দাবার চালে বয়স মাত by তৌহিদা শিরোপা
বয়স ৬৮ পেরিয়েছেন। ১৮ বার বাংলাদেশ জাতীয় মহিলা দাবা প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন হয়েছেন। গিনেস বুকে নাম উঠল বলে, এখনও ‘তরুণ’ এই মানুষ রানী হামিদকে নিয়েই বিশেষ আয়োজন ভীষণ চঞ্চল মেয়েটি। একমুহূর্ত কোথাও স্থির থাকে না।
ব্যতিক্রম ঘটে দাবার খেলা দেখলে। কেমন যেন স্থির হয়ে যায়। আর মেয়েটির বাবা যদি দাবা খেলতে বসেন, তা হলে তো কথাই নেই। একটু পর পর বাবাকে নানা প্রশ্ন। ‘বাবা, এখনো কেন জিতছ না, এত ধীরে ধীরে খেললে হবে?’ বাবা তাকে আশ্বস্ত করেন। অবশেষে বাবা জিতলেন, মেয়েটির মুখেও হাসি ফোটে। বাবার খেলা দেখতে দেখতেই মেয়েটি দাবা খেলা শিখে ফেলে। সেই ছোট মেয়েটি বড় হয়ে দাবায় বাংলাদেশের মুখ উজ্জ্বল করেন। হয়ে ওঠেন সবার রানী হামিদ, যিনি দাবায় বাংলাদেশের প্রথম মহিলা আন্তর্জাতিক মাস্টার। বিশ্বে সবচেয়ে বেশিসংখ্যক ১৮ বার জাতীয় মহিলা দাবা চ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরব অর্জন করেন তিনি। শিগগির হয়তো গিনেস বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসে তাঁর নাম দেখা যাবে।
রানী হামিদের কর্মব্যস্ত একটি দিনে হাজির হলাম তাঁর বাসায়। বসার ঘরে দুই পাশে থরে থরে সাজানো নানা সময়ের পুরস্কার। তবে চোখ আটকে গেল একটি ব্যানারে। তাতে নাতি-নাতনির লেখা: ‘৬৮ বছর বয়সেও তরুণ’। দাদির সঙ্গে তাদের ছবিও কোলাজ করে দেওয়া। কিন্তু সামনে বসা মানুষটিকে দেখে বোঝার উপায় নেই, এ বছর ৬৯-এ পা দিয়েছেন। কীভাবে এখনো এত তরুণ, প্রশ্নটা করা হলে একচোট হেসে নেন। উত্তরে বলেন, ‘নিজেকে কাজের মধ্যে ব্যস্ত রেখেছি। মন প্রফুল্ল রাখতে দাবা খেলি। নিয়ন্ত্রিত জীবনযাপনের কারণে সবার দোয়ায় ভালো আছি। সবচেয়ে বড় কথা, মনের বয়স বাড়তে দেওয়া যাবে না। তা হলে বয়স মানুষকে আটকে ফেলতে পারবে না।’
প্রায় ৩৬ বছর ধরে দাবা খেলার সঙ্গে যুক্ত রানী হামিদ। বাবার কাছ থেকে দাবা খেলা শিখলেও তাঁর খেলার সঙ্গী ছিল না। সেই সময় মেয়েরা দাবা খেলবে, এটা কেউ ভাবতেও পারতেন না! বাবা বাইরে গেলে লুকিয়ে বোর্ড বের করে ছোট ভাই শমসেরের সঙ্গে খেলতে বসতেন। যথারীতি ভাই হেরে যেতেন। তিনি দাবার গুটি এলোমেলো করে দিতেন। ফলে খেলা বেশিক্ষণ চলত না। রানী হামিদের এক স্কুলশিক্ষক দাবা খেলায় রানীর পারদর্শিতা