বিশ্বচোর-বিশ্ববেহায়া এক হয়েছে-হবিগঞ্জে জনসভায় খালেদা জিয়া by মোশাররফ বাবলু
বিএনপির চেয়ারপারসন ও সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়া বলেছেন, আওয়ামী লীগ ভাঁওতাবাজ ও বিশ্বখ্যাত বিশ্বচোর। আর বিশ্বচোর ও বিশ্ববেহায়া এখন এক হয়েছে। এই সরকারকে উৎখাত করে দেশে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে।
বিশ্বচোরের হাত থেকে দেশকে রক্ষা করার জন্য হবিগঞ্জবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, 'ঈদের পর কঠোর আন্দোলনের ডাক দেওয়া হবে। নির্ভয়ে এগিয়ে আসুন। মামলা-হামলা হলে পরিণতি হবে ভয়াবহ।'
গতকাল শনিবার বিকেলে হবিগঞ্জের নিউ ফিল্ডে ১৮ দলীয় জোট আয়োজিত বিশাল জনসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন খালেদা জিয়া। জনসভায় সভাপতিত্ব করেন জেলা বিএনপির সভাপতি সৈয়দ মো. ফয়সল। অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মির্জা আব্বাস, ভাইস চেয়ারম্যান সাদেক হোসেন খোকা, সেলিমা রহমান, শমসের মবিন চৌধুরী, এনাম আহমেদ চৌধুরী, যুগ্ম মহাসচিব বরকতউল্লা বুলু, মো. শাহজাহান, জামায়াতের ভারপ্রাপ্ত আমির মকবুল আহমেদ, এলডিপির সভাপতি কর্নেল (অব.) অলি আহমাদ বীরপ্রতীক, বিজেপির চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আন্দালিব রহমান পার্থ, ইসলামী ঐক্যজোটের মহাসচিব মাওলানা আব্দুল লতিফ নেজামী, খেলাফত মজলিসের মাওলানা মো. ইসহাক, জাগপার সভাপতি শফিউল আলম প্রধান, কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম বীরপ্রতীক, পিপলস পার্টির সভাপতি শেখ শওকত হোসেন নীলু, শাম্মী আক্তার এমপি, শেখ সুজাত মিয়া এমপি ও বিএনপির সিলেট বিভাগের সহসাংগঠনিক সম্পাদক ডা. শাখাওয়াত হাসান জীবন। জনসভা পরিচালনা করেন পৌর মেয়র ও জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক জি কে গউছ।
খালেদা জিয়া বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন করে নিজেই প্রধানমন্ত্রী থাকতে চান। তাঁদের লোকজন রেখেই নির্বাচন করতে চান। কিন্তু সেটা কখনো করতে দেওয়া হবে না। কারণ, আওয়ামী লীগ শুধু অর্থ নয়, ভোটও চুরি করে; এরা বিশ্বখ্যাত চোর।
এরশাদকে বিশ্ববেহায়া উল্লেখ করে খালেদা বলেন, 'বিশ্বচোর ও বিশ্ববেহায়া এখন এক হয়েছে। বাংলাদেশ এখন বিশ্বচোর ও বিশ্ববেহায়ার কবলে পড়েছে। এদের হাত থেকে দেশকে রক্ষা করতে হবে।' ঈদের পর কঠোর আন্দোলনের কর্মসূচি দেওয়া হবে উল্লেখ করে তিনি কর্মসূচি সফল করার জন্য সবার প্রতি আহ্বান জানান।
বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, ডিজিটাল বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার কথা বলে ডিজিটাল কারচুপির মাধ্যমে ক্ষমতায় এসে দেশের মানুষকে এই সরকার কিছুই দিতে পারেনি। প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সভানেত্রী দাবি করেন, তাঁরা ক্ষমতায় এসে জিনিসপত্রের দাম কমিয়েছে। কিন্তু এ দেশের মানুষ বলে, এই সরকার সব জিনিসের দাম বাড়িয়েছে।
