ভুয়া ফিজিওথেরাপিস্ট-ওদের কঠোর শাস্তি প্রাপ্য
ভুয়া ফিজিওথেরাপিস্ট, ভুয়া ডাক্তার, ভুয়া র্যাব, ভুয়া ডিবি পুলিশ_ এ ধরনের অনেক ভুয়ার সঙ্গে আমাদের বসবাস। এ ভুয়াদের ওপর জীবনকে সঁপে দিয়ে অনেকে মৃত্যু, দুঃখ-শোককে আলিঙ্গন করেন। অথচ এ জন্য ভুক্তভোগী মানুষটি দায়ী নয়। দায়ী কখনও সমাজ, কখনও রাষ্ট্রীয়-রাজনৈতিক ব্যবস্থা।
প্রায় সব জায়গায় দুর্নীতি ও নীতিহীনতার প্রকোপ এত বেশি, সুনীতি এখানে নির্বাসিতই বলা চলে। আর এরই ফাঁক গলে ভুয়ারাই আসলের জায়গা নিয়ে সমাজে বুক ফুলিয়ে চলার মওকা পাচ্ছে। 'ভুয়া ফিজিওথেরাপিস্ট দিয়ে চলছে চট্টগ্রামের হাসপাতাল-ক্লিনিক' শিরোনামে শনিবার সমকালে প্রকাশিত প্রতিবেদনটি এই নীতিহীনতারই জ্বলন্ত সাক্ষী যেন। প্রতিবেদনে দেখা যায়, কিছুদিন আগেই ভ্রাম্যমাণ আদালত যেসব ভুয়া ফিজিওথেরাপিস্টকে শাস্তি প্রদান করেছেন তারাই আবার বিভিন্ন হাসপাতাল ও প্রাইভেট চেম্বার খুলে প্রকাশ্যেই রোগীদের থেরাপি দেওয়ার কাজটি করে যাচ্ছে অবলীলায়। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, সামান্য জরিমানা এহেন অপরাধের উপযুক্ত শাস্তি নয়। না হয় এরা একবার শাস্তি পাওয়ার পর আবার একই নীতিবিগর্হিত কর্ম করতে পারে কীভাবে! আর যেসব হাসপাতাল বা ক্লিনিক ওদের নিয়োগ দিয়েছে তারাও কম দোষী নয়। ফিজিওথেরাপিস্ট নিয়োগ দেওয়ার সময় তাদের সার্টিফিকেট যত্নের সঙ্গে দেখার প্রয়োজন মনে করা হয় না অনেক ক্ষেত্রে। সে কারণে নিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানেরও দায়-দায়িত্ব আইনে সঠিকভাবে নিরূপিত হওয়া দরকার। নিয়োগদাতা প্রতিষ্ঠান দায়মুক্তি না পেলে ভুয়া থেরাপিস্ট নিয়োগ দেওয়া অনেক কমে যাবে। তাছাড়া থেরাপিস্টদের ক্ষেত্রে নাগরিকদেরও সচেতনতা প্রয়োজন রয়েছে। কারণ পক্ষাঘাত ছাড়াও আরও বেশকিছু কারণে রোগীর থেরাপি নেওয়ার প্রয়োজন পড়ে। সম্প্রতি এ ধরনের রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। রোগের জটিলতার কারণে থেরাপি প্রদানের ধরনও পাল্টাচ্ছে দ্রুত। তাই যারা প্রতিষ্ঠিত প্রতিষ্ঠান থেকে থেরাপি বিদ্যায় উপযুক্ত প্রশিক্ষণ নেননি তারা রোগীকে সুস্থ করে তোলার ক্ষেত্রে যথাযথ অবদান রাখতে পারেন না। আবার সঠিকভাবে থেরাপি না হলে রোগী পুরোপুরি সুস্থ হয়ে উঠতে না-ও পারেন। ভুয়া ডাক্তারের মতো ভুয়া থেরাপিস্টও রোগীর প্রভূত ক্ষতির কারণ হতে পারে। তাই নাগরিকদের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার স্বার্থেই ভুয়া থেরাপিস্টদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া আবশ্যক। যারা প্রথমবার শাস্তি পাওয়ার পরও দ্বিতীয়বার একই অপরাধ করবে তাদের বেলায় শাস্তিটা কঠোর হওয়া প্রয়োজন।
No comments