উচ্চাভিলাষী তবে বাস্তবায়নযোগ্য-শেয়ারবাজারেও কালো টাকা বিনিয়োগ করা যাবে
অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেছেন,
প্রস্তাবিত বাজেট উচ্চাভিলাষী হলেও বাস্তবায়নযোগ্য। বাজেট নিয়ে বিভিন্ন
মহলের সমালোচনার জবাবে তিনি এ কথা বলেন। সেই সঙ্গে তিনি দাবি করেন, তাঁর সব
বাজেটই জনতুষ্টিমূলক।
২০১৩-১৪ অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত
এ বাজেট দেশের উন্নয়নের বাজেট বলেও মনে করেন তিনি। তবে প্রস্তাবিত বাজেটে
জনগণকে দেওয়া নানা সুবিধার কারণে মহাজোটের ভোট কতটা নিশ্চিত হয়েছে সে হিসাব
নেই অর্থমন্ত্রীর কাছে।
মন্ত্রী বলেন, 'জনতুষ্টির পরিবর্তে জনগণ কী দেবেন, তা বলতে পারছি না। তবে আমি আশাবাদী, মহাজোট সরকার আবারও ক্ষমতায় আসবে। আমি বিশ্বাস করি, নির্বাচনে আমরাই জিতব। আমি ওই সরকারের মন্ত্রী না হলেও একজন সম্মানিত সদস্য হিসেবে থাকব। সে জন্যই এত ভালো একটা বাজেট দিয়ে গেলাম।' প্রতিবারের মতো এবারও আগামী অর্থবছরের জন্য বাজেট প্রস্তাব পেশ করার পরদিন সংবাদ সম্মেলন করে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন অর্থমন্ত্রী। গতকাল শুক্রবার রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন,
'আগের চারটি বাজেটের চেয়ে শেষ বাজেট প্রণয়নের সময় আমি অনেক বেশি স্বচ্ছ হওয়ার চেষ্টা করেছি। আমার এই উচ্চাভিলাষী ও জনতুষ্টিমূলক বাজেট বাস্তবায়নে একটিমাত্র ঝুঁকি রয়েছে। তা হলো যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ঠেকাতে জামায়াত-শিবিরের সন্ত্রাসবাদীরা দেশকে অস্থিতিশীল করে তুলতে পারে। এটিই একমাত্র ঝুঁকি। আর তত্ত্বাবধায়ক সরকার, নাকি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার- এ প্রশ্নে রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা খুব একটা হবে না। সংলাপের মাধ্যমে এ বিষয়ে একটি সমঝোতা হবেই হবে।'
এ সরকারের মেয়াদেই ৪০ শতাংশ বাস্তবায়ন : বর্তমান সরকারের মেয়াদেই প্রস্তাবিত বাজেটের প্রায় ৪০ শতাংশ বাস্তবায়ন সম্ভব হবে বলে দাবি করেন অর্থমন্ত্রী। তিনি বলেন, 'আগামী মাসেই বাজেট বাস্তবায়নের পরিকল্পনা দেওয়া হবে। আমার সব বাজেটই উচ্চাভিলাষী ছিল। সেগুলো বাস্তবায়ন সার্থক হয়েছে। এবারের ব্যয় পরিকল্পনাও আগের মতোই আছে।'
ডান পাশে তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু আর বাঁ পাশে পরিকল্পনামন্ত্রী এ কে খন্দকারকে নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের নানা ধরনের প্রশ্নের জবাব দেন অর্থমন্ত্রী। পাশে থাকা ওই দুই মন্ত্রী ছাড়াও তথ্যউপাত্ত সরবরাহ করে এবং বেশ কিছু প্রশ্নের জবাব দিয়ে তাঁকে সহায়তা করেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আতিউর রহমান, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান মো. গোলাম হোসেনসহ অর্থ বিভাগ ও পরিকল্পনা কমিশনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
