোয়েনের বিভিন্ন লেখা প্রকাশ করেছে। মার্টিন লুথার কিংয়ের আলোচিত 'সিভিল ডিজওবিডিয়েন্স' এবং 'লটার ফ্রম বার্মিংহাম জেল' প্রকাশ করেছে।
কিয়েটো জার্নাল www.kyotojournal.org
জাপানভিত্তিক এশিয়ার অন্যতম বৃহৎ সাহিত্য ম্যাগাজিন এটি। ত্রৈমাসিক এই পত্রিকাটি সর্বপ্রথম ১৯৮৬ সালে প্রকাশিত হয়। এটির স্লোগান হচ্ছে, 'লোকাল ভয়েস ফ্রম অল ওভার এশিয়া'। এতে মূলত এশিয়ার লেখদের লেখা প্রকাশিত হয়। ইংরেজি ভাষায় প্রকাশিত কিয়েটো জার্নালের বর্তমান সম্পাদক কেন রজার্স।
ন্যারেটিভ ম্যাগাজিনwww.narrativemagazine.com
২০০৩ সালে এটি প্রকাশ করেন ক্যারল এদগারিন। মূলত তরুণ অখ্যাত লেখকদের সুযোগ করে দিতেই এ ম্যাগাজিনটি বের করার পরিকল্পনা করেন তিনি। খুব অল্প সময়ের মধ্যে এটি জনপ্রিয়তা অর্জন করে। ন্যারেটিভ পুরোপুরি সাহিত্য পত্রিকা। প্রতি বছর সেরা ছোটগল্পকার, ঔপন্যাসিক এবং কবিতার ওপর পুরস্কার দিয়ে থাকে ন্যারেটিভ ম্যাগাজিন। মূলত তরুণদের লেখালেখিতেই বেশি আগ্রহ ম্যাগাজিনটির। বছরে তিনবার প্রকাশিত হয় ন্যারেটিভ। ইতিমধ্যেই বেশ কয়েকটি আলোচিত গল্প ছেপেছে এ ম্যাগাজিনটি।
কনজাংশনwww.conjunctions.com
যুক্তরাষ্ট্রের বার্ড কলেজ থেকে প্রকাশিত সাহিত্য পত্রিকা কনজাংশন। ১৯৮১ সাল থেকে এটি বছরে দু'বার প্রকাশিত হয়ে আসছে। এটি মূলত আমেরিকান সাহিত্যভিত্তিক পত্রিকা। এটিতে ফিকশন, উপন্যাস, ছোট গল্প, কবিতা, সমালোচনা প্রকাশিত হয়। বর্তমানে এর সম্পাদক ব্রাডফোর্ড মরো। এই ম্যাগাজিনটির তালিকাভুক্ত এক হাজার লেখক রয়েছেন, যার অধিকাংশ তরুণ। এটিতে লিখেছেন লিডিয়া ডেভিস, পল হুভার, জ্যাকব অ্যাপেল, ব্রেইন এভানসন, ডেভিড ফস্টার প্রমুখ বিখ্যাত লেখক।
এ ছাড়া উল্লেখযোগ্য সাহিত্য পত্রিকাগুলোর মধ্যে রয়েছে নিউ হ্যাম্পশায়ার থেকে প্রকাশিত নিউ ইংল্যান্ড রিভিউ। এটি ১৯৭৮ সাল থেকে প্রকাশিত হয়ে আসছে। আরও আছে জর্জিয়া রিভিউ, কেনিয়ন রিভিউ, ফাইভপয়েন্টস, থ্রিপেনি রিভিউ, ভার্জিনিয়া কোয়র্টালি রিভিউ, সাউদার্ন রিভিউ, গেটিসবার্গ রিভিউ, ইয়েল রিভিউ, সাউদার্ন রিভিউ, হাডসন রিভিউ, শিকাগো রিভিউ, আমেরিকান পোয়েট্রি রিভিউ, ম্যাসাচুসেটস রিভিউ। বোস্টন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রকাশিত হয় সাহিত্য পত্রিকা 'অগি্ন'। এ ছাড়া রয়েছে আলাস্কা রিভিউ। হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রকাশিত হয় হার্ভার্ড রিভিউ, অক্সফোর্ড থেকে অক্সফোর্ড রিভিউসহ বিশ্বখ্যাত বেশ কিছু সাহিত্য পত্রিকা।
দ্য প্যারিস রিভিউwww.theparisreview.org
