চরাচর-বিশ্ব মানসিক স্বাস্থ্য দিবস by ডা. মুনতাসীর মারুপ
মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ে জনসচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে ওয়ার্ল্ড ফেডারেশন ফর মেন্টাল হেলথের তৎকালীন ডেপুটি সেক্রেটারি জেনারেল রিচার্ড ডিক হান্টারের উদ্যোগের ধারাবাহিকতায় ১৯৯২ সাল থেকে প্রতিবছর ১০ অক্টোবর 'বিশ্ব মানসিক স্বাস্থ্য দিবস' পালিত হয়ে আসছে।
এ বছর এ দিবসটির মূল ভাবনা- 'বিষণ্নতা রোগ বা ডিপ্রেসন', যেখানে বিষণ্নতাকে একটি বৈশ্বিক সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।
ওয়ার্ল্ড ফেডারেশন ফর মেন্টাল হেলথের হিসাব অনুযায়ী, বর্তমানে বিশ্বে প্রায় ৩৫০ মিলিয়ন বা ৩৫ কোটি মানুষ বিষণ্নতা রোগে আক্রান্ত। ১৭টি দেশে পরিচালিত বিশ্ব মানসিক স্বাস্থ্য জরিপে দেখা গেছে, প্রতি ২০ জনের মধ্যে একজন পূর্ববর্তী বছরে বিষণ্নতায় আক্রান্ত হয়েছেন। ২০০৩-০৫ সালে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল, বাংলাদেশের গবেষক দলের জরিপে দেখা গেছে, এ দেশে ১৮ বছরের ওপরের জনসংখ্যার ৪.৬ শতাংশ বিষণ্নতা রোগে আক্রান্ত।
যেকোনো ব্যক্তি যেকোনো সময় বিষণ্নতা রোগে আক্রান্ত হতে পারেন। নারীদের বিষণ্নতায় আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি পুরুষদের তুলনায় দ্বিগুণ। মনে রাখা দরকার, বিষণ্নতা রোগ ব্যক্তিগত দুর্বলতার লক্ষণ মাত্র নয়। এ রোগ স্বাভাবিক সাময়িক দুঃখবোধের চেয়ে আলাদা বিশেষ এক আবেগসংক্রান্ত মানসিক অসুস্থতা। তীব্রতাভেদে বিষণ্নতা রোগ ব্যক্তির স্বাভাবিক দৈনন্দিন জীবনযাপনকে বাধাগ্রস্ত করে।
বিষণ্নতা আত্মহত্যার জন্য অন্যতম ঝুঁকিপূর্ণ মানসিক রোগ। গবেষকরা বলছেন, গুরুতর বিষণ্নতা বা মেজর ডিপ্রেসিভ ডিসঅর্ডারে আক্রান্ত ব্যক্তিদের ১৫ শতাংশই আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়। বিষণ্নতা রোগে আক্রান্তরা দিনের পর দিন অধিকাংশ সময়ই মন খারাপ করে থাকেন, কোনো কাজে উৎসাহ-মনোযোগ পান না, ঘুম-খাওয়ার রুচি-উদ্যম-গতি কমে যায়। পরে তা তীব্র আকার ধারণ করলে আক্রান্তরা নিজেদের জীবনকে নিরর্থক ও বোঝা মনে করতে থাকেন, সমাজ থেকে নিজেকে বিচ্ছিন্ন করে রাখেন, প্রতিনিয়ত আত্মঘাতী চিন্তায় মন আচ্ছন্ন হতে থাকে।
বিষণ্নতা একটি চিকিৎসাযোগ্য মানসিক রোগ। বিষণ্নতার লক্ষণ দেখা দিলে মনোচিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী চিকিৎসা গ্রহণ করা ও চালিয়ে যাওয়া উচিত। ওষুধ ও সাইকোথেরাপি উভয় পদ্ধতিতেই চিকিৎসা করা যায়। কোন রোগীর জন্য কোন ধরনের চিকিৎসা প্রয়োজন, রোগের তীব্রতাভেদে মনোরোগ বিশেষজ্ঞ সে সিদ্ধান্ত নেবেন। উল্লেখ্য, অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায়, চিকিৎসকের