দোষীদের বিচার ও হাইকোর্ট বিধি কার্যকর হোক- সুপ্রিম কোর্ট চত্বরে সহিংসতা
বাংলাদেশে আইনের শাসন যে
প্রাতিষ্ঠানিকভাবেই মুখ থুবড়ে পড়েছে, তার প্রমাণ সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণে
অব্যাহত দলীয় অপতৎপরতা, যা সময়ে সময়ে সহিংস রূপ নিয়ে থাকে।
দুই
বিবদমান দলের সমর্থক আইনজীবী, যাঁরা এর আগে বহিরাগতদের সাহায্য ছাড়া
নিজেরাই ভাঙচুরে অংশ নিয়েছেন, প্রধান বিচারপতির দরজায় লাথি মেরেছেন, তাঁদের
আমরা পুরস্কৃত হতে দেখেছি।
২০০৬ সালে তৎকালীন প্রধান বিচারপতির একটি নজিরবিহীন আদেশের পর আওয়ামী লীগ-সমর্থক আইনজীবীদের বিরুদ্ধে আদালত চত্বরে তাণ্ডব চালানোর অভিযোগ ওঠে। এর প্রতিবাদে বিচারকেরা কর্মবিরতি পালন করেছিলেন। এবং বিস্ময়করভাবে ড. কামাল হোসেনসহ শীর্ষ আইনজীবীদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা দায়ের করা হয়েছিল। ওই মামলা ছিল নিঃসন্দেহে বিএনপি-সমর্থক মহলের হঠকারিতা। কিন্তু সহিংসতার সঙ্গে যুক্ত অপরাধীদের শাস্তি হোক, প্রকৃতপক্ষে তা কেউ চায়নি বললে অত্যুক্তি হবে না। দায়মুক্তির সংস্কৃতিটা আসলে উভয় দলের কাছেই উপভোগ্য। সুপ্রিম কোর্টের ভাবমূর্তি সমুন্নত রাখার প্রশ্নটিও দলীয় দৃষ্টিভঙ্গি থেকেই মূল্যায়ন করা হয়ে থাকে।
এবারের সন্ত্রাস ও কদর্যতা অবশ্য ২০০৬ সালকেও ছাড়িয়ে গেছে। সরকার-সমর্থক বহিরাগতদের বিরুদ্ধে একজন নারী আইনজীবীর ওপরও নিষ্ঠুর হামলা চালানোর অভিযোগ উঠেছে। একজন প্রবীণ আইনজীবী জনৈক বিচারকের বরাতে বলেছেন, সুপ্রিম কোর্টের জানাজা হয়ে গেছে। কিন্তু তা সত্ত্বেও দুই দলের সমর্থক আইনজীবী, যাঁরা সাধারণত আইনকানুনের প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণে দলবাজিতে লিপ্ত থাকেন, তাঁদের সঙ্গে সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসনের প্রথম বৈঠকটি ভেস্তে যাওয়ারই খবর মিলেছে।
৩১ ডিসেম্বরের বৈঠকে উভয় পক্ষের আইনজীবীরা সুপ্রিম কোর্ট অঙ্গনে মিছিল-সমাবেশ না করার অঙ্গীকার করেছিলেন মর্মে খবর বেরিয়েছিল। কিন্তু বিএনপিপন্থী আইনজীবীরা তা অস্বীকার করেছেন। বর্তমান সরকারের আমলে সংশোধিত হাইকোর্ট রুলসে মিছিল-সমাবেশ নিষিদ্ধ করা আছে, যদিও তা কোনো দলই মানে না। বিএনপির আমলে বিচারপতি এম এ মতিন আদালত চত্বরে মিটিং-মিছিল বেআইনি ঘোষণা করলে আওয়ামীপন্থী আইনজীবীরা প্রতিবাদে ফেটে পড়েছিলেন। পরে ওই রায় অমান্য করে চলতে দুই পক্ষের মধ্যে অলিখিত আঁতাত গড়ে ওঠে।
আমরা ২৯ ডিসেম্বরের ঘটনার সঙ্গে দায়ী ব্যক্তিদের দ্রুত বিচার এবং সুপ্রিম কোর্ট অঙ্গনে সভা-সমাবেশ নিষিদ্ধ করার বিধান কঠোরভাবে কার্যকর করার দাবি জানাই।
No comments