খালেদা জিয়া বলেন, 'আমাদের সময়ের ১৭ টাকার চাল এখন বিক্রি হচ্ছে ৩৩ টাকায়, মসুর ডাল ৬৬ টাকার জায়গায় এখন ১২৫ টাকা, চিনি ৪০ টাকা থেকে বেড়ে ৫৫ টাকা, সয়াবিন ৫৫ টাকা থেকে বেড়ে ১২২ টাকা, ডিমের হালি ১৬ টাকা থেকে বেড়ে ৪০ টাকা হয়েছে। এ সরকার কৃষকদের উৎপাদিত পণ্যের দাম দেয় না। সার নিয়ে গুদামবাজি করছে। পরে সংকট দেখা দিলে অতিরিক্ত মূল্যে বিক্রি করে দলীয় লোকদের পকেট ভরা হবে। সরকার বিনা মূল্যে সার দেওয়ার কথা বলেছিল। কিন্তু এখন সারের বস্তা ১২০০ টাকা।'
বিরোধীদলীয় নেত্রী বলেন, নির্বাচনের সময় তারা বলেছিল, ক্ষমতায় এলে আওয়ামী লীগ ঘরে ঘরে চাকরি দেবে। তিনি উপস্থিত জনতার উদ্দেশে প্রশ্ন ছুড়ে দেন, 'চাকরি পেয়েছেন আপনারা?' জবাব আসে, 'না।' তিনি অভিযোগ করেন, সরকারদলীয় লোকরা চাকরি পাচ্ছে। সাধারণ মানুষের চাকরি নেই। বরং চাকরির নামে টাকা নিয়ে গরিব মানুষের পকেট লুট করা হচ্ছে।
দুদকের উদ্দেশে তিনি বলেন, 'দুর্নীতিবাজ কুমির, তিমিরা জড়িত। এই বড় বড় দুর্নীতিবাজ ধরা না হলে আগামীতে দুদকও জনগণের হাত থেকে রেহাই পাবে না।'
খালেদা জিয়া বলেন, প্রধানমন্ত্রী থেকে শুরু করে তাঁর আত্মীয়স্বজন সবাই দুর্নীতিতে ব্যস্ত। ছাত্রলীগ-যুবলীগ দুর্নীতিতে ব্যস্ত। টেন্ডার ছাড়াই সব কাজ দেওয়া হচ্ছে। দলীয় লোকদের কাজ দেওয়ার জন্যই কুইক রেন্টাল পাওয়ার প্লান্ট করছে। লুটপাট করছে। বিদ্যুৎ পাওয়া যায় না। বরং সাতবার বিদ্যুতের দাম বাড়িয়েছে তারা। মানুষ এখন দিশেহারা। বেঁচে থাকা কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। দেশে দুর্ভিক্ষ চলছে। এক বেলা খেতে পারলে দুই বেলা না খেয়ে থাকতে হচ্ছে। কুইক রেন্টাল থেকে ৪০ হাজার কোটি টাকা লোপাট করা হয়েছে। মানুষ বলছে, এরা ক্ষমতায় থাকলে দেশ শেষ করে দেবে। তাই আওয়ামী লীগকে সরাতে হবে। তিনি সমবেত জনতার উদ্দেশে প্রশ্ন রাখেন, 'এই সরকার হটানোর আন্দোলনে আপনারা আছেন কি?' জনতা দুই হাত আকাশে তুলে তাঁকে সমর্থন জানায়।
বিএনপি নেত্রী বলেন, শেয়ারবাজার থেকে এক লাখ কোটি টাকা লুট করা হয়েছে। ৩৫ লাখ বিনিয়োগকারী পথে বসেছে। সরকারি ব্যাংক থেকে ১২ হাজার কোটি টাকা লুটপাট হয়েছে। সোনালী ব্যাংক লুট হয়ে গেছে। হলমার্কের লোক কার সঙ্গে ওঠাবসা করে, সবাই জানে। হলমার্কের নামে চার হাজার কোটি টাকা লুট করা হয়েছে।
বিভিন্ন খাতে লুটপাটের চিত্র তুলে ধরে তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ বেসিক ব্যাংক থেকে তিন হাজার কোটি, অন্যান্য ব্যাংক থেকে পাঁচ হাজার কোটি, অবৈধ ভিওআইপির মাধ্যমে ১৫ হাজার কোটি এবং পদ্মা সেতু থেকে তিন শ কোটি টাকা লুট করেছে।
খালেদা জিয়া বলেন, 'তিস্তা সেতুতে এ সরকারের কোনো অবদান নেই। এই সেতু আমরা করেছি। দেশের বড় বড় সব সেতু আমরাই করেছি। পদ্মা সেতু দেশের প্রতিটি মানুষ চায়। পদ্মা সেতুর কাজ শুরুর আগেই দুর্নীতি হয়েছে। বিশ্বব্যাংক দুর্নীতি ধরে ফেলেছে। বিশ্বব্যাংক বলেছে, দুর্নীতিতে যারা জড়িত তাদের ধরতে হবে। শাস্তি দিতে হবে। চাকরি থেকে সরাতে হবে। সরকার কোনো উদ্যোগ নেয়নি। শেষ পর্যন্ত নাকে খত দিয়ে কান ধরে ওঠাবসা করে শর্ত মেনে নিয়ে বিশ্বব্যাংককে রাজি করিয়েছে। এই সরকার বিশ্বচোর।'
