বিশ্ব মানসিক স্বাস্থ্য দিবস- আর্থিক সংকট: বিষণ্নতা ও আত্মহত্যা by মো. তাজুল ইসলাম
প্রতিবছর বিশ্বব্যাপী বিশ্ব মানসিক স্বাস্থ্য দিবস পালন করা হয়। এ বছরের প্রতিপাদ্য হচ্ছে: বিষণ্নতা—একটি বৈশ্বিক সংকট। বিষণ্নতা একটি গুরুতর, কষ্টদায়ক ও কর্ম-অক্ষম করে তোলা মানসিক ব্যাধি। এর অনেক কুফলের অন্যতম হচ্ছে আত্মহত্যা করা।
এবার বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও ওয়ার্ল্ড মেন্টাল হেলথ ফাউন্ডেশন বিশ্বব্যাপী আর্থিক সংকট এবং তার ফলে বিষণ্নতা ও আত্মহত্যার ওপর বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছে।
‘মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর আর্থিক সংকটের প্রভাব’ শীর্ষক বুকলেটের মুখবন্ধে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ইউরোপীয় অঞ্চলের পরিচালক মন্তব্য করেন, আর্থিক মন্দার কারণে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড বহুলাংশে কমে গেছে, বেকারত্বের হার বেড়েছে, দারিদ্র্যসীমার নিচের মানুষের সংখ্যা বেড়েছে এবং অনিশ্চয়তা বেড়েছে। এর সঙ্গে জনসেবা খাতে সরকারি খরচ অনেক কমিয়ে দেওয়া হয়েছে। বেকারত্ব, দারিদ্র্য ও সীমিত আয়ের কারণে আত্মহত্যা, মদপানসহ মাদকাসক্তি বাড়ে (ডরলিং ২০০৯)। স্টাকলারের মতে, বেকারত্বের সঙ্গে রয়েছে আত্মহত্যার শক্তিশালী সম্পর্ক। তিনি দেখিয়েছেন, বেকারত্ব প্রতি ১ শতাংশ বৃদ্ধির কারণে আত্মহত্যা শূন্য দশমিক ৭৯ শতাংশ বাড়ে। আর্থিক সংকটের কারণে দেনার মধ্যে পড়ে গেলে, ব্যাংকের ঋণ শোধ করতে না পারলে এবং সাধারণভাবে আর্থিক দৈন্যদশায় পড়লে বিষণ্নতা ও আত্মহত্যার হার বাড়ে (জনকিন ২০০৮)। ভারতে নব্বইয়ের দশকের মধ্যভাগে কৃষিব্যবস্থার পুনর্গঠনের সময় কৃষকেরা হঠাৎ করে চরম আর্থিক সমস্যার মধ্যে পড়েন এবং তখন গণহারে আত্মহত্যা করেন (সুন্দার ১৯৯৯)। জিওটাকসে দেখিয়েছেন, দারিদ্র্য ও বেকারত্বের সঙ্গে হত্যা-খুনের সংখ্যা বৃদ্ধি পায় এবং আয় কমলে আত্মহত্যার হার বেড়ে যায়। তাঁর কথায়, দারিদ্র্য ও আত্মহত্যা হাত ধরাধরি করে চলে।
গ্রিসে আর্থিক সংকটের কারণে ২০১১ সালে হাসপাতালের সরকারি বাজেট ৪০ শতাংশ কমিয়ে দেওয়া হয়েছিল। সেই আর্থিক সংকটের কারণে গ্রিসে চুরির সংখ্যা দ্বিগুণ হয়, আত্মহত্যার হার নাটকীয়ভাবে বেড়ে যায়, হেরোইনসহ মাদকাসক্তির হার বাড়ে এবং মাদকাসক্তদের মধ্যে সংক্রমণের হার ১০ গুণ বেড়ে যায় (কেনেটি কেলিনস ২০১১)। অন্যদিকে, ফিনল্যান্ড ও সুইডেনে আর্থিক মন্দার সময়ে সামাজিক সেবা খাতের সেবা বৃদ্ধির