প্রস্তাবিত বাজেটে থোক বরাদ্দ কত রাখা হয়েছে- সাংবাদিকদের এ প্রশ্নের সরাসরি কোনো জবাব দেননি অর্থমন্ত্রী। তিনি বলেন, 'এটি নির্বাচনী বছর। যেকোনো হিসাব প্রাক্কলনের সময় নানা বিবেচনার মধ্যে একটি আমরা বেছে নেই। অর্থনীতির সব কিছু সব সময় আমাদের নিয়ন্ত্রণে থাকে না।' এ প্রসঙ্গে তথ্যমন্ত্রী বলেন, থোক বরাদ্দ গোপনে বিলি-বণ্টন হবে না। সব টাকারই হিসাব থাকবে।
পুঁজিবাজার উন্নয়নে তহবিল : বাজেট বক্তব্যে উল্লেখ না করলেও গতকাল অর্থমন্ত্রী জানিয়েছেন, পুঁজিবাজার উন্নয়নে তহবিল গঠন করা হবে। তিনি বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক ওই পুনরর্থায়ন তহবিল গঠন করবে। এতে মূল্যস্ফীতি যাতে না বাড়ে সে জন্যই পরে সরকারকে দেওয়া বাংলাদেশ ব্যাংকের মুনাফার সঙ্গে ৯০০ কোটি টাকা সমন্বয় করা হবে।
পদ্মা সেতু প্রকল্পে বিভিন্ন সূত্রে অর্থ পাওয়ার আশা : আগামী ডিসেম্বর মাসের মধ্যেই পদ্মা সেতু নির্মাণ ও নদী শাসনের কাজ শুরুর জন্য ঠিকাদারের সঙ্গে চুক্তি করা সম্ভব হবে বলে জানান অর্থমন্ত্রী। তিনি বলেন, 'আমরা এ সেতু নির্মাণ করতে চেয়েছি। নির্মাণ হবে। এটাকে স্বপ্ন মনে করলে করতে পারেন। তবে আমার মনে হয়, এটা বাস্তবতা, অনেক বেশি বাস্তবতা। নিজস্ব অর্থায়নে সেতু নির্মাণের কথা বললেও বিভিন্ন সূত্রে অর্থ পাওয়ার আশা করছি। তা না পাওয়া গেলে নিজস্ব অর্থায়নেই এ সেতু নির্মাণ করা হবে। তবে এ জন্য বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি) ব্যয় কমানো হবে না। অতিরিক্ত অর্থ জোগাড় করতে আমরা সার্বভৌম বন্ড ছাড়ার পরিকল্পনা করছি।'
আবাসন খাত অনুৎপাদনশীল নয় : আবাসন খাতে কালো টাকা বিনিয়োগের সমালোচনা করে কেউ কেউ বলেছেন, অনুৎপাদনশীল খাতে কালো টাকা বিনিয়োগের সুযোগ দেওয়া ঠিক হয়নি। এ সমালোচনার জবাবে অর্থমন্ত্রী বলেন, 'জমি বা প্লট অনুৎপাদনশীল খাত হলেও আবাসন খাত অনুৎপাদনশীল নয়। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে জিডিপিতে আবাসন খাতের বড় ভূমিকা রয়েছে। আমাদের আবাসন খাত কয়েক বছর ধরে বিপর্যস্ত ছিল। সে জন্যই এ খাতে কালো টাকা বিনিয়োগের সুযোগ দেওয়া হয়েছে।' তিনি বলেন, প্রচলিত রীতি অনুযায়ী নির্দিষ্ট হারে আয়কর পরিশোধের পর অতিরিক্ত ১০ শতাংশ জরিমানা দিয়ে যে কেউ কালো টাকা শেয়ারবাজারসহ অন্য যেকোন খাতে বিনিয়োগ করতে পারে। এতে কোনো বাধা নেই।
বিচার করে কালো টাকা আদায় করা যায় না : মুহিত বলেন, বিচার করে কালো টাকা আদায় করা যায় না। কালো টাকা কমাতে দরকার অর্থনৈতিক কৌশল। এ জন্য করদাতাবান্ধব পরিবেশ তৈরি করতে হবে। আর আইনের ফাঁকফোকর বন্ধ করতে হবে। একই সঙ্গে কমাতে হবে দুর্নীতি। বর্তমান সরকারের সময়ে উচ্চ পর্যায়ের দুর্নীতি অনেক কমেছে বলে দাবি করেন তিনি।
