শনিবার পর্যন্ত স্থগিত- পরিবহন ধর্মঘটে অচল ২১ জেলা

২১ জেলায় ডাকা অনির্দিষ্টকালের পরিবহন ধর্মঘটে কার্যত অচল হয়ে পড়েছিল দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল। গতকাল মঙ্গলবার ভোর থেকে বিকেল পর্যন্ত বেশির ভাগ জেলায় দূরপাল্লার কোনো যানবাহন চলেনি। কিছু জেলায় অভ্যন্তরীণ পরিবহনও ছিল বন্ধ। এতে ভোগান্তিতে পড়ে যাত্রীরা।


এদিকে বিকেল পাঁচটার দিকে অনির্দিষ্টকালের এ ধর্মঘট স্থগিত ঘোষণা করেন পরিবহন মালিক-শ্রমিকেরা। সরকারের উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তাদের আলোচনায় বসার আশ্বাসের পরিপ্রেক্ষিতে ১৩ অক্টোবর শনিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত এ কর্মসূচি স্থগিত করা হয়।
ফরিদপুর প্রেসক্লাবে গতকাল বিকেলে এক সংবাদ সমেঞ্চলনে ধর্মঘট স্থগিতের ঘোষণা দেয় দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল সড়ক পরিবহন মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদ। এতে পরিষদের সভাপতি শাহ আলম মুকুল বলেন, যোগাযোগমন্ত্রী, নৌপরিবহনমন্ত্রী ও বিআরটিএর চেয়ারম্যান আইবুর রহমানের আশ্বাসের পরিপ্রেক্ষিতে ধর্মঘট প্রত্যাহার করা হলো। তিনি বলেন, ‘নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান ১৩ অক্টোবর শনিবার দুপুরে মাদারীপুর সার্কিট হাউসে পরিবহন মালিক ও শ্রমিক নেতাদের নিয়ে আলোচনায় বসবেন। আমরা আশা করছি, ওই বৈঠকে একটা সমাধান পাওয়া যাবে। আর ইতিবাচক কোনো সিদ্ধান্ত না এলে ওই দিন সন্ধ্যা থেকে পুনরায় ধর্মঘট শুরু হবে।’
এর আগে গতকাল ভোর থেকে শুরু হয় পূর্বঘোষিত ধর্মঘট। ধর্মঘটের আওতাভুক্ত জেলাগুলো ছিল: খুলনা, যশোর, ঝিনাইদহ, চুয়াডাঙ্গা, মেহেরপুর, মাগুরা, নড়াইল, কুষ্টিয়া, সাতক্ষীরা, বাগেরহাট, পটুয়াখালী, ভোলা, ঝালকাঠি, পিরোজপুর, বরগুনা, বরিশাল, ফরিদপুর, রাজবাড়ী, গোপালগঞ্জ, মাদারীপুর ও শরীয়তপুর।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ধর্মঘটের কারণে কুষ্টিয়া চৌড়হাস বাস টার্মিনাল ও মজমপুর টার্মিনাল থেকে গতকাল সকালে দূরপাল্লার কোনো গাড়ি ছেড়ে যায়নি। বন্ধ থাকে আন্তজেলা পরিবহনগুলোও। এতে স্কুল-কলেজ ও অফিসগামী মানুষ পড়ে বিপাকে। সকাল আটটার দিকে মজমপুর এলাকায় মিছিল বের করেন পরিবহন শ্রমিকেরা।
গোপালগঞ্জে ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের নিমতলা, পুলিশ লাইনসহ বেশ কয়েকটি স্থানে রাস্তার ওপর গাড়ি রেখে অবরোধ সৃষ্টি করেন শ্রমিকেরা। এ ছাড়া জেলার অভ্যন্তরীণ ছয়টি পথে যান চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়। মহাসড়কে আটকা পড়ে যানবাহন। অনেকে ভ্যানে করে বা হেঁটে গন্তব্যের উদ্দেশে রওনা হন।
দৌলতদিয়ায় দেখা যায়, সকাল ১০টার দিকে একটি লঞ্চ প্রায় ৫০ জন যাত্রী নিয়ে ঘাটে ভেড়ে। যাত্রীদের অধিকাংশই যাবেন কুষ্টিয়া, ঝিনাইদহ, যশোর, বরিশালসহ বিভিন্ন জেলায়। কিন্তু ঘাটে কোনো পরিবহন না পেয়ে তাঁদের দীর্ঘক্ষণ সেখানে বসে থাকতে দেখা যায়। এ ছাড়া প্রায় ৩০টির মতো লঞ্চ কোনো যাত্রী না পেয়ে ঘাটেই অবস্থান করে।
ঢাকা থেকে চুয়াডাঙ্গার উদ্দেশে ভোরে সোহাগ পরিবহনের একটি বাসে করে রওনা হন ব্যবসায়ী রফিকুল আলম। দৌলতদিয়া ঘাটে পৌঁছে তিনি পড়েন বিপাকে। কোনো বাস না পেয়ে শেষে ১০০ টাকা ভাড়া দিয়ে মাগুরা পর্যন্ত ট্রাকে করেই রওনা হন। এ সময় ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি প্রথম আলোকে জানান, সোমবার ব্যবসায়িক প্রয়োজনে ঢাকায় গিয়ে আটকে পড়েন। জরুরি কাজে তাঁকে আজকেই (মঙ্গলবার) চুয়াডাঙ্গা পৌঁছাতে হবে। তাই উপায় না পেয়ে ভেঙে ভেঙে রওনা করছেন।
গোপালগঞ্জ থেকে ঢাকার উদ্দেশে প্রায় ৪২ জন যাত্রী নিয়ে রওনা করে কমফোর্ট লাইনের একটি বাস। পথে গাড়িটিকে ফরিদপুরে আটকে দেয় ধর্মঘটিরা। বাসটির চালক শেখ রবিউল ইসলাম বলেন, যাত্রীরা ধর্মঘটিদের অনেক বুঝিয়ে বাসটি ছাড়িয়ে আনেন। পরে তিনি ঝুঁকি নিয়ে দৌলতদিয়া ঘাটে পৌঁছান।
পরিবহন মালিক-শ্রমিকদের উল্লেখযোগ্য দাবির মধ্যে রয়েছে: তল্লাশির নামে চাঁদাবাজি বন্ধ; দুর্ঘটনাকবলিত বাস-ট্রাক ভাঙচুর ও আগুন দিয়ে পোড়ানো বন্ধ; নছিমন-করিমনসহ ইজিবাইক চলাচল বন্ধ; ব্যক্তিগত গাড়ি, মাইক্রোবাস ও মোটরসাইকেলে গণ-পরিবহনের মতো যাত্রী বহন নিষিদ্ধ; এক মাসের মধ্যে নতুন ড্রাইভিং লাইসেন্স প্রদান ও নবায়ন করা এবং দুর্ঘটনাকবলিত বাস ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে মালিকের কাছে ফেরত দেওয়া।
ফরিদপুরে সংবাদ সমেঞ্চলনে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ফরিদপুর বাস মালিক গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক কামরুল ইসলাম সিদ্দিকী, মোটর ওয়ার্কার্স ইউনিয়নের সভাপতি মান্নান হাওলাদার ও ফরিদপুর আন্তজেলা শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক গোলাম আজাদ।
প্রতিবেদন তৈরিতে সহায়তা করেছেন আমাদের ফরিদপুর ও কুষ্টিয়া অফিস এবং চুয়াডাঙ্গা, গোপালগঞ্জ ও গোয়ালন্দ (রাজবাড়ী) প্রতিনিধি

No comments

Powered by Blogger.