দেখে তাঁর বাবাকে তৎকালীন পাকিস্তান দাবা অলিম্পিয়াডে প্রতিযোগিতায় নাম লেখানোর প্রস্তাব দেন। কিন্তু বাবা রাজি হলেন না। আনুষ্ঠানিকভাবে কোথাও খেলতে না পারলেও, মনের মধ্যে সুপ্ত বাসনা রয়ে যায়। এভাবে এসএসসি পাস করেন। সে সময়ই বিয়ে হয়ে যায়। মাঝে কেটে যায় ১০ বছর। এর মধ্যে তিন ছেলে ও এক মেয়ের মা হন তিনি। ছেলেমেয়েরা একটু বড় হলেই আবার শুরু করেন লেখাপড়া।
‘নিজের ইচ্ছায়ই দীর্ঘ বিরতির পর লেখাপড়া শুরু করি। প্রাইভেটে এইচএসসি ও ঢাকার ইডেন কলেজ থেকে বিএ পাস করলাম। এমএ শেষ করা হলো না। ব্যস্ত হয়ে গেলাম দাবা খেলা নিয়ে। অন্যদিকে, পুরোদস্তুর গৃহিণীপনা। আমার স্বামী এম এ হামিদের সহযোগিতা ছাড়া দাবা নিয়ে এতদূর আসা সম্ভব হতো না। বাংলাদেশে হ্যান্ডবল খেলার প্রবর্তক তিনি। ক্রীড়া সংগঠকও ছিলেন। ফলে আমাকে খেলার বিষয়ে সবচেয়ে বেশি তিনিই উৎসাহ দিয়েছেন। সন্তানেরাও অবশ্য বুঝত আমার খেলাটা। পরিবারের সহযোগিতা ও সমর্থন না পেলে এই খেলা সম্ভব না,’ বলেন রানী হামিদ।
সময়টা সত্তরের দশকের মাঝামাঝি। তখন ‘নবদিগন্ত সংসদ’ নামের একটি ছাত্রসংগঠন সারা দেশের নারী দাবাড়ুদের নিয়ে একটি প্রতিযোগিতার আয়োজন করে। এম এ হামিদ সেই খবরটা রানী হামিদকে দিলেন। বললেন, ‘তুমি এতে অংশ নাও।’ সেটাই তাঁর প্রথম আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়া। ‘প্রতিযোগিতাস্থলে গিয়ে তো আমার চোখ ছানাবড়া। সবাই মোটা মোটা বই পড়ছে। দাবা খেলায় ভালো করতে গেলে যে বই পড়তে হয়, সেটিও তখন প্রথম জানলাম। যা হোক, এই প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন হলাম। এরপর শুরু হলো নতুন পথচলা।’
রানী হামিদের অর্জনের পাল্লা দিনে দিনে ভারী হতে থাকল। ১৯৮১ সালে ভারতের হায়দরাবাদে প্রথম এশীয় মহিলা দাবায় অংশ নেন। এটি ছিল তাঁর দেশের বাইরে প্রথম খেলতে যাওয়া। এরপর ব্রিটিশ দাবা চ্যাম্পিয়নশিপে টানা ১০ বছর যোগ দেন। প্রতিবারই তিনি জয়ের খেতাব আনেন। এ ছাড়া বাংলাদেশের তিনিই একমাত্র নারী দাবাড়ু, যিনি এ পর্যন্ত অনুষ্ঠিত সব কটি দাবা অলিম্পিয়াডে অংশ নেন। আর দুবাইয়ের জোনাল দাবা চ্যাম্পিয়নশিপসহ দেশ-বিদেশের বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছেন।
বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে পেশা হিসেবে দাবাকে বেছে নিলেন কেন?
