সরে গেছে বালুর ট্রাক এসেছে জলকামান
অবশেষে
'অবরুদ্ধ' বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার গুলশানের বাসভবনের সামনে
নিরাপত্তার চিত্র গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার পর থেকেই পাল্টে যায়। সন্ধ্যা
পৌনে ৭টার দিকে গুলশান-২-এর ৭৯ নম্বর সড়কে খালেদা জিয়ার বাসভবনের সামনের
সড়ক থেকে সরানো হলো বালুভর্তি দুটি ট্রাক। সেখানে আনা হলো পুলিশের জলকামান।
এখনও বাসভবনের পূর্ব পাশের সড়কে বালুভর্তি দুটি ট্রাক রয়েছে। আজ-কালের
মধ্যে এ ট্রাক দুটিও সরানো হবে বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন পুলিশের দায়িত্বশীল
কর্মকর্তারা। এরই মধ্যে খালেদা জিয়ার বাসার সামনে মোতায়েন পুলিশের সংখ্যাও
কমানো হয়েছে। গতকাল রাত সাড়ে ৮টার দিকে সেখানে জনাত্রিশেক পুলিশ সদস্য
দায়িত্ব পালন করছিলেন। স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর হস্তক্ষেপে দৃশ্যপটের
কিছুটা পরিবর্তন ঘটে।
গতকাল সকালে সংসদে বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়াকে 'গৃহবন্দি' দাবি করে তাকে মুক্ত করতে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর হস্তক্ষেপ কামনা করে বিএনপি সংসদীয় দল। স্পিকার পরে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট শামসুল হক টুকু ও পুলিশের মহাপরিদর্শক হাসান মাহমুদের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে কথা বলেন। এ সময় প্রতিমন্ত্রী স্পিকারকে জানান, বিরোধীদলীয় নেতা অন্তরীণ, আটক বা গৃহবন্দি নন। বিরোধীদলীয় নেতার নিরাপত্তার বিষয়টি সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়েই তার বাসভবনে এ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। সমকালকে প্রতিমন্ত্রী বলেছেন, বিরোধী নেতাকে জনরোষ থেকে রক্ষা করতে নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে। স্পিকার পুলিশের মহাপরিদর্শকের সঙ্গেও এ বিষয়ে কথা বলেন। পুলিশের মহাপরিদর্শক স্পিকারকে জানান, সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে নিরাপত্তার স্বার্থেই প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। এ ব্যাপারে আজ শুক্রবার বিকেল ৪টায় রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের সঙ্গেও সাক্ষাৎ করবে বিএনপির একটি প্রতিনিধি দল। বঙ্গভবন থেকে বিএনপিকে এ সময় দেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে। বিএনপি নেতৃত্বাধীন ১৮ দলীয় জোটের
গত ২৯ ডিসেম্বর ঢাকা অভিমুখে 'গণতন্ত্রের অভিযাত্রা' কর্মসূচির আগের দিন খালেদা জিয়ার বাসভবনের সামনে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বাড়ানো হয়। ঢাকা মহানগর পুলিশ বিএনপিকে কর্মসূচি পালনের অনুমতি দেয়নি। তার বাড়ির সামনে বসানো হয় নিরাপত্তা চেকপোস্ট। ওই রাত থেকেই বালুভর্তি দুটি ট্রাকও আড়াআড়িভাবে তার বাড়ির সামনে রাখা হয়েছিল। পরদিন আনা হয় আরও দুটি ট্রাক। দুই শতাধিক পুলিশ সদস্য খালেদা জিয়ার বাড়ির আশপাশে মোতায়েন করা হয়েছিল। এর পরও খালেদা জিয়া কর্মসূচিতে যোগ দিতে চাইলে 