ভালো নেই শরীয়তপুর সরকারি শিশু পরিবারের এতিমরা! by শহিদুজ্জামান খান
ভালো নেই শরীয়তপুর সরকারি শিশু পরিবারের এতিমরা। ঝুঁকি নিয়ে বসবাস করছে এ এতিমখানায়। অস্বাস্থ্যকর নোংরা পরিবেশ, নিম্নমানের খাবার, অসুস্থদের চিকিৎসা ও নার্সিংয়ের অভাবে মুখ থুবড়ে পড়েছে জেলার একমাত্র এ শিশু পরিবারটি। দিনরাত ছাদ খসে পড়ছে শিশুদের মাথায়। দেখার যেন কেউ নেই।
১শ সিটের এ শিশু পরিবারে ৯৯ জন শিশু ভর্তি রয়েছে। নানা সমস্যা আর অব্যবস্থাপনার কারণে গড়ে ৫০ জনের বেশি উপস্থিত থাকে না এ পরিবারে। শিশুদের অধিকাংশই প্রাইমারি লেভেলের। ৯৯ জনের মধ্যে শরীয়তপুর সরকারি কলেজে ৬ জন, তুলাসার উচ্চ বিদ্যালয়ে ৯ জন, আংগারীয়া টেকলিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজে ৩ জন ছাড়া বাকিরা ধানুকা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এবং পুলিশ লাইনস প্রাথমিক বিদ্যালয়ে লেখাপড়া করে।
শুরুর কথা
১৯৮৪ সালের ২১ অক্টোবর গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের সমাজ সেবা অধিদপ্তর এতিম অসহায় শিশুদের জন্য গড়ে তোলে শরীয়তপুর সরকারি শিশু পরিবার।৩ দশমিক ১২ শতাংশ জমির ওপর ৪ তলা ডরমেটরি ভবন ও একটি ১ তলা অফিস ভবন নিয়ে শরীয়তপুর শহরের ধানুকা এলাকায় গড়ে তোলা হয় এ পরিবার।
এখানে ১০০ শিশুর আবাসিক সুবিধাসহ ১৮ বছর বয়স পর্যন্ত শিক্ষা ও চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়।
১শ সিটের এ শিশু পরিবারে ১৬ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী থাকার কথা থাকলেও দীর্ঘদিন ধরে মাত্র ৮ জন কর্মকর্তা কর্মচারী দায়িত্বপালন করে আসছেন। এতে ভেঙে পড়েছে শিশুদের সেবার মান।
শিশুদের স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করতে এখানে একজন খণ্ডকালীন ডাক্তার থাকার কথা থাকলেও দীর্ঘদিন ধরে এ পদটি শূন্য রয়েছে। ফলে অসুস্থ্ শিশুদের সেবার বিষয়টি উপেক্ষিত থেকে যাচ্ছে।
এ ছাড়া একজন মেট্রোন কাম নার্সের পোস্ট থাকলেও দীর্ঘদিন ধরে মেট্রোন কাম নার্স বরিশালে ডেপুটেশনে রয়েছেন। এতে অসুস্থ শিশুরা চিকিৎসা সেবা থেকে পুরোপুরি বঞ্চিত হচ্ছে।
এ বিষয়ে শিশু পরিবারের রাসেল খান বাংলানিউজকে বলেন, “আমাদের এখানে ডাক্তার না থাকায় অসুস্থ হলে সদর হাসপাতালের ওপর নির্ভর করতে হয়। কয়েকদিন আগে আমি জ্বরে আক্রান্ত হয়েছিলাম। ডাক্তার নেই, নার্সও নেই। পরে আমার সহপাঠীরা আমার মাথায় পানি দিয়েছে এবং তারাই আমাকে সদর হাসপাতালে নিয়ে গেছে।”
শিশু পরিবারের আব্দুল রহিম বাংলানিউজকে বলে, “আমাদের ভবনের অবস্থা নাজুক। রাতে ঘুম আসলে সকালে উঠে দেখি, মশারির ওপরে ছাদ ভেঙে পড়ে আছে। সব সময় আমাদের মাথায় ছাদের প্লাস্টার খসে খসে পড়ছে। এতে আমরা আতঙ্কে থাকি।”