‘নেশা কখন পেশা হয়ে গেল, বুঝতে পারিনি। আসলে অন্য সব পেশার মতো তো এটি নয়। প্রথম দিকে দাবা খেলায় জয়ী হলে মেডেল পেয়েই সন্তুষ্ট থাকতাম। কিছু কিছু খেলায় অর্থ পেতাম। সেটাও সামান্য। তবে দেশের বাইরে খেললে ভালো অর্থ পেতাম। একবার হায়দরাবাদে খেলায় জিতে বাংলাদেশি সমমানের ২৪ হাজার টাকা পেয়েছিলাম। সেই টাকা দিয়ে বাসার জন্য রঙিন টিভি কিনেছি। এসবই আনন্দ। আমাদের দেশের ছেলেমেয়ে কীভাবে এমন পেশা বেছে নেবে? কারণ, ভালো সংগঠক নেই। দেখা যায়, পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে টুর্নামেন্ট আয়োজন করা যায় না। প্রতিযোগীরা বিদেশে যেতে পারে না। পেশাদারি মনোভাব তৈরি করার জন্য ভালো সম্মানীও প্রয়োজন, সেটি আমরা দিতে পারছি না।’
দাবা এমন একটা খেলা, যেখানে নারী-পুরুষ একসঙ্গে প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে পারেন। রানী হামিদ বলেন, ‘পুরুষ প্রতিযোগী যখন হারতেন, লক্ষ করতাম, কান লাল হয়ে যেত তাঁদের। আমি তো দেশের বাইরে দাবার পুরুষ দলের সদস্য হয়েও খেলেছি। দাবায় পুরুষ দলে নারী যোগ দিতে পারলেও, নারী দলে পুরুষেরা যোগ দিতে পারেন না। অনেকে মনে করেন, দাবা মেয়েরা কী বুঝবে? এ ধারণা ভুল প্রমাণ করেছি আমি। বুদ্ধি থাকলে এবং অঙ্কে ভালো হলে দাবা খেলা সহজ। কিন্তু নিয়মিত চর্চা করতে হবে। সঙ্গে দাবা নিয়ে লেখাপড়াও চালিয়ে যেতে হবে। সহজভাবে দাবা খেলার পদ্ধতি নিয়ে মজার খেলা দাবা নিয়ে একটি বইও লিখেছি।’
আন্তর্জাতিক খেতাবসম্পন্ন এই দাবাড়ু বর্তমানে মহিলা দাবা সমিতির সভাপতি। তাঁর সঙ্গে আরও আছেন জাহানারা হক, মাহমুদা চৌধুরী, ইদরিস আলীসহ অনেকে। ‘চেষ্টা করছি নারী দাবাড়ুদের জন্য কিছু করার। সবার সহযোগিতা এ ক্ষেত্রে প্রয়োজন।’
সংবাদপত্রে প্রায়ই শিরোনাম হয়, দাবার রানী। নিজের কাজের সঙ্গে নামের এত মিল কীভাবে হলো?
‘আসলে আমার নাম অনেক বড় ছিল। সৈয়দা জসিমুন্নেছা খাতুন। ডাক নাম রানী। বিয়ের পর যুক্ত হলো হামিদ। ভাবলাম, এত বড় নাম নিয়ে চলাফেরা অসুবিধা। তাই নিজেই নাম ছোট করে দিলাম “রানী হামিদ”।’
অবসরে রানী হামিদ কখনো ডার্ট খেলেন, কখনো গল্পের বই পড়েও সময় কাটান। ছেলেরা সঙ্গেই থাকেন। ঢাকার পুরোনো ডিওএইচএস এলাকায় তিনতলা বাড়িটির একেক তলায় একেক ছেলে থাকেন। নাতি-নাতনিরাও তাঁকে ঘিরে থাকতে ভালোবাসে। তবে তিনি চান, সবকিছুর পরও জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত দাবার চাল দিতে।
রানী হামিদের কর্মব্যস্ত একটি দিনে হাজির হলাম তাঁর বাসায়। বসার ঘরে দুই পাশে থরে থরে সাজানো নানা সময়ের পুরস্কার। তবে চোখ আটকে গেল একটি ব্যানারে। তাতে নাতি-নাতনির লেখা: ‘৬৮ বছর বয়সেও তরুণ’। দাদির সঙ্গে তাদের ছবিও কোলাজ করে দেওয়া। কিন্তু সামনে বসা মানুষটিকে দেখে বোঝার উপায় নেই, এ বছর ৬৯-এ পা দিয়েছেন। কীভাবে এখনো এত তরুণ, প্রশ্নটা করা হলে একচোট হেসে নেন। উত্তরে বলেন, ‘নিজেকে কাজের মধ্যে ব্যস্ত রেখেছি। মন প্রফুল্ল রাখতে দাবা খেলি। নিয়ন্ত্রিত জীবনযাপনের কারণে সবার দোয়ায় ভালো আছি। সবচেয়ে বড় কথা, মনের বয়স বাড়তে দেওয়া যাবে না। তা হলে বয়স মানুষকে আটকে ফেলতে পারবে না।’
