জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম নিয়ে ইউজিসি’র ৫ দফা সুপারিশ by সোলায়মান তুষার
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম নিয়ে ৫ দফা সুপারিশ করেছে
বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)। ইউজিসি’র সর্বশেষ প্রতিবেদনে এ
সুপারিশ করা হয়। দেশের উচ্চশিক্ষা অর্জনের ক্ষেত্রে অন্যতম মাধ্যম হচ্ছে
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়।
স্নাতক পর্যায়ের মোট শিক্ষার্থীর প্রায় ৪৮ ভাগই জাতীয়
বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত কলেজে অধ্যয়নরত। তবে এ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে
ডিগ্রিপ্রাপ্ত স্নাতকদের গুণগত মান মোটেই আশানুরূপ নয়। অধিভুক্ত কলেজগুলোর
উচ্চশিক্ষা কার্যক্রমের সার্বিক অবস্থা উদ্বেগজনক বলে মনে করে ইউজিসি। এর
পরিপ্রেক্ষিতেই পাঁচ দফা সুপারিশ করা হয়। এগুলোর মধ্যে রয়েছে- জাতীয়
বিশ্ববিদ্যালয়কে একটি পরিপূর্ণ স্বায়ত্তশাসিত স্নাতকোত্তর
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে রূপান্তর করে সেখানে কেবল এমএস ও পিএইচডি পর্যায়ে শিক্ষা
কার্যক্রম চালু করা। এ ছাড়া ঢাকা বিভাগের স্নাতক পর্যায়ে শিক্ষা
প্রদানকারী কলেজগুলো জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত থাকবে। অন্য ছয়টি
বিভাগীয় শহরে একটি করে স্বায়ত্তশাসিত স্নাতকোত্তর বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা
করে ওই বিভাগের স্নাতক পর্যায়ে শিক্ষা প্রদানকারী কলেজগুলো অধিভুক্ত করা।
যেসব কলেজে উচ্চ মাধ্যমিক এবং স্নাতক উভয় পর্যায়ে শিক্ষা কার্যক্রম রয়েছে,
সেগুলোকে পৃথক দু’টি কলেজে রূপান্তরিত করতে বলা হয়েছে। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়
এবং বিভাগীয় নতুন বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়া কেবল কয়েকটি নির্বাচিত কলেজে
মাস্টার্স পর্যায়ে শিক্ষা কার্যক্রম সীমিত রাখা; মাস্টার্স পর্যায়ে ভর্তির
ক্ষেত্রে বিভিন্ন কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাস করা স্নাতকদের জন্য
উন্মুক্ত রাখা এবং প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার মাধ্যমে শিক্ষার্থী বাছাই করার
পদ্ধতি প্রবর্তন করার সুপারিশ করা হয়েছে। অধিভুক্ত কলেজগুলোর শিক্ষক
নিয়োগের দায়িত্ব বিভাগীয় বা জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়কে প্রদান করে এসব শিক্ষকের
চাকরির বিধিমালা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের অনুরূপ করার কথা বলা হয়েছে। দেশে
৩৪টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে। এর মধ্যে একমাত্র অ্যাফিলিয়েটিং
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হিসেবে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা
করে। বিশ্ববিদ্যালয়ে নিজস্ব কোন শিক্ষার্থী না থাকলেও এর অধীনে ২ হাজার
সাতটি অধিভুক্ত ও অঙ্গীভূত কলেজে ১২ লাখ ৬৮ হাজার ৪৫০ শিক্ষার্থী রয়েছে।
প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে অবস্থিত দু’ হাজারেরও
