পোলট্রি খাতে বিপর্যয় ও ডিম আমদানি by ড. জাহাঙ্গীর আলম
প্রাণী-পাখি খাতের একটি গুরুত্বপূর্ণ উপখাত হাঁস-মুরগি। এদের পাখা আছে। এরা উড়তে পারে। তাই এরা পাখির অন্তর্ভুক্ত। পোলট্রি এদের ইংরেজি প্রতিশব্দ। বাংলাদেশে এটি এখন বেশ জনপ্রিয়। সম্প্রতি এ শিল্পে ধস নেমেছে। এভিয়ান ইনফ্লুয়েঞ্জা বা বার্ড ফ্লুসহ বিভিন্ন রোগের প্রকোপে এবং উচ্চতর খাদ্যমূল্যের অভিঘাতে ইতিমধ্যেই প্রায় অর্ধেক খামার বন্ধ হয়ে গেছে।
তাতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে খামারের মালিক। কর্মচ্যুত হয়েছে অনেক শ্রমিক। বাজারে দাম বেড়েছে জীবন্ত মুরগির। দাম বেড়েছে ডিম ও বাচ্চার। অবস্থা বেগতিক দেখে ডিম ও বাচ্চা আমদানি উন্মুক্ত করে রেখেছে সরকার। আশা করা হয়েছে, তাতে মুরগিজাত পণ্যের বাজার কিছুটা নমনীয় হবে। শিথিল হয়ে আসবে ডিমের উচ্চমূল্য। কিন্তু এর ফলে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে দেশীয় উৎপাদনের ওপর। খামারিরা তাতে নিরুৎসাহিত হবে। সংকট বৃদ্ধি পাবে আমাদের পোলট্রি শিল্পের।
বাংলাদেশের অর্থনীতির একটি সম্ভাবনাময় উপখাত পোলট্রি। এর প্রবৃদ্ধির হার চড়া। ইতিপূর্বে বছরে গড়ে অর্জিত হয়েছে প্রায় ৮ শতাংশ প্রবৃদ্ধি। ডিম উৎপাদনে প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে প্রায় ৬ শতাংশ। গ্রামীণ এলাকায় হাঁস-মুরগি পালন করে না এমন পরিবার খুঁজে পাওয়া আজকাল বড়ই দুষ্কর। প্রায় ৮০ শতাংশ পরিবারই দেশীয় বা উন্নত জাতের কিছু হাঁস-মুরগি প্রতিপালন করে থাকে। তাতে আয় বাড়ে পরিবারের। কর্মসংস্থান হয় মেয়েদের। আমাদের প্রাণী-পাখি সম্পদের স্থূল আয়ে পোলট্রির অবদান প্রায় ১৫ শতাংশ।
অনেক কর্মহীন যুবক যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের প্রশিক্ষণ নিয়ে ক্ষুদ্র ঋণ গ্রহণের মাধ্যমে গড়ে তুলেছে ছোট ও মাঝারি গোছের পোলট্রি খামার। তাতে সরবরাহ বেড়েছে মুরগি ও ডিমের। ভোগও বেড়েছে এসব পণ্যসামগ্রীর। সম্প্রতি এসবের সরবরাহ হ্রাস পেয়েছে দুটো কারণে। প্রথমত, দেশব্যাপী এভিয়ান ইনফ্লুয়েঞ্জার প্রকোপ। দ্বিতীয়ত, পোলট্রি খাদ্যের উপকরণ সয়াবিনের খৈল ও ভুট্টার মূল্যবৃদ্ধি। দেশে এভিয়ান ইনফ্লুয়েঞ্জার প্রকোপ শুরু হয় ২০০৭ সালে। ওই বছর ফেব্রুয়ারি মাসে সাভারস্থ বিমান পোলট্রি কমপ্লেঙ্ েএই রোগটি শনাক্ত করা হয়। এরপর পর্যায়ক্রমে তা ছড়িয়ে পড়ে সারা দেশে। এর পর থেকে প্রতিবছরই এ রোগের প্রকোপ কমবেশি লক্ষ করা যাচ্ছে। এ যাবৎ ১৮ লাখ ৪৮ হাজার ৬৬০টি মুরগি নিধন ও ২৫ লাখ ৩১ হাজার ৮২১টি ডিম ধ্বংস করা হয়েছে। খামারিদের ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়েছে ১৪ কোটি ৭৩ লাখ টাকা। (অর্থনৈতিক সমীক্ষা ২০১২)। খামারিরা বলছেন, যে হারে রোগের প্রাদুর্ভাব হচ্ছে, সে তুলনায় সরকারি সহায়তা অপ্রতুল। তা ছাড়া সময়মতো ক্ষতিপূরণের টাকা পাওয়াও যাচ্ছে না। তদুপরি ঋণপ্রাপ্তির অনিশ্চয়তা ও ঋণের চড়া সুদ ক্ষতিগ্রস্ত খামারগুলোর পুনর্বাসনে ও নতুন খামার স্থাপনে অনীহা সৃষ্টি করছে।
সরকারি হিসাবে ২০০৯-১০ সালে ডিমের উৎপাদন ছিল ৫৭৪ কোটি ২৪ লাখ। ২০১০-১১ সালে তা ৪২১ কোটি ১০ লাখে হ্রাস পায়। এর প্রধান কারণ বাণিজ্যিক পোলট্রি খামারগুলোর সংখ্যা হ্রাস। ২০১০ সালে এর সংখ্যা ছিল এক লাখ ১৪ হাজার। ২০১১ সালে তা ৭৫ হাজারে হ্রাস পায়। বর্তমানে এই সংখ্যা নেমে গেছে ৬০ হাজারেরও নিচে। তাতে হ্রাস পেয়েছে ডিমের উৎপাদন ও সরবরাহ। চাহিদার সঙ্গে পরিলক্ষিত হয়েছে অসংগতি। বিশ্ব খাদ্য ও কৃষি সংস্থার হিসাবমতে, প্রতি সপ্তাহে জনপ্রতি দুটি ডিমের প্রয়োজন। সেই হিসাব অনুসারে ১৬ কোটি মানুষের জন্য দৈনিক চার কোটি ৫৭ লাখ ডিমের প্রয়োজন। কিন্তু আমরা উৎপাদন করছি এক কোটি ১৫ লাখ ডিম। তাতে ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়ায় প্রায় ৭৫ শতাংশ। তবে স্বাভাবিক পুষ্টির বিচারে আমাদের দেশে দৈনিক যে চাহিদা আছে, ডিমের কার্যকর চাহিদা তার চেয়ে অনেক কম। কারণ গরিব ও নিম্ন আয়ের মানুষের ডিম কেনার মতো আর্থিক সামর্থ্যের অভাব। মোটামুটি হিসাবে আমাদের প্রতিদিনের চাহিদা প্রায় সোয়া দুই কোটি ডিম। উৎপাদিত হচ্ছে বড়জোর সোয়া এক কোটি। আরো প্রায় এক কোটি ডিমের ঘাটতি রয়ে গেছে আমাদের। সে কারণে ডিম উৎপাদনকারী খামারি ও ব্যবসায়ীরা বাজার নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন এবং ভোক্তা পর্যায়ে ডিমের মূল্য নির্ধারণে প্রভাব বিস্তার করতে পারেন।
আমাদের দেশে জীবন্ত মুরগি ও ডিমের দাম নতুন শতাব্দীর গোড়ার দিকেও ছিল সহনীয় পর্যায়ে। প্রকৃত মূল্যবৃদ্ধির হার ছিল খুবই কম। ২০০৭ সালে এভিয়ান ইনফ্লুয়েঞ্জার প্রাদুর্ভাবের পর থেকে অনেকটা অস্থির হয়ে পড়ে এর বাজার।
আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে এখন ডিমের দাম প্রতি হালি ১৭ থেকে ১৮ রুপি। বাংলাদেশি টাকায় তা ২৮ টাকার বেশি নয়। ভারতেও এভিয়ান ইনফ্লুয়েঞ্জার প্রাদুর্ভাব আছে। সেখানেও দাম বেড়েছে খাদ্য উপকরণের। কিন্তু লাফিয়ে তা ৪৪ টাকায় উপনীত হয়নি। ভারতে এখন ডিমের মোট উৎপাদন প্রতিদিন ১৬ কোটি। ওখানে কার্যকর চাহিদা ও সরবরাহ অনেকটা সমানুপাতিক। অবস্থাদৃষ্টে মনে হয়, সরবরাহই বেশি। গত বছরও কুয়েত, বাহরাইন ও দুবাই ডিম আমদানি করত ভারত থেকে। মূল্য ছিল প্রতিটি চার রুপি। ওই দামে সংযুক্ত আরব আমিরাতও ডিম আমদানি করেছে ভারত থেকে। এ বছরের গোড়ার দিকে এভিয়ান ইনফ্লুয়েঞ্জার প্রাদুর্ভাবের কারণ দেখিয়ে তারা ভারত থেকে ডিম আমদানি বন্ধ করে দেয়। তাতে ডিমের দাম প্রায় ৩০ শতাংশ কমে যায় ভারতে। অতঃপর খাদ্যমূল্য বৃদ্ধির কারণে ডিমের দাম এখন পূর্বাবস্থায় ফিরে এসেছে ভারতে। তবু তা বাংলাদেশের তুলনায় প্রায় এক-চতুর্থাংশ কম। বাংলাদেশে ডিম উৎপাদন ও বিপণনে এই অদক্ষতার মাসুল দিয়ে যাচ্ছে আমাদের গরিব ভোক্তারা।
গত ৪ সেপ্টেম্বর থেকে আমাদের বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ডিম আমদানি উন্মুক্ত করে দিয়েছে। উন্মুক্ত করা হয়েছে এক দিনের বাচ্চার আমদানিও। ইতিমধ্যেই এর কিছুটা প্রভাব পড়েছে বাজারে। ডিমের দাম কমেছে হালিপ্রতি চার থেকে ছয় টাকা। মুরগি ও বাচ্চার দামও হ্রাস পেয়েছে কিছুটা। সামনে তা আরো কমবে বলে প্রতীয়মান হচ্ছে। তবে অনির্দিষ্টকালের জন্য আমদানির দুয়ার উন্মুক্ত রাখা সমীচীন হতে পারে না।
পোলট্রি বাংলাদেশের একটি সম্ভাবনাময় কৃষিজ শিল্প। এর প্রবৃদ্ধির হার বেশি। এ শিল্পে ইতিমধ্যেই ১৫ হাজার কোটি টাকারও অর্ধেক বিনিয়োগ করা হয়েছে। এতে খণ্ডকালীন ও সার্বক্ষণিক ভিত্তিতে মোট শ্রমিকের কর্মসংস্থান হবে প্রায় পাঁচ কোটি। মহিলাদের কর্মসংস্থান ও আয় বৃদ্ধিতে এ শিল্পের ভূমিকা অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। গ্রামীণ দারিদ্র্য বিমোচনেও এ শিল্পের অবদান অনস্বীকার্য।
লেখক : কৃষি অর্থনীতিবিদ
বাংলাদেশের অর্থনীতির একটি সম্ভাবনাময় উপখাত পোলট্রি। এর প্রবৃদ্ধির হার চড়া। ইতিপূর্বে বছরে গড়ে অর্জিত হয়েছে প্রায় ৮ শতাংশ প্রবৃদ্ধি। ডিম উৎপাদনে প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে প্রায় ৬ শতাংশ। গ্রামীণ এলাকায় হাঁস-মুরগি পালন করে না এমন পরিবার খুঁজে পাওয়া আজকাল বড়ই দুষ্কর। প্রায় ৮০ শতাংশ পরিবারই দেশীয় বা উন্নত জাতের কিছু হাঁস-মুরগি প্রতিপালন করে থাকে। তাতে আয় বাড়ে পরিবারের। কর্মসংস্থান হয় মেয়েদের। আমাদের প্রাণী-পাখি সম্পদের স্থূল আয়ে পোলট্রির অবদান প্রায় ১৫ শতাংশ।
