চরাচর-জংশনের বই by বিশ্বজিৎ পাল বাবু

বই পড়া অনেকের নেশা। বাড়িতে তো বটেই, একটু সুযোগ পেলে ভ্রমণেও অনেকে বই পড়ে সময় কাটান। যে কারণে লঞ্চ টার্মিনাল, জংশন স্টেশনে গড়ে উঠেছে ছোটখাটো বইয়ের দোকান। আর এসব দোকানে গতানুগতিকতার বাইরেও কিছু কিছু বই মেলে, যা অন্য কোনো লাইব্রেরিতে মেলে না।


এ ছাড়া স্টেশনে ও ট্রেনে ভ্রাম্যমাণ বিক্রেতাও এসব বই বিক্রি করে থাকেন। তবে সময়ের পরিবর্তনে বদলে যায় এসব বইয়ের ধরন।
ছোট ছোট কবিতা কিংবা ছড়ার বই, গোয়েন্দা গল্প, অপরাধবিষয়ক বই, মোবাইল ফোনের মেসেজ শেখার বই ইত্যাদি শোভা পায় স্টেশনের দোকানগুলোতে। এ ছাড়া চলচ্চিত্র, রাজনীতিসহ বিভিন্ন বিষয়ের ম্যাগাজিন তো থাকেই। কারেন্ট অ্যাফেয়ার্স, কারেন্ট ওয়ার্ল্ড ইত্যাদি সমসাময়িক বই থাকে এসব দোকানে। এখন সঙ্গে যোগ হয়েছে কিছু পর্নো বই।
স্টেশনের দোকানগুলোর বইয়ের আরেকটি আলাদা বৈশিষ্ট্য হলো এসব বইয়ের গায়ে স্ট্যাপলার পিন লাগানো থাকে। কোনো গ্রাহক ইচ্ছে করলেই বইটি যাচাই-বাছাই করে দেখার সুযোগ পান না। দোকানিরা জানালেন, এতে অনেক সুবিধাও আছে। স্টেশনে অনেক ভ্রাম্যমাণ গ্রাহক থাকে বলে বই খোয়ানোর একটা ঝুঁকি থাকে। কিন্তু এ ক্ষেত্রে সে ঝুঁকি কম। বই মানেই তো জ্ঞানের ভাণ্ডার। জ্ঞান সমৃদ্ধির জন্য বইয়ের বিকল্প নেই। কিন্তু স্টেশনের এসব বই নানা ভুলে ভরা থাকে। আনকোরা, অচেনা প্রকাশনীর লোকজন বই সরবরাহ করে থাকেন এসব দোকানে। একটু বাড়তি কমিশনের কথা ভেবে দোকানিরা তা লুফে নেন সানন্দে।
স্টেশনের বইয়ের দোকানগুলোতে আছে কিছু পর্নো বা অশ্লীল বইপত্র। এসব বই প্রায়ই স্ট্যাপলার পিন গাঁথা। দেশ-বিদেশের বিভিন্ন অশ্লীল কাহিনী ও ছবিতে ভরা এসব বই। চলচ্চিত্রের স্ক্যান্ডাল নিয়েও থাকে নানা গল্প। আছে সস্তা যৌনবিষয়ক বই। একশ্রেণীর নিচু কিছু পাঠক পর্নো বইয়ের গ্রাহক। আলাদা কাগজে মুড়ে এসব বই তাঁরা নিয়ে যান দোকানিদের কাছ থেকে। মানে ভালো না হলেও ২০-৩০ পৃষ্ঠার এসব বইয়ের দামও কিন্তু অনেক। ৩০ থেকে ৮০ টাকায় বিক্রি হয় পর্নো বই।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ভ্রাম্যমাণ বিক্রেতা জানান, পর্নো বইয়ের গ্রাহক যুবক ও মাঝ বয়সী লোকজন। তাঁদের ইশারাতেই বোঝা যায়, কী ধরনের বই তাঁরা চাইছেন। এ ক্ষেত্রে খুব একটা দামাদামিও তাঁদের সঙ্গে করতে হয় না।
আখাউড়ার অবসর রেলওয়ে বুক স্টলের স্বত্বাধিকারী মো. মোয়াজ্জেম হোসেন স্বপন বলেন, 'এখন আর আগের মতো বইয়ের চাহিদা নেই। বিভিন্ন ছোট বইসহ ম্যাগাজিনের চাহিদা মানুষ মিটিয়ে ফেলছে ইন্টারনেট ঘেঁটে। আগে চিত্রবাংলা, ছায়াছন্দের মতো কিছু ম্যাগাজিন, ছোট কবিতার বই ইত্যাদির বেশ চাহিদা ছিল। এখন কারেন্ট ওয়ার্ল্ড, কারেন্ট অ্যাফেয়ার্সের মতো ছোট বইগুলোর কিছু কপি বিক্রি হয়। এ ছাড়া গেদু চাচার খোলা চিঠি লেখা 'আজকের সূর্যোদয়' নামের ম্যাগাজিনের চাহিদা এখনো কিছুটা রয়ে গেছে।'
বিশ্বজিৎ পাল বাবু

No comments

Powered by Blogger.