কালো টাকা সাদা করার সুযোগ দেওয়া কোনো ধরনের সমঝোতার ব্যাপার নয় বলে উল্লেখ করেন অর্থমন্ত্রী। তিনি বলেন, 'গণতন্ত্রে অনেক ক্ষেত্রেই সমঝোতা করতে হয়। রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর লোকসান মেনে নেওয়াটাও সমঝোতার ব্যাপার। আবার সিএনজির দাম ডিজেলের সমান করতে না পারাটাও এক ধরনের সমঝোতা। আমার দুঃখ যে আপনারা এই সমঝোতা শব্দটিকে শুধু একটি জায়গায় স্থির করে রেখেছেন।'
রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রাও বাস্তবায়নযোগ্য : চলতি অর্থবছরই যেখানে লক্ষ্যমাত্রা অর্জন হচ্ছে না, সেখানে নতুন অর্থবছর কিভাবে এক লাখ ৩৬ হাজার ৯০ কোটি টাকার উচ্চাভিলাষী লক্ষ্যমাত্রা রাজস্ব বোর্ড পূরণ করবে- এমন প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী বলেন, 'রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রাও উচ্চাভিলাষী। তবে এটাও বাস্তবায়নযোগ্য। রাজস্ব বোর্ডের আইনকানুনে পরিবর্তন এসেছে। জনবলও বেড়েছে। আমার আগের বাজেটগুলোতেও অর্থায়নের কোনো সমস্যা হয়নি। রাজস্ব বোর্ড এর আগে রাজস্ব আদায়ে ২৪ শতাংশ পর্যন্ত প্রবৃদ্ধি দেখিয়েছে। নির্বাচনের বছর হওয়ায় এবার ১৬ শতাংশ প্রবৃদ্ধি ঠিক করা হয়েছে। এ বছর বৈদেশিক সাহায্যও বেশি এসেছে। আগামী বছরেও এটি বাড়বে। তাই বৈদেশিক সাহায্যের লক্ষ্যমাত্রা নতুন অর্থবছরে বেশ বাড়ানো হয়েছে।'
শিক্ষকদের এমপিওভুক্তি বিবেচনাধীন : নতুন অর্থবছরে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের এমপিওভুক্তির বিষয়টি সরকার সক্রিয়ভাবে বিবেচনা করছে বলে জানান অর্থমন্ত্রী। শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ বলেন, 'বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার আগে থেকেই এমপিওভুক্তিকরণ কার্যক্রম বন্ধ ছিল। এ সরকার এক হাজার ৬২০টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তি করেছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মোট বরাদ্দের ৬৪ ভাগ অর্থই এদের বেতন-ভাতায় ব্যয় হয়। গত নভেম্বরে ৪৯ হাজার শিক্ষককে এমপিওভুক্ত করা হয়েছে। আরো যারা এমপিওভুক্তি হয়নি, তাদের প্রতি সরকার সহানুভূতিশীল। আমরা একটা যুক্তিসংগত সমাধান বের করার চেষ্টা করছি। আগামী জুলাই মাসেই তা বোঝা যাবে।'
গ্রামীণফোনের কর বাড়ানোর কারণ : মোবাইল ফোনের সিমকার্ডের শুল্ক কমানো ও গ্রামীণফোনের কর বাড়ানোর প্রস্তাব সম্পর্কে অর্থমন্ত্রী বলেন, পুঁজিবাজারে নিবন্ধিত ও নিবন্ধিত নয় এমন কম্পানির মধ্যে করপোরেট করহারের ব্যবধান অনেক বেশি। সে ব্যবধান কমানোর জন্যই গ্রামীণফোনের কর বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। আর অনেক বড় মোবাইল ফোন কম্পানি রয়েছে, যারা সিমকার্ডের ওপর আরোপিত ৬০০ টাকা শুল্ক ভর্তুকি দিতে পারে সহজেই। অন্য ছোট কম্পানিগুলো তা পারছে না। ফলে একচেটিয়া বাজার তৈরির আশঙ্কা থেকে অন্যদের সাহায্য করতেই সিমকার্ডের ওপর আরোপিত শুল্ক ৩০০ টাকা কমানো হয়েছে।
বিনিয়োগ বাড়বে : নির্বাচনের বছর প্রবৃদ্ধি কম হয় জানা সত্ত্বেও নতুন অর্থবছরে ৭.২ শতাংশ প্রবৃদ্ধি প্রাক্কলন করার কারণ জানতে চাইলে অর্থমন্ত্রী বলেন, প্রবৃদ্ধি অর্জনের বিষয়টি কৌশলের ওপর নির্ভর করে। কৃষি ও গ্রামে নজর দিলেই এ প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা সহজ হবে। আগামী বছর বিনিয়োগ বাড়বে বলেও আশা করেন তিনি।
