সংঘাতময় ১০টি অঞ্চল by আদনান মনোয়ার হুসাইন
বিগত
বছরের জঞ্জাল পেছনে ফেলে নতুন বছরকে বরণ করে নেওয়ার রেওয়াজ রয়েছে
বিশ্বজুড়েই; কিন্তু চাইলেই তো আর পুরনো ঝঞ্ঝাটকে ক্যালেন্ডারের পাতার মতো
পালটে দেওয়া যায় না। মাত্র তিন দিন আগে বিদায় নেওয়া ২০১৩ সালের অনেক
দ্বন্দ্ব-সংঘাত চলতি বছরও বিশ্বমঞ্চে থেকে যাবে_ আমরা চাই বা না চাই।
দ্বন্দ্ব বা সহিংসতা নিরসনে বা প্রতিরোধে গত বছর খুব বেশি সাফল্য পাওয়া
যায়নি। তার পরও এ বছর কিছু ক্ষেত্রে আশাবাদী হওয়াই যায়। কলম্বিয়া তার
গৃহযুদ্ধ নিরসনের প্রায় কাছাকাছি চলে এসেছে। মিয়ানমারও তার জাতিগত সংঘাত
নিরসনে আপ্রাণ চেষ্টা করছে। ইরানের পরমাণু কর্মসূচি নিয়ে একটি চুক্তি হওয়ায়
এ উত্তেজনারও একটি শান্তিপূর্ণ সমাধানের আশা দেখা যাচ্ছে। সিরিয়া বিষয়ে
জাতিসংঘ তার অচলাবস্থা কিছুটা হলেও কাটিয়ে উঠে দেশটির রাসায়নিক অস্ত্র
ধ্বংসের কাজ শুরু করতে পেরেছে। পূর্বাঞ্চলীয় কঙ্গো ও সেন্ট্রাল আফ্রিকান
রিপাবলিকের সহিংসতায় সক্রিয় ভূমিকা রাখারও প্রতিশ্রুতি দিয়েছে জাতিসংঘ।
পাকিস্তান প্রথমবারের মতো গণতান্ত্রিকভাবে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে সক্ষম
হয়েছে। কোনো ক্ষেত্রেই নিরঙ্কুশ সাফল্য আসেনি, তবে যতটুকু অর্জন তাকে
সাফল্যে রূপ দিতে হলে আরও বেশি প্রচেষ্টার প্রয়োজন। বাংলাদেশের রাজনৈতিক
সহিংসতার কথা উল্লেখ করে বিশ্বে অস্থিতিশীলতার ঝুঁকির তালিকায় রাখা হয়।
উত্তরাধিকার সূত্রে চলতি বছরও অনেকগুলো অঞ্চলে সংঘাত সহিংসতা পেয়েছে। এগুলো
হয়তো এ বছর বৈশ্বিক স্থিতিশীলতার জন্যও হুমকি হয়ে উঠতে পারে। তেমন কয়েকটি
দ্বন্দ্বের তথ্য জানা যাক_
সিরিয়া ও লেবানন : রাসায়নিক অস্ত্র ধ্বংসের কার্যক্রম শুরু হওয়া সত্ত্বেও সিরিয়ার যুদ্ধক্ষেত্রে তার প্রভাব খুব কমই পড়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের সম্ভাব্য হামলা এড়িয়ে সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদ আরও আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠেছেন। বাশার সরকার এখন পশ্চিমাদের সন্ত্রাসবিরোধী লড়াইয়ের অংশীদার হতে চাচ্ছে। সিরিয়ার বিদ্রোহী যোদ্ধারা নিজেদের বিভেদ ও দ্বন্দ্বে আরও দুর্বল হয়ে পড়ছে।
এ অবস্থায় সিরিয়া সংঘাতে ধীরে হলেও জড়িয়ে পড়ছে লেবানন। দেশটিতে বিপুলসংখ্যক সিরীয় শরণার্থী ঢুকছে। তা ছাড়া লেবাননের সশস্ত্র রাজনৈতিক গ্রুপ হিজবুল্লাহ সরাসরি প্রেসিডেন্ট বাশারের বাহিনীর সঙ্গে মিলে যুদ্ধ করছে। বিশ্ববাসীর নজর অবশ্য এখন আগামী ২২ জানুয়ারি জেনেভায় অনুষ্ঠেয় শান্তি আলোচনার দিকেই নিবদ্ধ।
ইরাক : গত বছরের এপ্রিল থেকে সুনি্ন মতাবলম্বীদের শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ কঠোর হস্তে দমন করতে শুরু করে ইরাকের নুরি আল মালিকি সরকার। এর পর থেকেই দেশটিতে হামলা, গ্রেফতার অস্বাভাবিক বেড়ে যায়। শিয়াপ্রধান সরকারের প্রতি সুনি্নদের অবিশ্বাসও ক্রমাগত বাড়তে থাকে। দুই সম্প্রদায়ের লড়াইয়ে ইরাকে আল কায়দার অবস্থান শক্ত করার সুযোগ সৃষ্টি হয়। শুধু গত বছরই অন্তত সাত হাজার মানুষ সহিংসতার বলি হয়েছে। তবে সরকারের সমঝোতার কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। ইরাকি সুনি্নরা এখন সিরিয়ার সুনি্নদের সঙ্গে মিলে শিয়াপন্থি প্রেসিডেন্ট বাশারকে পরাস্ত করে নিজেদের অবস্থান শক্তিশালী করতে চাইছে।