'নিরাপত্তা'র অজুহাত দেখিয়ে বাসভবন থেকে বের হতে দেওয়া হয়নি। কর্মসূচিকে ঘিরে খালেদা জিয়াকে 'অন্তরীণ' করে রাখা হয়। দলীয় নেতারা কেউ সাক্ষাৎ করতে না পারলেও বিদেশি কূটনীতিকরা খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করতে পেরেছেন। ইতিমধ্যে মার্কিন রাষ্ট্রদূত ড্যান ডবি্লউ মজীনা ও যুক্তরাজ্যের হাইকমিশনার রবার্ট গিবসন বাসায় গিয়ে খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন।
অন্তরীণ অবস্থার কারণে খালেদা জিয়া তার ছোট ভাই মরহুম মেজর (অব.) সাঈদ এস্কান্দারের ছোট ছেলে সাফিন এস্কান্দারের গায়ে হলুদ ও বিয়েতে অংশ নিতে পারেননি। গতকাল পর্যন্ত খালেদা জিয়া বাসভবন থেকে বের না হওয়া এবং নেতাকর্মীরা সাক্ষাৎ করতে না পারায় তার 'গৃহবন্দি'র প্রশ্নটি আরও ব্যাপকভাবে আলোচিত হচ্ছে।
এ পরিস্থিতিতে খালেদা জিয়া কি গৃহবন্দি, নাকি অন্তরীণ, না অবরুদ্ধ_ এ নিয়ে চলছে ব্যাপক জল্পনা-কল্পনা। বিএনপি বলছে, খালেদা জিয়াকে বাসায় গৃহবন্দি করে রাখা হয়েছে। তাদের এ বক্তব্য যথার্থ বলেই বেশিরভাগ মানুষ মনে করেন। তবে সরকারের মন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের নেতারা দাবি করে আসছেন, খালেদা জিয়া গৃহবন্দি নন। একই দাবি করলেন আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কর্মকর্তারাও।
ঢাকা মহানগর পুলিশের মুখপাত্র ডিসি মাসুদুর রহমান সমকালকে বলেন, খালেদা জিয়া গৃহবন্দি বা অবরুদ্ধ নন। তার বাসার সামনে 'নিরাপত্তা' জোরদার করা হয়েছে।
এলো জলকামান :গতকাল সন্ধ্যা সোয়া ৬টার দিকে হঠাৎ গুলশানে খালেদা জিয়ার বাসার সামনে থেকে বালুভর্তি দুটি ট্রাক সরানো হয়। এর পরই সেখানে নেওয়া হয় একটি জলকামান। পুলিশের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা সমকালকে বলেন, সন্ধ্যার পর খালেদা জিয়ার বাসার পাশের সড়কে কয়েকটি ককটেল বিস্ফোরিত হয়েছে। তাই নিরাপত্তা প্রস্তুতির অংশ হিসেবেই খালেদা জিয়ার বাসার সামনে জলকামান নেওয়া হয়েছে। পুলিশের একজন কর্মকর্তা বলেন, বিএনপির ডাকে সারাদেশে অনির্দিষ্টকালের জন্য অবরোধ কর্মসূচি চলছে। হরতাল-অবরোধে খালেদা জিয়া তার বাসা থেকে বের হন না। নিকট অতীতে বিএনপির কোনো কর্মসূচি না থাকায় ধীরে ধীরে তার বাড়ির সামনে নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও 'শিথিল' করা হতে পারে। তবে পরিস্থিতি অনুযায়ী যে কোনো সিদ্ধান্ত যে কোনো সময় পরিবর্তন হওয়ার সম্ভাবনা আছে।
ককটেল বিস্ফোরণ :এদিকে গতকাল খালেদা জিয়ার বাসভবনসংলগ্ন ৭০ নম্বর সড়কে চারটি ককটেল বিস্ফোরিত হয়েছে। সন্ধ্যা ৭টার দিকে এই বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। ককটেল বিস্ফোরণের পর পুলিশ ফাঁকা গুলি ছোড়ে। তবে তারা কাউকে আটক করতে পারেনি। খালেদা জিয়ার বাসার সামনে থেকে বালুভর্তি ট্রাক সরিয়ে নেওয়ার কিছু সময় পরই ওই ককটেলগুলো বিস্ফোরিত হয়।