কৃষি খাতে ভর্তুকি কমেনি : অর্থ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব রণজিৎ কুমার চক্রবর্তী বলেন, কৃষি খাতে ভর্তুকি কমেনি। গত বাজেটের চেয়ে নতুন বাজেটে কৃষি ভর্তুর্কি বাড়ানো হয়েছে। তবে কৃষি মন্ত্রণালয়ের পুরনো অনেক ভর্তুকির অর্থ চলতি অর্থবছর পরিশোধ করা হয়েছে। ফলে চলতি অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটে কৃষি খাতে বরাদ্দ অনেক বেড়ে গেছে। আগামী অর্থবছরের জন্য কৃষি মন্ত্রণালয়ের আর কোনো বকেয়া নেই। তাই এবারের বরাদ্দটা সংশোধিত বাজেটের চেয়ে কম হয়েছে।
ছয় মাসে দেশের মজবুত ভিত্তি হবে : তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু বলেন, বর্তমান সরকারের আগামী ছয় মাস হবে পরিকল্পনা, উৎপাদন ও উন্নয়নের। আগামী ছয় মাসে দেশের যে মজবুত ভিত্তি হবে তার ওপর ভর করে চলা পরের সরকারের জন্য কোনোমতেই চ্যালেঞ্জ হবে না। ক্ষমতা হস্তান্তর প্রসঙ্গে তিনি বলেন, 'বাজেট বাস্তবায়নের সক্ষমতা যেমন মহাজোট সরকারের আছে, তেমনি ক্ষমতা হস্তান্তরের রাজনৈতিক ঝুঁকি মোকাবিলার শক্তিও আমাদের থাকবে।'
জিডিপির প্রবৃদ্ধি অর্জনও সম্ভব : বিশ্ববাজারে পণ্যমূল্য স্থিতিশীল রয়েছে বলে উল্লেখ করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আতিউর রহমান। তিনি বলেন, এরই মধ্যে মূল্যস্ফীতি অনেক কমে গেছে। বিদেশে রপ্তানি বৃদ্ধি ও বিনিয়োগ বাড়ানোর মধ্য দিয়ে লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী ৭.২ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জনও সম্ভব হবে বলে উল্লেখ করেন তিনি।
মন্ত্রী বলেন, 'জনতুষ্টির পরিবর্তে জনগণ কী দেবেন, তা বলতে পারছি না। তবে আমি আশাবাদী, মহাজোট সরকার আবারও ক্ষমতায় আসবে। আমি বিশ্বাস করি, নির্বাচনে আমরাই জিতব। আমি ওই সরকারের মন্ত্রী না হলেও একজন সম্মানিত সদস্য হিসেবে থাকব। সে জন্যই এত ভালো একটা বাজেট দিয়ে গেলাম।' প্রতিবারের মতো এবারও আগামী অর্থবছরের জন্য বাজেট প্রস্তাব পেশ করার পরদিন সংবাদ সম্মেলন করে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন অর্থমন্ত্রী। গতকাল শুক্রবার রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন,
'আগের চারটি বাজেটের চেয়ে শেষ বাজেট প্রণয়নের সময় আমি অনেক বেশি স্বচ্ছ হওয়ার চেষ্টা করেছি। আমার এই উচ্চাভিলাষী ও জনতুষ্টিমূলক বাজেট বাস্তবায়নে একটিমাত্র ঝুঁকি রয়েছে। তা হলো যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ঠেকাতে জামায়াত-শিবিরের সন্ত্রাসবাদীরা দেশকে অস্থিতিশীল করে তুলতে পারে। এটিই একমাত্র ঝুঁকি। আর তত্ত্বাবধায়ক সরকার, নাকি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার- এ প্রশ্নে রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা খুব একটা হবে না। সংলাপের মাধ্যমে এ বিষয়ে একটি সমঝোতা হবেই হবে।'
