মন্দা ও অর্থনীতিবিদদের কথা by ড. মহীউদ্দীন খান আলমগীর
এ বছর জানুয়ারির ১২-এর সকালে ধূমায়িত কফির কাপ নিয়ে বসেছিলাম বস্টন বিশ্ববিদ্যালয়ের মু্যগার গ্রন্থাগারের লাগোয়া ছাত্র-শিক কেন্দ্রের এক কফি শপের জানালার পাশে। বরফ পড়া শীত সত্ত্বেও আকাশ নরম নীল।
হঠাৎ পাশের টেবিলে কার ফেলে যাওয়া নিউইয়র্ক টাইমসের দিকে নজর গেল। প্রথম পাতার শিরোনাম : চীন মন্দার ওপরে উঠে যাচ্ছে। শিরোনামের নিচে দেখলাম, চীন যুক্তরাষ্ট্রকে ছাড়িয়ে পৃথিবীর বৃহত্তম মোটর গাড়ির বাজারে রূপান্তরিত হয়েছে, জার্মানিকে ছাড়িয়ে পৃথিবীর বৃহত্তম রফতানি দেশে উঠে গেছে এবং বিশ্বব্যাংকের প্রাক্কলন অনুযায়ী অতিসত্বর জাপানকে ছাড়িয়ে যুক্তরাষ্ট্রের পরই পৃথিবীর দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থ ব্যবস্থায় উন্নীত হচ্ছে। এর সমকালীন বিদেশী মুদ্রার রিজার্ভ ২ ট্রিলিয়ন ডলারেরও বেশি, মাথাপিছু আয় বাড়ার বার্ষিক হার ১০%। এর বিপরীতে মনে এল যুক্তরাষ্ট্র পৃথিবীর বৃহত্তম অর্থ ব্যবস্থায়, এখনও বেকারত্বের হার ১০%-এর চেয়ে নিচে নামেনি, প্রবৃদ্ধির হার এখনও দর্শনীয় হারে বাড়া শুরু করেনি, বাজেট ও বিদেশ বাণিজ্যে বছরের পর বছর ঘাটতি কমেনি। ২০০৭-এ শুরু হওয়া মন্দা যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপ, বিশেষত জার্মানি ও জাপানকে এখনও ছেড়ে যায়নি।২০০৭-এ মন্দা শুরু হয়েছিল মূলত যুক্তরাষ্ট্রে, আবাসন শিল্পকে ঘিরে। সহজলভ্য ঋণ, কোমল মুদ্রা নীতি ও ঋণ প্রবাহের ওপর সরকারী তত্ত্বাবধানের অপ্রতুলতা আবাসনে বিনিয়োগ যুক্তিবহিভর্ূত মাত্রায় বাড়িয়ে ঋণ ব্যবস্থায় বিস্তৃত ও উঁচু মাত্রায় খেলাপিত্ব বাড়িয়েছিল। ফলত কতিপয় আর্থিক প্রতিষ্ঠান দেউলিয়াত্বে গিয়েছিল, নির্মাণ শিল্পে অপ্রত্যাশিত ধস নেমেছিল, মাঝারি ও ুদ্র শিল্পে উৎপাদন নিচের দিকে মোড় নিয়েছিল, ভোক্তাদের অনুকূলে অর্থায়নের মাত্রা কমে গিয়েছিল, বিনিয়োগ স্থবির হয়ে পড়েছিল এবং শেয়ার বাজারে দরপতন শুরু হয়েছিল। গোলকায়িত অর্থ ব্যবস্থায় এর প্রভাব পড়েছিল পশ্চিম ইউরোপ ও জাপানে। সবচেয়ে দুঃখজনক যা হয়েছিল তা হলো, অর্থ ব্যবস্থার নেপথ্যনায়ক এসব দেশের অর্থনীতিবিদরা আবাসন শিল্পের নিম্নায়নকে ঘিরে এই অর্থনৈতিক মন্দার পূর্বাভাস দিতে এবং তার নিম্নগতি থামাতে সংশোধনীয় পদপেগুলো সময়মতো নীতি নির্ধারকদের কাছে দর্শন ও সুনির্দিষ্ট অবয়বে সুপারিশ করতে ব্যর্থ হয়েছিল।
