১১ জনের মর্মান্তিক মৃত্যু-মহাসড়কে দায়মুক্তি!
গত শুক্রবার ভোর সাড়ে ৫টায় ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের দক্ষিণ সুরমার তেতলী এলাকায় বাস ও মাইক্রোবাসের মুখোমুখি সংঘর্ষে একই পরিবারের ১১ জনের মৃত্যুর ঘটনা পাষাণ হৃদয়কেও কাঁদিয়েছে। দুর্ঘটনার জন্য দায়ী বাসচালক পলাতক। মাইক্রোবাসের চালক মৃত্যুর মিছিলে শামিল।
এত বড় একটা দুর্ঘটনার পর স্বভাবতই স্থানীয় মানুষের মধ্যে ক্ষোভের বিস্ফোরণ ঘটে। তারা মহাসড়ক ৪ ঘণ্টা অবরোধ করে রাখেন। পরে বাসচালককে গ্রেফতার ও রাস্তা দ্রুত মেরামতের প্রতিশ্রুতি দিয়ে স্থানীয় প্রশাসন জনরোষ প্রশমিত করতে সমর্থ হয়। দেশের মহাসড়কগুলো যে এখনও পুরোপুরি দ্রুতগামী যান চলাচলের জন্য উপযোগী হয়ে ওঠেনি, এ দুর্ঘটনা এবং এতে জনগণের প্রতিক্রিয়ায় তা স্পষ্ট। রং সাইড দিয়ে দ্রুতগামী বাস চালানো গুরুতর অপরাধ। তবে, এ অপরাধ সংঘটনের কারণ জুগিয়েছে এবড়োখেবড়ো মহাসড়ক। রাস্তাটি যথাসময়ে সংস্কার হলে হয়তো এমন অকাল মৃত্যুর হাত থেকে পরিবারটি এবং অন্য হতভাগ্যরা রক্ষা পেতেন। অনেক আশা বুকে নিয়ে এই পরিবারটি হাসিমুখেই বাড়ি ফিরছিল। জমিজমা সংক্রান্ত বিরোধের জের ধরে দায়ের করা একটি হত্যা মামলায় উচ্চ আদালত থেকে জামিন নিয়ে তারা বাড়ি ফিরছিলেন। ওই ঘটনায় তারা প্রকৃত অপরাধী কি-না সে বিচার করতেন আদালত। কিন্তু বেপরোয়া বাস ওই পরিবার, আদালত এবং সংশ্লিষ্টদের নিমিষে যেন নির্মমভাবে দায়মুক্তি দিয়ে দিল। এভাবে কত পরিবার যে আমাদের সড়ক-মহাসড়কগুলোতে যন্ত্রদানবের তাণ্ডবলীলার শিকার হয়ে গেছে, তাদের কথা ক'জন মনে রাখে! এই পরিবারের মর্মন্তুদ কাহিনীও এক সময় আমরা ভুলে যাব। তবে, সড়ক দুর্ঘটনার ভয়াবহ তথ্য পরিসংখ্যান যখন আসবে, তখন এই পরিবারের সাধ মিটার আগেই আশা ফুরানোর করুণ কাহিনী মানুষের হৃদয় আলোড়িত করবে। অথচ বাস্তবোচিত পদক্ষেপের মাধ্যমে আমরা এ ধরনের মৃত্যু অনেকাংশেই রোধ করতে পারি। রাস্তাগুলোকে আরও প্রশস্ত ও প্রয়োজনীয় মেরামত করে, মহাসড়কে গতি নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা বসিয়ে, লক্কড়-ঝক্কড় মার্কা যান তুলে দিয়ে এবং চালকদের উন্নত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করে মহাসড়কে দুর্ঘটনার মাত্রা অনেকাংশেই কমিয়ে আনা সম্ভব। এ ব্যাপারে যোগাযোগমন্ত্রী যথেষ্ট তৎপর হলেও এখনও যে মহাসড়কগুলো যাত্রীদের জন্য মৃত্যুফাঁদ হয়ে রয়েছে, সিলেটের সর্বশেষ দুর্ঘটনাটি তার প্রমাণ। আমরা প্রত্যাশা করব, এমন মর্মন্তুদ করুণ কাহিনীর যেন এখানেই সমাপ্তি ঘটে।
No comments