অনেক কর্মহীন যুবক যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের প্রশিক্ষণ নিয়ে ক্ষুদ্র ঋণ গ্রহণের মাধ্যমে গড়ে তুলেছে ছোট ও মাঝারি গোছের পোলট্রি খামার। তাতে সরবরাহ বেড়েছে মুরগি ও ডিমের। ভোগও বেড়েছে এসব পণ্যসামগ্রীর। সম্প্রতি এসবের সরবরাহ হ্রাস পেয়েছে দুটো কারণে। প্রথমত, দেশব্যাপী এভিয়ান ইনফ্লুয়েঞ্জার প্রকোপ। দ্বিতীয়ত, পোলট্রি খাদ্যের উপকরণ সয়াবিনের খৈল ও ভুট্টার মূল্যবৃদ্ধি। দেশে এভিয়ান ইনফ্লুয়েঞ্জার প্রকোপ শুরু হয় ২০০৭ সালে। ওই বছর ফেব্রুয়ারি মাসে সাভারস্থ বিমান পোলট্রি কমপ্লেঙ্ েএই রোগটি শনাক্ত করা হয়। এরপর পর্যায়ক্রমে তা ছড়িয়ে পড়ে সারা দেশে। এর পর থেকে প্রতিবছরই এ রোগের প্রকোপ কমবেশি লক্ষ করা যাচ্ছে। এ যাবৎ ১৮ লাখ ৪৮ হাজার ৬৬০টি মুরগি নিধন ও ২৫ লাখ ৩১ হাজার ৮২১টি ডিম ধ্বংস করা হয়েছে। খামারিদের ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়েছে ১৪ কোটি ৭৩ লাখ টাকা। (অর্থনৈতিক সমীক্ষা ২০১২)। খামারিরা বলছেন, যে হারে রোগের প্রাদুর্ভাব হচ্ছে, সে তুলনায় সরকারি সহায়তা অপ্রতুল। তা ছাড়া সময়মতো ক্ষতিপূরণের টাকা পাওয়াও যাচ্ছে না। তদুপরি ঋণপ্রাপ্তির অনিশ্চয়তা ও ঋণের চড়া সুদ ক্ষতিগ্রস্ত খামারগুলোর পুনর্বাসনে ও নতুন খামার স্থাপনে অনীহা সৃষ্টি করছে।
সরকারি হিসাবে ২০০৯-১০ সালে ডিমের উৎপাদন ছিল ৫৭৪ কোটি ২৪ লাখ। ২০১০-১১ সালে তা ৪২১ কোটি ১০ লাখে হ্রাস পায়। এর প্রধান কারণ বাণিজ্যিক পোলট্রি খামারগুলোর সংখ্যা হ্রাস। ২০১০ সালে এর সংখ্যা ছিল এক লাখ ১৪ হাজার। ২০১১ সালে তা ৭৫ হাজারে হ্রাস পায়। বর্তমানে এই সংখ্যা নেমে গেছে ৬০ হাজারেরও নিচে। তাতে হ্রাস পেয়েছে ডিমের উৎপাদন ও সরবরাহ। চাহিদার সঙ্গে পরিলক্ষিত হয়েছে অসংগতি। বিশ্ব খাদ্য ও কৃষি সংস্থার হিসাবমতে, প্রতি সপ্তাহে জনপ্রতি দুটি ডিমের প্রয়োজন। সেই হিসাব অনুসারে ১৬ কোটি মানুষের জন্য দৈনিক চার কোটি ৫৭ লাখ ডিমের প্রয়োজন। কিন্তু আমরা উৎপাদন করছি এক কোটি ১৫ লাখ ডিম। তাতে ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়ায় প্রায় ৭৫ শতাংশ। তবে স্বাভাবিক পুষ্টির বিচারে আমাদের দেশে দৈনিক যে চাহিদা আছে, ডিমের কার্যকর চাহিদা তার চেয়ে অনেক কম। কারণ গরিব ও নিম্ন আয়ের মানুষের ডিম কেনার মতো আর্থিক সামর্থ্যের অভাব। মোটামুটি হিসাবে আমাদের প্রতিদিনের চাহিদা প্রায় সোয়া দুই কোটি ডিম। উৎপাদিত হচ্ছে বড়জোর সোয়া এক কোটি। আরো প্রায় এক কোটি ডিমের ঘাটতি রয়ে গেছে আমাদের। সে কারণে ডিম উৎপাদনকারী খামারি ও ব্যবসায়ীরা বাজার নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন এবং ভোক্তা পর্যায়ে ডিমের মূল্য নির্ধারণে প্রভাব বিস্তার করতে পারেন।
