পাঠকের লেখা- নতুন মৌসুমে সামান্য চাওয়া by তোফায়েল আহমেদ
প্রত্যাশার মধ্যে যদি না-পাওয়ার শঙ্কা থাকে, তবে সেই প্রত্যাশা একটু হলেও অর্থহীন মনে হয়। বাংলাদেশের ফুটবল নিয়ে কোনো কিছু প্রত্যাশা করা সে রকমই অর্থহীন উচ্চাশা! তাই শুরুতেই এই লেখাকে স্বপ্নবিলাস বললেও ভুল হবে না।
তার পরও কোনো কিছু নিয়ে স্বপ্ন দেখতে তো আর মানা নেই। ফেডারেশন কাপ দিয়ে শুরু হওয়া নতুন ফুটবল মৌসুমের কাছে সমর্থকেরা তো কিছু চাইতেই পারে। ঘরোয়া ফুটবলের নতুন মৌসুমে আপনার চাওয়াটাই বা কী? একটা তালিকা করা যাক—
১. সুন্দর ফুটবল
২. গ্যালারি-ভর্তি দর্শক
৩. দুর্দান্ত ব্যক্তিগত নৈপুণ্য
৪. প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ লিগ বা টুর্নামেন্ট
এগুলো ফুটবল-অনুরাগীদের সর্বজনীন চাওয়া। শুধু বাংলাদেশের ক্ষেত্রে নয়, যেকোনো দেশের জন্যই এটা বলা যায়। তার পরও বাংলাদেশের ফুটবলামোদীদের সবচেয়ে বড় যে চাওয়া, সেই চাওয়াকেই তো তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। এই চাওয়াকে তালিকায় নম্বরভুক্ত করে চাওয়ার ব্যাপ্তি বোঝানো যাবে না। কী এমন চাওয়া সেটা? তেমন কিছু নয়—পাতানো খেলাবিহীন ফুটবল মৌসুম। এটিকে অনেক বড় চাওয়া বলে উল্লেখ করে, সেই চাওয়াকেই আবার তেমন কিছু নয় বলাটা পাঠকের মনে বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করতে পারে। তাই দর্শকদের কাছে যেটা বড় চাওয়া, সেই চাওয়াকে ‘তেমন কিছু নয়’ বলার কারণ ব্যাখ্যা করা ভালো। কারণ হচ্ছে, এই চাওয়াকে খেলোয়াড়-কর্মকর্তারা ইচ্ছা করলেই পূর্ণতা দিতে পারেন। খেলার মাঠে খেলোয়াড় ইচ্ছা করলেই চোখ-ধাঁধানো ব্যক্তিগত নৈপুণ্য প্রদর্শন করতে পারেন না। কারণ, এখানে ফর্মের একটা ব্যাপার থাকে।
পাতানো খেলা ইচ্ছা করলেই বাদ দিতে পারেন খেলোয়াড়েরা, যে ইচ্ছা আমাদের ক্লাব-খেলোয়াড়দের অনেকেরই নেই। ও হ্যাঁ, বলা ভালো, ফেডারেশনেরও নেই। থাকলে তারা পাতানো ম্যাচ নিয়ে তদন্তের নামে রসিকতা করতে পারত না। নতুন মৌসুমের শুরুতে পাতানো ম্যাচবিহীন মৌসুমই তাই খেলোয়াড়-কর্মকর্তাদের কাছে দর্শকের বড় চাওয়া, যে ভাইরাস থেকে প্রায় কোনোবারই বাংলাদেশের ফুটবল দূরে থাকতে পারেনি।
দুই মৌসুম আগেও বাংলাদেশের ঘরোয়া ফুটবল মানেই ছিল আবাহনী-মোহামেডান দ্বৈরথ। লিগ বা টুর্নামেন্টে এই দুই দল নিয়েই যত অঙ্ক কষা হতো। এখন সেই দ্বৈরথ কিছুটা কমেছে। শেষ দুই মৌসুমে নতুন দুটি ক্লাবের আবির্ভাবে শিরোপাপ্রত্যাশী দলের সংখ্যা বেড়েছে; বেড়েছে খেলোয়াড়দের আয়ও। কিন্তু কোথায় যেন আগের সেই প্রাণ নেই। দল নিয়ে সমর্থকদের মাতামাতি নেই, মাঠে দর্শকের উপস্থিতি নেই। সবচেয়ে বড় কথা, তারকানৈপুণ্য নেই। অনেক আগেই ঢাকার ফুটবল তারকাশূন্য হয়ে পড়েছে। তার পরও দু-একজন তারকা নিয়ে আলোচনা হতো; কিন্তু এখন সেটাও নেই। বিদেশিদের দাপটে দেশীয় তারকাদের এখন হারিয়ে যাওয়ার উপক্রম। এ থেকে মুক্তি পাওয়াও কঠিন। কারণ, ক্লাবগুলোর কাছে সবকিছুর ঊর্ধ্বে শিরোপা; আর ঘরোয়া ফুটবলে বিদেশি খেলোয়াড়দের আধিক্য নিয়ে মাথাব্যথা নেই ফেডারেশনেরও। তাই নতুন মৌসুমে এর ব্যতিক্রম কিছু ঘটার সুযোগ কম। তার পরও চাইতে তো দোষ নেই। তাই নতুন মৌসুমের কাছে এসব চাওয়াকেও পেশ করা যায়।
