এসো পড়া শিখি by বুলবুল চৌধুরী

প্যাকেজ নাটক প্রচলনের কয়েক বছর আগে বিটিভিতে জমা দেওয়ার লক্ষ্যে আমি 'চন্দ্রবরণ' নামে একটি নাটক লিখলেও শেষাবধি ওদিকে যাইনি। কেননা, ভেবেছিলাম, নিজেই এটির নির্দেশক হয়ে ভিডিও ক্যামেরায় চিত্রগ্রহণ সম্পন্ন করি না কেন। অতীতে চিত্রজগৎ ঘুরে চিত্রপরিচালনা-বিষয়ক কিছু শিক্ষা অবশ্য নিতে পেরেছিলাম। আজ ওই জ্ঞান দিয়ে সামনে এগুবার সাহস ধরলেও নাটক নির্মাণের প্রয়োজনে খরচপাতির হিসাবটা সর্বাগ্রে এসে যায়। তবে ওই খেয়ালে বন্ধুবর সালেহ আহমেদ টাকা ঢালতে রাজি হওয়ায় সমস্যা মেটানো গিয়েছিল। পরের ধাপে 'চন্দ্রবরণে'র নায়ক সুন্দর আলী গায়েনের চরিত্র রূপায়িত করার প্রস্তাব নিয়ে হুমায়ুন ফরীদির মুখোমুখি হয়েছিলাম। সব শুনে আমার আবেগে সাঁতার-ভাসা হয়ে তিনি জবাব দিয়েছিলেন, যান, আমি সুন্দর আলী গায়েন হয়ে গেলাম।
ইতিমধ্যে ঢাকা থিয়েটারের মঞ্চে এবং বিটিভির পর্দায় অভিনয় পারঙ্গমতা দিয়ে হুমায়ুন ফরীদি দর্শকের বিপুল সাড়া কুড়িয়েছেন। আমার নাটকে তার ঝোঁক পড়ায় ভারি আত্মপ্রত্যয়ী হয়ে উঠেছিলাম এই ভেবে যে, নিশ্চয় আমি 'চন্দ্রবরণে'র নাট্যরূপে উৎকর্ষের ছাপ টানতে পেরেছি। সেই উত্তেজনা নিয়ে নাটকটির আগুন মিস্ত্রির চরিত্রে আবুল খায়ের এবং চেয়ারম্যান চরিত্রে আলী যাকেরকে পেতে ছুট লাগিয়েছিলাম। তারা 'চন্দ্রবরণে' নিজেকে যুক্ত করবার আগ্রহ দেখালেন। অভিনেত্রী পান্নাও ভিড়লেন দলে। আর 'চন্দ্রবরণে'র নায়িকা চন্দ্রবানুর ভূমিকায় অবতীর্ণ হলেন ঢাকার বিভিন্ন মঞ্চে অভিনয় দিয়ে চলা মেয়ে রানী। মেকআপম্যান ধীরেন কর্মকারের বদৌলতে পুরান ঢাকার নাট্যদল 'মহানগর-৭৭'-এর ক'জন অভিনেতা-অভিনেত্রী কাছে পাওয়া গেল। কিন্তু শুটিংয়ে যাত্রা করার দু'দিন আগে হুমায়ুন ফরীদি বললেন, বুলবুল ভাই, আমি যে থাকতে পারছি না।
কারণ দর্শাতে গিয়ে তিনি জানালেন, সংসারে সবে আসা স্ত্রী সুবর্ণা মুস্তাফার ডাকে তাকে কলকাতা যেতে হচ্ছে। তবে আমার উদ্যোগে আন্তরিকতার প্রমাণ রাখতে তার জায়গায় ঢাকা থিয়েটারের অন্যতম অভিনেতা শহীদুজ্জামান সেলিমকে সুন্দর আলী গায়েনের চরিত্র রূপায়িত করার আদেশ দিয়েছেন।