বিরোধীদলীয় নেত্রী বলেন, আওয়ামী লীগের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন হবে না। আওয়ামী লীগ প্রশাসন ও পুলিশ বিভাগকে দলীয়করণ করে আগামী নির্বাচনে আবার ক্ষমতায় যেতে চায়। বর্তমান নির্বাচন কমিশন আওয়ামী লীগের সুরেই কথা বলে। কাজেই এই নির্বাচন কমিশনের অধীনে কখনো নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন সম্ভব নয়। বর্তমান সরকারের অধীনে যত স্থানীয় নির্বাচন হয়েছে, তাতে কারচুপি হয়েছে। তাই আওয়ামী লীগের অধীনে আর কোনো নির্বাচন হতে দেওয়া হবে না।
খালেদা জিয়া বলেন, 'হবিগঞ্জ সীমান্তবর্তী এলাকা। সীমান্তে প্রতিনিয়ত আমাদের নাগরিকদের হত্যা করা হচ্ছে। ফেলানীকে কাঁটাতারে ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে। যে সরকার নিজের দেশের মানুষের জীবনের নিরাপত্তা দিতে পারে না, হত্যাকে হত্যা বলে প্রতিবাদ করতে পারে না, সেই সরকারের ক্ষমতায় থাকার অধিকার থাকতে পারে না।'
বিএনপি নেত্রী বলেন, 'প্রতিদিন ঘরে-বাইরে মানুষ গুম হচ্ছে। আমাদের দলের সাংগঠনিক সম্পাদক আপনাদের সন্তান এম ইলিয়াস আলীকে এই সরকার গুম করেছে। সারা সিলেটের মানুষ জানতে চায়, ইলিয়াস আলী কোথায়। তাঁর কিছু হলে সরকারকে জবাবদিহি করতে হবে।'
খালেদা জিয়া বলেন, 'জিয়াউর রহমান স্বাধীনতার ঘোষক এবং একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। বিএনপি মুক্তিযোদ্ধার দল। রক্ত দিয়ে দেশ স্বাধীন করেছি। কোনো দেশের তাঁবেদার হতে আমরা দেশ স্বাধীন করিনি।' শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সন্ত্রাসের রাজত্ব কায়েম হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলো অস্ত্রাগারে পরিণত হয়েছে। অথচ পুলিশ তাদের ধরছে না।
বিএনপি সরকারের সময়ের উন্নয়নের কথা তুলে ধরে খালেদা জিয়া বলেন, 'আওয়ামী লীগ উন্নয়ন চায় না। যমুনা সেতুর উদ্বোধনের সময় আওয়ামী লীগ হরতালের ডাক দিয়েছিল। মেঘনা সেতু, ভৈরব সেতুসহ দেশের সব বড় বড় সেতু আমরাই করেছি। তাতে কোনো দুর্নীতির ছোঁয়া লাগেনি।' তিনি আরো বলেন, 'সরকার সব ক্ষেত্রে ব্যর্থ হয়ে এখন জঙ্গিবাদের কথা বলছে। জঙ্গিদের উত্থান আওয়ামী লীগের সময়ে। যশোরে উদীচী সম্মেলনে বোমা হামলার মধ্য দিয়ে জঙ্গিবাদ শুরু হয়। এরপর পল্টন, রমনা বটমূল, নারায়ণগঞ্জ ও গোপালগঞ্জের গির্জায় বোমা হামলা হয়। আওয়ামী লীগ কোনো জঙ্গিকে না ধরে বিএনপির নেতাদের নামে মামলা দিয়ে হয়রানি করেছিল। আমরাই জঙ্গিদের গ্রেপ্তার করে বিচার করেছি। শায়খ আবদুর রহমান ছিল আওয়ামী লীগের নেতা মির্জা আজমের আত্মীয়। জাতীয় দুলাভাই। সন্ত্রাসী ও জঙ্গিদের সঙ্গে আওয়ামী লীগের সম্পর্ক। জঙ্গিদের আশ্রয়-প্রশ্রয় দেয় আওয়ামী লীগ।'
আলেম-ওলামা, শিক্ষক, সাংবাদিক, চিকিৎসকদের ওপর হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়ে খালেদা জিয়া বলেন, 'আলেম-ওলামা ও শিক্ষকরা মিছিল করেছিলেন। তাঁদের ওপর হামলা হয়েছে। বয়স্ক মানুষদের ধরে নিয়ে গেছে। কেন ধরা হলো?'