ঢুকতে দেওয়া হয়নি জিয়া শিশু একাডেমির শিশুদের :প্রত্যক্ষদর্শী ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, গতকাল রাত ৮টার দিকে জিয়া শিশু একাডেমির চেয়ারম্যান হুমায়ুন কবিরের নেতৃত্বে সংগঠনটির ১৫/২০ শিশু খালেদা জিয়ার বাসার সামনে যায়। তারা নববর্ষ উপলক্ষে খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করতে চাইলে পুলিশি বাধার মুখে পড়ে। সেখানে কর্তব্যরত পুলিশ তাদের বলেন, 'আপনাদের গ্রেফতার করব না, আপনারা চলে যান।'
স্পিকারের কাছে স্মারকলিপি :খালেদা জিয়ার বাসার সামনে পুলিশি কড়াকড়ির বিষয়ে বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ জয়নুল আবদিন ফারুকের নেতৃত্বে গতকাল একটি সংসদীয় প্রতিনিধি দল স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর সঙ্গে দেখা করে তার হস্তক্ষেপ চায়। এ সময় স্পিকারের কাছে একটি স্মারকলিপি দেয় প্রতিনিধি দল। প্রতিনিধি দলের সদস্যরা বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়া অন্তরীণ বা অবরুদ্ধ কি-না_ স্পিকারের কাছে জানতে চান। স্পিকার এ বিষয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে কথা বলবেন বলে প্রতিনিধি দলকে আশ্বস্ত করেন। পরে স্পিকার পাবনায় অবস্থানরত স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শামসুল হক টুকুকে টেলিফোন করে বিষয়টি তুলে ধরেন। এ সময় প্রতিমন্ত্রী স্পিকারকে জানান, বিরোধীদলীয় নেতা অন্তরীণ, আটক বা গৃহবন্দি নন। বিরোধীদলীয় নেতার নিরাপত্তার বিষয়টি সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়েই তার বাসভবনে এ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।
স্পিকার পুলিশের মহাপরিদর্শকের সঙ্গেও এ বিষয়ে কথা বলেন। পুলিশের মহাপরিদর্শক স্পিকারকে জানান, নিরাপত্তার বিষয়টি আপেক্ষিক। তাই সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে নিরাপত্তার স্বার্থেই প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। স্পিকার আইজিপিকে বলেন, নিরাপত্তার বিষয়টি সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়া যাতে কোনো ধরনের অসুবিধার সম্মুখীন না হন, তা বিবেচনায় রাখতে হবে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী সমকালকে বলেন, 'স্পিকারের সঙ্গে কথা হয়েছে। তিনি বিরোধী দলের স্মারকলিপির বিষয় সম্পর্কে অবহিত করেছেন। আমরা পর্যালোচনা করছি।' তিনি উল্টো প্রশ্ন রেখে বলেন, অবরুদ্ধ হলে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের রাষ্ট্রদূতরা বিরোধীদলীয় নেতার সঙ্গে কীভাবে সাক্ষাৎ করলেন? প্রতিমন্ত্রী অভিযোগ করে বলেন, জনবিরোধী কর্মকাণ্ডের জন্য জনগণ বিরোধীদলীয় নেতার ওপর ক্ষুব্ধ। তাই জনরোষ থেকে সুরক্ষার জন্য তার বাড়ির আশপাশে কঠোর নিরাপত্তার ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
বৃহস্পতিবার আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ বলেছেন, বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়া অবরোধ ডেকে নিজে ঘরে বসে থাকেন। তাকে অবরুদ্ধ করে রাখার যে অভিযোগ করা হচ্ছে, তা সম্পূর্ণ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন। এর আগে বুধবার তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু বলেছেন, খালেদা জিয়াকে গৃহবন্দি করা হয়নি। গৃহবন্দি করতে হলে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। একই দিন পরিবেশ ও বনমন্ত্রী হাছান মাহমুদ বলেছেন, খালেদা জিয়া নিজেই নিজেকে অন্তরীণ করে রেখেছেন।