কেন এমন হলো? হয়েছে এ জন্য যে এই মন্দার কয়েক যুগ আগ থেকে অর্থনৈতিক বিশ্লেষণে অতিরণশীলতার জয়গান চলছিল। ১৯৩০-এর মহামন্দাকে ঘিরে কেইনসীয় অর্থনীতির সূত্র অনুযায়ী পশ্চিমের প্রায় সকল দেশে মুক্ত অর্থ ব্যবস্থার বাজার সংশোধনে যুক্তিসঙ্গত সরকারী হস্তপে, লাগসই রাজস্ব মুদ্রা ও বিনিময় নীতি, ফলপ্রসূ চাহিদা সংরণে সরকারী কার্যক্রমের দর্শন গৃহীত ও অনুসৃত হয়ে আসছিল। ১৯৫০ থেকে ৮০-এর তিন দশকে স্যামুয়েলসন ব্রানসন, টেইলর সেন স্যাকস, সোকলফ প্রমুখ ও তাঁদের অনুসারীরা এই সকল সূত্র ও দর্শন অনুযায়ী সরকারী হস্তেেপর যৌক্তিকতা নব্য ধ্রুপদী মিশ্রণ (নিউ ক্যাসিক্যাল সিনথেসিস) তত্ত্বের মোড়কে সমাজ জীবনের প্রায় সকল দিকে বিস্তৃত ভাবে উপস্থাপিত করে এসেছিলেন। সোকলফ, ইংগারম্যান ও লাপোর্টা এই পটভূমিকায় প্রবৃদ্ধির পক্রিয়ায় প্রশাসনিক প্রতিষ্ঠানের ভূমিকার ওপর জোর দিয়েছিলেন।
গত শতাব্দীর শেষ চতুর্থাংশে পশ্চিমা পৃথিবীর অব্যাহত অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির বাতাবরণে নব্য ধ্রুপদী অর্থনৈতিক মিশ্রণ তত্ত্বের প্রয়োগযোগ্যতা ছাড়িয়ে মুক্ত উদ্যমের প্রবক্তারা ব্যক্তি উদ্যোগ ও বাজার ব্যবস্থাকে অর্থ ব্যবস্থার একমাত্র বা এককভাবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সৃজনশীল ও উৎপাদনশীল উপকরণ হিসাবে উপস্থাপিত করতে চেয়েছেন। এই উদ্যমের অগ্রভাগে ছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি ও ব্যবসায় প্রশাসন স্কুল বা বিভাগ। এই ঘরানার ইউজিন ফামা নিপুণ বাজার (ইফিসিয়েন্ট মার্কেট) তত্ত্ব নিয়ে বললেন, অনিয়ন্ত্রিত এবং লাভ প্রণোদিত আর্থিক ও ব্যাংক ব্যবস্থাই প্রবৃদ্ধির সবের্াত্তম মাধ্যম। যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় ব্যাংক বা ফেডারেল রিজার্ভ বোর্ডের বহুকালীন চেয়ারম্যান পল ভলকার ও আলান গ্রীনস্পান এবং তাঁর সহযোগীরা নিয়ন্ত্রণের বাইরে আর্থিক ব্যবস্থার ফলপ্রসূতা প্রচার ও প্রয়োগ করে চলেছেন। ১৯৯২ সালে অর্থনীতিতে নোবেল জয়ী গ্যারী বেকার বিনিয়ন্ত্রণ সূত্রের গুরু হিসাবে শিা, অপরাধ ও পারিবারিক আচরণ ও অর্থনৈতিক বিবেচনার ওপর ছেড়ে দিয়ে সমাজকে অধিকতর মুক্ত ও উৎপাদনশীল করার কথা বলেছেন। প্রেসিডেন্ট বুশের অর্থমন্ত্রী ল্যারী সামার্স, যিনি এখন প্রেসিডেন্ট ওবামার শীর্ষ অর্থনৈতিক উপদেষ্টা, তেমনি সকল েেত্র বিনিয়ন্ত্রণের ওপর জোর দিয়েছেন। রবার্ট লুকাস (যিনি ১৯৯৫ সালে অর্থনীতিতে নোবেল পেয়েছেন) তাঁর যৌক্তিক প্রত্যাশা তত্ত্ব নিয়ে রণশীলদের অগ্রভাগে দাঁড়িয়ে বলেছেন, অর্থ ব্যবস্থা আত্মনিয়ন্ত্রণশীল, বাইরে থেকে এর নিয়ন্ত্রণের প্রয়োজন নেই। লুকাসের এরূপ তাত্তি্বক উপস্থাপনার আগে মিল্টন ফ্রিডম্যানের তত্ত্ব প্রবৃদ্ধির ভিত্তি নিয়ন্ত্রণ এড়িয়ে আর্থিক সমষ্টি (ফাইনান্সিয়ান্স এগ্রিগেট) ক্রমাগত ভাবে বাড়ানো এর সময়ান্তরিক অনুরণন বলে প্রতিভাত। নোবেল নিয়ে ফ্রিডম্যান ২০০৬ সালে মারা গেছেন। তাঁর এক উত্তরসূরি জেমস হ্যাফম্যান (অর্থনীতিতে আর এক নোবেল জয়ী) তেমনি শিকাগোর রণশীলতার ধারক। তাঁর মতে শিার মতো েেত্রও নিয়ন্ত্রণের চাইতে প্রণোদনা অধিকতর ফলপ্রসূ। ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির প্রখ্যাত অধ্যাপক রবার্ট শিলার বলেছেন, বাজার ও মুক্ত অর্থ ব্যবস্থায় অযৌক্তিক আশাবাদ ও উৎসাহ মনস্তাত্তি্বক উপকরণ ব্যত্যয় আনতে পারে, কিন্তু বিনিয়ন্ত্রণের মৌলিকত্ব বিকল্পায়িত করতে পারে না। শিকাগোর স্টিভান লেভিট (দুবর্ীপাকের অর্থনীতি বা ফ্রিইকোনমিকসের লেখক) বলেছেন, অপরাধ, ভ্রুণ হত্যা, শিকদের পারদর্শিতার েেত্রও অর্থনীতির মৌলতত্ত্ব বিনিয়ন্ত্রণের সূত্রসহ সংশোধনীয় ভাবে প্রয়োগযোগ্য। আর ব্যবহারিক অর্থনীতির অন্যতম স্রষ্টা রিচার্ড থেলার মনস্তত্ত্বের অন্তর্দৃষ্টি অর্থনীতির সুশৃক্মখল চিন্তাধারায় সংযুক্ত করতে যেয়ে প্রকারান্তরে বিনিয়ন্ত্রণের পতাকা উড়িয়েছেন। তাঁর মতে, আর্থিক হাতিয়ারসমূহের ফলশ্রুতি ঠেলে দেয়ার আধিক্য (হাই লেভারেজ) ও আস্থার ভাঙ্গন সাম্প্রতিক সময়ের অর্থনৈতিক বিপর্যয় আনার অনুকূলে কাজ করেছে। এসবের বাইরে ১৯৮০-এর দশকের শেষ ভাগে কমু্যনিজম অর্থাৎ সোভিয়েত ইউনিয়নসহ অন্যান্য অতি নিয়ন্ত্রিত অর্থ ব্যবস্থার পতনের সাথে নিয়ন্ত্রণের প্রযোজ্যতা অর্থনৈতিক তাত্তি্বক ও নীতি নির্ধারকদের তীর ধনুকের ঝাপি থেকে হারিয়ে যায়। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল ও বিশ্বব্যাংক এবং ত্রে ও সময় বিশেষে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য সংগঠন (আইটিও) বিনিয়ন্ত্রণের পতাকা নিয়ে দরিদ্র দেশ সমূহের সরকারসমূহকে নিজর্ীবতার সবক দিতে থাকে। প্রবৃদ্ধি তত্ত্বে এক নব্য উদারী (নিউ লিবারেল) সূত্র সরকারকে তার মূল প্রশাসনিক ও প্রণোদনামূলক েেত্র সীমিত রেখে অন্য সকল অর্থনৈতিক খাতে বিনিয়ন্ত্রণ গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করার তাত্তি্বক যুক্তি প্রসারিত করে যায়।
শিকাগো ঘরানার দর্শন ও সুপারিশের বিপরীতে সুস্পষ্ট মত প্রকাশ করেছিলেন আন্তর্জাতিক অর্থ তহবিলের এককালীন প্রধান অর্থনীতিবিদ (এখন শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ে শিকতায় রত) রঘুরাম রজন ও শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিন্নমতাবলম্বী অনিল কাশ্যপ। ২০০৫ সালে রঘুরাম সুস্পষ্ট ভাবে বলেছিলেন, বিনিয়ন্ত্রণ, জটিল আর্থিক উৎপাদ বা হাতিয়ার, এবং আর্থিক বাজারে লেনদেনকারীদের অযৌক্তিক ও সৃজনশীল পারিতোষিক যুক্তরাষ্ট্রের আর্থিক ব্যবস্থায় বিপর্যয় ডেকে আনবে। কাশ্যপ বলেছেন যে, কোন অর্থ ব্যবস্থায় মূল্যের অপরিবর্তনীয়তা বিনিয়ন্ত্রণের সূত্রকে ফলপ্রসূতা দেয় না। চীনের অর্থনীতিবিদরা তাদের (অযৌক্তিক) প্রথা অনুযায়ী নীতি নির্ধারকদের কাজের নেপথ্যে নিশ্চুপ ভাবে কাজ করে