যুবসমাজের উদ্দেশে তিনি বলেন, ভবিষ্যতে বিএনপি ক্ষমতায় গেলে যুবকদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা হবে। অতীতের মতো বাংলাদেশকে একটি মডেল দেশ হিসেবে গড়ে তোলা হবে।
গতকাল জনসভা উপলক্ষে জেলার সঙ্গে সংযোগ রক্ষাকারী উপজেলা পর্যায়ের সড়কগুলোতেও ছিল জনসমাবেশমুখী মানুষের ঢল। শহীদ জিয়াউর রহমান, খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের বড় বড় বিভিন্ন রঙের ছবিসংবলিত ব্যানার, ফেস্টুন, প্ল্যাকার্ড হাতে স্লোগানে স্লোগানে মুখরিত নেতা-কর্মীরা ছুটে আসেন নিউ ফিল্ডে। ঢাকা থেকে হবিগঞ্জের পথে শত শত তোরণ, ব্যানার, ফেস্টুন, আলোকচিত্রের বর্ণাঢ্য সাজে উদ্ভাসিত ছিল মহাসড়ক। নিউ ফিল্ডে যেন মানুষের ঢল নেমেছিল। বিকেল ৪টা ৫০ মিনিটে শুরু করে প্রায় এক ঘণ্টা বক্তব্য দেন খালেদা জিয়া। রাতেই ঢাকার উদ্দেশে হবিগঞ্জ থেকে রওনা হন তিনি।
গতকাল শনিবার বিকেলে হবিগঞ্জের নিউ ফিল্ডে ১৮ দলীয় জোট আয়োজিত বিশাল জনসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন খালেদা জিয়া। জনসভায় সভাপতিত্ব করেন জেলা বিএনপির সভাপতি সৈয়দ মো. ফয়সল। অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মির্জা আব্বাস, ভাইস চেয়ারম্যান সাদেক হোসেন খোকা, সেলিমা রহমান, শমসের মবিন চৌধুরী, এনাম আহমেদ চৌধুরী, যুগ্ম মহাসচিব বরকতউল্লা বুলু, মো. শাহজাহান, জামায়াতের ভারপ্রাপ্ত আমির মকবুল আহমেদ, এলডিপির সভাপতি কর্নেল (অব.) অলি আহমাদ বীরপ্রতীক, বিজেপির চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আন্দালিব রহমান পার্থ, ইসলামী ঐক্যজোটের মহাসচিব মাওলানা আব্দুল লতিফ নেজামী, খেলাফত মজলিসের মাওলানা মো. ইসহাক, জাগপার সভাপতি শফিউল আলম প্রধান, কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম বীরপ্রতীক, পিপলস পার্টির সভাপতি শেখ শওকত হোসেন নীলু, শাম্মী আক্তার এমপি, শেখ সুজাত মিয়া এমপি ও বিএনপির সিলেট বিভাগের সহসাংগঠনিক সম্পাদক ডা. শাখাওয়াত হাসান জীবন। জনসভা পরিচালনা করেন পৌর মেয়র ও জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক জি কে গউছ।
খালেদা জিয়া বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন করে নিজেই প্রধানমন্ত্রী থাকতে চান। তাঁদের লোকজন রেখেই নির্বাচন করতে চান। কিন্তু সেটা কখনো করতে দেওয়া হবে না। কারণ, আওয়ামী লীগ শুধু অর্থ নয়, ভোটও চুরি করে; এরা বিশ্বখ্যাত চোর।