আইন বিশেষজ্ঞের বক্তব্য :জানতে চাইলে বিশিষ্ট আইনজীবী ড. শাহ্দীন মালিক সমকালকে বলেন, বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়া তার গুলশানের বাসা থেকে বের হতে পারছেন না। বারবার চেষ্টা করেও তিনি বের হতে পারেননি, এটা সবার কাছে পরিষ্কার। এখানে সরকার বিভিন্ন বিষয়ে উদ্ভট কথা বলে নিজেদের গ্রহণযোগ্যতা এবং সরকারের প্রতি জনগণের বিশ্বাস শূন্যের কোটায় নামিয়ে এনেছে। খালেদা জিয়া গৃহবন্দি নন_ এ কথাটা আরেকটি উদ্ভট বক্তব্য। বিশেষত, দেশবাসী টিভি ও বিভিন্ন পত্রিকায় দেখেছে যে খালেদা জিয়া বারবার চেষ্টা করেও তার বাসা থেকে বের হতে পারেননি।
হরতাল-অবরোধে বাসভবন থেকে বের হন না খালেদা :২৯ ডিসেম্বরের পর ৩০ ডিসেম্বর একই কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দিলেও খালেদা জিয়া আগের দিনের মতো বাসা থেকে বের হওয়ার চেষ্টা করেননি। এরপর অনির্দিষ্টকালের অবরোধ কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। দলীয় সূত্র জানায়, হরতাল বা অবরোধের সময় বাসা থেকে বের হন না খালেদা জিয়া। গত বুধবার থেকে শুরু হওয়া অনির্দিষ্টকালের অবরোধ শেষ না হওয়া পর্যন্ত খালেদা জিয়ার বাসা থেকে বের হওয়ার সম্ভাবনা নেই বলে জানিয়েছেন নেতারা। অতীতে এ ধরনের কর্মসূচি চলাকালে নিরাপত্তাজনিত কারণে খালেদা জিয়া বাসা থেকে বের হননি। জামায়াতে ইসলামীর হরতাল থাকায় খালেদা জিয়া ভারতের রাষ্ট্রপতির সঙ্গে পূর্বনির্ধারিত সাক্ষাৎ বাতিল করেছিলেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা টেলিফোনে খালেদা জিয়াকে গণভবনে যাওয়ার আমন্ত্রণ জানালে তিনি প্রধানমন্ত্রীকে বলেছিলেন, হরতালের কর্মসূচি শেষ হলে শরিকদের সঙ্গে আলাপ করে তিনি জানাবেন। হরতাল-অবরোধ ডাকলে গুলশানের বাসা থেকে তার কার্যালয়েও যান না খালেদা জিয়া। বাসায় গিয়ে দেখা করেন দলীয় নেতারা। অবশ্য কিছুদিন ধরে বিএনপি সমর্থক পেশাজীবী নেতারা ছাড়া দলের নেতারা খালেদা জিয়ার সঙ্গে বাসভবনে সাক্ষাৎ করতে পারছেন না।
খালেদার নিরাপত্তা নিয়ে বিএনপির উদ্বেগ :গুলশানে কয়েকটি হাতবোমার বিস্ফোরণ ঘটায় দলীয় চেয়ারপারসনের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। আওয়ামী লীগের 'দুষ্কৃতকারীরাই' ওই বোমার বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে দাবি করে দলীয়প্রধানের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ জানিয়ে বৃহস্পতিবার রাতে বিবৃতি পাঠিয়েছেন ফখরুল।
তিনি বলেন, বিরোধীদলীয় নেতার বাসভবন লক্ষ্য করে শত শত র্যাব-পুলিশ ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কড়া নজরদারির মধ্যে আওয়ামী দুষ্কৃতকারীরা কয়েকটি বোমা হামলার ঘটনা ঘটিয়েছে। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নাকের ডগার ওপর এরকম বোমা হামলার ঘটনা নিঃসন্দেহে জাতিকে স্তম্ভিত করেছে। এ ধরনের বোমা হামলার ঘটনার পর এখনও কোনো দুষ্কৃতকারী গ্রেফতার না হওয়া ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর নীরবতায় বিরোধীদলীয় নেতার নিরাপত্তা ও তার জীবনের চরম ঝুঁকি নিয়ে আমরা গভীরভাবে উদ্বিগ্ন ও উৎকণ্ঠিত।