গেছেন, লাগসই সরকারী হস্তপেকে অধিকতর শানিত করেছেন। ভিন্নতর দৃষ্টিকোণ থেকে রিচার্ড পোসনার (এ ফেইলার অব ক্যাপিটালিজম, ২০০৯) বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রে নরম মুদ্রানীতি ও বিনিয়ন্ত্রণ ২০০৭-এর মন্দার জন্য দায়ী এবং এই দায়িত্ব আরোপণে মূলত শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ের উৎসারিত অর্থনৈতিক অতি রণশীলতা উপকরণ যুগিয়েছে। পোসনার মূলত আইনজ্ঞ, লিখেছিলেন ১৯৭৩ সালে সেই নাম করা বই, আইনের অর্থনৈতিক বিশ্লেষণ, যাকে ভিত্তি করে অর্থনীতি ও আইন সামাজিক বিশ্লেষণের দুই প্রধান উপকরণ হিসাবে বিবেচিত হয়ে আসছে। অর্থনীতিতে আইন উৎসারিত বাহ্যিকতা তত্ত্বের প্রবক্তা ছিলেন পোসনার। লাতিন আমেরিকা ও জাপানের অর্থনীতিবিদরা রণশীল শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ের বিনিয়ন্ত্রণ তত্ত্বকে আমার জানা মতে তাদের অর্থ ব্যবস্থা সমূহে সর্বাংশে গ্রহণীয় বলে সমর্থন করেননি।
কফির কাপে চামচ নেড়ে তরুণ শিাথর্ীদের টুকরো টুকরো কথার মেলে এসব যখন ভাবছিলাম তখন প্রোপটে ভেসে আসল : যুক্তরাষ্ট্রে তখনও বেকারত্ব ১০%-এর নিচে নামেনি, নিউইয়র্কে খয়রাতী সু্যপ খাওয়ার লাইনে যোগ দেয়া জনগণের সংখ্যা কমেনি, প্রেসিডেন্ট ওবামা বলেছেন, অর্থনৈতিক মন্দার সবচাইতে খারাপ পর্যায় কাটিয়ে ওঠা গেছে এবং যুক্তরাষ্ট্র সরকার বড় বড় ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ওপর কর আরোপ করে ব্যাংকিং ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান সমূহ বাঁচানোর ব্যয় উঠিয়ে নেবে আর সরকার থেকে সাহায্য না পাওয়া লেহম্যান ব্রাদার্সের পতনের পটে সরকার কতর্ৃক সাহায্যকৃত জেপি মরগ্যান ও চেজ ব্যাংকের ২০০৯ সালের লাভ রেকর্ড ১১০৭ বিলিয়ন ডলারে পেঁৗছে গেছে। এর বিপরীতে জার্মানি ও জাপান ইতোমধ্যে মন্দা অনেকাংশে উতরে গেছে। চীনকে মন্দা স্পর্শ করতে পারেনি। ভারতে প্রাথমিক ইতঃস্ততা কাটিয়ে বিনিয়োগ ও প্রবৃদ্ধি ওপরে উঠে যাচ্ছে। বাংলাদেশে কৃষিতে উৎপাদনশীলতার উর্ধগতি ও দাতা সংস্থাদের পরামর্শের বাইরে যথার্থ রাজস্ব ও মুদ্রা নীতির অনুসরণ মন্দাকে দূরে সরিয়ে রাখতে সমর্থ হয়েছে। লাতিন আমেরিকা ও আফ্রিকার অধিকাংশ দেশ যুক্তরাষ্ট্র উৎসারিত মন্দার ভাটির টানে বাজারের সরকারী নিয়ন্ত্রণের সূত্র তাদের অর্থনৈতিক তীর-ধনুকের ঝাপি থেকে ফেলে দেয়নি। যথেষ্ট সম্পদ সত্ত্বেও ব্যবস্থাপনার অযোগ্যতা ও অনিপুণতা তাদের অর্থনৈতিক অর্জনকে ই্ি#৮৭৭৬;ত হার ও মাত্রায় সামনে এগিয়ে নিয়ে যায়নি।