লিবিয়া : রাজনৈতিক অচলাবস্থায় গাদ্দাফি-পরবর্তী লিবিয়ার পালাবদল লাইনচ্যুত হওয়ার আশঙ্কা জাগিয়েছে। চলতি বছরের ৭ ফেব্রুয়ারি আইন পরিষদের মেয়াদ শেষ হয়ে যাচ্ছে; কিন্তু সংবিধান রচনার কাজই শুরু করা যায়নি। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী কয়েক দফা হামলা ও একবার অপহরণের শিকার হয়েছেন। এখানেও ইসলামপন্থি বনাম উদারপন্থি, রক্ষণশীল বনাম বিপ্লবী দ্বন্দ্ব প্রকট। আরব বিপ্লবের বিপরীত চিত্র দর্শনে ক্রমেই হতাশ হয়ে পড়ছে লিবীয়রা।
হন্ডুরাস : দেশটিকে বলা হয় বিশ্বের খুনখারাবির রাজধানী। গত বছর প্রতি এক লাখে ৮০টির বেশি হত্যাকাণ্ড ঘটেছে হন্ডুরাসে। দুর্বল আইন ও বিচার ব্যবস্থার কারণে অধিকাংশ অপরাধেরই বিচার হয় না। ফলে আরও বড় ধরনের অপরাধের জন্য উন্মুক্ত হয়ে রয়েছে দেশটি।
সেন্ট্রাল আফ্রিকান রিপাবলিকান (সিএআর) :গত কয়েক মাসের সংঘাতে খাদের কিনারে দাঁড়িয়েছে দেশটি। চার লাখ মানুষ গৃহচ্যুত ও হাজারো লোক পলাতক। মোট জনসংখ্যার অর্ধেকের বেশিরই কোনো না কোনো সহায়তা প্রয়োজন। পুলিশ, সেনাবাহিনীসহ রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলো নেই বললেই চলে। সুদানকে সংঘাতের উষ্ণ ক্ষেত্র হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।
সাহেল অঞ্চল ও নর্দার্ন নাইজেরিয়া : পশ্চিম ও মধ্য আফ্রিকার বড় উদ্বেগের কারণ হয়ে দেখা দিয়েছে সাহেল অঞ্চল ও নর্দার্ন নাইজেরিয়ার দেশগুলোর অস্থিতিশীলতা। বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলন, ইসলামপন্থিদের সন্ত্রাস, উত্তর-দক্ষিণ উত্তেজনায় বারুদের মতো অবস্থায় রয়েছে দেশটি।
মধ্য এশিয়া : এ অঞ্চলের উদ্বেগের বড় কারণ আফগানিস্তান। এ ছাড়া এ অঞ্চলের বেশির ভাগ দেশের নেতাই বয়স্ক, পরে কে হাল ধরবেন তার স্পষ্ট দিশা নেই। তরুণ প্রজন্মের সামনে ভঙ্গুর কাঠামো ভবিষ্যতে অস্থিতিশীলতার জোগান দেবে।
নর্দার্ন ককেশাস (সোচি) : এই ফেব্রুয়ারিতে সোচিতে শীতকালীন অলিম্পিক হতে যাচ্ছে। কিন্তু অঞ্চলটির নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ ক্রমেই বাড়ছে। ইসলামপন্থি সন্ত্রাসীদের কারণে বেশ ক'বছর ধরেই অঞ্চলটি অস্থিতিশীল। অলিম্পিককে সামনে রেখে সন্ত্রাসীদের তৎপরতা কী পরিমাণ বৃদ্ধি পায়, তার ওপর নির্ভর করছে অনেক কিছুই।
সিরিয়া ও লেবানন : রাসায়নিক অস্ত্র ধ্বংসের কার্যক্রম শুরু হওয়া সত্ত্বেও সিরিয়ার যুদ্ধক্ষেত্রে তার প্রভাব খুব কমই পড়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের সম্ভাব্য হামলা এড়িয়ে সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদ আরও আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠেছেন। বাশার সরকার এখন পশ্চিমাদের সন্ত্রাসবিরোধী লড়াইয়ের অংশীদার হতে চাচ্ছে। সিরিয়ার বিদ্রোহী যোদ্ধারা নিজেদের বিভেদ ও দ্বন্দ্বে আরও দুর্বল হয়ে পড়ছে।
এ অবস্থায় সিরিয়া সংঘাতে ধীরে হলেও জড়িয়ে পড়ছে লেবানন। দেশটিতে বিপুলসংখ্যক সিরীয় শরণার্থী ঢুকছে। তা ছাড়া লেবাননের সশস্ত্র রাজনৈতিক গ্রুপ হিজবুল্লাহ সরাসরি প্রেসিডেন্ট বাশারের বাহিনীর সঙ্গে মিলে যুদ্ধ করছে। বিশ্ববাসীর নজর অবশ্য এখন আগামী ২২ জানুয়ারি জেনেভায় অনুষ্ঠেয় শান্তি আলোচনার দিকেই নিবদ্ধ।