ফখরুল বলেন, আমরা বলে দিতে চাই, এহেন কর্মকা ে উদ্ভূত যে কোনো পরিস্থিতির জন্য সরকারকেই সব দায়-দায়িত্ব বহন করতে হবে। এসব সন্ত্রাসী হামলা ও উস্কানিমূলক কর্মকা চালিয়ে চলমান আন্দোলনকে কোনোভাবেই ব্যর্থ করা যাবে না।
গতকাল সকালে সংসদে বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়াকে 'গৃহবন্দি' দাবি করে তাকে মুক্ত করতে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর হস্তক্ষেপ কামনা করে বিএনপি সংসদীয় দল। স্পিকার পরে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট শামসুল হক টুকু ও পুলিশের মহাপরিদর্শক হাসান মাহমুদের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে কথা বলেন। এ সময় প্রতিমন্ত্রী স্পিকারকে জানান, বিরোধীদলীয় নেতা অন্তরীণ, আটক বা গৃহবন্দি নন। বিরোধীদলীয় নেতার নিরাপত্তার বিষয়টি সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়েই তার বাসভবনে এ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। সমকালকে প্রতিমন্ত্রী বলেছেন, বিরোধী নেতাকে জনরোষ থেকে রক্ষা করতে নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে। স্পিকার পুলিশের মহাপরিদর্শকের সঙ্গেও এ বিষয়ে কথা বলেন। পুলিশের মহাপরিদর্শক স্পিকারকে জানান, সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে নিরাপত্তার স্বার্থেই প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। এ ব্যাপারে আজ শুক্রবার বিকেল ৪টায় রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের সঙ্গেও সাক্ষাৎ করবে বিএনপির একটি প্রতিনিধি দল। বঙ্গভবন থেকে বিএনপিকে এ সময় দেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে। বিএনপি নেতৃত্বাধীন ১৮ দলীয় জোটের
গত ২৯ ডিসেম্বর ঢাকা অভিমুখে 'গণতন্ত্রের অভিযাত্রা' কর্মসূচির আগের দিন খালেদা জিয়ার বাসভবনের সামনে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বাড়ানো হয়। ঢাকা মহানগর পুলিশ বিএনপিকে কর্মসূচি পালনের অনুমতি দেয়নি। তার বাড়ির সামনে বসানো হয় নিরাপত্তা চেকপোস্ট। ওই রাত থেকেই বালুভর্তি দুটি ট্রাকও আড়াআড়িভাবে তার বাড়ির সামনে রাখা হয়েছিল। পরদিন আনা হয় আরও দুটি ট্রাক। দুই শতাধিক পুলিশ সদস্য খালেদা জিয়ার বাড়ির আশপাশে মোতায়েন করা হয়েছিল। এর পরও খালেদা জিয়া কর্মসূচিতে যোগ দিতে চাইলে 'নিরাপত্তা'র অজুহাত দেখিয়ে বাসভবন থেকে বের হতে দেওয়া হয়নি। কর্মসূচিকে ঘিরে খালেদা জিয়াকে 'অন্তরীণ' করে রাখা হয়। দলীয় নেতারা কেউ সাক্ষাৎ করতে না পারলেও বিদেশি কূটনীতিকরা খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করতে পেরেছেন। ইতিমধ্যে মার্কিন রাষ্ট্রদূত ড্যান ডবি্লউ মজীনা ও যুক্তরাজ্যের হাইকমিশনার রবার্ট গিবসন বাসায় গিয়ে খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন।