২০০৭-২০০৯ এর মন্দার পরিক্রমা ১৯৮০-৯০ দশকের অর্থনৈতিক বিশ্লেষণে অতি রণশীলতার দাপট এবং যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপে মন্দার সময়ে চীন, ভারত ও বাংলাদেশের অভিজ্ঞতা আমাদের চিন্তায় আবার নব্য ধ্রুপদী অর্থনৈতিক মিশ্রণের দিকে নিয়ে যায়। আমাদেরকে মুক্ত উদ্যম ও অবাধ বাজার ব্যবস্থাকে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও স্থিতিশীলতার মৌলবাহক হিসাবে ব্যবহার নিশ্চয়ই করতে হবে, কিন্তু এই প্রক্রিয়ায় সরকারকে বাজার নিখুঁতকরণ ও ব্যক্তি উদ্যোগের অব ও আইনী কাঠামো নির্ধারণ এবং আর্থিক বাজারে প্রয়োজনীয় সংস্কার ও উন্নয়নে প্রযুক্ত রাখতে হবে। দারিদ্র্য বিমোচন ও অবকাঠামো উন্নয়নে প্রত্য সরকারী ভূমিকা বিস্তৃত করে ুদ্র ও গ্রামীণ সঞ্চয় উৎসারিত করে এবং মূলধন বাজার প্রসারিত করে ও মেয়াদী ঋণ প্রবাহ বাড়িয়ে আমাদের স্থির বিশ্বাসে এগিয়ে যাওয়া সঙ্গত হবে। আর গণতন্ত্র ও আইনের শাসনের সূত্র কর্ম ও সৃজনশীলতার স্বাধীনতা এবং উৎপাদনশীলতা ও পরিশ্রমের বিপরীতে ফিরতির নিশ্চয়তা সমাজের অবধারিত সত্য ও অনুসরণীয় ল্য হিসাবে গ্রহণ ও লালন করতে হবে। নরম নীল আকাশের দিকে চোখ রেখে কফির কাপে শেষ চুমুক দেয়ার আগে উন্নয়ন অর্থনীতির নতুন পীঠস্থান আমার ও স্ত্রী সিতারার আলমামেটার বস্টন বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির কতিপয় আমেরিকান, এশিয়ান ও লাতিন আমেরিকান ছাত্র ছাত্রীর কাছে যখন তাদের মন্দা বিশ্লেষণের বিপরীতে এ কথাগুলো তুলে ধরেছি, উৎসুক-নীরবতায় সম্মতি জানালেন তাঁরা। বললেন, গোলকায়িত অবাধ বাণিজ্য এই প্রক্রিয়ায় কি ভূমিকা রাখবে তাই হবে এই দশকের অর্থনীতিবিদদের দেখা ও জানার গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। বললাম, এই পটভূমিকায় চীন ও ভারত কি ধরনের অর্থনৈতিক নীতি অনুসরণ করবে সকল অর্থ ব্যবস্থায় নীতি নির্ধারণের নেপথ্যে নায়ক অর্থনীতিবিদরা শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ের অতি রণশীলতার মোহ ও প্রভাব কাটাতে নব্য ধ্রুপদী মিশ্রণ তত্ত্বের কোথায় কি সংশোধন আনবে বা নতুন তত্ত্বের অবতারণা করবেন তাই হবে এই দশকের এই েেত্র লণীয় বিষয়। নতুনভাবে পরিমার্জিত নব্য ধ্রুপদী মিশ্রণ তত্ত্বের আলোকে যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের চেয়ারম্যান বার্নানকে এবং আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের প্রধান ডোমিনিক স্ট্রস মেয়ার কি বলেন, আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের েেত্র কি সমঝোতা কার্যকর হয় আর বিশ্বব্যাংক ও এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক আর্থিক সহযোগিতার শর্ত হিসাবে নব্য উদারীকরণের কি উপকরণ নিয়ে উন্নয়নশীল দেশের দিকে এগিয়ে যাবে তা সচেতন যত্নের সাথে যাচাই করে আমাদেরকে এগুতে হবে।
লেখক : সাবেক মন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য
No comments