প্রায় ৩৬ বছর ধরে দাবা খেলার সঙ্গে যুক্ত রানী হামিদ। বাবার কাছ থেকে দাবা খেলা শিখলেও তাঁর খেলার সঙ্গী ছিল না। সেই সময় মেয়েরা দাবা খেলবে, এটা কেউ ভাবতেও পারতেন না! বাবা বাইরে গেলে লুকিয়ে বোর্ড বের করে ছোট ভাই শমসেরের সঙ্গে খেলতে বসতেন। যথারীতি ভাই হেরে যেতেন। তিনি দাবার গুটি এলোমেলো করে দিতেন। ফলে খেলা বেশিক্ষণ চলত না। রানী হামিদের এক স্কুলশিক্ষক দাবা খেলায় রানীর পারদর্শিতা দেখে তাঁর বাবাকে তৎকালীন পাকিস্তান দাবা অলিম্পিয়াডে প্রতিযোগিতায় নাম লেখানোর প্রস্তাব দেন। কিন্তু বাবা রাজি হলেন না। আনুষ্ঠানিকভাবে কোথাও খেলতে না পারলেও, মনের মধ্যে সুপ্ত বাসনা রয়ে যায়। এভাবে এসএসসি পাস করেন। সে সময়ই বিয়ে হয়ে যায়। মাঝে কেটে যায় ১০ বছর। এর মধ্যে তিন ছেলে ও এক মেয়ের মা হন তিনি। ছেলেমেয়েরা একটু বড় হলেই আবার শুরু করেন লেখাপড়া।
‘নিজের ইচ্ছায়ই দীর্ঘ বিরতির পর লেখাপড়া শুরু করি। প্রাইভেটে এইচএসসি ও ঢাকার ইডেন কলেজ থেকে বিএ পাস করলাম। এমএ শেষ করা হলো না। ব্যস্ত হয়ে গেলাম দাবা খেলা নিয়ে। অন্যদিকে, পুরোদস্তুর গৃহিণীপনা। আমার স্বামী এম এ হামিদের সহযোগিতা ছাড়া দাবা নিয়ে এতদূর আসা সম্ভব হতো না। বাংলাদেশে হ্যান্ডবল খেলার প্রবর্তক তিনি। ক্রীড়া সংগঠকও ছিলেন। ফলে আমাকে খেলার বিষয়ে সবচেয়ে বেশি তিনিই উৎসাহ দিয়েছেন। সন্তানেরাও অবশ্য বুঝত আমার খেলাটা। পরিবারের সহযোগিতা ও সমর্থন না পেলে এই খেলা সম্ভব না,’ বলেন রানী হামিদ।
সময়টা সত্তরের দশকের মাঝামাঝি। তখন ‘নবদিগন্ত সংসদ’ নামের একটি ছাত্রসংগঠন সারা দেশের নারী দাবাড়ুদের নিয়ে একটি প্রতিযোগিতার আয়োজন করে। এম এ হামিদ সেই খবরটা রানী হামিদকে দিলেন। বললেন, ‘তুমি এতে অংশ নাও।’ সেটাই তাঁর প্রথম আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়া। ‘প্রতিযোগিতাস্থলে গিয়ে তো আমার চোখ ছানাবড়া। সবাই মোটা মোটা বই পড়ছে। দাবা খেলায় ভালো করতে গেলে যে বই পড়তে হয়, সেটিও তখন প্রথম জানলাম। যা হোক, এই প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন হলাম। এরপর শুরু হলো নতুন পথচলা।’
রানী হামিদের অর্জনের পাল্লা দিনে দিনে ভারী হতে থাকল। ১৯৮১ সালে ভারতের হায়দরাবাদে প্রথম এশীয় মহিলা দাবায় অংশ নেন। এটি ছিল তাঁর দেশের বাইরে প্রথম খেলতে যাওয়া। এরপর ব্রিটিশ দাবা চ্যাম্পিয়নশিপে টানা ১০ বছর যোগ দেন। প্রতিবারই তিনি জয়ের খেতাব আনেন। এ ছাড়া বাংলাদেশের তিনিই একমাত্র নারী দাবাড়ু, যিনি এ পর্যন্ত অনুষ্ঠিত সব কটি দাবা অলিম্পিয়াডে অংশ নেন। আর দুবাইয়ের জোনাল দাবা চ্যাম্পিয়নশিপসহ দেশ-বিদেশের বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছেন।
বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে পেশা হিসেবে দাবাকে বেছে নিলেন কেন?