অন্তরীণ অবস্থার কারণে খালেদা জিয়া তার ছোট ভাই মরহুম মেজর (অব.) সাঈদ এস্কান্দারের ছোট ছেলে সাফিন এস্কান্দারের গায়ে হলুদ ও বিয়েতে অংশ নিতে পারেননি। গতকাল পর্যন্ত খালেদা জিয়া বাসভবন থেকে বের না হওয়া এবং নেতাকর্মীরা সাক্ষাৎ করতে না পারায় তার 'গৃহবন্দি'র প্রশ্নটি আরও ব্যাপকভাবে আলোচিত হচ্ছে।
এ পরিস্থিতিতে খালেদা জিয়া কি গৃহবন্দি, নাকি অন্তরীণ, না অবরুদ্ধ_ এ নিয়ে চলছে ব্যাপক জল্পনা-কল্পনা। বিএনপি বলছে, খালেদা জিয়াকে বাসায় গৃহবন্দি করে রাখা হয়েছে। তাদের এ বক্তব্য যথার্থ বলেই বেশিরভাগ মানুষ মনে করেন। তবে সরকারের মন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের নেতারা দাবি করে আসছেন, খালেদা জিয়া গৃহবন্দি নন। একই দাবি করলেন আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কর্মকর্তারাও।
ঢাকা মহানগর পুলিশের মুখপাত্র ডিসি মাসুদুর রহমান সমকালকে বলেন, খালেদা জিয়া গৃহবন্দি বা অবরুদ্ধ নন। তার বাসার সামনে 'নিরাপত্তা' জোরদার করা হয়েছে।
এলো জলকামান :গতকাল সন্ধ্যা সোয়া ৬টার দিকে হঠাৎ গুলশানে খালেদা জিয়ার বাসার সামনে থেকে বালুভর্তি দুটি ট্রাক সরানো হয়। এর পরই সেখানে নেওয়া হয় একটি জলকামান। পুলিশের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা সমকালকে বলেন, সন্ধ্যার পর খালেদা জিয়ার বাসার পাশের সড়কে কয়েকটি ককটেল বিস্ফোরিত হয়েছে। তাই নিরাপত্তা প্রস্তুতির অংশ হিসেবেই খালেদা জিয়ার বাসার সামনে জলকামান নেওয়া হয়েছে। পুলিশের একজন কর্মকর্তা বলেন, বিএনপির ডাকে সারাদেশে অনির্দিষ্টকালের জন্য অবরোধ কর্মসূচি চলছে। হরতাল-অবরোধে খালেদা জিয়া তার বাসা থেকে বের হন না। নিকট অতীতে বিএনপির কোনো কর্মসূচি না থাকায় ধীরে ধীরে তার বাড়ির সামনে নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও 'শিথিল' করা হতে পারে। তবে পরিস্থিতি অনুযায়ী যে কোনো সিদ্ধান্ত যে কোনো সময় পরিবর্তন হওয়ার সম্ভাবনা আছে।
ককটেল বিস্ফোরণ :এদিকে গতকাল খালেদা জিয়ার বাসভবনসংলগ্ন ৭০ নম্বর সড়কে চারটি ককটেল বিস্ফোরিত হয়েছে। সন্ধ্যা ৭টার দিকে এই বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। ককটেল বিস্ফোরণের পর পুলিশ ফাঁকা গুলি ছোড়ে। তবে তারা কাউকে আটক করতে পারেনি। খালেদা জিয়ার বাসার সামনে থেকে বালুভর্তি ট্রাক সরিয়ে নেওয়ার কিছু সময় পরই ওই ককটেলগুলো বিস্ফোরিত হয়।
ঢুকতে দেওয়া হয়নি জিয়া শিশু একাডেমির শিশুদের :প্রত্যক্ষদর্শী ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, গতকাল রাত ৮টার দিকে জিয়া শিশু একাডেমির চেয়ারম্যান হুমায়ুন কবিরের নেতৃত্বে সংগঠনটির ১৫/২০ শিশু খালেদা জিয়ার বাসার সামনে যায়। তারা নববর্ষ উপলক্ষে খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করতে চাইলে পুলিশি বাধার মুখে পড়ে। সেখানে কর্তব্যরত পুলিশ তাদের বলেন, 'আপনাদের গ্রেফতার করব না, আপনারা চলে যান।'