আমাদের দেশে জীবন্ত মুরগি ও ডিমের দাম নতুন শতাব্দীর গোড়ার দিকেও ছিল সহনীয় পর্যায়ে। প্রকৃত মূল্যবৃদ্ধির হার ছিল খুবই কম। ২০০৭ সালে এভিয়ান ইনফ্লুয়েঞ্জার প্রাদুর্ভাবের পর থেকে অনেকটা অস্থির হয়ে পড়ে এর বাজার।
আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে এখন ডিমের দাম প্রতি হালি ১৭ থেকে ১৮ রুপি। বাংলাদেশি টাকায় তা ২৮ টাকার বেশি নয়। ভারতেও এভিয়ান ইনফ্লুয়েঞ্জার প্রাদুর্ভাব আছে। সেখানেও দাম বেড়েছে খাদ্য উপকরণের। কিন্তু লাফিয়ে তা ৪৪ টাকায় উপনীত হয়নি। ভারতে এখন ডিমের মোট উৎপাদন প্রতিদিন ১৬ কোটি। ওখানে কার্যকর চাহিদা ও সরবরাহ অনেকটা সমানুপাতিক। অবস্থাদৃষ্টে মনে হয়, সরবরাহই বেশি। গত বছরও কুয়েত, বাহরাইন ও দুবাই ডিম আমদানি করত ভারত থেকে। মূল্য ছিল প্রতিটি চার রুপি। ওই দামে সংযুক্ত আরব আমিরাতও ডিম আমদানি করেছে ভারত থেকে। এ বছরের গোড়ার দিকে এভিয়ান ইনফ্লুয়েঞ্জার প্রাদুর্ভাবের কারণ দেখিয়ে তারা ভারত থেকে ডিম আমদানি বন্ধ করে দেয়। তাতে ডিমের দাম প্রায় ৩০ শতাংশ কমে যায় ভারতে। অতঃপর খাদ্যমূল্য বৃদ্ধির কারণে ডিমের দাম এখন পূর্বাবস্থায় ফিরে এসেছে ভারতে। তবু তা বাংলাদেশের তুলনায় প্রায় এক-চতুর্থাংশ কম। বাংলাদেশে ডিম উৎপাদন ও বিপণনে এই অদক্ষতার মাসুল দিয়ে যাচ্ছে আমাদের গরিব ভোক্তারা।
গত ৪ সেপ্টেম্বর থেকে আমাদের বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ডিম আমদানি উন্মুক্ত করে দিয়েছে। উন্মুক্ত করা হয়েছে এক দিনের বাচ্চার আমদানিও। ইতিমধ্যেই এর কিছুটা প্রভাব পড়েছে বাজারে। ডিমের দাম কমেছে হালিপ্রতি চার থেকে ছয় টাকা। মুরগি ও বাচ্চার দামও হ্রাস পেয়েছে কিছুটা। সামনে তা আরো কমবে বলে প্রতীয়মান হচ্ছে। তবে অনির্দিষ্টকালের জন্য আমদানির দুয়ার উন্মুক্ত রাখা সমীচীন হতে পারে না।
পোলট্রি বাংলাদেশের একটি সম্ভাবনাময় কৃষিজ শিল্প। এর প্রবৃদ্ধির হার বেশি। এ শিল্পে ইতিমধ্যেই ১৫ হাজার কোটি টাকারও অর্ধেক বিনিয়োগ করা হয়েছে। এতে খণ্ডকালীন ও সার্বক্ষণিক ভিত্তিতে মোট শ্রমিকের কর্মসংস্থান হবে প্রায় পাঁচ কোটি। মহিলাদের কর্মসংস্থান ও আয় বৃদ্ধিতে এ শিল্পের ভূমিকা অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। গ্রামীণ দারিদ্র্য বিমোচনেও এ শিল্পের অবদান অনস্বীকার্য।
লেখক : কৃষি অর্থনীতিবিদ
No comments