বাজেট-উত্তর সংবাদ সম্মেলনে অর্থমন্ত্রী বাস্তবায়নযোগ্য উচ্চাভিলাষ
‘উচ্চাভিলাষী’ মেনে নিয়েও প্রস্তাবিত
২০১৩-১৪ অর্থবছরের বাজেটকে ‘অত্যন্ত বাস্তবায়নযোগ্য’ বলে মনে করেন
অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। অর্থমন্ত্রী বলেন, বাজেট বাস্তবায়নে
ঝুঁকি একটিই, আর সেটি হচ্ছে রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা।
তবে
অর্থমন্ত্রী বলেন, এই অস্থিতিশীলতা নির্বাচন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার,
সংলাপ-সম্পর্কিত নয়। কারণ, এসবের সমাধান হবে। এই অস্থিতিশীলতা যুক্ত
যুদ্ধাপরাধীদের বিচার নিয়ে। জামায়াত-শিবিরের সন্ত্রাসবাদীরা তৎপর থাকতে
পারে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ঠেকাতে। এদের উৎখাত ও উচ্ছেদ করতে হবে।
২০১৩-১৪ অর্থবছরের বাজেট-উত্তর সংবাদ সম্মেলনে অর্থমন্ত্রী এসব কথা জানান। রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে গতকাল শুক্রবার এই সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। পুরো সংবাদ সম্মেলনটিই ছিল মূলত প্রশ্নোত্তর-নির্ভর।
সংবাদ সম্মেলনে সবচেয়ে বেশি প্রশ্ন এসেছে কালোটাকা নিয়ে। কালোটাকা সাদা করার সুযোগ দেওয়ার বিষয়ে বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী স্বীকার করেন, এটা তাঁর সমঝোতা। তবে আত্মপক্ষ সমর্থন করে তিনি বলেন, গণতন্ত্রে এই সমঝোতা করতেই হয়। তবে তিনি বলেন, কালোটাকা সাদা করা তেমন বড় কোনো বিষয় নয়। বরং সবাই কালোটাকার বিষয়টি নিয়ে কথা বলছে। আসলে বিষয়টি আরও বৃহত্তর প্রেক্ষাপটে দেখতে হবে। কারণ, আরও অনেক বিষয়ের সঙ্গে সমঝোতা করতে হয়। এ প্রসঙ্গে অর্থমন্ত্রী বলেন, সমঝোতার কারণেই সিএনজির দাম ডিজেলের সমান করতে চেয়েও তিনি পারেননি। রাষ্ট্রায়ত্ত অনেক প্রতিষ্ঠানের লোকসান মেনে নিয়েও ভর্তুকি দিয়ে যেতে হচ্ছে। অর্থমন্ত্রীর ভাষায়, ‘মেট্রোরেলসহ দুটি চমৎকার প্রকল্প ছিল। একটিও করতে পারিনি। করস্থানীয় সরকারব্যবস্থাকে শক্তিশালী করতে পারিনি। এগুলোও তো সমঝোতা।’
পরিকল্পনামন্ত্রী এ কে খন্দকার ও তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনুকে পাশে নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন অর্থমন্ত্রী। সঙ্গে রাখেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আতিউর রহমান, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান মো. গোলাম হোসেন, অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের সচিব আবুল কালাম আজাদ, পরিকল্পনাসচিব ভুঁইয়া সফিকুল ইসলাম ও অর্থ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব রণজিৎ চক্রবর্তীকে।
এ সময় সামনে বসা ছিলেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ, প্রধানমন্ত্রীর অর্থ উপদেষ্টা মসিউর রহমান, জ্বালানি উপদেষ্টা তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী ও বিনিয়োগ বোর্ডের নির্বাহী চেয়ারম্যান এস এ সামাদ।
অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘অনেকেই বলছেন, এই বাজেট বাস্তবায়ন করবে তিন সরকার মিলে। না, এটি করবে দুই সরকার। আবার অনেকেই বলছেন, এই বাজেট উচ্চাভিলাষী, জনতুষ্টিমূলক, বিশাল, ঋণনির্ভর, ভোটের বাজেট ইত্যাদি। হ্যাঁ, বাজেট উচ্চাভিলাষী তো বটেই।’
দেশের অর্থনীতির চেহারা বদলে গেছে বলে দাবি করেন অর্থমন্ত্রী। হরতাল ও সহিংসতার কারণে এর গতি কিছুটা শ্লথ হয়ে যায়। তিনি বলেন, ‘অর্থনীতিবিদ ও সুশীল সমাজের চোখে তা ধরা পড়ছে না। হয়তো তা গ্রহণ করতে তাঁদের বাধে।’
কালোটাকা সাদা করার একটি নিয়মিত পদ্ধতিই সৃষ্টি করেছেন বলে উল্লেখ করেন অর্থমন্ত্রী। তিনি বলেন, এর বাইরে আবাসন খাতে আলাদা করে কালোটাকা সাদা করার সুযোগ দেওয়া হয়েছে। যুক্তি দিতে গিয়ে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘এটি উৎপাদনশীল খাত নয়। তবে এই খাতে বিপর্যয় গেছে অনেক।’
অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘কালোটাকা অভিযান করে আদায় করা যায় না। আদায় করতে লাগবে অর্থনৈতিক কৌশল ও আদর্শিক অবস্থান। তবে হ্যাঁ, জমি ও বাড়ি বিক্রির ফাঁকফোকর বন্ধ করতে হবে এবং কমাতে হবে দুর্নীতি।’
আয়, ব্যয় ও অর্থায়ন: অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘আমার সব বাজেটই জনতুষ্টির। জনগণের সেবা করছি। একই সঙ্গে আয়ও বাড়ছে। পাঁচ বছরে যে আয় হয়েছে, ৩০ বছরেও তা হয়নি।’
ব্যয় পরিকল্পনা আগে যে রকম ছিল, এখনো সে রকমই আছে বলে মনে করেন অর্থমন্ত্রী। আর আয় প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘এনবিআর যে আইনকানুন ও পরিবেশ তৈরি করেছে, তা কর আদায়বান্ধব।’ অর্থমন্ত্রী বলেন, অর্থায়নের ব্যবস্থা নেই বলে যে বলা হচ্ছে, তা ভ্রান্তিমূলক বক্তব্য।
সিম কার্ডে কর কমানোর বিষয়ে অর্থমন্ত্রীও বলেন, বাজার যাদের দখলে, তাদের পক্ষে ভর্তুকি দিয়ে সিম বিক্রি করা সহজ, যা অন্যদের পক্ষে কঠিন। একধরনের সাম্যের নীতি আনার জন্য এটি করা হয়েছে।
প্রবৃদ্ধি ও বিনিয়োগ: অর্থমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) হিসাবের চেয়ে প্রবৃদ্ধির হার বাড়বে। কারণ, অনেক কিছুই বিবিএসের হিসাবে আসেনি।
তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী বলেন, চলতি অর্থবছরের মধ্যে বিদ্যুৎ উৎপাদিত হয় নয় হাজার মেগাওয়াট। ভাড়াভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র না হলে জিডিপির প্রবৃদ্ধির হার ৩ থেকে ৪ শতাংশে নেমে আসত বলে তিনি অপ্রকাশিত একটি গবেষণা প্রতিবেদন থেকে তথ্য দেন।
আতিউর রহমান বলেন, ‘অর্থবছর শেষে প্রবৃদ্ধি যদি ৬ দশমিক শূন্য ৩ শতাংশ ধরেও নিই, তা-ও নৈরাশ্যজনক নয়।’