স্বীকার করতেই হয়, ফরীদির আলাপে আমার রা অনেকখানি কমে এসেছিল। তবে সবাইকে নিয়ে গাজীপুরের বালিগাঁও গ্রামের পৈতৃক ভিটায় নাটকটির চিত্রায়ন শুরু হওয়ার ভেতর দিয়ে আমার কথা ফিরে এসেছিল। সেই সঙ্গে বলি, চরিত্র ফুটিয়ে তুলবার ক্ষেত্রে কুশীলবদের অসামান্য কিছু অভিব্যক্তি ধারণ করতে পারার আনন্দ আমাকে আপাদমস্তক মুড়ে নিয়েছিল। কিন্তু কাজ শেষে ঢাকায় ফিরে এডিটিং টেবিলে বসে হিসাব মেলাতে গিয়ে দেখি, রেকর্ডকৃত একটি ক্যাসেট খোয়া গেছে। এতে হতাশার ঘেরেই পুরোপুরি বন্দি হলাম আমি। এরই মাঝে বুঝলাম, 'চন্দ্রবরণে'র ঠিক ঠিক সমাপ্তি আনা গেলেও কোনো হল ভাড়া নিয়ে সেটি বড় পর্দায় প্রদর্শন করা যেত। তাতে দর্শক জোটাতে গিয়ে পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দেওয়া ছাড়াও চেনা মানুষদের কাছে টিকিট বিক্রির ব্যাপারটাও যে জড়িত আছে। এসবের বাইরেও নানা বাস্তবতা নজরে এনে নাটকটির অসমাপ্তিকেই আমি সমাপ্তি মেনে নিয়েছিলাম। আর সেই ব্যর্থতায় অনেকখানি আড়ালে সেঁধিয়েই গিয়েছিলাম বুঝি।
তারপর আসা যাক প্যাকেজ নাটক নির্মাণ শুরু হওয়ার শুরুতে আমার দ্বিতীয় প্রয়াস 'তিয়াস' প্রসঙ্গে। এটি আমি লিখেছিলাম গ্রাম থিয়েটারের সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন কবীর হিমুর অনুপ্রেরণায়। সেই খবর পেয়ে এতে প্রয়োজনীয় টাকা দিতে রাজি হলেন আমার মুদ্রণ ব্যবসার অংশীদার মানিক চৌধুরী। সঙ্গে সঙ্গেই হিমু ভাইকে নিয়ে নেমে পড়েছিলাম পাত্র-পাত্রী নির্বাচনের কাজে। এক পর্যায়ে ক'জন অভিনেতা-অভিনেত্রীর হাতে তুলে দেওয়া হয়েছিল 'তিয়াস' নাটকটির ফটোস্ট্যাট কপি। তাদের মধ্যে ছিল ঢাকা থিয়েটারের অভিনেতা পাখির নাম। তার কাছে থাকা 'তিয়াস' নাটকের ফটোস্ট্যাট কপি কে জানে, কী ভেবে সুবর্ণা মুস্তাফা পড়তে বসে গিয়েছিলেন। সেই সূত্র ধরে হিমু ভাইকে দিয়ে আমাকে নেওয়া হলো তার বাসায়। তিনি বললেন, বুলবুল ভাই, আপনার এই নাটকটা আমি পরিচালনা করতে চাই।
তা শুনে ভেবেছি, এমনটাই যেন হয় ঈশ্বর। পাশে পাশে প্রশ্ন করেছিলাম, আপনাকে নির্দেশনার জন্য কী সম্মানী দেব ম্যাডাম।
তার উত্তর ছিল, এক কানাকড়িও নয়।
কেন?
