প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ-জরুরি প্রসঙ্গ অনুপস্থিত
মহাজোট সরকারের চার বছর পূর্তি উপলক্ষে শুক্রবার জাতির উদ্দেশে ভাষণ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ২০১৩ সাল ক্ষমতাসীন সরকারের মেয়াদ পূর্তির বছর। জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে এরই মধ্যে নির্বাচনী প্রস্তুতি শুরু হয়েছে দলগুলোর ভেতর।
বিভিন্ন দলের শীর্ষ নেতৃবৃন্দ জনসংযোগে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন। প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যেও নির্বাচনী আমেজের প্রাধান্য। গত চার বছরে সরকারের সাফল্যের বিস্তারিত বিবরণ তিনি উপস্থাপন করেছেন, অসমাপ্ত কাজ শেষ করার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন। জনগণের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন, যাতে তারা আবারও আওয়ামী লীগকে নির্বাচিত করে দেশ পরিচালনার সুযোগ দেয়। উন্নয়ন পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য সরকারের ধারাবাহিকতা যে অত্যন্ত প্রয়োজনীয় সে কথাও স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন। সরকারের সাফল্য নিয়ে ভালো-মন্দ দুই ধরনের সমালোচনাই আছে। সবাই স্বীকার করেন, বেশ কিছু ক্ষেত্রে সরকারের অর্জন আছে, আবার ব্যর্থতার তালিকাও ছোট নয়। কিছু ক্ষেত্রে সরকারের মনোযোগ পড়েনি, আবার কোনো কোনো ক্ষেত্রে সরকারের মনোযোগ আশা জাগিয়েছে। সবমিলিয়ে আওয়ামী লীগের জনপ্রিয়তা যেমন আশঙ্কাজনক পর্যায়ে নেমে আসেনি, তেমনি শেখ হাসিনার প্রতিও জনআস্থার তেমন কমতি ঘটেনি। রাজনীতির সংকট বরং অন্যত্র এবং তা আগামী নির্বাচনকে ঘিরেই। আগামী নির্বাচন কীভাবে হবে এবং প্রধান বিরোধী দল নির্বাচনে অংশ নেবে কি-না তা এখন দেশজুড়ে আলোচিত প্রসঙ্গ। তারও চেয়ে বড় প্রশ্ন, নির্বাচন নিয়ে ঘনীভূত সংকটের সমাধান কোন পথে? রাজপথের সংঘর্ষ-সংঘাত, নাকি আলাপ-আলোচনা, কোন পথে সমাধান? নাগরিকরা আশা করেন, সংঘর্ষ নয়_ সংলাপের মাধ্যমেই সমাধান হোক। একটি নিরপেক্ষ, সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচনের ব্যবস্থা হোক। আর এ আশা থেকেই প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের দিকে সবার দৃষ্টি নিবদ্ধ ছিল। সবাই আশা করেছিলেন, আগামী নির্বাচন নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যে স্পষ্ট ইঙ্গিত থাকবে এবং তার বক্তব্যের পর সরকার ও বিরোধী দলের মধ্যে আলাপ-আলোচনার পথ খুলে যাবে। কিন্তু বাস্তবে এমন কোনো ইঙ্গিত প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যে পাওয়া যায়নি। তত্ত্বাবধায়ক সরকার বিষয়ে সংলাপের বিষয়টি না থাকায় প্রাথমিক প্রতিক্রিয়ায় বিএনপি বক্তব্যের সমালোচনা করেছে। প্রধানমন্ত্রী ওয়ান-ইলেভেনের সমালোচনা করে এমন পরিস্থিতি যাতে সৃষ্টি না হয় সেজন্য জনগণকে সতর্ক থাকতে বলেছেন। সকল গণতন্ত্রমনস্ক মানুষই তার সঙ্গে সহমত পোষণ করবেন। কিন্তু নির্বাচন নিয়ে অনিশ্চয়তায় ওয়ান-ইলেভেনের মতো পরিস্থিতির শঙ্কাই জনমনে জোরদার হবে। কেউই চায় না তেমন পরিস্থিতি তৈরি হোক। গণতন্ত্রের ধারাবাহিকতা বজায় থাকুক, সেটাই সবার প্রত্যাশা। আর এজন্য আলাপ-আলোচনার পথটাই সর্বাগ্রে খুলে দেওয়া দরকার, নির্বাচন নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর একটি সিদ্ধান্তে পেঁৗছানো প্রয়োজন। ওয়ান-ইলেভেন যারা ঘটিয়েছিল তারা যদি এখনও সক্রিয় থাকে তবে রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং দলগুলোর পারস্পরিক বিবাদের সুযোগ তারা আবারও নিতে পারে। এ অবস্থায় সরকারের তরফে ফলপ্রসূ উদ্যোগ প্রত্যাশিত। আমরা আশা করব, বিরোধী দল শিগগির সংসদে ফিরে যাবে এবং সংসদীয় আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে আগামী নির্বাচন বিষয়ে একটি ফয়সালা হবে। আর দেরি নয়, আগামী জাতীয় নির্বাচন নিয়ে সরকার ও বিরোধী দলের মধ্যকার ঐকমত্য এখনই দরকার। সে লক্ষ্যেই সরকার ও বিরোধী দল এগিয়ে যাবে, সেটাই সবার প্রত্যাশা।
No comments