উখিয়ায় আবারও বৌদ্ধ বাড়িতে অগ্নিসংযোগ

কক্সবাজারের উখিয়ায় ফের বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের বসতঘরে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। শুক্রবার গভীর রাতে দুষ্কৃতকারীরা একটি বৌদ্ধবিহারের পাশের এক বিধবা নারীর ঘরে আগুন লাগিয়ে পালিয়ে যায়। বিহারের লোকজন ছুটে এসে দ্রুত আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হওয়ায় ঘরে থাকা বিন্দু বালা বড়ুয়া (৪০), তাঁর শিশুকন্যা ও বৃদ্ধ মায়ের প্রাণ রক্ষা পায়।


রামুর ঘটনার জের ধরে উখিয়ার বৌদ্ধদের বসতঘর, হিন্দুমন্দির, ঘরবাড়ি ও দোকানপাটে অগ্নিসংযোগ এবং ভাঙচুর ও লুটতরাজ চালানো হয়েছিল। এর এক সপ্তাহের মাথায় এ ঘটনায় উখিয়ার সংখ্যালঘু সম্প্রদায় নতুন করে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে।
উখিয়ায় হলদিয়াপালং ইউনিয়নের উত্তর বড়বিল বৌদ্ধবিহার পরিচালনা কমিটির সভাপতি নাংসু বড়ুয়া বলেন, 'আমরা বেশ কিছু লোক মিলে আমাদের বিহারটি রক্ষার জন্য পাহারা দিচ্ছিলাম। শুক্রবার রাত দেড়টার দিকে সেনাবাহিনীর টহলদল বিহার এলাকা ছেড়ে চলে যাওয়ার প্রায় আধঘণ্টা পর বিহারের উত্তর পাশ্র্বে দরিদ্র অবলা বিন্দু বালার বসতঘরে অজ্ঞাতপরিচয় দুষ্কৃতকারীরা আগুন জ্বালিয়ে দিয়ে পালিয়ে যায়। আগুনের শিখা দেখে ও শোর-চিৎকার শুনে বিহার থেকে লোকজন গিয়ে আগুন নেভায়। ঘরের আংশিক পুড়ে গেছে।'
মৃত বজেন্দ্র বড়ুয়ার স্ত্রী বিন্দু বালা বড়ুয়া কান্নাজড়িত গলায় বলেন, 'আমি কী অপরাধ করেছি? আমার ঘরে এভাবে আগুন দেওয়া হয়েছে কেন? মৃত স্বামীর ভিটিতে ছয় বছরের একমাত্র মেয়ে আর ৮৫ বছরের বৃদ্ধ মাকে নিয়ে থাকি। লোকজন না হলে হয়তো সবাই পুড়ে ছাই হয়ে যেতাম।'
উখিয়া থানার ওসি অপ্পেলা রাজু নাহা উত্তর বড়বিলে শুক্রবার রাতে এ ধরনের কোনো ঘটনাই ঘটেনি বলে দাবি করেন। তবে উখিয়া থানার ওসি (তদন্ত) নিলু বড়ুয়া অগ্নিসংযোগের ঘটনা স্বীকার করেন। উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. জহিরুল ইসলামও অগ্নিসংযোগের কথা স্বীকার করে জানান, স্থানীয় লোকজন দ্রুত এগিয়ে আসায় ক্ষয়ক্ষতি তেমন হয়নি।
বাংলাদেশ বুড্ডিস্ট ফেডারেশন, উখিয়া শাখার সভাপতি শুভঙ্কর বড়ুয়া, সাধারণ সম্পাদক রাহুল বড়ুয়া, প্লাবন বড়ুয়া, মেধু বড়ুয়া, বাংলাদেশ বৌদ্ধ যুব সমিতির উখিয়ার সভাপতি অ্যাডভোকেট অনীল বড়ুয়াসহ অনেকেই বলেন, গত রবিবারের হামলার পর রাজনৈতিক নেতা ও জনপ্রতিনিধিদের আন্তরিক ও অক্লান্ত পরিশ্রমে পরিস্থিতি যখন স্বাভাবিক হওয়ার পথে, ঠিক তখন ওই চক্র ফের ভয়ভীতি ও আতঙ্ক ছড়ানোর লক্ষ্যে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটিয়েছে। গতকাল শনিবার দুপুর ২টার দিকে উখিয়া আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অধ্যক্ষ হামিদুল হক চৌধুরী দলের নেতা-কর্মীদের নিয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শনে গিয়ে দায়ী ব্যক্তিদের চিহ্নিত করে দ্রুত আইনের আওতায় আনার দাবি জানান।
পটিয়ায় আতঙ্ক কমেছে
রামুর ঘটনার পরদিন রাতে চট্টগ্রামের পটিয়া উপজেলার লাখেরা গ্রামে কয়েকটি বৌদ্ধবিহার ও মন্দিরে দুর্বৃত্তদের হামলায় এলাকাবাসীর মাঝে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। এই আতঙ্ক কয়েক দিন স্থায়ী হলেও এখন পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে এসেছে। ঘটনার পর এলাকার কয়েকটি পরিবার ভয়ে আত্মীয়স্বজনের বাড়িতে আশ্রয় নেয়। তারা নিজ বাড়িতে ফিরেছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নজরদারি অব্যাহত রেখেছে।
পটিয়া সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার নজরুল ইসলাম জানান, প্রশাসন ও পুলিশের সার্বক্ষণিক নজরদারিতে এলাকার পরিবেশ স্বাভাবিক হয়ে এসেছে। পটিয়া থানার ওসি আমিনুর রশিদ বলেন, 'এ ঘটনায় রিমান্ডে থাকা আসামিরা নানা বিষয়ে মুখ খুলেছে। আশা করছি, শিগগিরই ঘটনার ক্লু উদ্ধার করা যাবে।'
গতকাল শনিবার ক্ষতিগ্রস্ত বিহার ও মন্দির এলাকা পরিদর্শনকালে বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের লোকজন কালের কণ্ঠকে বলেন, 'সরকারের পক্ষ থেকে আমাদের সব ক্ষতিপূরণ দেওয়ার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে কিছু অর্থের চেক আমরা পেয়েছি।'
রিপু বড়ুয়া নামের এক বাসিন্দা বলেন, 'ঘটনার পর স্ত্রী ও শিশুপুত্রসহ পুরো পরিবার নিয়ে এক আত্মীয়ের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছিলাম। এখন পরিবেশ স্বাভাবিক হওয়ায় বাড়ি ফিরে আসলাম।' তবে অষ্টম শ্রেণীর ছাত্র অভিষেক বড়ুয়া বলে, 'আমরা এখনো স্কুলে যাওয়ার সাহস পাচ্ছি না।' স্থানীয় নবারুণ সংঘের সেক্রেটারি বিপ্লব চৌধুরী বলেন, 'আসামি গ্রেপ্তারের পর থেকে আড়ালে থাকা কতিপয় ব্যক্তি আমাদের নানাভাবে হুমকি দিচ্ছে।' স্থানীয় সংসদ সদস্য সামশুল হক চৌধুরী বলেন, 'পটিয়া অসাম্প্রদায়িক চেতনার চারণভূমি। যেকোনো মূল্যে পটিয়ার এ ঐতিহ্য অক্ষুণ্ন রাখা হবে।'

No comments

Powered by Blogger.