আরও একটা বিষয় ঢাকার ফুটবল থেকে বলতে গেলে হারিয়ে গেল, সেটা আমিনুল-বিপ্লব লড়াই। জাতীয় দলের গোলকিপিং পজিশনের একটা মাত্র জায়গায় এই দুজনের মিউজিক্যাল চেয়ারের খেলাটা কম-বেশি সবার জানা। দুজনই ভালো গোলকিপার, যাঁদের উনিশ-বিশ বলতেও অনেকের ভয়। তার পরও খেলতে তো হবে একজনকেই। জাতীয় দলে একজন খেলবেন, আরেকজন বেঞ্চে। কিন্তু লড়াইটা জমত ঘরোয়া ফুটবলে। এখন সেই লড়াইও নেই। আমিনুল জাতীয় দল থেকে অবসর নিয়েছেন, বিপ্লব সেই পথে না হাঁটলেও তাঁরও এখন জাতীয় দল থেকে বিদায়ের সময়। সম্প্রতি নেপালে খেলে আসা প্রদর্শনী ম্যাচের দলে জায়গা পাননি বিপ্লব। নতুন মুখ এলেও আমিনুল-বিপ্লবের মতো উপভোগ্য প্রতিদ্বন্দ্বিতার ক্ষেত্র তৈরি হবে কি না, সন্দেহ।
তারকাশূন্যতার যুগে নতুন মৌসুমে ঢাকার ফুটবলের অনেক বড় এক তারকার বিদায় ঘটবে। হতে পারেন তিনি আলফাজ আহমেদ কিংবা নজরুল ইসলাম। তাঁদের সম্ভাব্য বিদায়ের মৌসুমে আরও একটা বড় চাওয়া হতে পারে নতুন আলফাজের আবির্ভাব। হলে ভালো, না হলে তারকাশূন্যতার হাহাকারে পুড়তে হবে।
বাংলাদেশের ঘরোয়া ফুটবল শরৎ আর বসন্তের বন্ধনীতে আবদ্ধ। মৌসুম শুরু হয় শরতের শুরুতে, আর শেষ বসন্তের শেষে। আশ্চর্যজনক মিল হচ্ছে, মৌসুমের শুরু আর শেষে এই দুই ঋতুর অপরূপ শোভার মতোই সুন্দর বাতাসই বয়। শুরুটা হয় নতুনের স্বপ্ন নিয়ে, আর শেষ হয় পরের বারের স্বপ্ন দেখে। মাঝের পুরোটা সময় শীতের কুয়াশার মতোই হতাশায় আচ্ছন্ন থাকে। এবারও কি এ রকমই হবে? নতুন মৌসুমে আর সব চাওয়ার মধ্যে এ থেকে মুক্তিও বড় চাওয়া।
১. সুন্দর ফুটবল
২. গ্যালারি-ভর্তি দর্শক
৩. দুর্দান্ত ব্যক্তিগত নৈপুণ্য
৪. প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ লিগ বা টুর্নামেন্ট
এগুলো ফুটবল-অনুরাগীদের সর্বজনীন চাওয়া। শুধু বাংলাদেশের ক্ষেত্রে নয়, যেকোনো দেশের জন্যই এটা বলা যায়। তার পরও বাংলাদেশের ফুটবলামোদীদের সবচেয়ে বড় যে চাওয়া, সেই চাওয়াকেই তো তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। এই চাওয়াকে তালিকায় নম্বরভুক্ত করে চাওয়ার ব্যাপ্তি বোঝানো যাবে না। কী এমন চাওয়া সেটা? তেমন কিছু নয়—পাতানো খেলাবিহীন ফুটবল মৌসুম। এটিকে অনেক বড় চাওয়া বলে উল্লেখ করে, সেই চাওয়াকেই আবার তেমন কিছু নয় বলাটা পাঠকের মনে বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করতে পারে। তাই দর্শকদের কাছে যেটা বড় চাওয়া, সেই চাওয়াকে ‘তেমন কিছু নয়’ বলার কারণ ব্যাখ্যা করা ভালো। কারণ হচ্ছে, এই চাওয়াকে খেলোয়াড়-কর্মকর্তারা ইচ্ছা করলেই পূর্ণতা দিতে পারেন। খেলার মাঠে খেলোয়াড় ইচ্ছা করলেই চোখ-ধাঁধানো ব্যক্তিগত নৈপুণ্য প্রদর্শন করতে পারেন না। কারণ, এখানে ফর্মের একটা ব্যাপার থাকে।