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিশু বাংলানিউজকে বলে, “আমাদের সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পড়তে হয় অসুস্থ হলে। তখন সেবা করার কেউ থাকে না। স্যারদের জানালেও তারা গুরুত্ব দেয় না। যখন অবস্থা বেগতিক দেখে, তখন তারা হাসপাতালে ভর্তি করে। এর আগে কোনো খবর রাখে না।”
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অপর এক শিশু বলে, “আমাদের রান্নার কাজ আমাদেরকেই করতে হয়। কোনো বাবুর্চি নেই। একজন পিয়নের সঙ্গে আমাদের একেক জনকে একেক দিন কাজ করতে হয়।”
এ বিষয়ে ধানুকা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আলমগীর হোসেন বাংলানিউজকে জানান, এখানে শিশু পরিবারের ১৫ থেকে ১৬ জন শিশু লেখাপড়া করে। তবে তারা নিয়মিত নয়। অধিকাংশ সময়েই ক্লাসে থাকে না। কারণ, আত্মীয়-স্বজনের বাড়ি সময়ে-অসময়ে বেড়াতে যাওয়ায় ক্লাসে সমস্যা হয়।
অফিস সূত্রে জানা যায়, দীর্ঘদিন ধরে সহকারী তত্ত্বাবধায়ক, অফিস সহকারী, খণ্ডকালীন ডাক্তার, সহকারী শিক্ষক, বড় ভাইয়া ও ৩ জন এমএলএসএসের পদ শূন্য রয়েছে। জনবলের অভাবে কার্যত ভেঙে পড়েছে শিশু পরিবারের সেবার মান। এখানে নির্ধারিত বাবুর্চি না থাকায় এমএলএসএস ও শিশুদের দিয়ে বাবুর্চির কাজ চলছে বছরের পর বছর ধরে।
এ বিষয়ে কারিগরি প্রশিক্ষক মাসুদ করিম বাংলানিউজকে জানান, একজন ছাত্রের বিপরীতে মাসে ২ হাজার টাকা বরাদ্দ দেয় মন্ত্রণালয়। বরাদ্দ এত কম যে, ইচ্ছা করলেও অনেক কিছু করা সম্ভব হয় না। এ সব খরচ ঠিকাদারের মাধ্যমে করতে হয়। আর ঠিকাদার নিয়োগ করে অধিদপ্তর। এখানে দুর্নীতির কোনো সুযোগ নেই।
তিনি আরও বলেন, “জনবল কম থাকায় সেবার মানও কিছুটা কমেছে। ১৭ জনের কাজ ৮ জনে কী করে সম্ভব?”
মনিটরিং কমিটির সদস্য নুরুজ্জামান কোতোয়াল বাংলানিউজকে বলেন, “একটি শিশুর বিপরীতে মাসে মাত্র ২ হাজার টাকা বরাদ্দ দেয় সরকার। ১ হাজার ৬শ টাকা খানা বাবদ এবং ৪শ টাকা শিক্ষা, চিকিৎসা পোশাক, পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতা ইত্যাদি বাবদ। আমরা সবসময়ই এ বরাদ্দের সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত হয় সে বিষয়ে সজাগ দৃষ্টি রাখি। এতিমদের হক যেন কেউ ভক্ষণ করতে না পারে।”
এ বিষয়ে শরীয়তপুরের জেলা প্রশাসক সানোয়ার হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, ‘প্রায় প্রতিমাসে আমি অন্যথায় আমার প্রতিনিধি হিসেবে কোনো নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট শিশু পরিবারের তদারকি করে থাকেন। আমি চেষ্টা করি, কোনো সুযোগ থাকলে শিশু পরিবারে সহায়তা করতে।”
এ বিষয়ে উপতত্ত্বাধায়ক সাইফুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, “বিভিন্ন বিশেষ দিবসে আমরা সরকারি নির্দেশনা মোতাবেক উন্নত খাবারের ব্যবস্থা করে থাকি। আমাদের মনিটরিং কমিটির সদস্যরা এবং জেলা প্রশাসক ও তার প্রতিনিধিরা প্রায়ই প্রতিষ্ঠানটি পরিদর্শন করে থাকেন। শিশুদের খানাদানা পোশাক-পরিচ্ছেদ, পরিস্কার পরিচ্ছন্নতাসহ নানাদিক নিয়ে আমাদের পরামর্শ দিয়ে থাকেন। আমরা এতিম এ শিশুদের সর্বোচ্চ সেবা দিতে আন্তরিক চেষ্টা করে যাচ্ছি।”