তিনি স্মিত হেসে জবাব দিয়েছিলেন, এটি আমার প্রথম পরিচালনা। তা দিয়ে আমি বড় সম্মানী মিলিয়ে নেব।
হুমায়ুন ফরীদি প্রবেশ করলেন দৃশ্যে। তিনি বললেন, 'চন্দ্রবরণে' না পারলেও আপনার 'তিয়াস' নাটকে আমি থাকব বুলবুল ভাই।
সুবর্ণা মুস্তাফার পরিচালনায় মাসখানেকের মাথায় নাটকটির চিত্রগ্রহণ সম্পন্ন করেছিলেন শফিকুল ইসলাম স্বপন। 'তিয়াসে'র নায়ক হলেন পাখি এবং নায়িকা হলেন মেঘনা। হুমায়ুন ফরীদি মাহি ভাইয়ের চরিত্র রূপায়িত করেছিলেন। অন্যান্য প্রয়োজনে সুবর্ণা মুস্তাফা ঢাকা থিয়েটারের অনেককেই সামনে এনেছিলেন। কিন্তু তার নির্মিত 'তিয়াস' নাটকটি নিয়ে পাঁচ বছর বিভিন্ন দুয়ার চষে বেড়ানো শেষে চ্যানেল আইয়ের স্বত্বাধিকারী ফরিদুর রেজা সাগরের বদান্যতায় মুক্তি পেয়েছিল। সে বছরই চ্যানেল আই এবং সাপ্তাহিক ২০০০ পত্রিকার বিবেচনায় এতে অভিনয় দিয়ে শ্রেষ্ঠ চরিত্রাভিনেতার স্বীকৃতি পেয়েছিলেন হুমায়ুন ফরীদি। নিজের দৌড় আজও কতটুকুই বা মাপতে পারছি! তবে প্রশ্ন জাগে, এ দেশে সুবর্ণা মুস্তাফার মতো গুণী অভিনেত্রী পরিচালিত নাটকটি চিহ্নিত করতে দেরি হওয়ার কীবা কারণ।
চিত্রসাংবাদিক হয়ে চিত্রজগৎ মাড়িয়ে যাওয়ার দিনগুলোয় কুশীলবদের নানা রকম-সকম জ্ঞাতে এসেছে। টিভি উপযোগী নাটক করতে গিয়েও যথেষ্ট জানলাম, শিখলাম। মাঝে বিটিভির প্রযোজক ভাগ্নে নূর মোহাম্মদ খানের ডাকে 'এসো পড়া শিখি' অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েও আমি এ-বিষয়ক অধিকতর শিক্ষা নিতে পেরেছিলাম। প্রতি সপ্তাহে একবার প্রচারিত অনুষ্ঠানটি তৈরি হতো গ্রামবাংলার অভাবী-সহজ অথচ কম শিক্ষিত এবং নিরক্ষর মানুষদের চিন্তা সামনে রেখে। কবি রফিক আজাদের স্ত্রী দিলারা হাফিজ তাতে শিক্ষিকা হয়ে বল্গ্যাক বোর্ডে বর্ণমালা লিখে শেখাতেন উপস্থিত নিরক্ষর কিছু বয়স্ক নারী-পুরুষকে। আর আমি লিখতাম দশ মিনিটের শিক্ষামূলক একখানা নাটিকা। এতে ভিড় জমাত অনেক অনেক অভিনেতা-অভিনেত্রী। এ ক্ষেত্রে বিটিভির নিয়মাবলি জানাতে গিয়ে প্রযোজক নূর মোহাম্মদ খান আমাকে আগেই সাবধান করেছিল, মামা, নাটকে কিন্তু দশের বেশি চরিত্র আনা যাবে না।
বুঝতে পারি, বেশি চরিত্র যুক্ত হলে সম্মানীর টাকা অনুষ্ঠানটির বাজেট ছাড়িয়ে যাওয়ার চিন্তাতেই কর্তৃপক্ষ এ নির্দেশ জারি করেছে। ফলে সেই ছক স্মরণে রেখে কাজটা সারতে হয়। লক্ষ্য করি, তাতে কুশীলবদের অনুরোধ সামলাবার ক্ষেত্রে বেশ খানিকটা ধকল যায় প্রযোজকের ওপর দিয়ে। কারণ হচ্ছে, ওই নাটিকাটির মাধ্যমে নিজেকে প্রকাশ করতে অনেক অভিনেতা-অভিনেত্রী প্রযোজকের সামনে জড়ো হতেন। অনেকে আবার প্রথম অভিনয়ে ঢুকবার আশায় ঘুরঘুর করতেন। প্রযোজকের মামা হওয়ায় দলের সবাই আমাকে মামা ডাকে কাছে টেনে নিয়েছিল। তারা সময়ে সময়ে আমাকেও ধরে বসত। প্রশ্ন করত, মামা, তোমার নাটকে কি আমার একটু জায়গা হবে না।