পাতানো খেলা ইচ্ছা করলেই বাদ দিতে পারেন খেলোয়াড়েরা, যে ইচ্ছা আমাদের ক্লাব-খেলোয়াড়দের অনেকেরই নেই। ও হ্যাঁ, বলা ভালো, ফেডারেশনেরও নেই। থাকলে তারা পাতানো ম্যাচ নিয়ে তদন্তের নামে রসিকতা করতে পারত না। নতুন মৌসুমের শুরুতে পাতানো ম্যাচবিহীন মৌসুমই তাই খেলোয়াড়-কর্মকর্তাদের কাছে দর্শকের বড় চাওয়া, যে ভাইরাস থেকে প্রায় কোনোবারই বাংলাদেশের ফুটবল দূরে থাকতে পারেনি।
দুই মৌসুম আগেও বাংলাদেশের ঘরোয়া ফুটবল মানেই ছিল আবাহনী-মোহামেডান দ্বৈরথ। লিগ বা টুর্নামেন্টে এই দুই দল নিয়েই যত অঙ্ক কষা হতো। এখন সেই দ্বৈরথ কিছুটা কমেছে। শেষ দুই মৌসুমে নতুন দুটি ক্লাবের আবির্ভাবে শিরোপাপ্রত্যাশী দলের সংখ্যা বেড়েছে; বেড়েছে খেলোয়াড়দের আয়ও। কিন্তু কোথায় যেন আগের সেই প্রাণ নেই। দল নিয়ে সমর্থকদের মাতামাতি নেই, মাঠে দর্শকের উপস্থিতি নেই। সবচেয়ে বড় কথা, তারকানৈপুণ্য নেই। অনেক আগেই ঢাকার ফুটবল তারকাশূন্য হয়ে পড়েছে। তার পরও দু-একজন তারকা নিয়ে আলোচনা হতো; কিন্তু এখন সেটাও নেই। বিদেশিদের দাপটে দেশীয় তারকাদের এখন হারিয়ে যাওয়ার উপক্রম। এ থেকে মুক্তি পাওয়াও কঠিন। কারণ, ক্লাবগুলোর কাছে সবকিছুর ঊর্ধ্বে শিরোপা; আর ঘরোয়া ফুটবলে বিদেশি খেলোয়াড়দের আধিক্য নিয়ে মাথাব্যথা নেই ফেডারেশনেরও। তাই নতুন মৌসুমে এর ব্যতিক্রম কিছু ঘটার সুযোগ কম। তার পরও চাইতে তো দোষ নেই। তাই নতুন মৌসুমের কাছে এসব চাওয়াকেও পেশ করা যায়।
আরও একটা বিষয় ঢাকার ফুটবল থেকে বলতে গেলে হারিয়ে গেল, সেটা আমিনুল-বিপ্লব লড়াই। জাতীয় দলের গোলকিপিং পজিশনের একটা মাত্র জায়গায় এই দুজনের মিউজিক্যাল চেয়ারের খেলাটা কম-বেশি সবার জানা। দুজনই ভালো গোলকিপার, যাঁদের উনিশ-বিশ বলতেও অনেকের ভয়। তার পরও খেলতে তো হবে একজনকেই। জাতীয় দলে একজন খেলবেন, আরেকজন বেঞ্চে। কিন্তু লড়াইটা জমত ঘরোয়া ফুটবলে। এখন সেই লড়াইও নেই। আমিনুল জাতীয় দল থেকে অবসর নিয়েছেন, বিপ্লব সেই পথে না হাঁটলেও তাঁরও এখন জাতীয় দল থেকে বিদায়ের সময়। সম্প্রতি নেপালে খেলে আসা প্রদর্শনী ম্যাচের দলে জায়গা পাননি বিপ্লব। নতুন মুখ এলেও আমিনুল-বিপ্লবের মতো উপভোগ্য প্রতিদ্বন্দ্বিতার ক্ষেত্র তৈরি হবে কি না, সন্দেহ।
তারকাশূন্যতার যুগে নতুন মৌসুমে ঢাকার ফুটবলের অনেক বড় এক তারকার বিদায় ঘটবে। হতে পারেন তিনি আলফাজ আহমেদ কিংবা নজরুল ইসলাম। তাঁদের সম্ভাব্য বিদায়ের মৌসুমে আরও একটা বড় চাওয়া হতে পারে নতুন আলফাজের আবির্ভাব। হলে ভালো, না হলে তারকাশূন্যতার হাহাকারে পুড়তে হবে।
বাংলাদেশের ঘরোয়া ফুটবল শরৎ আর বসন্তের বন্ধনীতে আবদ্ধ। মৌসুম শুরু হয় শরতের শুরুতে, আর শেষ বসন্তের শেষে। আশ্চর্যজনক মিল হচ্ছে, মৌসুমের শুরু আর শেষে এই দুই ঋতুর অপরূপ শোভার মতোই সুন্দর বাতাসই বয়। শুরুটা হয় নতুনের স্বপ্ন নিয়ে, আর শেষ হয় পরের বারের স্বপ্ন দেখে। মাঝের পুরোটা সময় শীতের কুয়াশার মতোই হতাশায় আচ্ছন্ন থাকে। এবারও কি এ রকমই হবে? নতুন মৌসুমে আর সব চাওয়ার মধ্যে এ থেকে মুক্তিও বড় চাওয়া।
No comments