স্পিকারের কাছে স্মারকলিপি :খালেদা জিয়ার বাসার সামনে পুলিশি কড়াকড়ির বিষয়ে বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ জয়নুল আবদিন ফারুকের নেতৃত্বে গতকাল একটি সংসদীয় প্রতিনিধি দল স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর সঙ্গে দেখা করে তার হস্তক্ষেপ চায়। এ সময় স্পিকারের কাছে একটি স্মারকলিপি দেয় প্রতিনিধি দল। প্রতিনিধি দলের সদস্যরা বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়া অন্তরীণ বা অবরুদ্ধ কি-না_ স্পিকারের কাছে জানতে চান। স্পিকার এ বিষয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে কথা বলবেন বলে প্রতিনিধি দলকে আশ্বস্ত করেন। পরে স্পিকার পাবনায় অবস্থানরত স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শামসুল হক টুকুকে টেলিফোন করে বিষয়টি তুলে ধরেন। এ সময় প্রতিমন্ত্রী স্পিকারকে জানান, বিরোধীদলীয় নেতা অন্তরীণ, আটক বা গৃহবন্দি নন। বিরোধীদলীয় নেতার নিরাপত্তার বিষয়টি সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়েই তার বাসভবনে এ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।
স্পিকার পুলিশের মহাপরিদর্শকের সঙ্গেও এ বিষয়ে কথা বলেন। পুলিশের মহাপরিদর্শক স্পিকারকে জানান, নিরাপত্তার বিষয়টি আপেক্ষিক। তাই সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে নিরাপত্তার স্বার্থেই প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। স্পিকার আইজিপিকে বলেন, নিরাপত্তার বিষয়টি সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়া যাতে কোনো ধরনের অসুবিধার সম্মুখীন না হন, তা বিবেচনায় রাখতে হবে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী সমকালকে বলেন, 'স্পিকারের সঙ্গে কথা হয়েছে। তিনি বিরোধী দলের স্মারকলিপির বিষয় সম্পর্কে অবহিত করেছেন। আমরা পর্যালোচনা করছি।' তিনি উল্টো প্রশ্ন রেখে বলেন, অবরুদ্ধ হলে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের রাষ্ট্রদূতরা বিরোধীদলীয় নেতার সঙ্গে কীভাবে সাক্ষাৎ করলেন? প্রতিমন্ত্রী অভিযোগ করে বলেন, জনবিরোধী কর্মকাণ্ডের জন্য জনগণ বিরোধীদলীয় নেতার ওপর ক্ষুব্ধ। তাই জনরোষ থেকে সুরক্ষার জন্য তার বাড়ির আশপাশে কঠোর নিরাপত্তার ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
বৃহস্পতিবার আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ বলেছেন, বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়া অবরোধ ডেকে নিজে ঘরে বসে থাকেন। তাকে অবরুদ্ধ করে রাখার যে অভিযোগ করা হচ্ছে, তা সম্পূর্ণ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন। এর আগে বুধবার তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু বলেছেন, খালেদা জিয়াকে গৃহবন্দি করা হয়নি। গৃহবন্দি করতে হলে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। একই দিন পরিবেশ ও বনমন্ত্রী হাছান মাহমুদ বলেছেন, খালেদা জিয়া নিজেই নিজেকে অন্তরীণ করে রেখেছেন।