কারণে এবং সামাজিক নিরাপত্তাবেষ্টনীর আওতা বৃদ্ধির কারণে আত্মহত্যার হারের ওপর তেমন নেতিবাচক প্রভাব পড়েনি। কিন্তু আমেরিকায় রাষ্ট্রীয় কল্যাণ খাতে বাজেট কমিয়ে দেওয়ার কারণে আত্মহত্যার হার বেড়ে গিয়েছিল (জিমারম্যান)। এ থেকে বোঝা যায়, রাষ্ট্র যদি জনসেবা ও কল্যাণ খাতে অধিক মনোযোগ দেয়, তা হলে দারিদ্র্য ও আর্থিক সংকটের দুঃসহ বোঝা অনেকটা কমিয়ে আনা যায়।
বিষণ্নতা রোগের জন্য আর্থিক সংকট ছাড়াও অন্য অনেক কারণ রয়েছে। তবে আজকের আলোচনায় শুধু এ দিকটির ওপরই দৃষ্টি নিবদ্ধ করার চেষ্টা করব। কেননা, আর্থিক সংকট মোকাবিলা বা এর উত্তরণের জন্য শুধু ব্যক্তিগত উদ্যোগই যথেষ্ট নয়। রাষ্ট্র ও সমাজের জন্য ব্যাপক কিছু করণীয় রয়েছে। যেখানে আর্থিক সংকটের কারণে ধারদেনা বা ব্যাংকের ঋণ শোধ না করতে পেরে দরিদ্র কৃষকেরা বিবেকের দংশনে আত্মহত্যা করেন, সেখানে কিছুসংখ্যক লোক জালিয়াতির মাধ্যমে ব্যাংক থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নেন এবং বীরদর্পে নম্বরবিহীন পাজেরো গাড়িতে করে চলেন। আর্থিক সংকটের কারণে বিষণ্নতা ও আত্মহত্যার হার আমাদের দেশে কম তো নয়ই, বরং অনেক বেশি হবে। তবে এ ব্যাপারে জাতীয় ভিত্তিক কোনো গবেষণা জরিপ নেই বলে অন্যান্য দেশের উদাহরণ টানলাম। অর্থনৈতিকভাবে দেউলিয়া হয়ে বা আর্থিক সংকটে পড়ে যে অনেকে আত্মহত্যা করে, তার ভূরি ভূরি উদাহরণ আমাদের দেশে সংবাদপত্রে তুলে ধরা হয়। এবারের শেয়ারবাজারের কেলেঙ্কারিতে সর্বস্ব হারিয়ে স্বামীবাগের একজন ব্যবসায়ীর আত্মহত্যার কথা আমরা সবাই জানি।
বর্তমানে সারা বিশ্বে ৩৫০ মিলিয়ন লোক বিষণ্নতায় ভুগছে। রোগের কারণে অক্ষমতা তৈরি হয় এমন রোগীদের মধ্যে ২০০৪ সাল থেকেই বিষণ্নতা তৃতীয় প্রধান কারণ বলে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা চিহ্নিত করেছে। ২০২০ সালে এটি হবে দ্বিতীয় প্রধান কারণ এবং ২০৩০ সালে এটি হয়ে দাঁড়াবে এক নম্বর প্রধান কারণ। বিষণ্নতা একটি প্রাণঘাতী রোগ। বিষণ্নতায় ভুগলে মন অশান্তিতে ভরে থাকে, কোনো কাজ-কর্মে ন্যূনতম আগ্রহ, উৎসাহ থাকে না। দুর্বল, শক্তিহীন হয়ে পড়ে, অপরাধবোধে ভোগে বা নিজের সম্বন্ধে নিচু ধারণা তৈরি হয়, ঘুম কম হয় বা বেশি হয়, ক্ষুধা কমে যায় বা বেড়ে যায়, মনোযোগ দিতে পারে না বা সঠিকভাবে চিন্তা করতে পারে না, সর্বোপরি আত্মহত্যার চিন্তা করে, চেষ্টা করে ও অনেকে আত্মহত্যা করে মারা যায়। প্রতিবছর বিশ্বে ১০ লাখ লোক আত্মহত্যা করে মারা যায়।
