ঈদে বাড়ি ফেরা-পথের বাধা দূর করুন
আবার উৎসবের মৌসুম সমাগত। অক্টোবরের শেষ সপ্তাহে শারদীয় দুর্গাপূজা শেষ হতে না হতেই ঈদুল আজহা। ধর্মীয় উৎসবের লম্বা ছুটিতে অনেকেই নাগরিক ক্লান্তি থেকে মুক্ত হয়ে গ্রামীণ বাতাসে বুকভরা শ্বাস নেওয়ার তীব্র আকুতি নিয়ে ছুটে যাবেন প্রিয়জনদের সানি্নধ্যে।
স্বভাবতই উৎসব সামনে রেখে বাড়ি ফেরার আয়োজনে ব্যস্ত হয়ে পড়বেন নগরবাসী। কিন্তু উৎসবের ছুটিতে বাড়ি ফেরার আকুতি যেমন আন্তরিক, ছুটি কাটিয়ে ফিরে আসার আয়োজন কিন্তু ততটাই ঝঞ্ঝাটময়। বাস-ট্রেন-লঞ্চের টিকিট নেই। উপচেপড়া মানুষ নিয়ে ঝুঁকিপূর্ণ রাস্তা যানবাহনের দীর্ঘ যানজটে স্থবির হয়ে আছে। এসব চেনা দৃশ্য। পথের এই দুর্ভোগ যেন অলঙ্ঘনীয়। এসব দুর্ভোগ মেনে নিয়ে যাত্রা না করলে বাড়ি ফেরার আর কোনো সহজ উপায় নেই। তাই বছরের পর বছর এমন দুর্ভোগ মাথা পেতে নিয়ে লাখ লাখ মানুষ শহর থেকে উৎসবে গ্রামে ফেরেন। দুর্ভোগের সঙ্গে পথে তাড়া করে ফেরে দুর্ঘটনা ও দুর্বিপাক। অথচ দায়িত্বশীল ব্যক্তিরা সচেতন হলে এ দুর্ভোগের অনেকটাই লাঘব করা সম্ভব। কয়েক বছর ধরে ঘরে ফেরার পথে মূল বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে যানবাহন স্বল্পতা, টিকিট সংকট আর রাস্তার দুরবস্থা। ঢাকা থেকে বেরোবার সবক'টি সড়কের অবস্থাই বেহাল। প্রয়োজনীয় সংস্কারের অভাবে এগুলো ব্যবহারের অনুপযুক্ত হয়ে পড়েছে। কিন্তু সংস্কার প্রক্রিয়া চলছে ধীরগতিতে। ঈদের আগে তড়িঘড়ি সাময়িক সংস্কার করে মোটামুটি চলনসই করা হয় রাস্তাগুলো। কিন্তু ঈদ ফুরালেই রাস্তা আবার আগের মতো হয়ে পড়ে। এ অবস্থায় টেকসই সংস্কারের কথাই ভাবতে হবে। কিন্তু টেকসই সংস্কারের দেখা সহজে মিলছে না। এযাবৎ রাস্তা সংস্কারের কাজ এগিয়েছে ১২ শতাংশ। ধীরগতির সঙ্গে জুটেছে রাস্তা উন্নয়নের দুর্ভোগও। কয়েকটি মহাসড়ক চারলেনে উন্নীত করার কাজ চলছে আর এ জন্য রাস্তাগুলোতে চলছে উন্নয়নযজ্ঞ। যানবাহনগুলো রাস্তার একপাশ ব্যবহার করে যাওয়া-আসা করছে। এমন ব্যবস্থা বজায় থাকলে যানজট যে অসহনীয় হয়ে উঠবে, তা বলাই বাহুল্য। ঈদুল আজহায় বাড়তি দুর্ভোগ তৈরি করে কোরবানির পশুর হাট। রাজধানী থেকে বেরোবার পথের ওপরই অধিকাংশ পশুর হাট বসে। ফলে যানবাহনগুলো রাজধানীর ভেতরেই তীব্র যানজটে পড়ে। এ জন্য আগাম সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে মূল রাস্তায় যেন কোরবানির পশু বিক্রি না করা হয় সেদিকে নজর দেওয়া দরকার। এর পাশাপাশি পর্যাপ্ত যানবাহন নিশ্চিত করা ও টিকিট কালোবাজারি বন্ধ করতে হবে। তবে শুধু সড়ক পথই নয়, বাড়তি শক্তি নিয়ে যুক্ত করতে হবে রেল ও নৌপথকেও। রেলমন্ত্রী বলেছেন, ঈদে ট্রেন ঠিক সময়ে ছাড়বে। এর আগের রেলমন্ত্রীও এমন কথা বলেছিলেন, কিন্তু শত চেষ্টা করেও সঠিক সময়ে ট্রেন ছাড়া যায়নি। ইঞ্জিন স্বল্পতাসহ নানা অবকাঠামোগত জটিলতা তো আছেই। তবে গত ঈদুল ফিতরের সময় যোগাযোগমন্ত্রীর বহুমুখী তৎপরতায় বাড়ি ফেরার দুর্ভোগ কিছুটা লাঘব হয়েছিল। এবারও এমন তৎপরতাই প্রত্যাশিত। শুধু ঈদের জন্যই নয়, বছরের সবসময়ের যোগাযোগ গতিশীল রাখতে রাস্তা সংস্কার ও উন্নয়ন প্রক্রিয়া দ্রুততর হওয়া দরকার। রেল ব্যবস্থাপনাকেও একটি নিয়মের মধ্যে আনতে হবে। নইলে বিশেষ উপলক্ষের সাময়িক ব্যবস্থা দীর্ঘমেয়াদি কল্যাণে কোনো ভূমিকা রাখতে পারবে না।
No comments