আইন বিশেষজ্ঞের বক্তব্য :জানতে চাইলে বিশিষ্ট আইনজীবী ড. শাহ্দীন মালিক সমকালকে বলেন, বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়া তার গুলশানের বাসা থেকে বের হতে পারছেন না। বারবার চেষ্টা করেও তিনি বের হতে পারেননি, এটা সবার কাছে পরিষ্কার। এখানে সরকার বিভিন্ন বিষয়ে উদ্ভট কথা বলে নিজেদের গ্রহণযোগ্যতা এবং সরকারের প্রতি জনগণের বিশ্বাস শূন্যের কোটায় নামিয়ে এনেছে। খালেদা জিয়া গৃহবন্দি নন_ এ কথাটা আরেকটি উদ্ভট বক্তব্য। বিশেষত, দেশবাসী টিভি ও বিভিন্ন পত্রিকায় দেখেছে যে খালেদা জিয়া বারবার চেষ্টা করেও তার বাসা থেকে বের হতে পারেননি।
হরতাল-অবরোধে বাসভবন থেকে বের হন না খালেদা :২৯ ডিসেম্বরের পর ৩০ ডিসেম্বর একই কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দিলেও খালেদা জিয়া আগের দিনের মতো বাসা থেকে বের হওয়ার চেষ্টা করেননি। এরপর অনির্দিষ্টকালের অবরোধ কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। দলীয় সূত্র জানায়, হরতাল বা অবরোধের সময় বাসা থেকে বের হন না খালেদা জিয়া। গত বুধবার থেকে শুরু হওয়া অনির্দিষ্টকালের অবরোধ শেষ না হওয়া পর্যন্ত খালেদা জিয়ার বাসা থেকে বের হওয়ার সম্ভাবনা নেই বলে জানিয়েছেন নেতারা। অতীতে এ ধরনের কর্মসূচি চলাকালে নিরাপত্তাজনিত কারণে খালেদা জিয়া বাসা থেকে বের হননি। জামায়াতে ইসলামীর হরতাল থাকায় খালেদা জিয়া ভারতের রাষ্ট্রপতির সঙ্গে পূর্বনির্ধারিত সাক্ষাৎ বাতিল করেছিলেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা টেলিফোনে খালেদা জিয়াকে গণভবনে যাওয়ার আমন্ত্রণ জানালে তিনি প্রধানমন্ত্রীকে বলেছিলেন, হরতালের কর্মসূচি শেষ হলে শরিকদের সঙ্গে আলাপ করে তিনি জানাবেন। হরতাল-অবরোধ ডাকলে গুলশানের বাসা থেকে তার কার্যালয়েও যান না খালেদা জিয়া। বাসায় গিয়ে দেখা করেন দলীয় নেতারা। অবশ্য কিছুদিন ধরে বিএনপি সমর্থক পেশাজীবী নেতারা ছাড়া দলের নেতারা খালেদা জিয়ার সঙ্গে বাসভবনে সাক্ষাৎ করতে পারছেন না।
খালেদার নিরাপত্তা নিয়ে বিএনপির উদ্বেগ :গুলশানে কয়েকটি হাতবোমার বিস্ফোরণ ঘটায় দলীয় চেয়ারপারসনের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। আওয়ামী লীগের 'দুষ্কৃতকারীরাই' ওই বোমার বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে দাবি করে দলীয়প্রধানের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ জানিয়ে বৃহস্পতিবার রাতে বিবৃতি পাঠিয়েছেন ফখরুল।
তিনি বলেন, বিরোধীদলীয় নেতার বাসভবন লক্ষ্য করে শত শত র্যাব-পুলিশ ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কড়া নজরদারির মধ্যে আওয়ামী দুষ্কৃতকারীরা কয়েকটি বোমা হামলার ঘটনা ঘটিয়েছে। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নাকের ডগার ওপর এরকম বোমা হামলার ঘটনা নিঃসন্দেহে জাতিকে স্তম্ভিত করেছে। এ ধরনের বোমা হামলার ঘটনার পর এখনও কোনো দুষ্কৃতকারী গ্রেফতার না হওয়া ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর নীরবতায় বিরোধীদলীয় নেতার নিরাপত্তা ও তার জীবনের চরম ঝুঁকি নিয়ে আমরা গভীরভাবে উদ্বিগ্ন ও উৎকণ্ঠিত।
ফখরুল বলেন, আমরা বলে দিতে চাই, এহেন কর্মকা ে উদ্ভূত যে কোনো পরিস্থিতির জন্য সরকারকেই সব দায়-দায়িত্ব বহন করতে হবে। এসব সন্ত্রাসী হামলা ও উস্কানিমূলক কর্মকা চালিয়ে চলমান আন্দোলনকে কোনোভাবেই ব্যর্থ করা যাবে না।
No comments