এর মানে প্রতিদিন তিন হাজার লোক আত্মহত্যা করে। উল্লেখ্য, আত্মহত্যা করে প্রতিটি মৃত্যুর পাশাপাশি আত্মহত্যার চেষ্টা করে মরতে চায় আরও ২০ জন। অর্থাৎ ২০ জন বেশি লোক আত্মহত্যার চেষ্টা করে। আত্মহত্যার জন্য অনেক কারণ দায়ী থাকলেও বিষণ্নতা হচ্ছে অন্যতম কারণ। অথচ এ বিষণ্নতা রোগীদের ২৫ শতাংশের চেয়েও কম প্রকৃত চিকিৎসা পেয়ে থাকেন। কোনো কোনো দেশে চিকিৎসা পাওয়ার হার ১০ শতাংশের চেয়েও কম। বাংলাদেশের বাস্তব অবস্থাও এর চেয়ে খুব বেশি উন্নত নয়। অথচ বিষণ্নতার জন্য কার্যকর বৈজ্ঞানিক চিকিৎসা রয়েছে। অনেকে মনে করেন, মনের জোরে বিষণ্নতা কাটিয়ে উঠবেন। কিন্তু বিষণ্নতা একটি রূঢ় বাস্তবতা, এটি একটি মন-ব্রেইনের রোগ। ওষুধসহ অন্যান্য চিকিৎসা এ রোগ সম্পূর্ণভাবে ভালো করে তুলতে পারে। সব চিকিৎসক, স্বাস্থ্যকর্মী ও জনসাধারণের সচেতনতা বাড়াতে পারলে এ রোগ প্রাথমিক অবস্থায় নির্ণয় করা যায় ও রোগী সঠিক চিকিৎসা পেতে পারেন। একজন মানুষকে নির্জীব, পঙ্গু ও বেদনায় জর্জরিত করে রাখে যে নিষ্ঠুর ব্যাধি, তাকে অবহেলা করার কোনো সুযোগ নেই। জীবন থেকে ‘জীবন হরণ’ করে যে রোগ, তাকে প্রতিরোধ করতে তথ্যমাধ্যমসহ সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। সরকার ও রাষ্ট্রকেও সামাজিক নিরাপত্তাবেষ্টনীর পরিধি বাড়াতে হবে ও কার্যকর চিকিৎসা তৃণমূল পর্যন্ত বিস্তৃত করার দায়িত্ব নিতে হবে।
তথ্যসূত্র: বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা
ডা. মো. তাজুল ইসলাম: মনোরোগ বিশেষজ্ঞ, সহযোগী অধ্যাপক, জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট, ঢাকা।
‘মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর আর্থিক সংকটের প্রভাব’ শীর্ষক বুকলেটের মুখবন্ধে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ইউরোপীয় অঞ্চলের পরিচালক মন্তব্য করেন, আর্থিক মন্দার কারণে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড বহুলাংশে কমে গেছে, বেকারত্বের হার বেড়েছে, দারিদ্র্যসীমার নিচের মানুষের সংখ্যা বেড়েছে এবং অনিশ্চয়তা বেড়েছে। এর সঙ্গে জনসেবা খাতে সরকারি খরচ অনেক কমিয়ে দেওয়া হয়েছে। বেকারত্ব, দারিদ্র্য ও সীমিত আয়ের কারণে আত্মহত্যা, মদপানসহ মাদকাসক্তি বাড়ে (ডরলিং ২০০৯)। স্টাকলারের মতে, বেকারত্বের সঙ্গে রয়েছে আত্মহত্যার শক্তিশালী সম্পর্ক। তিনি দেখিয়েছেন, বেকারত্ব প্রতি ১ শতাংশ বৃদ্ধির কারণে আত্মহত্যা শূন্য দশমিক ৭৯ শতাংশ বাড়ে। আর্থিক সংকটের কারণে দেনার মধ্যে পড়ে গেলে, ব্যাংকের ঋণ শোধ করতে না পারলে এবং সাধারণভাবে আর্থিক