এরশাদকে বিশ্ববেহায়া উল্লেখ করে খালেদা বলেন, 'বিশ্বচোর ও বিশ্ববেহায়া এখন এক হয়েছে। বাংলাদেশ এখন বিশ্বচোর ও বিশ্ববেহায়ার কবলে পড়েছে। এদের হাত থেকে দেশকে রক্ষা করতে হবে।' ঈদের পর কঠোর আন্দোলনের কর্মসূচি দেওয়া হবে উল্লেখ করে তিনি কর্মসূচি সফল করার জন্য সবার প্রতি আহ্বান জানান।
বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, ডিজিটাল বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার কথা বলে ডিজিটাল কারচুপির মাধ্যমে ক্ষমতায় এসে দেশের মানুষকে এই সরকার কিছুই দিতে পারেনি। প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সভানেত্রী দাবি করেন, তাঁরা ক্ষমতায় এসে জিনিসপত্রের দাম কমিয়েছে। কিন্তু এ দেশের মানুষ বলে, এই সরকার সব জিনিসের দাম বাড়িয়েছে।
খালেদা জিয়া বলেন, 'আমাদের সময়ের ১৭ টাকার চাল এখন বিক্রি হচ্ছে ৩৩ টাকায়, মসুর ডাল ৬৬ টাকার জায়গায় এখন ১২৫ টাকা, চিনি ৪০ টাকা থেকে বেড়ে ৫৫ টাকা, সয়াবিন ৫৫ টাকা থেকে বেড়ে ১২২ টাকা, ডিমের হালি ১৬ টাকা থেকে বেড়ে ৪০ টাকা হয়েছে। এ সরকার কৃষকদের উৎপাদিত পণ্যের দাম দেয় না। সার নিয়ে গুদামবাজি করছে। পরে সংকট দেখা দিলে অতিরিক্ত মূল্যে বিক্রি করে দলীয় লোকদের পকেট ভরা হবে। সরকার বিনা মূল্যে সার দেওয়ার কথা বলেছিল। কিন্তু এখন সারের বস্তা ১২০০ টাকা।'
বিরোধীদলীয় নেত্রী বলেন, নির্বাচনের সময় তারা বলেছিল, ক্ষমতায় এলে আওয়ামী লীগ ঘরে ঘরে চাকরি দেবে। তিনি উপস্থিত জনতার উদ্দেশে প্রশ্ন ছুড়ে দেন, 'চাকরি পেয়েছেন আপনারা?' জবাব আসে, 'না।' তিনি অভিযোগ করেন, সরকারদলীয় লোকরা চাকরি পাচ্ছে। সাধারণ মানুষের চাকরি নেই। বরং চাকরির নামে টাকা নিয়ে গরিব মানুষের পকেট লুট করা হচ্ছে।
দুদকের উদ্দেশে তিনি বলেন, 'দুর্নীতিবাজ কুমির, তিমিরা জড়িত। এই বড় বড় দুর্নীতিবাজ ধরা না হলে আগামীতে দুদকও জনগণের হাত থেকে রেহাই পাবে না।'
খালেদা জিয়া বলেন, প্রধানমন্ত্রী থেকে শুরু করে তাঁর আত্মীয়স্বজন সবাই দুর্নীতিতে ব্যস্ত। ছাত্রলীগ-যুবলীগ দুর্নীতিতে ব্যস্ত। টেন্ডার ছাড়াই সব কাজ দেওয়া হচ্ছে। দলীয় লোকদের কাজ দেওয়ার জন্যই কুইক রেন্টাল পাওয়ার প্লান্ট করছে। লুটপাট করছে। বিদ্যুৎ পাওয়া যায় না। বরং সাতবার বিদ্যুতের দাম বাড়িয়েছে তারা। মানুষ এখন দিশেহারা। বেঁচে থাকা কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। দেশে দুর্ভিক্ষ চলছে। এক বেলা খেতে পারলে দুই বেলা না খেয়ে থাকতে হচ্ছে। কুইক রেন্টাল থেকে ৪০ হাজার কোটি টাকা লোপাট করা হয়েছে। মানুষ বলছে, এরা ক্ষমতায় থাকলে দেশ শেষ করে দেবে। তাই আওয়ামী লীগকে সরাতে হবে। তিনি সমবেত জনতার উদ্দেশে প্রশ্ন রাখেন, 'এই সরকার হটানোর আন্দোলনে আপনারা আছেন কি?' জনতা দুই হাত আকাশে তুলে তাঁকে সমর্থন জানায়।