দ্য প্যারিস রিভিউ। বিশ্বজুড়ে খ্যাতি রয়েছে ত্রৈমাসিক এ ম্যাগাজিনটির। শিল্প-সাহিত্যের সব শাখাতেই বিচরণ এর। এটি প্রথম প্রকাশ হয় ১৯৫৩ সাল থেকে। ইংরেজি ভাষার এ পত্রিকাটি নিউইয়র্ক থেকে প্রকাশিত হচ্ছে। ওয়েবসাইট www.theparisreview.org। বর্তমানে এর সম্পাদক হচ্ছেন লরিন স্টেইন। বিশ্বের অন্যতম সেরা এ সাময়িকীটিতে লিখেছেন বিশ্বের বেশিরভাগ সেরা লেখক। কালে কালে প্যারিস রিভিউ নিজেকে বিশ্বের সেরা সাহিত্য ম্যাগাজিনগুলোর অন্যতম হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে।
জ্যাক কেরুয়াক। ফিলিপ লারকিন, ভিএস নাইপল, ফিলিপ রথ, আদ্রিয়ানো রিচ, ইতালো ক্যালভিনো, স্যামুয়েল বেকেট, নর্ডিন গর্ডিমার, জাঁ জ্যানেট রবার্ট ব্লাই থেকে শুরু করে বিশ্বের হালের উঠতি লেখকরা! কে লেখেননি এতে_ প্যারিস রিভিউর ধারাবাহিক পর্যালোচনাগুলো বিশ্বের বোদ্ধা ও পাঠক মহলে অত্যন্ত গুরুত্ব পেয়ে আসছে। এ ছাড়াও 'রাইটার্স অ্যাট ওয়ার্ক' সিরিজে এজরা পাউন্ড আর্নেস্ট হেমিংওয়ে, ট্রুম্যান ক্যাপোটি, জোয়ান ডিডিওন, টিএস ইলিয়ট, রালফ এলিসন, উইলিয়াম ফকনার, আরউইন শ, এলিজাবেথ বিশপ এবং ভ্লাদিমির নভোকভসহ বিশ্বের সেরা কবি-লেখকরা এ সিরিজে লিখেছেন। এই রিভিউ বিশ্বের সাংস্কৃতিক সংরক্ষণ ইতিহাসে একক সবচেয়ে ধারাবাহিক ও উল্লেখযোগ্য হিসেবে ধরা হয়।
প্যারিস রিভিউ প্রথম প্রকাশের সময় এক ঘোষণায় বলা হয়, প্যারিস রিভিউ সৃজনশীল কর্ম কথাসাহিত্য এবং কবিতার ওপর জোর দিয়ে থাকবে, তবে অবশ্যই সমালোচনা বাদ দিয়ে নয়। নিছক সমালোচনার জন্য সমালোচনা নয়। একটি ছোট্ট রুমে প্রথম পত্রিকাটির কাজ শুরু হয়। মজার বিষয় হচ্ছে, এর কর্মীদের কাউকে অফিসের চাবি দেওয়া হয়নি। তাই কেউ যদি দেরি করে আসতেন তবে তাকে কয়েক ধাপ দেয়াল বেয়ে উঠে জানালা দিয়ে প্রবেশ করতে হতো।
এর প্রথম প্রকাশক ছিলেন প্রিন্স সদরুদ্দিন আগা খান। রিভিউর প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক হিউমস মাতিসিঁ। অর্থ সংকটে ভাড়া বকেয়ার কারণে প্রায়ই অফিস পরিবর্তন করতে হতো তাদের। এ ছাড়া পানি, বিদ্যুৎ, টেলিফোনসহ বিভিন্ন সেবা বন্ধ করে দেওয়া তো ছিল প্রায় নিত্যঘটনা। প্যারিস থেকে এটি প্রথম যুক্তরাষ্ট্রে স্থানান্তর করা হয় ১৯৭৩ সালে। নিউইয়র্ক সিটির প্লিম্পটনের ৭২ স্ট্রিট অ্যাপার্টমেন্টের বেসমেন্ট ও প্রথম তলা তারা স্থায়ী প্রধান অফিস হিসেবে নেয়। ২০০৭ সালে নিউইয়র্ক টাইমসে এক নিবন্ধে দাবি করা হয় মাতিসি ছিলেন সিআইএর চর।
টাইম ম্যাগাজিন একে ইতিহাসের সেরা লিটল ম্যাগাজিন হিসেবে উল্লেখ করে। বুকার জয়ী লেখক মার্গারেট অ্যাটউড বলেন, ২০ শতকে সত্যিকারের হাতেগোনা কয়েকটি সাহিত্য পত্রিকার একটি দ্য প্যারিস রিভিউ। আর ২১ শতকে তো বটেই।