নিয়ম অনুযায়ী এখানে অডিশন দিয়ে উত্তীর্ণ হওয়া শিল্পীরাই শুধু নাটিকায় অংশ নিতে পারত। তবে তাদের বাইরেও অভিনয়ে পিপাসা মেটাতে আসা নানা মুখের আনাগোনা পরিলক্ষিত ছিল। বিটিভির নিয়ম ভেঙে আমি কিংবা প্রযোজক ওই দলের কাউকে অভিনয়ে জায়গা করে দিলে নিশ্চয়ই জবাবদিহিতার তল হতে হতো। তবে কি-না আমি এবং প্রযোজক তাদের অনেকের অনুরোধে সায় দিতে পেরেছিলাম। এই ক্ষেত্রে দু'জনের সম্মতিতে বিশেষ কৌশল প্রয়োগ করা হয়েছিল। সেটি এরকম : নাটিকার চরিত্র সংখ্যা আমরা দশ পেছনে ফেলে ষোলোর ঘরে নিয়ে ঠেকিয়েছিলাম। ওই সুযোগে নতুনদের ডেকে নেওয়ার পাশাপাশি বলে দিতাম, অভিনয় বাবদ সম্মানী কিন্তু মিলবে না।
আমাদের এরকম ব্যবস্থায় কর্তৃপক্ষের ঠিক চোখ ফেলবার ছিল না। কেননা, তাদের হিসাব মেলানোটাই হলো একমাত্র ব্যাপার-স্যাপার। তবে মাঝে ওইটুকু প্রাপ্তিতে নতুনদের মুখাবয়বে ঢলঢলে উদ্ভাস ছড়িয়ে পড়ত। আপন অনুভবও তাতে ক্ষণে ক্ষণে মাত্রা নিয়েছে।
'এসো পড়া শিখি' দলটির সঙ্গে আউটডোর শুটিং করতে দূর দূর গ্রামে হাজির হয়েছি। তাদের মামা ডাকে বড় আবেশও জন্মেছে। কিন্তু বছর দেড়েক বাদে বিটিভি ছাড়বার ঘটনায় দলটির সানি্নধ্য হারাই। কেননা, এ সময়ে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির বিপরীতমুখী অবস্থানের শিকার হতে হয়েছিল নূর মোহাম্মদ খানকে। পরিণতিতে 'এসো পড়া শিখি' অনুষ্ঠানটি প্রযোজনা তার হাত থেকে উঠিয়ে নেওয়া হয়েছিল।
তারপর মনে পড়ে, 'এসো পড়া শিখি'র নাটিকায় একবার অভিনয় করতে পারা মেয়ে মীরানার মুখ। বিটিভি ছেড়ে আসার বছরখানেক পর মালিবাগ মোড়ে ওর দেখা পেয়েছিলাম আমি। ডাকল, মামা, চলো, ওই তো সামনেই আমার বাসা।
মীরানার আহ্বানে দিয়েছিলাম সমর্পণ। একটা ফ্ল্যাটের দোতলায় থাকে ও। তালা খুলবার পর মেয়েটির ঘরে ঢুকতেই বিশেষ ধন্ধে নিপতিত হই। একি কাণ্ড ! ড্রইংরুমের সোফায় এক কিশোরী যে ঘুমে বিভোর। জিজ্ঞেস করি, কে রে!
আমার আত্মীয়।
খুব গরিব তো। তাই নিজের কাছে নিয়ে এসেছি।
ওকে তালা আটকে রাখিস বুঝি?
জবাব আসে, ওমা, তুমি কী বোকা মামা! যা দিনকাল_ কেউ এসে কলিংবেল টিপলে সেই আওয়াজে ও যদি দরজা খুলে দেয়!
আমাদের সাড়া পেয়ে কিশোরীটির ঘুম ভাঙে। ওকে চা বানাতে রান্নাঘরে পাঠিয়ে দিয়ে মীরানা বলেছিল, মামা, আমি কিন্তু বোম্বের ড্যান্স শিখেছি।
তাই নাকি?
হ্যাঁ, নায়িকা হতে যাচ্ছি তো।
চমকে তাকাই ওর দিকে। নায়িকার আসন পেতে চাইলে শরীরের গঠন, চেহারা, আচরণ এবং উচ্চারণে যেমন পরিশীলন থাকা দরকার, ঠিক তেমনটা নয় মীরানা। তাও বলি, খুবই খুশির খবর তো। আচ্ছা, কী নাম ছবির? কে-ইবা পরিচালক?