এস এ সামাদ বলেন, বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার, অর্থাৎ ২০০৯ সালের আগে ঋণমানের দিক থেকে বাংলাদেশ একটা অপরিচিত দেশ ছিল। বিশ্বখ্যাত ঋণমান নির্ণয়কারী সংস্থাগুলোর সর্বশেষ বিবেচনায় বাংলাদেশের অবস্থান স্থিতিশীল, যেখানে যুক্তরাষ্ট্রের মানও নিচে নেমে গেছে। জিডিপির তুলনায় বিনিয়োগের হার ২৮ শতাংশে উন্নীত হলেই ৭ দশমিক ২ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন সম্ভব বলে তিনি মনে করেন।
মূল্যস্ফীতি: মুক্তবাজার অর্থনীতির কাছে বন্ধক থাকা অর্থনীতির মোড় খানিকটা হলেও ঘুরিয়ে দিয়েছেন বলে অর্থমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানান তথ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, ৬ শতাংশের ওপর প্রবৃদ্ধি ও ১০ শতাংশের নিচে মূল্যস্ফীতি রাখার যে সমন্বয়, তা অর্থমন্ত্রীর দক্ষতার সঙ্গে বাজেট প্রণয়নের কারণেই সম্ভব হয়েছে। বুদ্ধিজীবী ও অর্থনীতিবিদেরা এ সাফল্য আরও প্রকাশ্যে স্বীকার করতে পারতেন বলে মনে করেন তথ্যমন্ত্রী।
এ বিষয়ে আরও কথা বলেন আতিউর রহমান। তিনি বলেন, শুধু মূল্যস্ফীতি নয়, অর্থনীতির সব সূচকই এখন শক্তিশালী ভিত্তির ওপর দাঁড়িয়ে। এ ক্ষেত্রে প্রতিবেশী সব দেশের তুলনায় এগিয়ে রয়েছে বাংলাদেশ।
ভারতের মূল্যস্ফীতি (সিপিআই) ৯ দশমিক ৩৯ শতাংশ উল্লেখ করে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর বলেন, নতুন ভিত্তিবছর অনুযায়ী সর্বশেষ মূল্যস্ফীতি ৬ দশমিক ৫৭ শতাংশ। পুরোনো ভিত্তিবছর ধরলে তা হয় ৭ দশমিক ৭৫ শতাংশ।
থোক বরাদ্দ: বাজেটে থোক বরাদ্দ কত টাকা রাখা হয়েছে, এই প্রশ্নের জবাব দেননি অর্থমন্ত্রী। এ বিষয়ে অতিরিক্ত অর্থসচিবকে জবাব দিতে বলেন তিনি। রণজিৎ চক্রবর্তী বলেন, থোক বরাদ্দ রাখা বাজেটচর্চার মধ্যে থাকে। তিনি বলেন, এটি থাকতেই হবে কিছুটা এবং চিরকালই থাকবে। পরিমাণটা আগে থেকে বলা সম্ভব নয় উল্লেখ করে তিনি জানান, আগামী বাজেটের জন্য থোক বরাদ্দ রাখা হয়েছে এক হাজার ৯০০ কোটি টাকা।
আওয়ামী লীগ ও বিএনপি—এই দুই সরকারের মধ্যে পার্থক্য রয়েছে মন্তব্য করে তথ্যমন্ত্রী বলেন, থোক বরাদ্দ মোটেই গোপনে বণ্টন হবে না।
দুর্নীতি: অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘বর্তমান সরকারের শুরুর দিকেই দুর্নীতি কমাব বলেছিলাম। সেটা কমিয়েছি।’ তিনি বলেন, বর্তমান সরকারের সবচেয়ে বড় কৃতিত্ব হচ্ছে উচ্চপর্যায়ে যে দুর্নীতি হতো, তা বর্তমানে নেই।
তবে স্থানীয় পর্যায়ের খবর ঠিক জানেন না বলে উল্লেখ করেন অর্থমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘শক্তভাবে বলতে পারব না। তবে আমার মনে হয়, কিছুটা প্রশমিত হয়েছে।’