প্রথমদিকে যেসব কবি-লেখকের সাক্ষাৎকার ছাপে তারা, তার মধ্যে আছেন ডবি্লউএইচ অডেন, জন ব্যারিম্যান, সৌল নর্দন, হোর্হে লুইস বোরহেস, উইলিয়াম এস বারোজ, ট্রুম্যান ক্যাপোটি, জন শিভার, আইজাক ডিনেসেন, টিএস এলিয়ট, রবার্ট ফ্রস্ট, অ্যালেন গিন্সবার্গ, আর্নেস্ট হেমিংওয়ে, জ্যাক কেরুয়াক, হেনরি মিলার, ডরোথি পার্কার, হ্যারল্ড পিন্টার, এজরা পাউন্ড, আরউইনশ, জন আপডাইক, কার্ট ভনগার্ট উইলিয়াম, কার্লোস উইলিয়ামসসহ অনেকে।
সাম্প্রতিক সময়ে উডি অ্যালেন, মায়া অ্যাঞ্জেলু, জেমস বল্ডউইন এলিজাবেথ বিশপ, রে ব্রাডবুরি, জোসেফ ব্রডস্কি, রেমন্ড কার্ভার সিমাস হিনি, মিলান কুন্ডেরা, মারিও ভার্গাস য়োসা, গ্যাব্রিয়েল গার্সিয়া মার্কেজ, আর্থার মিলার, হারুকি মুরাকামি, ফিলিপ রথ, সালমান রুশদী, লিডিয়া ডেভিস উল্লেখযোগ্য।
হারপারস ম্যাগাজিনwww.harpers.org
শিল্প, সাহিত্য ও সংস্কৃতিবিষয়ক বিশ্বের অন্যতম মাসিক পত্রিকা হারপারস ম্যাগাজিন। এর সম্পাদক এলেন রোজেনবার্গ। ১৮৫০ সালে নিউইয়র্ক থেকে এটি যাত্রা শুরু করে। হারপার ম্যাগাজিন ফাউন্ডেশন থেকে এটি প্রকাশ করা হয়। হারপার বাজার হারপার কলিন্সেরসহ প্রতিষ্ঠান। এটি বর্তমানে ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হয়ে আসছে বিশ্বের এমন পত্রিকাগুলোর মধ্যে এটি দ্বিতীয় প্রাচীনতম। প্রথম সংখ্যায় এটি ছাপা হয় সাড়ে সাত হাজার কপি, যার সবই বিক্রি হয়ে যায়। ৬ মাসের মধ্যেই এর প্রচার সংখ্যা ৫০ হাজার ছাড়িয়ে যায়। হারপারের লেখকরা হচ্ছেন_ চার্লস বাউডেন, নোয়াম চমস্কি, উইনস্টন চার্চিল, স্টিফেন এ ডগলাস, রবার্ট ফ্রস্ট, শেইমুর হার্স, হেনরি জেমস, নাওমি ক্লেইন, জ্যাক লন্ডন, স্ট্যানলি মিলগ্র্যাম, জন স্টুয়ার্ট মিল, জন মুর, সিলভিয়া প্লাথ, থিওডোর রুজভেল্ট, জে ডি সালিঙ্গার, জেন স্মাইলি, জেডি স্মিথ, জন স্টেইনব্যাক, হেনরি এল খাজা, আলফ্রেড টমাস, সুসান স্ট্রেইট, সারা টিসডেল, হান্টার এস থম্পসন, মার্ক টোয়েন, রেবেকা কার্টিস, জন আপডাইক. কার্ট ভনগার্ট, ডেভিড ফস্টার ওয়ালেস, ই বি হোয়াইট, উড্রো উইলসন প্রমুখ।
নিউইয়র্কার ম্যাগাজিনww.newyorker.com/magazine