ইরাক : গত বছরের এপ্রিল থেকে সুনি্ন মতাবলম্বীদের শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ কঠোর হস্তে দমন করতে শুরু করে ইরাকের নুরি আল মালিকি সরকার। এর পর থেকেই দেশটিতে হামলা, গ্রেফতার অস্বাভাবিক বেড়ে যায়। শিয়াপ্রধান সরকারের প্রতি সুনি্নদের অবিশ্বাসও ক্রমাগত বাড়তে থাকে। দুই সম্প্রদায়ের লড়াইয়ে ইরাকে আল কায়দার অবস্থান শক্ত করার সুযোগ সৃষ্টি হয়। শুধু গত বছরই অন্তত সাত হাজার মানুষ সহিংসতার বলি হয়েছে। তবে সরকারের সমঝোতার কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। ইরাকি সুনি্নরা এখন সিরিয়ার সুনি্নদের সঙ্গে মিলে শিয়াপন্থি প্রেসিডেন্ট বাশারকে পরাস্ত করে নিজেদের অবস্থান শক্তিশালী করতে চাইছে।
লিবিয়া : রাজনৈতিক অচলাবস্থায় গাদ্দাফি-পরবর্তী লিবিয়ার পালাবদল লাইনচ্যুত হওয়ার আশঙ্কা জাগিয়েছে। চলতি বছরের ৭ ফেব্রুয়ারি আইন পরিষদের মেয়াদ শেষ হয়ে যাচ্ছে; কিন্তু সংবিধান রচনার কাজই শুরু করা যায়নি। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী কয়েক দফা হামলা ও একবার অপহরণের শিকার হয়েছেন। এখানেও ইসলামপন্থি বনাম উদারপন্থি, রক্ষণশীল বনাম বিপ্লবী দ্বন্দ্ব প্রকট। আরব বিপ্লবের বিপরীত চিত্র দর্শনে ক্রমেই হতাশ হয়ে পড়ছে লিবীয়রা।
হন্ডুরাস : দেশটিকে বলা হয় বিশ্বের খুনখারাবির রাজধানী। গত বছর প্রতি এক লাখে ৮০টির বেশি হত্যাকাণ্ড ঘটেছে হন্ডুরাসে। দুর্বল আইন ও বিচার ব্যবস্থার কারণে অধিকাংশ অপরাধেরই বিচার হয় না। ফলে আরও বড় ধরনের অপরাধের জন্য উন্মুক্ত হয়ে রয়েছে দেশটি।
সেন্ট্রাল আফ্রিকান রিপাবলিকান (সিএআর) :গত কয়েক মাসের সংঘাতে খাদের কিনারে দাঁড়িয়েছে দেশটি। চার লাখ মানুষ গৃহচ্যুত ও হাজারো লোক পলাতক। মোট জনসংখ্যার অর্ধেকের বেশিরই কোনো না কোনো সহায়তা প্রয়োজন। পুলিশ, সেনাবাহিনীসহ রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলো নেই বললেই চলে। সুদানকে সংঘাতের উষ্ণ ক্ষেত্র হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।
সাহেল অঞ্চল ও নর্দার্ন নাইজেরিয়া : পশ্চিম ও মধ্য আফ্রিকার বড় উদ্বেগের কারণ হয়ে দেখা দিয়েছে সাহেল অঞ্চল ও নর্দার্ন নাইজেরিয়ার দেশগুলোর অস্থিতিশীলতা। বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলন, ইসলামপন্থিদের সন্ত্রাস, উত্তর-দক্ষিণ উত্তেজনায় বারুদের মতো অবস্থায় রয়েছে দেশটি।
মধ্য এশিয়া : এ অঞ্চলের উদ্বেগের বড় কারণ আফগানিস্তান। এ ছাড়া এ অঞ্চলের বেশির ভাগ দেশের নেতাই বয়স্ক, পরে কে হাল ধরবেন তার স্পষ্ট দিশা নেই। তরুণ প্রজন্মের সামনে ভঙ্গুর কাঠামো ভবিষ্যতে অস্থিতিশীলতার জোগান দেবে।
নর্দার্ন ককেশাস (সোচি) : এই ফেব্রুয়ারিতে সোচিতে শীতকালীন অলিম্পিক হতে যাচ্ছে। কিন্তু অঞ্চলটির নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ ক্রমেই বাড়ছে। ইসলামপন্থি সন্ত্রাসীদের কারণে বেশ ক'বছর ধরেই অঞ্চলটি অস্থিতিশীল। অলিম্পিককে সামনে রেখে সন্ত্রাসীদের তৎপরতা কী পরিমাণ বৃদ্ধি পায়, তার ওপর নির্ভর করছে অনেক কিছুই।
No comments