সিপিডির বাজেট বিশ্লেষণ প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাব দেন অর্থমন্ত্রী। এবারের বাজেটকে পরাবাস্তব বলে সিপিডি যে মন্তব্য করেছে, সে প্রসঙ্গে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘আমি জানি না, এর মাধ্যমে কী বোঝাতে চাইছে সিপিডি।’ কোন উৎস থেকে কত টাকা আসবে, তা স্পষ্ট বলা রয়েছে বলে জানান অর্থমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘তা যদি না হয়, তাহলে স্পষ্টবাদিতা কোন দুনিয়া থেকে আসবে, আমি জানি না।’
আর তথ্যমন্ত্রী আহ্বান জানান, বিরোধী দল যেন চক্রান্তের পথ থেকে বেরিয়ে নির্বাচন ও গণতন্ত্রের পথে আসে।
২০১৩-১৪ অর্থবছরের বাজেট-উত্তর সংবাদ সম্মেলনে অর্থমন্ত্রী এসব কথা জানান। রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে গতকাল শুক্রবার এই সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। পুরো সংবাদ সম্মেলনটিই ছিল মূলত প্রশ্নোত্তর-নির্ভর।
সংবাদ সম্মেলনে সবচেয়ে বেশি প্রশ্ন এসেছে কালোটাকা নিয়ে। কালোটাকা সাদা করার সুযোগ দেওয়ার বিষয়ে বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী স্বীকার করেন, এটা তাঁর সমঝোতা। তবে আত্মপক্ষ সমর্থন করে তিনি বলেন, গণতন্ত্রে এই সমঝোতা করতেই হয়। তবে তিনি বলেন, কালোটাকা সাদা করা তেমন বড় কোনো বিষয় নয়। বরং সবাই কালোটাকার বিষয়টি নিয়ে কথা বলছে। আসলে বিষয়টি আরও বৃহত্তর প্রেক্ষাপটে দেখতে হবে। কারণ, আরও অনেক বিষয়ের সঙ্গে সমঝোতা করতে হয়। এ প্রসঙ্গে অর্থমন্ত্রী বলেন, সমঝোতার কারণেই সিএনজির দাম ডিজেলের সমান করতে চেয়েও তিনি পারেননি। রাষ্ট্রায়ত্ত অনেক প্রতিষ্ঠানের লোকসান মেনে নিয়েও ভর্তুকি দিয়ে যেতে হচ্ছে। অর্থমন্ত্রীর ভাষায়, ‘মেট্রোরেলসহ দুটি চমৎকার প্রকল্প ছিল। একটিও করতে পারিনি। করস্থানীয় সরকারব্যবস্থাকে শক্তিশালী করতে পারিনি। এগুলোও তো সমঝোতা।’
পরিকল্পনামন্ত্রী এ কে খন্দকার ও তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনুকে পাশে নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন অর্থমন্ত্রী। সঙ্গে রাখেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আতিউর রহমান, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান মো. গোলাম হোসেন, অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের সচিব আবুল কালাম আজাদ, পরিকল্পনাসচিব ভুঁইয়া সফিকুল ইসলাম ও অর্থ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব রণজিৎ চক্রবর্তীকে।
এ সময় সামনে বসা ছিলেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ, প্রধানমন্ত্রীর অর্থ উপদেষ্টা মসিউর রহমান, জ্বালানি উপদেষ্টা তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী ও বিনিয়োগ বোর্ডের নির্বাহী চেয়ারম্যান এস এ সামাদ।
অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘অনেকেই বলছেন, এই বাজেট বাস্তবায়ন করবে তিন সরকার মিলে। না, এটি করবে দুই সরকার। আবার অনেকেই বলছেন, এই বাজেট উচ্চাভিলাষী, জনতুষ্টিমূলক, বিশাল, ঋণনির্ভর, ভোটের বাজেট ইত্যাদি। হ্যাঁ, বাজেট উচ্চাভিলাষী তো বটেই।’