পরামর্শ মতো কিছুদিন ওষুধ সেবনের পর অথবা সাইকোথেরাপিস্টের সঙ্গে সেশনে অংশগ্রহণের পর রোগী যখন ভালো বোধ করেন বা উপসর্গ কমে যায়, তখন রোগী বা তাঁর আত্মীয়স্বজন চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়াই ওষুধ খাওয়ানো বন্ধ করে দেন বা সাইকোথেরাপি সেশনে আর অংশ নেন না। ফলে রোগীর সঠিক চিকিৎসা হয় না। কিছুদিন পর রোগীর উপসর্গ আবার ফিরে আসে।
বিষণ্নতায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা গ্রহণের পাশাপাশি আরো কিছু বিষয়ের প্রতি লক্ষ রাখতে হবে। যেমন- মনকে বিষণ্ন করে বা মানসিক চাপ বাড়িয়ে তোলে- এমন কথা বা কাজ এড়িয়ে চলতে হবে। বিষণ্নতার সময় বড় কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া থেকে যথাসম্ভব বিরত থাকতে হবে। নিয়মিত ব্যায়াম বা শরীরচর্চা করা ভালো। সুষম, স্বাস্থ্যসম্মত খাবার গ্রহণ করতে হবে। পর্যাপ্ত সময় ঘুমাতে হবে, তবে বেশি ঘুম নয়। সুস্থ-স্বাভাবিক সম্পর্কগুলোর চর্চা করতে হবে। মাদকাসক্ত থেকে দূরে থাকতে হবে। রুটিনমাফিক শৃঙ্খলাপূর্ণ জীবনযাপন করতে হবে।
বিষণ্নতা ব্যক্তির কর্মক্ষমতা বাধাগ্রস্ত বা নষ্ট করে দেয় বলে তা সামগ্রিকভাবে সামাজিক ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এবং উৎপাদনশীলতার ওপরও বিরূপ প্রভাব ফেলে। একটি উন্নয়নশীল দেশের জন্য যা মোটেও সুখকর নয়। এ কারণে বিষণ্নতা রোগ প্রতিরোধ ও চিকিৎসায় শুধু ব্যক্তি ও পরিবার নয়, সামাজিক এবং রাষ্ট্রীয় পর্যায়েও সচেতনতা ও কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ অবশ্য প্রয়োজন।
ডা. মুনতাসীর মারুপ
ওয়ার্ল্ড ফেডারেশন ফর মেন্টাল হেলথের হিসাব অনুযায়ী, বর্তমানে বিশ্বে প্রায় ৩৫০ মিলিয়ন বা ৩৫ কোটি মানুষ বিষণ্নতা রোগে আক্রান্ত। ১৭টি দেশে পরিচালিত বিশ্ব মানসিক স্বাস্থ্য জরিপে দেখা গেছে, প্রতি ২০ জনের মধ্যে একজন পূর্ববর্তী বছরে বিষণ্নতায় আক্রান্ত হয়েছেন। ২০০৩-০৫ সালে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল, বাংলাদেশের গবেষক দলের জরিপে দেখা গেছে, এ দেশে ১৮ বছরের ওপরের জনসংখ্যার ৪.৬ শতাংশ বিষণ্নতা রোগে আক্রান্ত।
যেকোনো ব্যক্তি যেকোনো সময় বিষণ্নতা রোগে আক্রান্ত হতে পারেন। নারীদের বিষণ্নতায় আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি পুরুষদের তুলনায় দ্বিগুণ। মনে রাখা দরকার, বিষণ্নতা রোগ ব্যক্তিগত দুর্বলতার লক্ষণ মাত্র নয়। এ রোগ স্বাভাবিক সাময়িক দুঃখবোধের চেয়ে আলাদা বিশেষ এক আবেগসংক্রান্ত মানসিক অসুস্থতা। তীব্রতাভেদে বিষণ্নতা রোগ ব্যক্তির স্বাভাবিক দৈনন্দিন জীবনযাপনকে বাধাগ্রস্ত করে।