এ সরকারের মেয়াদেই ৪০ শতাংশ বাস্তবায়ন : বর্তমান সরকারের মেয়াদেই প্রস্তাবিত বাজেটের প্রায় ৪০ শতাংশ বাস্তবায়ন সম্ভব হবে বলে দাবি করেন অর্থমন্ত্রী। তিনি বলেন, 'আগামী মাসেই বাজেট বাস্তবায়নের পরিকল্পনা দেওয়া হবে। আমার সব বাজেটই উচ্চাভিলাষী ছিল। সেগুলো বাস্তবায়ন সার্থক হয়েছে। এবারের ব্যয় পরিকল্পনাও আগের মতোই আছে।'
ডান পাশে তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু আর বাঁ পাশে পরিকল্পনামন্ত্রী এ কে খন্দকারকে নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের নানা ধরনের প্রশ্নের জবাব দেন অর্থমন্ত্রী। পাশে থাকা ওই দুই মন্ত্রী ছাড়াও তথ্যউপাত্ত সরবরাহ করে এবং বেশ কিছু প্রশ্নের জবাব দিয়ে তাঁকে সহায়তা করেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আতিউর রহমান, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান মো. গোলাম হোসেনসহ অর্থ বিভাগ ও পরিকল্পনা কমিশনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
প্রস্তাবিত বাজেটে থোক বরাদ্দ কত রাখা হয়েছে- সাংবাদিকদের এ প্রশ্নের সরাসরি কোনো জবাব দেননি অর্থমন্ত্রী। তিনি বলেন, 'এটি নির্বাচনী বছর। যেকোনো হিসাব প্রাক্কলনের সময় নানা বিবেচনার মধ্যে একটি আমরা বেছে নেই। অর্থনীতির সব কিছু সব সময় আমাদের নিয়ন্ত্রণে থাকে না।' এ প্রসঙ্গে তথ্যমন্ত্রী বলেন, থোক বরাদ্দ গোপনে বিলি-বণ্টন হবে না। সব টাকারই হিসাব থাকবে।
পুঁজিবাজার উন্নয়নে তহবিল : বাজেট বক্তব্যে উল্লেখ না করলেও গতকাল অর্থমন্ত্রী জানিয়েছেন, পুঁজিবাজার উন্নয়নে তহবিল গঠন করা হবে। তিনি বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক ওই পুনরর্থায়ন তহবিল গঠন করবে। এতে মূল্যস্ফীতি যাতে না বাড়ে সে জন্যই পরে সরকারকে দেওয়া বাংলাদেশ ব্যাংকের মুনাফার সঙ্গে ৯০০ কোটি টাকা সমন্বয় করা হবে।
পদ্মা সেতু প্রকল্পে বিভিন্ন সূত্রে অর্থ পাওয়ার আশা : আগামী ডিসেম্বর মাসের মধ্যেই পদ্মা সেতু নির্মাণ ও নদী শাসনের কাজ শুরুর জন্য ঠিকাদারের সঙ্গে চুক্তি করা সম্ভব হবে বলে জানান অর্থমন্ত্রী। তিনি বলেন, 'আমরা এ সেতু নির্মাণ করতে চেয়েছি। নির্মাণ হবে। এটাকে স্বপ্ন মনে করলে করতে পারেন। তবে আমার মনে হয়, এটা বাস্তবতা, অনেক বেশি বাস্তবতা। নিজস্ব অর্থায়নে সেতু নির্মাণের কথা বললেও বিভিন্ন সূত্রে অর্থ পাওয়ার আশা করছি। তা না পাওয়া গেলে নিজস্ব অর্থায়নেই এ সেতু নির্মাণ করা হবে। তবে এ জন্য বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি) ব্যয় কমানো হবে না। অতিরিক্ত অর্থ জোগাড় করতে আমরা সার্বভৌম বন্ড ছাড়ার পরিকল্পনা করছি।'