বিশ্বব্যাপী বহুল আলোচিত ম্যাগাজিন নিউইয়র্কার। বলা হয়ে থাকে, এটি বিশ্বের প্রথম সফল সাহিত্য ম্যাগাজিন। এটি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন হ্যারল্ড রস এবং জেইন গ্রান্টা দম্পতি। ১৯২৫ সাল থেকে প্রকাশিত এই সাহিত্য জার্নালটি পাঠকদের দিয়ে আসছে ভিন্ন স্বাদ। গত ৮ দশকে এই ম্যাগাজিনটিতে লিখেছেন ইবি হোয়াইট, ডরোথি পার্কার, উইলিয়াম বাটলার, ইয়েটস, জন শিভার, ভ্লাদিমির নভোকভের মতো বিখ্যাত লেখক। কার্টুন ছেপে বিশ্বব্যাপী বেশ কয়েকবার আলোড়ন সৃষ্টি করেছে নিউইয়র্কার। বর্তমানে পত্রিকাটির সম্পাদক রেমনিক। এর প্রচার সংখ্যা ১০ লাখের বেশি। সাহিত্যের সব শাখা ছোটগল্প, কবিতা, উপন্যাস, স্যাটায়ার, কার্টুনসহ সব ধরনের লেখা প্রকাশ করে নিউইয়র্কার। যদিও এর প্রাথমিক উদ্দেশ্য ছিল লেখকদের ভিন্ন স্বাদের হাস্যরসাত্মক লেখার মাধ্যমে সাহিত্য পাঠে আগ্রহী করে তোলা।
টিনহাউস ম্যাগাজিনwww.tinhouse.com
১৯৯৯ সালে প্রথম প্রকাশিত হয় ত্রৈমাসিক এই সাহিত্য পত্রিকাটি। বর্তমানে এর সম্পাদক জয় ম্যাককরমিক। টিন হাউস কথাসাহিত্য এবং কবিতা উভয় প্রকাশ করলেও বিখ্যাত লেখকদের অপ্রকাশিত লেখা প্রকাশে সক্রিয় ও গুরুত্বপূর্ণ একটি সাহিত্য পত্রিকা হিসেবে চিহ্নিত। এ ছাড়াও ব্যতিক্রমী ও উপেক্ষিত লেখকদের লেখা প্রকাশ করে পত্রিকাটি। ফলে স্বল্প সময়ের মধ্যে বেশ জনপ্রিয়তা লাভ করে এটি।
গ্রান্টাwww.granta.com
যুক্তরাজ্য থেকে প্রকাশিত সাহিত্য পত্রিকা গ্রান্টা। ১৮৮৯ সাল থেকে এটি ধারাবাহিকভাবে প্রকাশ করে আসছেন কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা। এখান থেকেই টেড হিউজেস, সিলভিয়া প্লাথ, স্টিভ স্মিথের মতো কবি-লেখক উঠে এসেছেন। ১৯৭০ সালে অর্থ সংকটের কারণে এটি বন্ধ হয়ে গেলেও আবার প্রকাশ শুরু হয় ১৯৭৯ সালে। ২০০৪ সালে এর প্রচার সংখ্যা ৪৭ হাজার ছাড়িয়ে যায়। গ্রান্টা তরুণ সাহিত্য পুরস্কার অত্যন্ত মর্যাদাপূর্ণ পুরস্কার হিসেবে প্রতিষ্ঠিত। রমেশ গুনসেকারা, বেল্গক মরিসন, অরুন্ধতী রায় এবং জেডি স্মিথ, হানিফ কুরেইশি, বেন ওকরিসহ অনেকেই এ পুরস্কার পেয়েছেন। এই ম্যাগাজিনটিতে লিখেছেন সালমান রুশদি, জুলিয়ান বার্নাস, মিলান কুন্দেরা, গ্যাব্রিয়েল গার্সিয়া মার্কেজ, এডমন্ড হোয়াইট, রেমন্ড কার্ভার, জর্জ স্টেনারসহ হালের বিখ্যাত লেখক।
দ্য আটলান্টিকwww.theatlantic.com/magazine
আমেরিকার বোস্টন থেকে প্রকাশিত সাহিত্য পত্রিকা দ্য আটলান্টিক। মাসিক পত্রিকাটি প্রথম প্রকাশিত হয় ১৮৫৭ সালে। গত দেড়শ' বছর ধরে সুনামের সঙ্গে কাজ করে আসছে আটলান্টিক। তবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এটিতে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে আন্তর্জাতিক রাজনীতি। বর্তমানে এর সম্পাদক জন বেনেট। আটলান্টিকের নিবন্ধনকৃত নিয়মিত ৪ লাখ পাঠক রয়েছে। এটিতে প্রকাশিত হয়েছে উইলিয়াম পার্কার, চার্লস চেসনাট, এমিলি ডিকেনসনের মতো লেখকদের লেখা। এ ছাড়া পত্রিকাটি ২০০১ সাল পর্যন্ত মার্ক টোয়েনের বিভিন্ন লেখা প্রকাশ করেছে। মার্টিন লুথার কিংয়ের আলোচিত 'সিভিল ডিজওবিডিয়েন্স' এবং 'লটার ফ্রম বার্মিংহাম জেল' প্রকাশ করেছে।
