বৌদ্ধ নেতাদের প্রধানমন্ত্রী-হামলাকারীদের ছাড় দেওয়া হবে না

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, সারা বিশ্বে বাংলাদেশের অসাম্প্রদায়িক ভাবমূর্তি নষ্ট করতেই রামুর ঘটনা ঘটানো হয়েছে। একই সঙ্গে রামুসহ বিভিন্ন জায়গায় বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের ওপর হামলাকারীদের কোনো ছাড় দেওয়া হবে না বলেও হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন তিনি।


গতকাল শনিবার সকালে প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে শুদ্ধানন্দ মহাথেরোর নেতৃত্বে বৌদ্ধ সমাজ সুরক্ষা কমিটির একটি প্রতিনিধিদল দেখা করতে গেলে প্রধানমন্ত্রী তাদের আশ্বস্ত করে এ কথা বলেন এবং ওই ঘটনাকে অত্যন্ত মর্মান্তিক আখ্যায়িত করেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বহির্বিশ্বে দেশের ভাবমূর্তি নষ্ট করা এবং যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বাধাগ্রস্ত করাই এ হামলার উদ্দেশ্য।
এদিকে দুপুরে গণভবনে দিনাজপুর জেলা আওয়ামী লীগের তৃণমূল নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় সূচনা বক্তব্যে দলীয় সরকারের অধীনেই আগামী নির্বাচনের ইঙ্গিত দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, আওয়ামী লীগ আমলে প্রতিটি নির্বাচন অবাধ ও নিরপেক্ষ হয়েছে, ভবিষ্যতেও হবে। দেশের মানুষ আরেকটি ওয়ান-ইলেভেনের অমানিশা দেখতে চায় না বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
বৌদ্ধ সমাজ সুরক্ষা কমিটির নেতাদের আশ্বস্ত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, হামলার ভিডিও ফুটেজ দেখে ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের শনাক্ত করে তালিকা করা হচ্ছে। তাদের গ্রেপ্তার করে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
শেখ হাসিনা বলেন, বিগত সরকারের সময় সংখ্যালঘুদের ওপর অত্যাচার-নির্যাতন হয়েছিল। বহির্বিশ্বে বাংলাদেশ সাম্প্রদায়িক জঙ্গিবাদের দেশ হিসেবে পরিচিতি পেয়েছিল। বর্তমান সরকার ক্ষমতাসীন হওয়ার পর দেশে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিরাজ করছে। জঙ্গিবাদের দুর্নাম ঘুচেছে।
ঈদুল আজহা ও দুর্গাপূজা সামনে রেখে প্রধানমন্ত্রী সবাইকে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়ে বলেন, তারা যে নোংরা খেলা শুরু করেছে, তা তারা করবেই। তাই সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে।
বৌদ্ধ সমাজ সুরক্ষা কমিটির প্রতিনিধিদলে আরো ছিলেন কমিটির সদস্যসচিব অশোক বড়ুয়া, অধ্যাপক প্রণব কুমার বড়ুয়া, পি আর বড়ুয়া প্রমুখ।
অশোক বড়ুয়া ওই ঘটনায় তাঁদের পর্যবেক্ষণ প্রধানমন্ত্রীর কাছে তুলে ধরেন। সুরক্ষা কমিটির রিপোর্টে রোহিঙ্গা ইস্যুকে উসকে দেওয়া, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বাধাগ্রস্ত করা এবং আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি করা ওই হামলার মূল উদ্দেশ্য বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
রোহিঙ্গাদের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, রোহিঙ্গাদের সঙ্গে সরকার অমানবিক কোনো আচরণ করেনি। কিন্তু তারা অসামাজিক কাজের সঙ্গে জড়িত হয়ে পড়ছে। বাংলাদেশের পাসপোর্ট ব্যবহার করে বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি নষ্ট করছে।
দুপুরে দিনাজপুর জেলা আওয়ামী লীগের নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা যাদের ক্ষমতায় যাওয়ার খায়েশ আছে তাদের ভোটের মাধ্যমে খায়েশ পূরণ করার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, 'অনেকের খায়েশ আছে গাড়িতে পতাকা ওড়াবেন। তাদের বলব, রাজনীতিতে আসেন। ভোটের মাধ্যমে খায়েশ পূরণ করতে পারেন।' গণতন্ত্র ধ্বংস করে কারো খায়েশ পূরণ করতে দেওয়া হবে না বলেও হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন তিনি।
আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, বিএনপি-জামায়াত জোটের শাসনামল মানেই হত্যা, সন্ত্রাস, দুর্নীতি, লুটপাট, জঙ্গিবাদ ও অর্থপাচারে চ্যাম্পিয়ন হওয়া।
হাসিনা বলেন, 'যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়েছি। এখন নানারকম কলাকৌশল ও ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে।' তিনি দেশবাসীকে এ ব্যাপারে সজাগ থাকার আহ্বান জানান।
বৈঠকে স্বাগত বক্তব্য দেন দিনাজপুর জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আজিজুল ইমাম চৌধুরী। সাংগঠনিক রিপোর্ট উপস্থাপন করেন ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক শরিফুল আহসান লাল।
বৈঠকে আওয়ামী লীগ নেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী, আবদুল লতিফ সিদ্দিকী, শেখ ফজলুল করিম সেলিম, ড. মহীউদ্দীন খান আলমগীর, সতীশ চন্দ্র রায়, সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম, আবুল হাসনাত আবদুল্লাহ, অধ্যাপক আলাউদ্দিন আহমদ, জাহাঙ্গীর কবির নানক, নূহ-উল-আলম লেনিন, খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, ফরিদুন্নাহার লাইলী, অসীম কুমার উকিল, মৃণাল কান্তি দাস প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

No comments

Powered by Blogger.