প্রশাসনে পদোন্নতি-দলীয় আনুগত্য যেন বিবেচ্য না হয়
জনপ্রশাসনে পদোন্নতি ও পদায়নের ক্ষেত্রে সরকারের নিজের গৃহীত নীতিমালা অনুসরণ করা হচ্ছে না, এমন অভিযোগ অনেক দিনের। সর্বশেষ গত ৮ ফেব্রুয়ারি উপসচিব থেকে অতিরিক্ত সচিব পর্যায়ে যে পদোন্নতি প্রদান করা হয়েছে, সেখানেও রাজনৈতিক পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ উত্থাপিত হয়েছে।
যদিও প্রশাসন কোনো দলীয় সংগঠন নয়, দলনিরপেক্ষ জাতীয় প্রতিষ্ঠান। ফলে প্রশাসনের দলীয়করণের বিষয়টি আর অভিযোগের মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই। দলীয়করণের অভিযোগের সত্যতাও পাওয়া গেছে। যে কারণে শূন্য ও অনুমোদিত পদসংখ্যার বিষয়টি পদোন্নতি ও পদায়নের সময় সরকারের পক্ষ থেকে ভেবে দেখা সম্ভব হয়নি। গত ৮ ফেব্রুয়ারি পদোন্নতি প্রদানের পর উপসচিব থেকে অতিরিক্ত সচিব পর্যন্ত কর্মকর্তার সংখ্যা দাঁড়ায় দুই হাজার ৪০৪ জন। অথচ এ ক্ষেত্রে অনুমোদিত পদের সংখ্যা সর্বমোট এক হাজার ২১৮টি। সংগত কারণেই প্রশাসনে ভারসাম্য রক্ষা করা কঠিন হয়ে পড়েছে। প্রশাসনের পিরামিড আকৃতি এখন কলসের রূপ নিয়েছে। পদের অভাবে অনেককে তাই ওএসডি করে রাখা হয়েছে। পদোন্নতির পরও অনেককে পূর্বপদেই বহাল রাখা হয়েছে। সুপার নিউমারি পদ সৃষ্টি করে নিম্ন পদে পদায়ন করতে হয়েছে। ফলে প্রশাসনে শৃঙ্খলা বিঘি্নত হয়েছে এবং পদোন্নতি-বঞ্চিতদের মধ্যে চাপা অসন্তোষ সৃষ্টি হয়েছে। এমন অনেক কর্মকর্তা আছেন, যিনি উপসচিব হিসেবে কাজ করছেন, অথচ তাঁরই সহকর্মী এবং তাঁর একই ব্যাচে চাকরিতে যোগদানকারী পদোন্নতি পেয়ে অতিরিক্ত সচিব হয়ে গেছেন। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে জ্যেষ্ঠদের বঞ্চিত করা হয়েছে। এই বৈষম্যকে বঞ্চিতরা রাজনৈতিক প্রভাবের ফল বলে উল্লেখ করে থাকেন। পদোন্নতি-বঞ্চিতদের এই অসন্তোষ নিরসনের যে চেষ্টা করা হয়েছিল তাকেও আইওয়াশ বলে অভিহিত করা হয়েছে। ৫০০ কর্মকর্তা পদোন্নতি-বঞ্চিত হলেও ৩০০ আবেদন জমা পড়ে পদোন্নতি বিবেচনার জন্য। বঞ্চিতদের অনেকেই মনে করছেন, সরকার রাজনৈতিক আনুগত্যকে প্রাধান্য দেওয়ায় তাঁদের সামনে এই মুহূর্তে কোনো আশার আলো জ্বলছে না।
সরকার আবার পদোন্নতি প্রদানের উদ্যোগ নিলেও বঞ্চিতদের জন্য খুব একটা সুখবর আছে বলে মনে হয় না। কারণ ইতিমধ্যে প্রচার পেয়েছে, পদোন্নতির নতুন প্রক্রিয়ায় বঞ্চিতদের আবেদনগুলো বিবেচনার জন্য অগ্রাধিকার পাচ্ছে না। এর মানে, এবারও পদোন্নতির পাল্লায় বঞ্চিত পুরনোদের স্থান পাওয়ার সম্ভাবনা ক্ষীণ হয়ে আসছে। এমন পরিস্থিতিতে অসন্তোষ আরেক দফা বেড়ে যাবে বলে সহজেই অনুমান করা যায়। আর এটি বাস্তবায়ন করা হলে চাপা অসন্তোষ প্রশাসনকে যদি অতীতের মতো আরেকটি জনতার মঞ্চের দিকে ঠেলে দেয়, তাহলে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না।
এ ক্ষেত্রে রাজনৈতিক বিবেচনাকে যুক্তি হিসেবে দাঁড় করানোর একটা প্রবণতা চোখে পড়ে। বলা হয়, বিগত চারদলীয় জোট সরকার আমলেও দলীয়করণ হয়েছে এবং দলীয় আনুগত্যের বিবেচনাকে সামনে এনে জ্যেষ্ঠদের অনেককে ডিঙিয়ে কনিষ্ঠদেরকে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে। সে সময়ের বঞ্চিতরা তাই এবার সুযোগ পাচ্ছেন। যুক্তির নিরিখে এটিও বিবেচনাযোগ্য। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে দুটি প্রক্রিয়ার সততা নিয়ে। তাহলে কি দলীয় রাজনীতির নামে এভাবেই চলতে থাকবে সরকারের কর্মকর্তাদের ভাগ্য নিরূপণ? দলীয় আনুগত্য বিবেচনায় পদোন্নতি প্রদান, যোগ্য ও মেধাবীদের বিষয়কে প্রাধান্য না দেওয়া, সরকারের গৃহীত নীতিমালাকে অনুসরণ না করা- এসব অস্বাভাবিক কাজ যদি চলতেই থাকে তাহলে প্রশাসনে দক্ষ জনশক্তির ঘাটতি দেখা দিতে বাধ্য এবং এখনই তা চরম আকার ধারণ করেছে। কর্মকর্তাদের মধ্যে কর্মদক্ষতা অর্জনের পরিবর্তে এখন দলীয় আনুগত্যের প্রতিযোগিতা বেড়ে গেছে। অবশ্য ইতিমধ্যে প্রশাসন নির্দলীয় চরিত্র হারিয়ে দলীয় ক্যাডার বাহিনীতে পরিণত হয়েছে। ফলে প্রশাসন দক্ষতা হারিয়ে অনেকটা অথর্ব প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। যার দায় বহন করতে হচ্ছে রাষ্ট্রকে। তবে এখন সরকার পদোন্নতির যে উদ্যোগ গ্রহণ করেছে সেখানে যদি দলীয় আনুগত্যের বিষয়টিকে প্রাধান্য না দিয়ে বঞ্চিত ও যোগ্যতার বিষয়টি বিবেচনায় আনা হয়, তাহলে প্রশাসনে সৃষ্ট অস্থিরতা কিছুটা হলেও কমবে। না হলে সরকারের মেয়াদ শেষে প্রশাসনে চরম বিশৃঙ্খলা দেখা দেওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
এ ক্ষেত্রে জনপ্রশাসন সংস্কারের জন্য যে ন্যায়-নীতিভিত্তিক পদক্ষেপ সরকার গ্রহণ করেছিল, তাকেও উজ্জীবিত করা অপরিহার্য।
সরকার আবার পদোন্নতি প্রদানের উদ্যোগ নিলেও বঞ্চিতদের জন্য খুব একটা সুখবর আছে বলে মনে হয় না। কারণ ইতিমধ্যে প্রচার পেয়েছে, পদোন্নতির নতুন প্রক্রিয়ায় বঞ্চিতদের আবেদনগুলো বিবেচনার জন্য অগ্রাধিকার পাচ্ছে না। এর মানে, এবারও পদোন্নতির পাল্লায় বঞ্চিত পুরনোদের স্থান পাওয়ার সম্ভাবনা ক্ষীণ হয়ে আসছে। এমন পরিস্থিতিতে অসন্তোষ আরেক দফা বেড়ে যাবে বলে সহজেই অনুমান করা যায়। আর এটি বাস্তবায়ন করা হলে চাপা অসন্তোষ প্রশাসনকে যদি অতীতের মতো আরেকটি জনতার মঞ্চের দিকে ঠেলে দেয়, তাহলে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না।
এ ক্ষেত্রে রাজনৈতিক বিবেচনাকে যুক্তি হিসেবে দাঁড় করানোর একটা প্রবণতা চোখে পড়ে। বলা হয়, বিগত চারদলীয় জোট সরকার আমলেও দলীয়করণ হয়েছে এবং দলীয় আনুগত্যের বিবেচনাকে সামনে এনে জ্যেষ্ঠদের অনেককে ডিঙিয়ে কনিষ্ঠদেরকে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে। সে সময়ের বঞ্চিতরা তাই এবার সুযোগ পাচ্ছেন। যুক্তির নিরিখে এটিও বিবেচনাযোগ্য। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে দুটি প্রক্রিয়ার সততা নিয়ে। তাহলে কি দলীয় রাজনীতির নামে এভাবেই চলতে থাকবে সরকারের কর্মকর্তাদের ভাগ্য নিরূপণ? দলীয় আনুগত্য বিবেচনায় পদোন্নতি প্রদান, যোগ্য ও মেধাবীদের বিষয়কে প্রাধান্য না দেওয়া, সরকারের গৃহীত নীতিমালাকে অনুসরণ না করা- এসব অস্বাভাবিক কাজ যদি চলতেই থাকে তাহলে প্রশাসনে দক্ষ জনশক্তির ঘাটতি দেখা দিতে বাধ্য এবং এখনই তা চরম আকার ধারণ করেছে। কর্মকর্তাদের মধ্যে কর্মদক্ষতা অর্জনের পরিবর্তে এখন দলীয় আনুগত্যের প্রতিযোগিতা বেড়ে গেছে। অবশ্য ইতিমধ্যে প্রশাসন নির্দলীয় চরিত্র হারিয়ে দলীয় ক্যাডার বাহিনীতে পরিণত হয়েছে। ফলে প্রশাসন দক্ষতা হারিয়ে অনেকটা অথর্ব প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। যার দায় বহন করতে হচ্ছে রাষ্ট্রকে। তবে এখন সরকার পদোন্নতির যে উদ্যোগ গ্রহণ করেছে সেখানে যদি দলীয় আনুগত্যের বিষয়টিকে প্রাধান্য না দিয়ে বঞ্চিত ও যোগ্যতার বিষয়টি বিবেচনায় আনা হয়, তাহলে প্রশাসনে সৃষ্ট অস্থিরতা কিছুটা হলেও কমবে। না হলে সরকারের মেয়াদ শেষে প্রশাসনে চরম বিশৃঙ্খলা দেখা দেওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
এ ক্ষেত্রে জনপ্রশাসন সংস্কারের জন্য যে ন্যায়-নীতিভিত্তিক পদক্ষেপ সরকার গ্রহণ করেছিল, তাকেও উজ্জীবিত করা অপরিহার্য।
No comments