সেই জিজ্ঞাসার উত্তরে জেনেছিলাম মীরানার এক আপন ফুফা ছবি প্রযোজনায় নেমেছেন। তারই টাকায় কেনা হয়েছে ঘরের আসবাবপত্র। মাস অন্তে ফ্ল্যাট ভাড়ার টাকা পরিশোধ করা এবং খাওয়ার খরচ তিনিই জোগান দিয়ে আসছেন।
এ নিয়ে ওকে পরামর্শ দেওয়ার কী-ইবা ছিল আমার। তাই নীরব থেকেছি।
আপ্যায়ন পর্বে চায়ের কাপ মুখে তুলে নিতেই বাইরে দাঁড়ানো কেউ কলিংবেলে টিপ লাগিয়েছিল। মীরানা উঠে গিয়ে দরজা খুলে দিতেই দীর্ঘদেহী যেমন, তেমন মোটা এক প্রৌঢ় ভেতরে ঢুকে টানটান চোখে আমাকে দেখে নিয়েই অদৃশ্য হলেন ওপাশের বেডরুমে। ও ডাকল, মামা।
সঙ্গে সঙ্গেই প্রশ্ন করেছিলাম, কে রে মা।
উত্তরে জানা গেল, তিনি হচ্ছেন মীরানার সেই প্রযোজক ফুফা। এ সময় তার আসবার কথা ছিল না। তাও এসে পড়ায় এমন বিড়ম্বনা হলো। বিদায় বেলায় ও বলেছিল, মামা, বাসা তো চিনলে। আবার এসো কিন্তু।
আহ্বান সত্ত্বেও মীরানার দেখা পেতে আগ্রহী হইনি। তবে স্মরণের পর্দায় ওর হঠাৎ উঁকিঝুঁকি পরিদৃষ্ট থাকল। ওরকম চেয়ে চেয়ে বেড়ানোর ফলেই বুঝি সেদিন নিজের বইয়ের কাজে প্রকাশক তোফাজ্জল হোসেনের পুরানা পল্টনের অফিসে ঢুকবার মুখে মীরানার দেখা পেয়েছিলাম। বলল, মামা, তোমাকে যে কত মনে করি!
ওর আন্তরিকতায় মিশে যাওয়ার ইচ্ছায় জবাব দিয়েছিলাম, মারে, আমিও কি তোকে ভুলতে পারলাম? আয় আমার সঙ্গে। কিছু মুখে দিয়ে তবেই যেতে পারবি।
প্রকাশকের অফিসে বসাই মীরানাকে। জিজ্ঞেস করি, কেমন আছিস তুই।
উত্তরে জানতে পারি, কোনো ছবি প্রযোজনায় নামবার আগেই ওর ফুফা মারা যাওয়ার পর ও সংসার নিয়েছে। স্বামীর ঔরসে এক ছেলেও এসেছে কোলে।
প্রশ্ন তুলেছিলাম, এখনও কি অভিনয় করিস!
না মামা। তবে গান গেয়ে বেড়াই। লালনগীতি। শোনাই তোমাকে?
শোনা।
ও গেয়ে ওঠে, 'আমি কী তাই জানলে সাধন সিদ্ধি হয়/আমি শব্দ অর্থ ভারি/আমি তো আর আমি নয়...।'
গান ফুরোতেই বলি, সুর আছে রে মা তোর গলায়। দরদটাও ঢালতে পারিস। কই, আগে তো টের পাইনি!
মামা।
কী?
একদিন আসো না আমার বাসায়।
কোথায় থাকিস তুই?
সাভারে।
সেখানে যাবার ইচ্ছায় মীরানার ফোন নাম্বার টুকে নিয়েছি আমার মোবাইল সেটে। তবে এখন অবধি ওদিকে পা বাড়াতে না পারলেও মেয়েটিকে ঘিরে আমার দেখার সীমানা ব্যাপ্তই হলো আসলে। এতে ভাবতে পারি, আমরা বর্ণমালা দিয়েই 'এসো পড়া শিখি'র সূচনা করি। আবার জীবনের উত্তরণ ঘটানোর চর্চাও যে 'এসো পড়া শিখি'র মতো অন্যতর এক অধ্যায়।

No comments

Powered by Blogger.