দৈন্যদশায় পড়লে বিষণ্নতা ও আত্মহত্যার হার বাড়ে (জনকিন ২০০৮)। ভারতে নব্বইয়ের দশকের মধ্যভাগে কৃষিব্যবস্থার পুনর্গঠনের সময় কৃষকেরা হঠাৎ করে চরম আর্থিক সমস্যার মধ্যে পড়েন এবং তখন গণহারে আত্মহত্যা করেন (সুন্দার ১৯৯৯)। জিওটাকসে দেখিয়েছেন, দারিদ্র্য ও বেকারত্বের সঙ্গে হত্যা-খুনের সংখ্যা বৃদ্ধি পায় এবং আয় কমলে আত্মহত্যার হার বেড়ে যায়। তাঁর কথায়, দারিদ্র্য ও আত্মহত্যা হাত ধরাধরি করে চলে।
গ্রিসে আর্থিক সংকটের কারণে ২০১১ সালে হাসপাতালের সরকারি বাজেট ৪০ শতাংশ কমিয়ে দেওয়া হয়েছিল। সেই আর্থিক সংকটের কারণে গ্রিসে চুরির সংখ্যা দ্বিগুণ হয়, আত্মহত্যার হার নাটকীয়ভাবে বেড়ে যায়, হেরোইনসহ মাদকাসক্তির হার বাড়ে এবং মাদকাসক্তদের মধ্যে সংক্রমণের হার ১০ গুণ বেড়ে যায় (কেনেটি কেলিনস ২০১১)। অন্যদিকে, ফিনল্যান্ড ও সুইডেনে আর্থিক মন্দার সময়ে সামাজিক সেবা খাতের সেবা বৃদ্ধির কারণে এবং সামাজিক নিরাপত্তাবেষ্টনীর আওতা বৃদ্ধির কারণে আত্মহত্যার হারের ওপর তেমন নেতিবাচক প্রভাব পড়েনি। কিন্তু আমেরিকায় রাষ্ট্রীয় কল্যাণ খাতে বাজেট কমিয়ে দেওয়ার কারণে আত্মহত্যার হার বেড়ে গিয়েছিল (জিমারম্যান)। এ থেকে বোঝা যায়, রাষ্ট্র যদি জনসেবা ও কল্যাণ খাতে অধিক মনোযোগ দেয়, তা হলে দারিদ্র্য ও আর্থিক সংকটের দুঃসহ বোঝা অনেকটা কমিয়ে আনা যায়।
বিষণ্নতা রোগের জন্য আর্থিক সংকট ছাড়াও অন্য অনেক কারণ রয়েছে। তবে আজকের আলোচনায় শুধু এ দিকটির ওপরই দৃষ্টি নিবদ্ধ করার চেষ্টা করব। কেননা, আর্থিক সংকট মোকাবিলা বা এর উত্তরণের জন্য শুধু ব্যক্তিগত উদ্যোগই যথেষ্ট নয়। রাষ্ট্র ও সমাজের জন্য ব্যাপক কিছু করণীয় রয়েছে। যেখানে আর্থিক সংকটের কারণে ধারদেনা বা ব্যাংকের ঋণ শোধ না করতে পেরে দরিদ্র কৃষকেরা বিবেকের দংশনে আত্মহত্যা করেন, সেখানে কিছুসংখ্যক লোক জালিয়াতির মাধ্যমে ব্যাংক থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নেন এবং বীরদর্পে নম্বরবিহীন পাজেরো গাড়িতে করে চলেন। আর্থিক সংকটের কারণে বিষণ্নতা ও আত্মহত্যার হার আমাদের দেশে কম তো নয়ই, বরং অনেক বেশি হবে। তবে এ ব্যাপারে জাতীয় ভিত্তিক কোনো গবেষণা জরিপ নেই বলে অন্যান্য দেশের উদাহরণ টানলাম। অর্থনৈতিকভাবে দেউলিয়া হয়ে বা আর্থিক সংকটে পড়ে যে অনেকে আত্মহত্যা করে, তার ভূরি ভূরি উদাহরণ আমাদের দেশে সংবাদপত্রে তুলে ধরা হয়। এবারের শেয়ারবাজারের কেলেঙ্কারিতে সর্বস্ব হারিয়ে স্বামীবাগের একজন ব্যবসায়ীর আত্মহত্যার কথা আমরা সবাই জানি।
