পোশাক শিল্পে অস্থিরতা পরিকল্পিত : প্রধানমন্ত্রী-বিদেশি ইন্ধন খতিয়ে দেখার নির্দেশ

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, দেশের পোশাক শিল্প সেক্টরে পরিকল্পিতভাবে অস্থিরতা ছড়ানো হচ্ছে। বিরাজমান অস্থিতিশীলতার পেছনে কোনো বিদেশি চক্রান্ত আছে কি না, তা খতিয়ে দেখতে তিনি সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের নির্দেশ দিয়েছেন। একই সঙ্গে শ্রমিকদের মধ্যে ফেয়ার প্রাইস কার্ড বিতরণেরও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।


গতকাল সোমবার মন্ত্রিসভার নিয়মিত বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী এসব নির্দেশনা দিয়েছেন বলে সূত্র নিশ্চিত করেছে।
প্রধানমন্ত্রীর সভাপতিত্বে সচিবালয়ে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভার বৈঠকে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রীরা মন্তব্য করেন, এনজিও এবং বিভিন্ন গার্মেন্টের মালিকরাও এ অস্থিতিশীলতা সৃষ্টির সঙ্গে জড়িত থাকতে পারেন। প্রধানমন্ত্রী পরে শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী বেগম মন্নুজান সুফিয়ানকে উদ্দেশ করে বলেন, 'আপনি তো শ্রমিক নেতা; আপনি দেখেন কী করা যায়। কেন শ্রমিকদের মধ্যে এ ধরনের সমস্যা বারবার সৃষ্টি হচ্ছে।'
প্রধানমন্ত্রী বলেন, অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে গার্মেন্ট সেক্টরে অস্থিতিশীলতা ছড়ানো হচ্ছে। দেশে যখন বিদেশি বায়াররা আসেন তখনই সমস্যাগুলো বেশি দেখা যায়। এগুলো কোনো পরিকল্পনার অংশও হতে পারে। এ প্রসঙ্গে তিনি এফবিসিসিআই সভাপতি এ কে আজাদের মালিকানাধীন হা-মীম গ্রুপের উদাহরণ টেনে বলেন, সব সময় কেন হা-মীমের ওপর প্রথম আক্রমণ আসে সেটা দেখতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী আশুলিয়া ও সাভার অঞ্চলের গার্মেন্ট শ্রমিকদের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ফেয়ার প্রাইস কার্ড বিতরণ করতে খাদ্যমন্ত্রী ড. আবদুর রাজ্জাককে নির্দেশ দেন।
খাদ্যমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, শুধু আশুলিয়া বা সাভার নয়, পর্যায়ক্রমে অন্যান্য শ্রমঘন এলাকায়ও সরকার এ কার্ড চালু করবে। কার্ডের মাধ্যমে চাল বিক্রির জন্য শ্রমঘন অঞ্চলগুলোতে সরকার ডিলার নিয়োগ দেবে। এই কার্ড দেখিয়ে সরকার নির্ধারিত ২৪ টাকা কেজি দরে চাল কেনা যাবে। আর প্রতি কার্ডের মাধ্যমে মাসে চাল কেনা যাবে ২০ থেকে ৩০ কেজি।
প্রসঙ্গত, বেতন-ভাতা বাড়ানোর দাবিতে আশুলিয়া, সাভার ও নারায়ণগঞ্জ অঞ্চলে তৈরি পোশাক কারখানার শ্রমিকরা ছয় দিন ধরে বিক্ষোভ ও মহাসড়ক অবরোধ কর্মসূচি পালন করে আসছেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে পোশাক শিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ আশুলিয়ার সব তৈরি পোশাক কারখানা বন্ধ করে দিয়েছে।
