শ্রীলঙ্কার স্বপ্নে গেইলের হুমকি

এক জীবনে একটা বিশ্বকাপের ফাইনালে খেলতে পারাই বিরাট এক অর্জন। মাহেলা জয়াবর্ধনে, কুমার সাঙ্গাকারা আর তিলকরত্নে দিলশানের অভিজ্ঞতার ভাণ্ডার এদিক দিয়ে দারুণ সমৃদ্ধ। এরই মধ্যে তিন তিনটি বিশ্বকাপের ফাইনাল খেলে ফেলেছেন তাঁরা।


আজ নামবেন চতুর্থটিতে! কিন্তু আগের সেই তিন ফাইনালের স্মৃতি যদি আবার ফিরে আসে কলম্বোর রানাসিংহে প্রেমাদাসা স্টেডিয়ামে, মোটেই খুশি হবেন না তাঁরা। আগের তিনটি ফাইনালেই যে হেরেছিল তাঁদের দল!
টোয়েন্টি টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ফাইনালে আজ ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হারাতে না পারলে ওই তিন তারকার চেয়েও বেশি হতাশা বোধ করি চেপে ধরবে গৃহযুদ্ধের ধাক্কা সামলে ওঠার চেষ্টায় থাকা ছোট্ট এ দ্বীপদেশটির দুই কোটি ক্রিকেটপ্রেমীকে। ১১৯৬ বিশ্বকাপজয়ী অর্জুনা রানাতুঙ্গার দলের পাশে জয়াবর্ধনের দলকে দেখতে মুখিয়ে আছে যারা। ফাইনালের দুই দিন আগে থেকেই দেশজুড়ে যেন নীলের সাজ, ক্রিকেট দলের জার্সি হয়ে উঠেছে অঘোষিত জাতীয় পোশাক। রাস্তার পাশের চায়ের দোকানদার থেকে ব্যস্ত অফিসের কেতাদুরস্ত এক্সিকিউটিভ পর্যন্ত সবার গায়ে ওই জার্সি।
কিন্তু একজন যে আবার আগেই ঘোষণা দিয়ে বসে আছেন, এই নীলকে বানিয়ে দেবেন বেদনার রং! সেমিফাইনাল জিতেই ক্রিস গেইল ঘোষণা দিয়ে রেখেছেন, 'দুঃখিত, শ্রীলঙ্কা, শিরোপাটা জিতছি আমরাই।' তাঁর কথাটা সত্যি প্রমাণ করতে চান ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান অধিনায়ক ড্যারেন সামিও, 'শ্রীলঙ্কার উৎসবটা মাটি করে দিতে আমরা দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। ফাইনালে সেরা দুটি দলই খেলছে; শ্রীলঙ্কা খুব শক্তিশালী দল, কিন্তু আমরাও সময়মতো ঝলসে উঠছি।'
একসময়ের বিশ্বজয়ী ওয়েস্ট ইন্ডিজ যে এত দিন পরে আবার একটা টুর্নামেন্টে ফেভারিটের মর্যাদা পাচ্ছে, সেটা বাঁহাতি গেইলের খুনে ব্যাটিংয়ের কল্যাণেই। এ টুর্নামেন্টে একটা ম্যাচে ব্যাটিংয়ের সুযোগই পাননি, তার পরও দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ২১৯ রান তাঁর। আর এই রান তোলার পথে ১৬ বার বলকে হাওয়ায় ভাসিয়ে পাঠিয়েছেন মাঠের বাইরে! সেমিফাইনালে এই গেইল-ঝড়ের সামনেই উড়ে গেছে অস্ট্রেলিয়া, ফাইনালেও গেইলকেই মনে করা হচ্ছে শ্রীলঙ্কার 'ফাইনাল-জুজু' কাটানোর পথে সবচেয়ে বড় বাধা।
জয়াবর্ধনে অবশ্য তেমন করে ভাবতে রাজি নন, 'দারুণ ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলের অন্য সব ক্রিকেটারের মতোই সে-ও একজন। আর আমরা কখনো কোনো একজন ক্রিকেটারকে নিয়ে ভাবি না, ভাবি পুরো দলকে নিয়ে। ফাইনালেও পুরো দলের ওপর চোখ রেখেই ছক কষতে হবে আমাদের।' এমনকি গেইলের হুমকিটাকেও পাত্তা দিচ্ছেন না শ্রীলঙ্কান অধিনায়ক, 'কেউ যখন এমন কথা বলে, তখন চাপটা কার ওপর পড়ে? জবাবে কী বলব জানি না, তবে আমার তো মনে হয় ওই কথা বলার পর সে-ই বেশি চাপে থাকবে।'
বিশ্ব-ক্রিকেটে 'বড় শক্তি' হিসেবে শ্রীলঙ্কার উত্থান শুরু হয়েছিল ১৯৯৬ সালের বিশ্বকাপে রানাতুঙ্গার দলের শিরোপা জয়ের হাত ধরে। কিন্তু তারপর ২০০৭ ও ২০১১ সালের ওয়ানডে বিশ্বকাপ এবং ২০০৯ সালের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ফাইনালে খেললেও প্রতিবারই ফিরতে হয়েছে হতাশা নিয়ে। কেউ কেউ এটাকে 'ফাইনাল-জুজু' বললেও জয়াবর্ধনে দেখতে চান অন্যভাবে, 'ফাইনালে ওঠাটাও কিন্তু দারুণ ব্যাপার। আমরা এর ইতিবাচক দিকটাকেই গুরুত্ব দিতে চাই।'
ইতিবাচক দিক আছে আরো। নিজের মাঠে খেলা, মাঠের ১১ যোদ্ধার সঙ্গে থাকবে গ্যালারির ৩৫ হাজার দর্শকের অকুণ্ঠ সমর্থন; এটাই বা কম কিসে? সঙ্গে থাকছে সুপার এইটে দুই দলের মুখোমুখি লড়াইয়ে ৯ উইকেটের বিশাল জয়ের টাটকা স্মৃতি। তবে কন্ডিশন, ইতিহাস কোনো কিছুকেই পাত্তা দিচ্ছে না ওয়েস্ট ইন্ডিজ। সামির সাফ কথা, 'আমরা যদি নিজেদের সেরাটা খেলতে পারি, কন্ডিশন কোনো ব্যাপার হবে না।'
আর সেই সেরা খেলাটা খেলার আশায় তারা মাঠে নামছে ক্লাইভ লয়েডের শুভ কামনা সঙ্গে নিয়ে। ওয়ানডে বিশ্বকাপের প্রথম দুটি আসরে শিরোপাজয়ী ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলের কিংবদন্তি অধিনায়কের পাঠানো বার্তা পেয়েই নিজেদের 'গর্বিত' মনে করছেন সামি-গেইলরা। আজ জিতে সেই কিংবদন্তির পাশে দাঁড়ানোর সুযোগটা কি আর নষ্ট করতে চাইবেন তাঁরা!

No comments

Powered by Blogger.