‘নেশা কখন পেশা হয়ে গেল, বুঝতে পারিনি। আসলে অন্য সব পেশার মতো তো এটি নয়। প্রথম দিকে দাবা খেলায় জয়ী হলে মেডেল পেয়েই সন্তুষ্ট থাকতাম। কিছু কিছু খেলায় অর্থ পেতাম। সেটাও সামান্য। তবে দেশের বাইরে খেললে ভালো অর্থ পেতাম। একবার হায়দরাবাদে খেলায় জিতে বাংলাদেশি সমমানের ২৪ হাজার টাকা পেয়েছিলাম। সেই টাকা দিয়ে বাসার জন্য রঙিন টিভি কিনেছি। এসবই আনন্দ। আমাদের দেশের ছেলেমেয়ে কীভাবে এমন পেশা বেছে নেবে? কারণ, ভালো সংগঠক নেই। দেখা যায়, পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে টুর্নামেন্ট আয়োজন করা যায় না। প্রতিযোগীরা বিদেশে যেতে পারে না। পেশাদারি মনোভাব তৈরি করার জন্য ভালো সম্মানীও প্রয়োজন, সেটি আমরা দিতে পারছি না।’
দাবা এমন একটা খেলা, যেখানে নারী-পুরুষ একসঙ্গে প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে পারেন। রানী হামিদ বলেন, ‘পুরুষ প্রতিযোগী যখন হারতেন, লক্ষ করতাম, কান লাল হয়ে যেত তাঁদের। আমি তো দেশের বাইরে দাবার পুরুষ দলের সদস্য হয়েও খেলেছি। দাবায় পুরুষ দলে নারী যোগ দিতে পারলেও, নারী দলে পুরুষেরা যোগ দিতে পারেন না। অনেকে মনে করেন, দাবা মেয়েরা কী বুঝবে? এ ধারণা ভুল প্রমাণ করেছি আমি। বুদ্ধি থাকলে এবং অঙ্কে ভালো হলে দাবা খেলা সহজ। কিন্তু নিয়মিত চর্চা করতে হবে। সঙ্গে দাবা নিয়ে লেখাপড়াও চালিয়ে যেতে হবে। সহজভাবে দাবা খেলার পদ্ধতি নিয়ে মজার খেলা দাবা নিয়ে একটি বইও লিখেছি।’
আন্তর্জাতিক খেতাবসম্পন্ন এই দাবাড়ু বর্তমানে মহিলা দাবা সমিতির সভাপতি। তাঁর সঙ্গে আরও আছেন জাহানারা হক, মাহমুদা চৌধুরী, ইদরিস আলীসহ অনেকে। ‘চেষ্টা করছি নারী দাবাড়ুদের জন্য কিছু করার। সবার সহযোগিতা এ ক্ষেত্রে প্রয়োজন।’
সংবাদপত্রে প্রায়ই শিরোনাম হয়, দাবার রানী। নিজের কাজের সঙ্গে নামের এত মিল কীভাবে হলো?
‘আসলে আমার নাম অনেক বড় ছিল। সৈয়দা জসিমুন্নেছা খাতুন। ডাক নাম রানী। বিয়ের পর যুক্ত হলো হামিদ। ভাবলাম, এত বড় নাম নিয়ে চলাফেরা অসুবিধা। তাই নিজেই নাম ছোট করে দিলাম “রানী হামিদ”।’
অবসরে রানী হামিদ কখনো ডার্ট খেলেন, কখনো গল্পের বই পড়েও সময় কাটান। ছেলেরা সঙ্গেই থাকেন। ঢাকার পুরোনো ডিওএইচএস এলাকায় তিনতলা বাড়িটির একেক তলায় একেক ছেলে থাকেন। নাতি-নাতনিরাও তাঁকে ঘিরে থাকতে ভালোবাসে। তবে তিনি চান, সবকিছুর পরও জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত দাবার চাল দিতে।
No comments