দেশের অর্থনীতির চেহারা বদলে গেছে বলে দাবি করেন অর্থমন্ত্রী। হরতাল ও সহিংসতার কারণে এর গতি কিছুটা শ্লথ হয়ে যায়। তিনি বলেন, ‘অর্থনীতিবিদ ও সুশীল সমাজের চোখে তা ধরা পড়ছে না। হয়তো তা গ্রহণ করতে তাঁদের বাধে।’
কালোটাকা সাদা করার একটি নিয়মিত পদ্ধতিই সৃষ্টি করেছেন বলে উল্লেখ করেন অর্থমন্ত্রী। তিনি বলেন, এর বাইরে আবাসন খাতে আলাদা করে কালোটাকা সাদা করার সুযোগ দেওয়া হয়েছে। যুক্তি দিতে গিয়ে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘এটি উৎপাদনশীল খাত নয়। তবে এই খাতে বিপর্যয় গেছে অনেক।’
অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘কালোটাকা অভিযান করে আদায় করা যায় না। আদায় করতে লাগবে অর্থনৈতিক কৌশল ও আদর্শিক অবস্থান। তবে হ্যাঁ, জমি ও বাড়ি বিক্রির ফাঁকফোকর বন্ধ করতে হবে এবং কমাতে হবে দুর্নীতি।’
আয়, ব্যয় ও অর্থায়ন: অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘আমার সব বাজেটই জনতুষ্টির। জনগণের সেবা করছি। একই সঙ্গে আয়ও বাড়ছে। পাঁচ বছরে যে আয় হয়েছে, ৩০ বছরেও তা হয়নি।’
ব্যয় পরিকল্পনা আগে যে রকম ছিল, এখনো সে রকমই আছে বলে মনে করেন অর্থমন্ত্রী। আর আয় প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘এনবিআর যে আইনকানুন ও পরিবেশ তৈরি করেছে, তা কর আদায়বান্ধব।’ অর্থমন্ত্রী বলেন, অর্থায়নের ব্যবস্থা নেই বলে যে বলা হচ্ছে, তা ভ্রান্তিমূলক বক্তব্য।
সিম কার্ডে কর কমানোর বিষয়ে অর্থমন্ত্রীও বলেন, বাজার যাদের দখলে, তাদের পক্ষে ভর্তুকি দিয়ে সিম বিক্রি করা সহজ, যা অন্যদের পক্ষে কঠিন। একধরনের সাম্যের নীতি আনার জন্য এটি করা হয়েছে।
প্রবৃদ্ধি ও বিনিয়োগ: অর্থমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) হিসাবের চেয়ে প্রবৃদ্ধির হার বাড়বে। কারণ, অনেক কিছুই বিবিএসের হিসাবে আসেনি।
তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী বলেন, চলতি অর্থবছরের মধ্যে বিদ্যুৎ উৎপাদিত হয় নয় হাজার মেগাওয়াট। ভাড়াভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র না হলে জিডিপির প্রবৃদ্ধির হার ৩ থেকে ৪ শতাংশে নেমে আসত বলে তিনি অপ্রকাশিত একটি গবেষণা প্রতিবেদন থেকে তথ্য দেন।
আতিউর রহমান বলেন, ‘অর্থবছর শেষে প্রবৃদ্ধি যদি ৬ দশমিক শূন্য ৩ শতাংশ ধরেও নিই, তা-ও নৈরাশ্যজনক নয়।’
এস এ সামাদ বলেন, বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার, অর্থাৎ ২০০৯ সালের আগে ঋণমানের দিক থেকে বাংলাদেশ একটা অপরিচিত দেশ ছিল। বিশ্বখ্যাত ঋণমান নির্ণয়কারী সংস্থাগুলোর সর্বশেষ বিবেচনায় বাংলাদেশের অবস্থান স্থিতিশীল, যেখানে যুক্তরাষ্ট্রের মানও নিচে নেমে গেছে। জিডিপির তুলনায় বিনিয়োগের হার ২৮ শতাংশে উন্নীত হলেই ৭ দশমিক ২ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন সম্ভব বলে তিনি মনে করেন।