বেশি কলেজ সম্পর্কে খোঁজখবর রাখা জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষে একটি দুরূহ
কাজ। বিশ্ববিদ্যালয়ের সেশনজট বর্তমানে গুরুতর পর্যায়ে পৌঁছেছে। সেশনজট
নিরসনে বিশ্ববিদ্যালয় কার্যকর কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি। এ অবস্থা থেকে
উত্তরণে দেশের সাতটি বিভাগীয় শহরে আঞ্চলিক কেন্দ্র স্থাপন করে স্ব-স্ব
বিভাগের কলেজগুলোর শিক্ষাসংক্রান্ত কার্যক্রম তদারকির দায়িত্ব ওই সব
কেন্দ্রের ওপর অর্পণ করার উদ্যোগকে কমিশন স্বাগত জানিয়েছে। তবে শিক্ষার মান
উন্নয়নের জন্য কলেজগুলোর একাডেমিক মনিটরিং প্রয়োজন বলে মনে করে ইউজিসি। এ
ক্ষেত্রে শিক্ষক এবং গবেষণা-সংক্রান্ত জনবল নিয়োগ করে কেন্দ্রগুলোকে
পর্যায়ক্রমে স্বায়ত্তশাসিত বিশ্ববিদ্যালয়ে উন্নীত করা যেতে পারে।
উচ্চশিক্ষা কার্যক্রমের সার্বিক অবস্থায় ইউজিসি’র উদ্বেগের কারণ সম্পর্কে
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বেশির ভাগ কলেজে একাদশ শ্রেণী থেকে মাস্টার্স পর্যায়
পর্যন্ত শিক্ষা কার্যক্রম চালু রয়েছে। এতে শিক্ষা কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত
হচ্ছে। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় কেবল স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ে কারিকুলাম
প্রণয়ন এবং পরীক্ষার ব্যবস্থা করে। এ ছাড়া বেসরকারি কলেজগুলোর
গভর্নিংবডিতেও শিক্ষক নিয়োগের জন্য নির্বাচনী কমিটিতে প্রতিনিধি নিয়োগ করে।
সরকারি ও বেসরকারি কলেজের শিক্ষাকার্যক্রম তদারকি করার দায়িত্ব থাকলেও এটি
করা সম্ভব হচ্ছে না। শিক্ষক নিয়োগ, এক কলেজ থেকে অন্য কলেজে পোস্টিং
অর্থাৎ বদলি-সংক্রান্ত কর্মকাণ্ডে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের কোন ভূমিকা নেই।
এর ফলে শিক্ষার মান নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হচ্ছে না। ১৯৯২ সালে অ্যাফিলিয়েটিং
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হিসেবে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা হয়। পাবলিক
বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালিত হচ্ছে নিজস্ব আয়
থেকে। তারা ছাত্র ভর্তি থেকে শুরু করে ডিগ্রি প্রদান পর্যন্ত সব
কার্যক্রমের জন্য নির্ধারিত হারে ফি আদায় করে থাকে। বিশ্ববিদ্যালয়ের
২০১৩-১৪ অর্থবছরের বাজেটে উল্লেখ করা হয়েছে, আয় ১২৮ কোটি ৩৭ লাখ ৩৬ হাজার
টাকা এবং ব্যয় ১২৩ কোটি ৪৯ লাখ ৯১ হাজার টাকা। বিশ্ববিদ্যালয়ের রিজার্ভ
ফান্ডের রয়েছে, ৭০০ কোটি টাকার বেশি। এ ফান্ড থেকেও প্রতি অর্থবছরে বিপুল
আয় হয় বিশ্ববিদ্যালয়টির। ফলে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের বার্ষিক ব্যয়ের চেয়ে
আয়ের পরিমাণ বেশি হওয়ায় ১৯৯৭-৯৮ অর্থবছর থেকে কমিশন অনুন্নয়ন খাতে কোন অর্থ
বরাদ্দ দেয়া হয় না। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক হারুন-অর-রশিদ
বলেন, এ প্রতিষ্ঠানটিতে বহুমুখী সমস্যা রয়েছে। এর একটি সেশনজট। এ সমস্যার
সমাধান হলেই বাকি সমস্যা এমনিতেই কেটে যাবে। আমরা বেশ কিছু উদ্যোগ নিয়েছি।
তিনি বলেন, একদিনে সব সমস্যার সমাধান হবে না। এ জন্য সময় প্রয়োজন।
No comments