আবাসন খাত অনুৎপাদনশীল নয় : আবাসন খাতে কালো টাকা বিনিয়োগের সমালোচনা করে কেউ কেউ বলেছেন, অনুৎপাদনশীল খাতে কালো টাকা বিনিয়োগের সুযোগ দেওয়া ঠিক হয়নি। এ সমালোচনার জবাবে অর্থমন্ত্রী বলেন, 'জমি বা প্লট অনুৎপাদনশীল খাত হলেও আবাসন খাত অনুৎপাদনশীল নয়। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে জিডিপিতে আবাসন খাতের বড় ভূমিকা রয়েছে। আমাদের আবাসন খাত কয়েক বছর ধরে বিপর্যস্ত ছিল। সে জন্যই এ খাতে কালো টাকা বিনিয়োগের সুযোগ দেওয়া হয়েছে।' তিনি বলেন, প্রচলিত রীতি অনুযায়ী নির্দিষ্ট হারে আয়কর পরিশোধের পর অতিরিক্ত ১০ শতাংশ জরিমানা দিয়ে যে কেউ কালো টাকা শেয়ারবাজারসহ অন্য যেকোন খাতে বিনিয়োগ করতে পারে। এতে কোনো বাধা নেই।
বিচার করে কালো টাকা আদায় করা যায় না : মুহিত বলেন, বিচার করে কালো টাকা আদায় করা যায় না। কালো টাকা কমাতে দরকার অর্থনৈতিক কৌশল। এ জন্য করদাতাবান্ধব পরিবেশ তৈরি করতে হবে। আর আইনের ফাঁকফোকর বন্ধ করতে হবে। একই সঙ্গে কমাতে হবে দুর্নীতি। বর্তমান সরকারের সময়ে উচ্চ পর্যায়ের দুর্নীতি অনেক কমেছে বলে দাবি করেন তিনি।
কালো টাকা সাদা করার সুযোগ দেওয়া কোনো ধরনের সমঝোতার ব্যাপার নয় বলে উল্লেখ করেন অর্থমন্ত্রী। তিনি বলেন, 'গণতন্ত্রে অনেক ক্ষেত্রেই সমঝোতা করতে হয়। রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর লোকসান মেনে নেওয়াটাও সমঝোতার ব্যাপার। আবার সিএনজির দাম ডিজেলের সমান করতে না পারাটাও এক ধরনের সমঝোতা। আমার দুঃখ যে আপনারা এই সমঝোতা শব্দটিকে শুধু একটি জায়গায় স্থির করে রেখেছেন।'
রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রাও বাস্তবায়নযোগ্য : চলতি অর্থবছরই যেখানে লক্ষ্যমাত্রা অর্জন হচ্ছে না, সেখানে নতুন অর্থবছর কিভাবে এক লাখ ৩৬ হাজার ৯০ কোটি টাকার উচ্চাভিলাষী লক্ষ্যমাত্রা রাজস্ব বোর্ড পূরণ করবে- এমন প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী বলেন, 'রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রাও উচ্চাভিলাষী। তবে এটাও বাস্তবায়নযোগ্য। রাজস্ব বোর্ডের আইনকানুনে পরিবর্তন এসেছে। জনবলও বেড়েছে। আমার আগের বাজেটগুলোতেও অর্থায়নের কোনো সমস্যা হয়নি। রাজস্ব বোর্ড এর আগে রাজস্ব আদায়ে ২৪ শতাংশ পর্যন্ত প্রবৃদ্ধি দেখিয়েছে। নির্বাচনের বছর হওয়ায় এবার ১৬ শতাংশ প্রবৃদ্ধি ঠিক করা হয়েছে। এ বছর বৈদেশিক সাহায্যও বেশি এসেছে। আগামী বছরেও এটি বাড়বে। তাই বৈদেশিক সাহায্যের লক্ষ্যমাত্রা নতুন অর্থবছরে বেশ বাড়ানো হয়েছে।'
শিক্ষকদের এমপিওভুক্তি বিবেচনাধীন : নতুন অর্থবছরে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের এমপিওভুক্তির বিষয়টি সরকার সক্রিয়ভাবে বিবেচনা করছে বলে জানান অর্থমন্ত্রী। শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ বলেন, 'বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার আগে থেকেই এমপিওভুক্তিকরণ কার্যক্রম বন্ধ ছিল। এ সরকার এক হাজার ৬২০টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তি করেছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মোট বরাদ্দের ৬৪ ভাগ অর্থই এদের বেতন-ভাতায় ব্যয় হয়। গত নভেম্বরে ৪৯ হাজার শিক্ষককে এমপিওভুক্ত করা হয়েছে। আরো যারা এমপিওভুক্তি হয়নি, তাদের প্রতি সরকার সহানুভূতিশীল। আমরা একটা যুক্তিসংগত সমাধান বের করার চেষ্টা করছি। আগামী জুলাই মাসেই তা বোঝা যাবে।'