বিএনপি নেত্রী বলেন, শেয়ারবাজার থেকে এক লাখ কোটি টাকা লুট করা হয়েছে। ৩৫ লাখ বিনিয়োগকারী পথে বসেছে। সরকারি ব্যাংক থেকে ১২ হাজার কোটি টাকা লুটপাট হয়েছে। সোনালী ব্যাংক লুট হয়ে গেছে। হলমার্কের লোক কার সঙ্গে ওঠাবসা করে, সবাই জানে। হলমার্কের নামে চার হাজার কোটি টাকা লুট করা হয়েছে।
বিভিন্ন খাতে লুটপাটের চিত্র তুলে ধরে তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ বেসিক ব্যাংক থেকে তিন হাজার কোটি, অন্যান্য ব্যাংক থেকে পাঁচ হাজার কোটি, অবৈধ ভিওআইপির মাধ্যমে ১৫ হাজার কোটি এবং পদ্মা সেতু থেকে তিন শ কোটি টাকা লুট করেছে।
খালেদা জিয়া বলেন, 'তিস্তা সেতুতে এ সরকারের কোনো অবদান নেই। এই সেতু আমরা করেছি। দেশের বড় বড় সব সেতু আমরাই করেছি। পদ্মা সেতু দেশের প্রতিটি মানুষ চায়। পদ্মা সেতুর কাজ শুরুর আগেই দুর্নীতি হয়েছে। বিশ্বব্যাংক দুর্নীতি ধরে ফেলেছে। বিশ্বব্যাংক বলেছে, দুর্নীতিতে যারা জড়িত তাদের ধরতে হবে। শাস্তি দিতে হবে। চাকরি থেকে সরাতে হবে। সরকার কোনো উদ্যোগ নেয়নি। শেষ পর্যন্ত নাকে খত দিয়ে কান ধরে ওঠাবসা করে শর্ত মেনে নিয়ে বিশ্বব্যাংককে রাজি করিয়েছে। এই সরকার বিশ্বচোর।'
বিরোধীদলীয় নেত্রী বলেন, আওয়ামী লীগের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন হবে না। আওয়ামী লীগ প্রশাসন ও পুলিশ বিভাগকে দলীয়করণ করে আগামী নির্বাচনে আবার ক্ষমতায় যেতে চায়। বর্তমান নির্বাচন কমিশন আওয়ামী লীগের সুরেই কথা বলে। কাজেই এই নির্বাচন কমিশনের অধীনে কখনো নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন সম্ভব নয়। বর্তমান সরকারের অধীনে যত স্থানীয় নির্বাচন হয়েছে, তাতে কারচুপি হয়েছে। তাই আওয়ামী লীগের অধীনে আর কোনো নির্বাচন হতে দেওয়া হবে না।
খালেদা জিয়া বলেন, 'হবিগঞ্জ সীমান্তবর্তী এলাকা। সীমান্তে প্রতিনিয়ত আমাদের নাগরিকদের হত্যা করা হচ্ছে। ফেলানীকে কাঁটাতারে ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে। যে সরকার নিজের দেশের মানুষের জীবনের নিরাপত্তা দিতে পারে না, হত্যাকে হত্যা বলে প্রতিবাদ করতে পারে না, সেই সরকারের ক্ষমতায় থাকার অধিকার থাকতে পারে না।'
বিএনপি নেত্রী বলেন, 'প্রতিদিন ঘরে-বাইরে মানুষ গুম হচ্ছে। আমাদের দলের সাংগঠনিক সম্পাদক আপনাদের সন্তান এম ইলিয়াস আলীকে এই সরকার গুম করেছে। সারা সিলেটের মানুষ জানতে চায়, ইলিয়াস আলী কোথায়। তাঁর কিছু হলে সরকারকে জবাবদিহি করতে হবে।'