কিয়েটো জার্নাল www.kyotojournal.org
জাপানভিত্তিক এশিয়ার অন্যতম বৃহৎ সাহিত্য ম্যাগাজিন এটি। ত্রৈমাসিক এই পত্রিকাটি সর্বপ্রথম ১৯৮৬ সালে প্রকাশিত হয়। এটির স্লোগান হচ্ছে, 'লোকাল ভয়েস ফ্রম অল ওভার এশিয়া'। এতে মূলত এশিয়ার লেখদের লেখা প্রকাশিত হয়। ইংরেজি ভাষায় প্রকাশিত কিয়েটো জার্নালের বর্তমান সম্পাদক কেন রজার্স।
ন্যারেটিভ ম্যাগাজিনwww.narrativemagazine.com
২০০৩ সালে এটি প্রকাশ করেন ক্যারল এদগারিন। মূলত তরুণ অখ্যাত লেখকদের সুযোগ করে দিতেই এ ম্যাগাজিনটি বের করার পরিকল্পনা করেন তিনি। খুব অল্প সময়ের মধ্যে এটি জনপ্রিয়তা অর্জন করে। ন্যারেটিভ পুরোপুরি সাহিত্য পত্রিকা। প্রতি বছর সেরা ছোটগল্পকার, ঔপন্যাসিক এবং কবিতার ওপর পুরস্কার দিয়ে থাকে ন্যারেটিভ ম্যাগাজিন। মূলত তরুণদের লেখালেখিতেই বেশি আগ্রহ ম্যাগাজিনটির। বছরে তিনবার প্রকাশিত হয় ন্যারেটিভ। ইতিমধ্যেই বেশ কয়েকটি আলোচিত গল্প ছেপেছে এ ম্যাগাজিনটি।
কনজাংশনwww.conjunctions.com
যুক্তরাষ্ট্রের বার্ড কলেজ থেকে প্রকাশিত সাহিত্য পত্রিকা কনজাংশন। ১৯৮১ সাল থেকে এটি বছরে দু'বার প্রকাশিত হয়ে আসছে। এটি মূলত আমেরিকান সাহিত্যভিত্তিক পত্রিকা। এটিতে ফিকশন, উপন্যাস, ছোট গল্প, কবিতা, সমালোচনা প্রকাশিত হয়। বর্তমানে এর সম্পাদক ব্রাডফোর্ড মরো। এই ম্যাগাজিনটির তালিকাভুক্ত এক হাজার লেখক রয়েছেন, যার অধিকাংশ তরুণ। এটিতে লিখেছেন লিডিয়া ডেভিস, পল হুভার, জ্যাকব অ্যাপেল, ব্রেইন এভানসন, ডেভিড ফস্টার প্রমুখ বিখ্যাত লেখক।
এ ছাড়া উল্লেখযোগ্য সাহিত্য পত্রিকাগুলোর মধ্যে রয়েছে নিউ হ্যাম্পশায়ার থেকে প্রকাশিত নিউ ইংল্যান্ড রিভিউ। এটি ১৯৭৮ সাল থেকে প্রকাশিত হয়ে আসছে। আরও আছে জর্জিয়া রিভিউ, কেনিয়ন রিভিউ, ফাইভপয়েন্টস, থ্রিপেনি রিভিউ, ভার্জিনিয়া কোয়র্টালি রিভিউ, সাউদার্ন রিভিউ, গেটিসবার্গ রিভিউ, ইয়েল রিভিউ, সাউদার্ন রিভিউ, হাডসন রিভিউ, শিকাগো রিভিউ, আমেরিকান পোয়েট্রি রিভিউ, ম্যাসাচুসেটস রিভিউ। বোস্টন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রকাশিত হয় সাহিত্য পত্রিকা 'অগি্ন'। এ ছাড়া রয়েছে আলাস্কা রিভিউ। হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রকাশিত হয় হার্ভার্ড রিভিউ, অক্সফোর্ড থেকে অক্সফোর্ড রিভিউসহ বিশ্বখ্যাত বেশ কিছু সাহিত্য পত্রিকা।
No comments