গ্রামীণফোনের কর বাড়ানোর কারণ : মোবাইল ফোনের সিমকার্ডের শুল্ক কমানো ও গ্রামীণফোনের কর বাড়ানোর প্রস্তাব সম্পর্কে অর্থমন্ত্রী বলেন, পুঁজিবাজারে নিবন্ধিত ও নিবন্ধিত নয় এমন কম্পানির মধ্যে করপোরেট করহারের ব্যবধান অনেক বেশি। সে ব্যবধান কমানোর জন্যই গ্রামীণফোনের কর বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। আর অনেক বড় মোবাইল ফোন কম্পানি রয়েছে, যারা সিমকার্ডের ওপর আরোপিত ৬০০ টাকা শুল্ক ভর্তুকি দিতে পারে সহজেই। অন্য ছোট কম্পানিগুলো তা পারছে না। ফলে একচেটিয়া বাজার তৈরির আশঙ্কা থেকে অন্যদের সাহায্য করতেই সিমকার্ডের ওপর আরোপিত শুল্ক ৩০০ টাকা কমানো হয়েছে।
বিনিয়োগ বাড়বে : নির্বাচনের বছর প্রবৃদ্ধি কম হয় জানা সত্ত্বেও নতুন অর্থবছরে ৭.২ শতাংশ প্রবৃদ্ধি প্রাক্কলন করার কারণ জানতে চাইলে অর্থমন্ত্রী বলেন, প্রবৃদ্ধি অর্জনের বিষয়টি কৌশলের ওপর নির্ভর করে। কৃষি ও গ্রামে নজর দিলেই এ প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা সহজ হবে। আগামী বছর বিনিয়োগ বাড়বে বলেও আশা করেন তিনি।
কৃষি খাতে ভর্তুকি কমেনি : অর্থ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব রণজিৎ কুমার চক্রবর্তী বলেন, কৃষি খাতে ভর্তুকি কমেনি। গত বাজেটের চেয়ে নতুন বাজেটে কৃষি ভর্তুর্কি বাড়ানো হয়েছে। তবে কৃষি মন্ত্রণালয়ের পুরনো অনেক ভর্তুকির অর্থ চলতি অর্থবছর পরিশোধ করা হয়েছে। ফলে চলতি অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটে কৃষি খাতে বরাদ্দ অনেক বেড়ে গেছে। আগামী অর্থবছরের জন্য কৃষি মন্ত্রণালয়ের আর কোনো বকেয়া নেই। তাই এবারের বরাদ্দটা সংশোধিত বাজেটের চেয়ে কম হয়েছে।
ছয় মাসে দেশের মজবুত ভিত্তি হবে : তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু বলেন, বর্তমান সরকারের আগামী ছয় মাস হবে পরিকল্পনা, উৎপাদন ও উন্নয়নের। আগামী ছয় মাসে দেশের যে মজবুত ভিত্তি হবে তার ওপর ভর করে চলা পরের সরকারের জন্য কোনোমতেই চ্যালেঞ্জ হবে না। ক্ষমতা হস্তান্তর প্রসঙ্গে তিনি বলেন, 'বাজেট বাস্তবায়নের সক্ষমতা যেমন মহাজোট সরকারের আছে, তেমনি ক্ষমতা হস্তান্তরের রাজনৈতিক ঝুঁকি মোকাবিলার শক্তিও আমাদের থাকবে।'
জিডিপির প্রবৃদ্ধি অর্জনও সম্ভব : বিশ্ববাজারে পণ্যমূল্য স্থিতিশীল রয়েছে বলে উল্লেখ করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আতিউর রহমান। তিনি বলেন, এরই মধ্যে মূল্যস্ফীতি অনেক কমে গেছে। বিদেশে রপ্তানি বৃদ্ধি ও বিনিয়োগ বাড়ানোর মধ্য দিয়ে লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী ৭.২ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জনও সম্ভব হবে বলে উল্লেখ করেন তিনি।
No comments