মূল্যস্ফীতি: মুক্তবাজার অর্থনীতির কাছে বন্ধক থাকা অর্থনীতির মোড় খানিকটা হলেও ঘুরিয়ে দিয়েছেন বলে অর্থমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানান তথ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, ৬ শতাংশের ওপর প্রবৃদ্ধি ও ১০ শতাংশের নিচে মূল্যস্ফীতি রাখার যে সমন্বয়, তা অর্থমন্ত্রীর দক্ষতার সঙ্গে বাজেট প্রণয়নের কারণেই সম্ভব হয়েছে। বুদ্ধিজীবী ও অর্থনীতিবিদেরা এ সাফল্য আরও প্রকাশ্যে স্বীকার করতে পারতেন বলে মনে করেন তথ্যমন্ত্রী।
এ বিষয়ে আরও কথা বলেন আতিউর রহমান। তিনি বলেন, শুধু মূল্যস্ফীতি নয়, অর্থনীতির সব সূচকই এখন শক্তিশালী ভিত্তির ওপর দাঁড়িয়ে। এ ক্ষেত্রে প্রতিবেশী সব দেশের তুলনায় এগিয়ে রয়েছে বাংলাদেশ।
ভারতের মূল্যস্ফীতি (সিপিআই) ৯ দশমিক ৩৯ শতাংশ উল্লেখ করে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর বলেন, নতুন ভিত্তিবছর অনুযায়ী সর্বশেষ মূল্যস্ফীতি ৬ দশমিক ৫৭ শতাংশ। পুরোনো ভিত্তিবছর ধরলে তা হয় ৭ দশমিক ৭৫ শতাংশ।
থোক বরাদ্দ: বাজেটে থোক বরাদ্দ কত টাকা রাখা হয়েছে, এই প্রশ্নের জবাব দেননি অর্থমন্ত্রী। এ বিষয়ে অতিরিক্ত অর্থসচিবকে জবাব দিতে বলেন তিনি। রণজিৎ চক্রবর্তী বলেন, থোক বরাদ্দ রাখা বাজেটচর্চার মধ্যে থাকে। তিনি বলেন, এটি থাকতেই হবে কিছুটা এবং চিরকালই থাকবে। পরিমাণটা আগে থেকে বলা সম্ভব নয় উল্লেখ করে তিনি জানান, আগামী বাজেটের জন্য থোক বরাদ্দ রাখা হয়েছে এক হাজার ৯০০ কোটি টাকা।
আওয়ামী লীগ ও বিএনপি—এই দুই সরকারের মধ্যে পার্থক্য রয়েছে মন্তব্য করে তথ্যমন্ত্রী বলেন, থোক বরাদ্দ মোটেই গোপনে বণ্টন হবে না।
দুর্নীতি: অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘বর্তমান সরকারের শুরুর দিকেই দুর্নীতি কমাব বলেছিলাম। সেটা কমিয়েছি।’ তিনি বলেন, বর্তমান সরকারের সবচেয়ে বড় কৃতিত্ব হচ্ছে উচ্চপর্যায়ে যে দুর্নীতি হতো, তা বর্তমানে নেই।
তবে স্থানীয় পর্যায়ের খবর ঠিক জানেন না বলে উল্লেখ করেন অর্থমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘শক্তভাবে বলতে পারব না। তবে আমার মনে হয়, কিছুটা প্রশমিত হয়েছে।’
সিপিডির বাজেট বিশ্লেষণ প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাব দেন অর্থমন্ত্রী। এবারের বাজেটকে পরাবাস্তব বলে সিপিডি যে মন্তব্য করেছে, সে প্রসঙ্গে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘আমি জানি না, এর মাধ্যমে কী বোঝাতে চাইছে সিপিডি।’ কোন উৎস থেকে কত টাকা আসবে, তা স্পষ্ট বলা রয়েছে বলে জানান অর্থমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘তা যদি না হয়, তাহলে স্পষ্টবাদিতা কোন দুনিয়া থেকে আসবে, আমি জানি না।’
আর তথ্যমন্ত্রী আহ্বান জানান, বিরোধী দল যেন চক্রান্তের পথ থেকে বেরিয়ে নির্বাচন ও গণতন্ত্রের পথে আসে।
No comments