বিষণ্নতা আত্মহত্যার জন্য অন্যতম ঝুঁকিপূর্ণ মানসিক রোগ। গবেষকরা বলছেন, গুরুতর বিষণ্নতা বা মেজর ডিপ্রেসিভ ডিসঅর্ডারে আক্রান্ত ব্যক্তিদের ১৫ শতাংশই আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়। বিষণ্নতা রোগে আক্রান্তরা দিনের পর দিন অধিকাংশ সময়ই মন খারাপ করে থাকেন, কোনো কাজে উৎসাহ-মনোযোগ পান না, ঘুম-খাওয়ার রুচি-উদ্যম-গতি কমে যায়। পরে তা তীব্র আকার ধারণ করলে আক্রান্তরা নিজেদের জীবনকে নিরর্থক ও বোঝা মনে করতে থাকেন, সমাজ থেকে নিজেকে বিচ্ছিন্ন করে রাখেন, প্রতিনিয়ত আত্মঘাতী চিন্তায় মন আচ্ছন্ন হতে থাকে।
বিষণ্নতা একটি চিকিৎসাযোগ্য মানসিক রোগ। বিষণ্নতার লক্ষণ দেখা দিলে মনোচিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী চিকিৎসা গ্রহণ করা ও চালিয়ে যাওয়া উচিত। ওষুধ ও সাইকোথেরাপি উভয় পদ্ধতিতেই চিকিৎসা করা যায়। কোন রোগীর জন্য কোন ধরনের চিকিৎসা প্রয়োজন, রোগের তীব্রতাভেদে মনোরোগ বিশেষজ্ঞ সে সিদ্ধান্ত নেবেন। উল্লেখ্য, অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায়, চিকিৎসকের পরামর্শ মতো কিছুদিন ওষুধ সেবনের পর অথবা সাইকোথেরাপিস্টের সঙ্গে সেশনে অংশগ্রহণের পর রোগী যখন ভালো বোধ করেন বা উপসর্গ কমে যায়, তখন রোগী বা তাঁর আত্মীয়স্বজন চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়াই ওষুধ খাওয়ানো বন্ধ করে দেন বা সাইকোথেরাপি সেশনে আর অংশ নেন না। ফলে রোগীর সঠিক চিকিৎসা হয় না। কিছুদিন পর রোগীর উপসর্গ আবার ফিরে আসে।
বিষণ্নতায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা গ্রহণের পাশাপাশি আরো কিছু বিষয়ের প্রতি লক্ষ রাখতে হবে। যেমন- মনকে বিষণ্ন করে বা মানসিক চাপ বাড়িয়ে তোলে- এমন কথা বা কাজ এড়িয়ে চলতে হবে। বিষণ্নতার সময় বড় কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া থেকে যথাসম্ভব বিরত থাকতে হবে। নিয়মিত ব্যায়াম বা শরীরচর্চা করা ভালো। সুষম, স্বাস্থ্যসম্মত খাবার গ্রহণ করতে হবে। পর্যাপ্ত সময় ঘুমাতে হবে, তবে বেশি ঘুম নয়। সুস্থ-স্বাভাবিক সম্পর্কগুলোর চর্চা করতে হবে। মাদকাসক্ত থেকে দূরে থাকতে হবে। রুটিনমাফিক শৃঙ্খলাপূর্ণ জীবনযাপন করতে হবে।
বিষণ্নতা ব্যক্তির কর্মক্ষমতা বাধাগ্রস্ত বা নষ্ট করে দেয় বলে তা সামগ্রিকভাবে সামাজিক ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এবং উৎপাদনশীলতার ওপরও বিরূপ প্রভাব ফেলে। একটি উন্নয়নশীল দেশের জন্য যা মোটেও সুখকর নয়। এ কারণে বিষণ্নতা রোগ প্রতিরোধ ও চিকিৎসায় শুধু ব্যক্তি ও পরিবার নয়, সামাজিক এবং রাষ্ট্রীয় পর্যায়েও সচেতনতা ও কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ অবশ্য প্রয়োজন।
ডা. মুনতাসীর মারুপ
No comments