তিনি আরও জানান, জনবল কম থাকায় কিছুটা সমস্যা হচ্ছে। ডাক্তার না থাকলে আমরা তো আর ডাক্তারের কাজ করতে পারি না। সরকার কোনো বাবুর্চি না দেওয়ায় রান্নার কাজে কিছুটা সমস্যা হয়।
১৯৮৪ সালের ২১ অক্টোবর গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের সমাজ সেবা অধিদপ্তর এতিম অসহায় শিশুদের জন্য গড়ে তোলে শরীয়তপুর সরকারি শিশু পরিবার।৩ দশমিক ১২ শতাংশ জমির ওপর ৪ তলা ডরমেটরি ভবন ও একটি ১ তলা অফিস ভবন নিয়ে শরীয়তপুর শহরের ধানুকা এলাকায় গড়ে তোলা হয় এ পরিবার।
এখানে ১০০ শিশুর আবাসিক সুবিধাসহ ১৮ বছর বয়স পর্যন্ত শিক্ষা ও চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়।
১শ সিটের এ শিশু পরিবারে ১৬ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী থাকার কথা থাকলেও দীর্ঘদিন ধরে মাত্র ৮ জন কর্মকর্তা কর্মচারী দায়িত্বপালন করে আসছেন। এতে ভেঙে পড়েছে শিশুদের সেবার মান।
শিশুদের স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করতে এখানে একজন খণ্ডকালীন ডাক্তার থাকার কথা থাকলেও দীর্ঘদিন ধরে এ পদটি শূন্য রয়েছে। ফলে অসুস্থ্ শিশুদের সেবার বিষয়টি উপেক্ষিত থেকে যাচ্ছে।
এ ছাড়া একজন মেট্রোন কাম নার্সের পোস্ট থাকলেও দীর্ঘদিন ধরে মেট্রোন কাম নার্স বরিশালে ডেপুটেশনে রয়েছেন। এতে অসুস্থ শিশুরা চিকিৎসা সেবা থেকে পুরোপুরি বঞ্চিত হচ্ছে।
এ বিষয়ে শিশু পরিবারের রাসেল খান বাংলানিউজকে বলেন, “আমাদের এখানে ডাক্তার না থাকায় অসুস্থ হলে সদর হাসপাতালের ওপর নির্ভর করতে হয়। কয়েকদিন আগে আমি জ্বরে আক্রান্ত হয়েছিলাম। ডাক্তার নেই, নার্সও নেই। পরে আমার সহপাঠীরা আমার মাথায় পানি দিয়েছে এবং তারাই আমাকে সদর হাসপাতালে নিয়ে গেছে।”
শিশু পরিবারের আব্দুল রহিম বাংলানিউজকে বলে, “আমাদের ভবনের অবস্থা নাজুক। রাতে ঘুম আসলে সকালে উঠে দেখি, মশারির ওপরে ছাদ ভেঙে পড়ে আছে। সব সময় আমাদের মাথায় ছাদের প্লাস্টার খসে খসে পড়ছে। এতে আমরা আতঙ্কে থাকি।”
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিশু বাংলানিউজকে বলে, “আমাদের সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পড়তে হয় অসুস্থ হলে। তখন সেবা করার কেউ থাকে না। স্যারদের জানালেও তারা গুরুত্ব দেয় না। যখন অবস্থা বেগতিক দেখে, তখন তারা হাসপাতালে ভর্তি করে। এর আগে কোনো খবর রাখে না।”
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অপর এক শিশু বলে, “আমাদের রান্নার কাজ আমাদেরকেই করতে হয়। কোনো বাবুর্চি নেই। একজন পিয়নের সঙ্গে আমাদের একেক জনকে একেক দিন কাজ করতে হয়।”
