নিরাপত্তা রক্ষায় নিজস্ব সক্ষমতা অর্জনে এক ধাপ অগ্রগতি- বাংলাদেশের প্রথম যুদ্ধজাহাজ

মিয়ানমারের সঙ্গে সমুদ্রসীমা জয়ের পর বাংলাদেশের নৌসীমায় অবস্থিত সম্পদ অনুসন্ধান, ব্যবহার ও রক্ষণাবেক্ষণের বিষয়টি যখন নানাভাবে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে, তখন দেশে প্রথম যুদ্ধজাহাজ নির্মাণের খবরটি আনন্দদায়কই বটে। এই নির্মাণের কাজে যুক্ত সব প্রকৌশলী ও প্রযুক্তিবিদকে অভিনন্দন জানাই।


এর মাধ্যমে দেশের নিরাপত্তা রক্ষায় নিজস্ব সক্ষমতা অর্জনে বাংলাদেশ এক ধাপ এগিয়ে গেল।
প্রায়ই বিদেশি ট্রলার মাছ ধরতে অবৈধভাবে বাংলাদেশের সমুদ্রসীমায় ঢুকে পড়ে, উৎপাত করে। কিন্তু তা বন্ধ করার জন্য যে সংখ্যক টহলযান থাকা প্রয়োজন, বাংলাদেশ নৌবাহিনীর তা নেই। আবার বিদেশ থেকে এসব যান আমদানি করতেও বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক অর্থ গুনতে হয়। এ অবস্থায় নৌবাহিনী খুলনা শিপইয়ার্ডের সঙ্গে পাঁচটি যুদ্ধজাহাজ নির্মাণের চুক্তি করে ২০১০ সালে, যার প্রথমটি উদ্বোধন করা হলো রোববার। ৫৮ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত এ জাহাজটির দৈর্ঘ্য ৩৭ মিটার ও প্রস্থ সাত দশমিক ৫ মিটার। ডিসেম্বরে আনুষ্ঠানিকভাবে এটি নৌবাহিনীর কাছে হস্তান্তর করা হবে।
নৌবাহিনী এত দিন প্রায় শতভাগ বিদেশি যুদ্ধসরঞ্জাম ব্যবহার করত। এখন থেকে দেশে নির্মিত জাহাজেই তারা সমুদ্রের সম্পদ পাহারা দিতে পারবে। রোববার খুলনা শিপইয়ার্ডে বাংলাদেশের প্রথম যুদ্ধজাহাজ উদ্বোধন উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে পররাষ্ট্রমন্ত্রী দীপু মনি আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন, ‘আমাদের শিপইয়ার্ড ভবিষ্যতে দেশের চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি বিদেশেও যুদ্ধজাহাজ রপ্তানি করবে।’ তাঁর এই আশাবাদে অত্যুক্তি নেই। এর আগে বেসরকারি জাহাজ কোম্পানিগুলো বিদেশে উন্নত মানের জাহাজ রপ্তানি করে দেশের মুখ উজ্জ্বল করেছে।
যেখানে আমাদের নিরাপত্তা বাহিনী পুরোপুরি বিদেশি সরঞ্জামের ওপর নির্ভরশীল, সেখানে নৌবাহিনীতে নিজস্ব যুদ্ধজাহাজ যুক্ত হওয়া খুবই আনন্দের সংবাদ। এসব যুদ্ধজাহাজ টেকসই হলে ভবিষ্যতে আমাদের প্রকৌশলী-প্রযুক্তিবিদেরা নিরাপত্তা বাহিনীর অন্যান্য যুদ্ধসরঞ্জাম নির্মাণেও উৎসাহিত হবেন।
সেই সঙ্গে সরকারকে এ কথাও স্মরণ করিয়ে দেব যে, দেশের নিরাপত্তা রক্ষায় যা যা প্রয়োজন, তার সবকিছুই করতে হবে। তবে অপ্রয়োজনীয় যুদ্ধসরঞ্জাম সংগ্রহ কিংবা তৈরির প্রতিযোগিতা কাম্য নয়।

No comments

Powered by Blogger.