জাতীয়করণের মাশুল কতদিন!
নিবন্ধিত বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোর
জাতীয়করণ সংশ্লিষ্ট শিক্ষকদের মধ্যে ব্যাপক আশা ও উদ্দীপনা সৃষ্টি করেছিল
সন্দেহ নেই; কিন্তু গত চার মাস ধরে বেতন না পাওয়ায় তা কতখানি মিইয়ে গেছে
বৃহস্পতিবার সমকালে প্রকাশিত প্রতিবেদনে তা স্পষ্ট। বিপুলসংখ্যক প্রাথমিক
বিদ্যালয়ের লক্ষাধিক শিক্ষকের জাতীয়করণ সংক্রান্ত নথিপত্র প্রস্তুতে কিছুটা
সময় লাগবে অস্বীকার করা যায় না। রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতাও এ ক্ষেত্রে
বিবেচনায় নিতে হবে। জাতীয়করণের পর বেতন চালু প্রক্রিয়ায় চার মাসের
দীর্ঘসূত্রতা কোনোভাবে গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। এই বিড়ম্বনার সবচেয়ে
অমানবিক দিক হচ্ছে, তারা এমপিওভুক্ত শিক্ষক হিসেবে যে বেতন-ভাতা পেতেন, তাও
বন্ধ হয়ে গেছে। এর মধ্যে ঈদুল আজহা এবং দুর্গাপূজার সময় সবাই যখন উৎসব
পালন করেছে, এই শিক্ষকদের পরিবারচিত্র ছিল অশেষ কষ্টের। প্রাথমিক শিক্ষক
সমিতির সভাপতি সমকালকে যথার্থই বলেছেন যে, প্রাথমিক শিক্ষকদের যে বেতনক্রম
তাতে নুন আনতে পান্তা ফুরানোই স্বাভাবিক। তার ওপর যদি চার মাস বেতন না
থাকে, তাহলে কী অস্বাভাবিক পরিস্থিতি সৃষ্টি হয় সহজেই অনুমেয়। আমরা মনে
করি, মানুষ গড়ার সম্মানিত কারিগরদের ব্যাপারে কর্তৃপক্ষ দায়িত্বহীনতার
পরিচয় দিয়েছে। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব দায়সারাভাবে বলেছেন,
'সরকারি হওয়া এ শিক্ষকদের বেতন না পাওয়ার কোনো কারণ নেই।' জাতীয়করণের
সাড়ম্বর ঘোষণার পর লক্ষাধিক শিক্ষক বেতন-ভাতা না পাওয়ার বিষয়টি সম্পর্কে
তিনি ওয়াকিবহালই নন! বিপুলসংখ্যক প্রাথমিক বিদ্যালয় জাতীয়করণের ঘোষণা
নিঃসন্দেহে সরকারের সদিচ্ছার প্রমাণ। কিন্তু নীতিনির্ধারকের আন্তরিকতা যে
কারিগরি পর্যায়ে ঠিকমতো প্রতিফলিত হচ্ছে না, লক্ষাধিক শিক্ষকের মানবেতর
পরিস্থিতি তার প্রমাণ। প্রাথমিক শিক্ষার উন্নয়ন ছাড়াও এই পদক্ষেপের পেছনে
বর্তমান সরকারের নির্বাচনী হিসাব-নিকাশ রয়েছে, ধারণা করা যায়। কিন্তু এখন
পর্যন্ত যদি বেতন-ভাতার প্রশ্নেই স্থবিরতা থাকে, তাহলে এ ধরনের ঘোষণার
কাঙ্ক্ষিত ফল না-ও আসতে পারে। আমরা চাই, অবিলম্বে বিষয়টি খতিয়ে দেখা হোক।
তারও আগে সম্পন্ন করতে হবে বেতন-ভাতা সংক্রান্ত প্রক্রিয়াদি। জাতীয়করণের
মাশুল শিক্ষকরা ইতিমধ্যে চার মাস দিয়েছেন। এই দুর্ভোগ আর প্রলম্বিত করা
উচিত নয়।
No comments