এ বিষয়ে ধানুকা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আলমগীর হোসেন বাংলানিউজকে জানান, এখানে শিশু পরিবারের ১৫ থেকে ১৬ জন শিশু লেখাপড়া করে। তবে তারা নিয়মিত নয়। অধিকাংশ সময়েই ক্লাসে থাকে না। কারণ, আত্মীয়-স্বজনের বাড়ি সময়ে-অসময়ে বেড়াতে যাওয়ায় ক্লাসে সমস্যা হয়।
অফিস সূত্রে জানা যায়, দীর্ঘদিন ধরে সহকারী তত্ত্বাবধায়ক, অফিস সহকারী, খণ্ডকালীন ডাক্তার, সহকারী শিক্ষক, বড় ভাইয়া ও ৩ জন এমএলএসএসের পদ শূন্য রয়েছে। জনবলের অভাবে কার্যত ভেঙে পড়েছে শিশু পরিবারের সেবার মান। এখানে নির্ধারিত বাবুর্চি না থাকায় এমএলএসএস ও শিশুদের দিয়ে বাবুর্চির কাজ চলছে বছরের পর বছর ধরে।
এ বিষয়ে কারিগরি প্রশিক্ষক মাসুদ করিম বাংলানিউজকে জানান, একজন ছাত্রের বিপরীতে মাসে ২ হাজার টাকা বরাদ্দ দেয় মন্ত্রণালয়। বরাদ্দ এত কম যে, ইচ্ছা করলেও অনেক কিছু করা সম্ভব হয় না। এ সব খরচ ঠিকাদারের মাধ্যমে করতে হয়। আর ঠিকাদার নিয়োগ করে অধিদপ্তর। এখানে দুর্নীতির কোনো সুযোগ নেই।
তিনি আরও বলেন, “জনবল কম থাকায় সেবার মানও কিছুটা কমেছে। ১৭ জনের কাজ ৮ জনে কী করে সম্ভব?”
মনিটরিং কমিটির সদস্য নুরুজ্জামান কোতোয়াল বাংলানিউজকে বলেন, “একটি শিশুর বিপরীতে মাসে মাত্র ২ হাজার টাকা বরাদ্দ দেয় সরকার। ১ হাজার ৬শ টাকা খানা বাবদ এবং ৪শ টাকা শিক্ষা, চিকিৎসা পোশাক, পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতা ইত্যাদি বাবদ। আমরা সবসময়ই এ বরাদ্দের সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত হয় সে বিষয়ে সজাগ দৃষ্টি রাখি। এতিমদের হক যেন কেউ ভক্ষণ করতে না পারে।”
এ বিষয়ে শরীয়তপুরের জেলা প্রশাসক সানোয়ার হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, ‘প্রায় প্রতিমাসে আমি অন্যথায় আমার প্রতিনিধি হিসেবে কোনো নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট শিশু পরিবারের তদারকি করে থাকেন। আমি চেষ্টা করি, কোনো সুযোগ থাকলে শিশু পরিবারে সহায়তা করতে।”
এ বিষয়ে উপতত্ত্বাধায়ক সাইফুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, “বিভিন্ন বিশেষ দিবসে আমরা সরকারি নির্দেশনা মোতাবেক উন্নত খাবারের ব্যবস্থা করে থাকি। আমাদের মনিটরিং কমিটির সদস্যরা এবং জেলা প্রশাসক ও তার প্রতিনিধিরা প্রায়ই প্রতিষ্ঠানটি পরিদর্শন করে থাকেন। শিশুদের খানাদানা পোশাক-পরিচ্ছেদ, পরিস্কার পরিচ্ছন্নতাসহ নানাদিক নিয়ে আমাদের পরামর্শ দিয়ে থাকেন। আমরা এতিম এ শিশুদের সর্বোচ্চ সেবা দিতে আন্তরিক চেষ্টা করে যাচ্ছি।”
তিনি আরও জানান, জনবল কম থাকায় কিছুটা সমস্যা হচ্ছে। ডাক্তার না থাকলে আমরা তো আর ডাক্তারের কাজ করতে পারি না। সরকার কোনো বাবুর্চি না দেওয়ায় রান্নার কাজে কিছুটা সমস্যা হয়।
No comments