জাপা থেকে গোলাম রেজাকে বহিষ্কার

সাতক্ষীরা-৪ আসন থেকে নির্বাচিত জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য এইচ এম গোলাম রেজাকে দলের প্রাথমিক সদস্য পদসহ সব পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে গতকাল শনিবার তাঁকে বহিষ্কার করেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ।


এরশাদের তথ্য ও রাজনৈতিক সচিব সুনীল শুভ রায়ের সই করা এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে এ তথ্য জানানো হয়।
দল থেকে বহিষ্কারের পাশাপাশি গোলাম রেজার সংসদ সদস্য পদ যাতে না থাকে সে বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে স্পিকারের কাছেও চিঠি দিয়েছে জাতীয় পার্টি।
দল থেকে বহিষ্কারের ফলে গোলাম রেজার সংসদ সদস্য পদ বাতিল হতে পারে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। সংবিধান বিশেষজ্ঞ ড. এম জহির ও নির্বাচন কমিশনের (ইসি) আইনজীবী ড. শাহদীন মালিকের মতে, দল থেকে বহিষ্কারের পর সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির সংসদ সদস্য পদ থাকার কথা নয়। তবে এ বিষয়ে স্পিকার অ্যাডভোকেট আবদুল হামিদ কালের কণ্ঠকে জানিয়েছেন, কারো সংসদ সদস্য পদ থাকবে কি থাকবে না, সেটা আগে থেকে বলা যাবে না। আবেদন এলে সংবিধানের নির্দেশনা অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নিতে হবে। গোলাম রেজার বহিষ্কারাদেশের বিষয়ে তিনি বলেন, 'কী কারণে বহিষ্কার করা হয়েছে, বহিষ্কারাদেশে কী লেখা আছে- সব কিছু পর্যালোচনা করে দেখতে হবে। আগে আবেদন আসুক, তারপর দেখা যাবে।'
গতকাল জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য ও দপ্তর সম্পাদক তাজুল ইসলাম চৌধুরী দুটি চিঠি নিয়ে সংসদে যান। তিনি চিঠি দুটি জাতীয় সংসদের স্পিকারের দপ্তরে পৌঁছে দেন বলে জানা গেছে। একটি চিঠিতে বলা হয়, গোলাম রেজাকে জাতীয় পার্টির প্রাথমিক সদস্য পদসহ সব দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।
অবশ্য সংসদ সচিবালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, যে কারণে গোলাম রেজাকে বহিষ্কার করা হয়েছে তাতে তাঁর সংসদ সদস্য পদ বাতিল হবে না। বিএনপির নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট সরকারের আমলে অষ্টম সংসদে বিএনপির মনোনয়ন নিয়ে নির্বাচিত সংসদ সদস্য আবু হেনা দল থেকে বহিষ্কার হলেও তাঁর সদস্য পদ বাতিল হয়নি। গোলাম রেজার সদস্য পদ বাতিলের বিষয়ে গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত তাঁদের কাছে কোনো আবেদন পৌঁছায়নি বলেও জানান ওই কর্মকর্তারা।
ড. শাহদীন মালিক কালের কণ্ঠকে বলেন, দলের বিরুদ্ধে কেউ সংসদে ভোট দিলে বা দল থেকে পদত্যাগ করলে সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী তাঁর সংসদ সদস্য পদ থাকে না। কিন্তু কাউকে বহিষ্কার করা হলে কী হবে, তা সংবিধানে সুস্পষ্ট বলা নেই। তিনি বলেন, বহিষ্কারের বিষয়টি নতুন। সংসদ সদস্য (রেজ্যুলেশন অব ডিসপিউট) আইন অনুযায়ী এ বিষয়ে সিদ্ধান্তের জন্য স্পিকার ইসিকে চিঠি দেবেন। ইসি উভয় পক্ষের শুনানি শেষে সিদ্ধান্ত স্পিকারকে জানিয়ে দেবে। এরপর স্পিকার সিদ্ধান্ত জানাবেন।
রেজার বিরুদ্ধে যত অভিযোগ : পার্টির চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদের নাম ভাঙিয়ে প্রতারণার অভিযোগে গত ২ অক্টোবর জাতীয় পার্টির সংসদীয় দলের হুইপ ও প্রেসিডিয়াম সদস্য পদ থেকে গোলাম রেজাকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। তাঁর বিরুদ্ধে শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগ এনে তিন দিনের মধ্যে জবাব দিতে ৩ অক্টোবর কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়। নোটিশের মেয়াদ শেষ হয় গতকাল। এ অবস্থায় নোটিশের জবাব দিতে আরো সময় চেয়ে গতকাল আবেদন করেন গোলাম রেজা। কিন্তু কত দিনের সময় দরকার তা আবেদনে উল্লেখ করেননি। দলীয় সূত্রে জানা যায়, এ অবস্থায় জবাব সন্তোষজনক নয় বিবেচনা করে তাঁকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে।
জাতীয় পার্টি সূত্রে জানা যায়, ১৯৯৭ সালের মার্চে গোলাম রেজাকে একান্ত সচিব (পিএস) নিয়োগ দেন এরশাদ। এরপর দলীয় মনোনয়নে এমপি হন রেজা। এরশাদ তাঁর কিছু ব্যাংক হিসাবসহ ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান দেখাশোনার দায়িত্বও দেন তাঁকে। রংপুরের 'পদাগঞ্জ কোল্ড স্টোরেজ লিমিটেড' দেখাশোনার জন্য গোলাম রেজার নামে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র করে দিয়েছিলেন এরশাদ। পরবর্তী সময়ে প্রতিষ্ঠানটির মালিকানা নিজের নামে পাকা করে নেন তিনি।
এ ছাড়া গোলাম রেজার বিরুদ্ধে এরশাদের সই জাল করে গুলশানের বাড়ি (রওশন এরশাদের নামে দেওয়া), বারিধারায় প্রেসিডেন্ট পার্কে এরশাদের ফ্ল্যাট, বনানীর বুটিক শপ ও বাংলামোটরে টাইলসের দুটি দোকানের মালিকানা নিজের নামে তৈরি করার অভিযোগ রয়েছে।
সূত্রটি আরো জানায়, সৌদি আরবের জেদ্দায় এরশাদের একটি বোতলজাত পানির কারখানা দেখাশোনার দায়িত্বেও ছিলেন গোলাম রেজা। ব্যবস্থাপনা-সংক্রান্ত ত্রুটির কারণে সৌদি সরকার ওই কারখানাকে ৪০ লাখ টাকার সমপরিমাণ জরিমানা করে। শেষ পর্যন্ত কারখানাটি বিক্রি করে দেওয়া হয়। এ জন্য গোলাম রেজাই দায়ী ছিলেন বলে সূত্রটি দাবি করে।

No comments

Powered by Blogger.