জ্বালানি কর্তৃপক্ষ আইনের খসড়া অনুমোদন : মন্ত্রিসভার বৈঠকে চুক্তি স্বাক্ষর ও ঋণ নেওয়ার ক্ষমতা দিয়ে টেকসই ও নবায়নযোগ্য জ্বালানি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ গঠনের জন্য আইনের খসড়া অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। দেশে সবুজ জ্বালানির উৎপাদন ও ব্যবহার বৃদ্ধির লক্ষ্যে এ আইন অনুমোদন দেওয়া হয়েছে বলে মন্তব্য করেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোশাররাফ হোসাইন ভূইয়া। বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের তিনি আরো জানান, এ আইনের অধীনে টেকসই ও নবায়নযোগ্য জ্বালানির ব্যবহার উৎসাহিত করা এবং এ ধরনের জ্বালানির উন্নয়নে একটি কর্তৃপক্ষ গঠন করা হবে। এতে একজন চেয়ারম্যান ও পাঁচজন সদস্য থাকবেন। সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদেরও এ কাঠামোতে রাখা হবে। খসড়া আইনে কর্তৃপক্ষকে যেকোনো পক্ষের সঙ্গে চুক্তি করা এবং ঋণ নেওয়ার ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। এ কারণে আইনটি একটি অর্থ আইন হিসেবে বিবেচিত হবে।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব জানান, বর্তমানে দেশে তেল-কয়লাসহ যেসব জ্বালানি ব্যবহৃত হচ্ছে সেগুলোর ক্ষতিকর প্রভাব রয়েছে পরিবেশের ওপর। এ কারণে পরিবেশবান্ধব টেকসই ও নবায়নযোগ্য জ্বালানি সহজলভ্য করা, এর ব্যবহার বাড়ানো এবং পুরো বিষয়টি একটি আইনি কাঠামোর আওতায় আনতেই এই কর্তৃপক্ষ গঠনে আইন তৈরির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
প্রস্তাবিত আইনের সাতটি ধারার মধ্যে প্রথম ধারায় সংজ্ঞা, দ্বিতীয় ধারায় কর্তৃপক্ষ গঠন, তৃতীয় ধারায় পরিচালনা পর্ষদ গঠন, চতুর্থ ধারায় কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগ, পঞ্চম ধারায় কর্তৃপক্ষের বার্ষিক প্রতিবেদন প্রকাশ ও নিরীক্ষা সম্পাদন, ষষ্ঠ ধারায় তহবিল প্রতিষ্ঠা ও পরিচালনা এবং সপ্তম ধারায় বিধি প্রণয়নের ক্ষমতার বিষয়টি উল্লেখ করা হয়েছে।
মিয়ানমারের সঙ্গে বিমান যোগাযোগ প্রস্তাব অনুমোদন : মন্ত্রিসভা বর্তমানে বিদ্যমান ১৯৭৭ সালের আইন সংস্কার করে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে বিমান যোগাযোগ স্থাপনের লক্ষ্যে একটি দ্বিপক্ষীয় চুক্তি স্বাক্ষরের প্রস্তাব অনুমোদন করেছে। এ চুক্তির আওতায় সরকারি ও বেসরকারি খাতে মোট পাঁচটি এয়ারলাইনস দুই দেশের বিভিন্ন নগরীর মধ্যে প্রতি সপ্তাহে সাতটি যাত্রীবাহী ও চারটি মালবাহী ফ্লাইট পরিচালনা করবে। এয়ারলাইনসগুলো হলো- বাংলাদেশ বিমান, জিএমজি এয়ারলাইনস ও ইউনাইটেড এয়ারলাইনস এবং মিয়ানমার এয়ারওয়েজ ও এয়ার বাগান। মিয়ানমার সরকার এ চুক্তি অনুমোদনের পর শিগগিরই ফ্লাইট পরিচালনা শুরু হবে।
মন্ত্রিসভার সদস্য, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা, বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী এবং সংশ্লিষ্ট সচিবরা বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।
ঢাকার সব ফ্যাক্টরিও বন্ধ করার
হুমকি গার্মেন্ট মালিকদের

No comments

Powered by Blogger.