বর্তমানে সারা বিশ্বে ৩৫০ মিলিয়ন লোক বিষণ্নতায় ভুগছে। রোগের কারণে অক্ষমতা তৈরি হয় এমন রোগীদের মধ্যে ২০০৪ সাল থেকেই বিষণ্নতা তৃতীয় প্রধান কারণ বলে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা চিহ্নিত করেছে। ২০২০ সালে এটি হবে দ্বিতীয় প্রধান কারণ এবং ২০৩০ সালে এটি হয়ে দাঁড়াবে এক নম্বর প্রধান কারণ। বিষণ্নতা একটি প্রাণঘাতী রোগ। বিষণ্নতায় ভুগলে মন অশান্তিতে ভরে থাকে, কোনো কাজ-কর্মে ন্যূনতম আগ্রহ, উৎসাহ থাকে না। দুর্বল, শক্তিহীন হয়ে পড়ে, অপরাধবোধে ভোগে বা নিজের সম্বন্ধে নিচু ধারণা তৈরি হয়, ঘুম কম হয় বা বেশি হয়, ক্ষুধা কমে যায় বা বেড়ে যায়, মনোযোগ দিতে পারে না বা সঠিকভাবে চিন্তা করতে পারে না, সর্বোপরি আত্মহত্যার চিন্তা করে, চেষ্টা করে ও অনেকে আত্মহত্যা করে মারা যায়। প্রতিবছর বিশ্বে ১০ লাখ লোক আত্মহত্যা করে মারা যায়।
এর মানে প্রতিদিন তিন হাজার লোক আত্মহত্যা করে। উল্লেখ্য, আত্মহত্যা করে প্রতিটি মৃত্যুর পাশাপাশি আত্মহত্যার চেষ্টা করে মরতে চায় আরও ২০ জন। অর্থাৎ ২০ জন বেশি লোক আত্মহত্যার চেষ্টা করে। আত্মহত্যার জন্য অনেক কারণ দায়ী থাকলেও বিষণ্নতা হচ্ছে অন্যতম কারণ। অথচ এ বিষণ্নতা রোগীদের ২৫ শতাংশের চেয়েও কম প্রকৃত চিকিৎসা পেয়ে থাকেন। কোনো কোনো দেশে চিকিৎসা পাওয়ার হার ১০ শতাংশের চেয়েও কম। বাংলাদেশের বাস্তব অবস্থাও এর চেয়ে খুব বেশি উন্নত নয়। অথচ বিষণ্নতার জন্য কার্যকর বৈজ্ঞানিক চিকিৎসা রয়েছে। অনেকে মনে করেন, মনের জোরে বিষণ্নতা কাটিয়ে উঠবেন। কিন্তু বিষণ্নতা একটি রূঢ় বাস্তবতা, এটি একটি মন-ব্রেইনের রোগ। ওষুধসহ অন্যান্য চিকিৎসা এ রোগ সম্পূর্ণভাবে ভালো করে তুলতে পারে। সব চিকিৎসক, স্বাস্থ্যকর্মী ও জনসাধারণের সচেতনতা বাড়াতে পারলে এ রোগ প্রাথমিক অবস্থায় নির্ণয় করা যায় ও রোগী সঠিক চিকিৎসা পেতে পারেন। একজন মানুষকে নির্জীব, পঙ্গু ও বেদনায় জর্জরিত করে রাখে যে নিষ্ঠুর ব্যাধি, তাকে অবহেলা করার কোনো সুযোগ নেই। জীবন থেকে ‘জীবন হরণ’ করে যে রোগ, তাকে প্রতিরোধ করতে তথ্যমাধ্যমসহ সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। সরকার ও রাষ্ট্রকেও সামাজিক নিরাপত্তাবেষ্টনীর পরিধি বাড়াতে হবে ও কার্যকর চিকিৎসা তৃণমূল পর্যন্ত বিস্তৃত করার দায়িত্ব নিতে হবে।
তথ্যসূত্র: বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা
ডা. মো. তাজুল ইসলাম: মনোরোগ বিশেষজ্ঞ, সহযোগী অধ্যাপক, জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট, ঢাকা।
No comments