খালেদা জিয়া বলেন, 'জিয়াউর রহমান স্বাধীনতার ঘোষক এবং একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। বিএনপি মুক্তিযোদ্ধার দল। রক্ত দিয়ে দেশ স্বাধীন করেছি। কোনো দেশের তাঁবেদার হতে আমরা দেশ স্বাধীন করিনি।' শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সন্ত্রাসের রাজত্ব কায়েম হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলো অস্ত্রাগারে পরিণত হয়েছে। অথচ পুলিশ তাদের ধরছে না।
বিএনপি সরকারের সময়ের উন্নয়নের কথা তুলে ধরে খালেদা জিয়া বলেন, 'আওয়ামী লীগ উন্নয়ন চায় না। যমুনা সেতুর উদ্বোধনের সময় আওয়ামী লীগ হরতালের ডাক দিয়েছিল। মেঘনা সেতু, ভৈরব সেতুসহ দেশের সব বড় বড় সেতু আমরাই করেছি। তাতে কোনো দুর্নীতির ছোঁয়া লাগেনি।' তিনি আরো বলেন, 'সরকার সব ক্ষেত্রে ব্যর্থ হয়ে এখন জঙ্গিবাদের কথা বলছে। জঙ্গিদের উত্থান আওয়ামী লীগের সময়ে। যশোরে উদীচী সম্মেলনে বোমা হামলার মধ্য দিয়ে জঙ্গিবাদ শুরু হয়। এরপর পল্টন, রমনা বটমূল, নারায়ণগঞ্জ ও গোপালগঞ্জের গির্জায় বোমা হামলা হয়। আওয়ামী লীগ কোনো জঙ্গিকে না ধরে বিএনপির নেতাদের নামে মামলা দিয়ে হয়রানি করেছিল। আমরাই জঙ্গিদের গ্রেপ্তার করে বিচার করেছি। শায়খ আবদুর রহমান ছিল আওয়ামী লীগের নেতা মির্জা আজমের আত্মীয়। জাতীয় দুলাভাই। সন্ত্রাসী ও জঙ্গিদের সঙ্গে আওয়ামী লীগের সম্পর্ক। জঙ্গিদের আশ্রয়-প্রশ্রয় দেয় আওয়ামী লীগ।'
আলেম-ওলামা, শিক্ষক, সাংবাদিক, চিকিৎসকদের ওপর হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়ে খালেদা জিয়া বলেন, 'আলেম-ওলামা ও শিক্ষকরা মিছিল করেছিলেন। তাঁদের ওপর হামলা হয়েছে। বয়স্ক মানুষদের ধরে নিয়ে গেছে। কেন ধরা হলো?'
যুবসমাজের উদ্দেশে তিনি বলেন, ভবিষ্যতে বিএনপি ক্ষমতায় গেলে যুবকদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা হবে। অতীতের মতো বাংলাদেশকে একটি মডেল দেশ হিসেবে গড়ে তোলা হবে।
গতকাল জনসভা উপলক্ষে জেলার সঙ্গে সংযোগ রক্ষাকারী উপজেলা পর্যায়ের সড়কগুলোতেও ছিল জনসমাবেশমুখী মানুষের ঢল। শহীদ জিয়াউর রহমান, খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের বড় বড় বিভিন্ন রঙের ছবিসংবলিত ব্যানার, ফেস্টুন, প্ল্যাকার্ড হাতে স্লোগানে স্লোগানে মুখরিত নেতা-কর্মীরা ছুটে আসেন নিউ ফিল্ডে। ঢাকা থেকে হবিগঞ্জের পথে শত শত তোরণ, ব্যানার, ফেস্টুন, আলোকচিত্রের বর্ণাঢ্য সাজে উদ্ভাসিত ছিল মহাসড়ক। নিউ ফিল্ডে যেন মানুষের ঢল নেমেছিল। বিকেল ৪টা ৫০ মিনিটে শুরু করে প্রায় এক ঘণ্টা বক্তব্য দেন খালেদা জিয়া। রাতেই ঢাকার উদ্দেশে হবিগঞ্জ থেকে রওনা হন তিনি।
No comments