হাতিরঝিলের বরুণ গাছ-বৃক্ষের জন্য শোকগাথা
একটি বেদনাদায়ক খবর প্রকাশিত হয়েছে মঙ্গলবারের সমকালের শেষ পৃষ্ঠায়। 'শেষ বরুণ গাছটি হারিয়ে গেল' শিরোনামের এ খবর প্রকৃতিপ্রেমী নগরবাসীকে হতাশায় নিমজ্জিত করার জন্য যথেষ্ট। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে নগরের নিসর্গ নিয়ে গণমাধ্যমের কৌতূহল বেড়েছে।
কৌতূহলের পেছনে আছে প্রাণ ও প্রকৃতি বিষয়ে অনুসন্ধিৎসু নিসর্গপ্রেমী কিছু মানুষের উদ্যম ও উদ্যোগ। মূলত এই স্বল্পসংখ্যক প্রকৃতিপ্রেমী মানুষের আগ্রহেই শহরের নিসর্গ-প্রকৃতি ও পরিবেশ নিয়ে লেখালেখি শুরু হয়। আর সেগুলো পাঠকপ্রিয়তাও লাভ করে। এসব লেখায় যেমন উঠে এসেছে শতবর্ষী নানা গাছের কথা, তেমনি বিরল নানা উদ্ভিদের খবরও মিলেছে তাদের অনুসন্ধানেই। সম্প্রতি এমনই এক জীববৈচিত্র্যবিদ জানিয়েছিলেন ঢাকা শহরের শেষ বরুণ গাছটির কথা। বাংলায় বরুণ দুর্লভ উদ্ভিদ নয়। গ্রামবাংলায় আজও বরুণের দেখা মেলে। ভেষজ গুণসম্পন্ন বলে বরুণের আলাদা সমাদরও আছে। ভারতে এ গাছটি বিশেষ আয়ুর্বেদিক গাছ হিসেবে সমাদৃত। হারবাল গুণসম্পন্ন বলে এ গাছ বিশেষ যত্ন নিয়ে রক্ষণাবেক্ষণ করা হয়। সাধারণত নদী-তীরবর্তী স্থানে ৭ থেকে ৯ মিটার দীর্ঘ বরুণ গাছ জন্মায়। ঢাকা শহরের নদী-তীরবর্তী দূষণ ও দখলময় স্থানগুলো বরুণের জন্য কতটা উপযুক্ত, তা সবার জানা। তবে প্রকৃতির অদ্ভুত খেয়ালে একটি বরুণ গাছ টিকে ছিল হাতিরঝিলের পাশে, বিজিএমইএ ভবনের সামনে। এ ভবনটি তৈরি হয়েছে ঝিলের জায়গা দখল করে। বলাবাহুল্য, বিপুল প্রাকৃতিক শক্তি নিয়েই বরুণ গাছটি এখানে জন্মাতে ও বেড়ে উঠতে পেরেছে। শহরের একমাত্র বরুণ গাছ নিয়ে স্বভাবতই আগ্রহ ছিল অনেকের। কিন্তু দেখা গেল, গাছটি আর যথাস্থানে নেই। কেটে ফেলা হয়েছে। এভাবে অনেক গাছই কাটা পড়ে। যারা গাছ কাটে তারা গাছের নাম, জাত, উপকারিতার বিচার করে না। গাছটি বিরল প্রজাতির কি-না, সে খবর নেওয়ার অবকাশও তাদের নেই। এক ধরনের নিষ্ঠুরতাই রয়েছে বৃক্ষনিধনের মূলে। এমন মনোভাব নিয়ে যে প্রাকৃতিক সম্পদ রক্ষা করা সম্ভব নয়, তা সবার জানা। কিন্তু এই নির্মমতা ও নিষ্ঠুরতার মধ্যেও একটি নৈসর্গিক নগরের স্বপ্ন ভেতরে ভেতরে বেড়ে উঠছে। শত বাধা সত্ত্বেও হাতিরঝিল প্রকল্প গড়ে উঠছে। সে প্রকল্পের অংশ হতে পারে একটি নির্মল নৈসর্গিক পরিবেশ। বৃক্ষায়নের জন্য সেখানে বেছে নেওয়া যেতে পারে বরুণ, হিজল, জারুল, কদম, গাব, চালতার মতো দেশীয় গাছ। আমাদের দেশীয় প্রকৃতির সঙ্গে সাযুজ্যপূর্ণ গাছ লাগালে সৌন্দর্য বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে তা উপকারেও আসবে। কিন্তু স্রেফ চোখের শান্তির জন্য দৃষ্টিনন্দন বিদেশি গাছ লাগালে বিশেষ ফল মিলবে না। তাই হারিয়ে যাওয়া বরুণ গাছটির কথা মনে করে হাতিরঝিল প্রকল্পে অনেক বরুণ গাছ লাগানো হবে_ এটাই আমাদের প্রত্যাশা।
No comments