প্রকল্পগুলোর অবস্থা জানতে চাইলেন যোগাযোগমন্ত্রী-কালের কণ্ঠের প্রতিবেদনের পর তৎপরতা বেড়েছে

যোগাযোগ ও রেলপথমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের গতকাল সোমবার মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা ও সওজের প্রধান প্রকৌশলীর কাছে বিভিন্ন প্রকল্পের অবস্থা জানতে চেয়েছেন। তিনি পুরোদমে বৃষ্টিপাত শুরুর আগেই যত দ্রুত সম্ভব সড়ক ও মহাসড়ক সংস্কারের চলমান কাজ শেষ করার তাগিদ দিয়েছেন।


দেশের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ মহাসড়ক ও প্রত্যন্ত অঞ্চলের সড়কগুলোর নাজুক অবস্থা নিয়ে গতকাল কালের কণ্ঠে প্রতিবেদন প্রকাশের পর যোগাযোগ মন্ত্রণালয় এবং সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরে এসব বিষয় নিয়ে ব্যাপক তৎপরতা লক্ষ করা যায়। গতকাল সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত বিভিন্ন প্রকল্পের অনেক পরিচালক যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের কাছে ফোন করে তাঁদের প্রকল্পের সর্বশেষ অবস্থার কথা তুলে ধরেন। কোনো কোনো প্রকল্প পরিচালক সরাসরি মন্ত্রণালয়ে এসে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছে কাজের অগ্রগতির বিষয়ে জানিয়ে গেছেন।
জানা গেছে, গতকাল দুপুরে জয়দেবপুর-ময়মনসিংহ চার লেন প্রকল্পের পরিচালক মো. ফিরোজ ইকবাল মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ফরিদ উদ্দিন আহম্মদের কাছে যান। তিনি প্রকল্পের বর্তমান অবস্থা তুলে ধরেন। প্রকল্পের একটি প্যাকেজের কাজ বন্ধ ও অন্য প্যাকেজের কাজ ঢিমেতালে চলার ব্যাপারে প্রকল্প পরিচালক তাঁর ব্যাখ্যা দেন।
এদিকে গতকাল কালের কণ্ঠে 'বর্ষার সতর্কবার্তা মহাসড়কে' শিরোনামে মূল প্রতিবেদনের সঙ্গে প্রথম পাতায় প্রকাশিত আরো তিনটি প্রতিবেদনের বিষয়ে নিজেদের বক্তব্য দিয়েছে যোগাযোগ মন্ত্রণালয়। কালের কণ্ঠের কাছে পাঠানো ওই লিখিত বক্তব্যে প্রতিবেদনে তুলে ধরা বিভিন্ন বিষয়ে মন্ত্রণালয়ের অবস্থান ও সার্বিক পরিস্থিতি ব্যাখ্যা করা হয়েছে।
বিভিন্ন অংশ বিধ্বস্ত ও চার লেন প্রকল্প ঢিমেতালে চলার প্রসঙ্গকে গুরুত্ব দিয়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনগুলোর বিষয়ে মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে গর্তে গাড়ি আটকে পড়ার মতো অবস্থা নেই। চালকরা সাবধানে চালালেও ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে যানবাহন ঢিমেতালে চলছে না বলে মন্ত্রণালয়ের দাবি। ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের একটি প্যাকেজের কাজ বন্ধ থাকলেও মন্ত্রণালয় অন্যান্য অংশের কাজের বিবরণ তুলে ধরে এ বিষয়ে সচেষ্ট থাকার কথা জানিয়েছে।
'সড়কের অবস্থা ভালো' : প্রকাশিত 'ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক : ৮০ কোটি টাকা জলে', 'ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক : যানবাহন চলছে ঢিমেতালে' ও 'ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক : সংস্কারকাজ বন্ধ'- শিরোনামে প্রকাশিত তিনটি প্রতিবেদনের বিষয়ে গতকাল যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের বক্তব্যে বিশদ ব্যাখ্যা দেওয়া হয়েছে। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক প্রসঙ্গে মন্ত্রণালয় বলেছে, গত বর্ষায় ক্ষতিগ্রস্ত সড়কাংশ মেরামতের জন্য এ পর্যন্ত কোনো বরাদ্দ/ব্যয় নির্বাহ করা হয়নি। বিগত যেকোনো সময়ের চেয়ে বর্তমানে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক ভালো অবস্থায় থাকায় সুষ্ঠুভাবে যানবাহন চলাচল করছে এবং কোনো যান্ত্রিক ক্রটি ছাড়া রাস্তা খারাপের কারণে যানবাহন বিকল হওয়ার কোনো আশঙ্কা নেই। মন্ত্রণালয়ের দাবি, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক চার লেনে উন্নীতকরণ প্রকল্পের আওতাধীন মহাসড়কে গর্তে আটকে গাড়ি বিকল হওয়ার মতো অবস্থা বর্তমানে নেই।
ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে দুর্ঘটনারোধে ১১টি ঝুঁকিপূর্ণ বাঁক প্রশস্তকরণ ও ডিভাইডার স্থাপনে যোগাযোগমন্ত্রীর নির্দেশ কার্যকর হয়নি- এমন অভিযোগের ব্যাপারে যোগাযোগ মন্ত্রণালয় বলেছে, মহাসড়কের গোলরা মোড় প্রশস্তকরণের কাজ শতভাগ শেষ হয়েছে। জোকা, ধলেশ্বরী, বানিয়াজুরি, পাচুরিয়া, নবগ্রাম ও মুলজান- এ ছয়টি বাঁক প্রশস্তকরণ ও ডিভাইডার স্থাপনের কাজ ৮০ শতাংশ শেষ হয়েছে। ১১টি বাঁক প্রশস্তকরণে ছয় কোটি টাকা ছাড় করা হয়েছে। ঢাকা-আরিচা মহাসড়কটি বর্তমানে যান চলাচলের সম্পূর্ণ উপযোগী।
ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক সংস্কারকাজ বন্ধ থাকার ব্যাপারে মন্ত্রণালয়ের দাবি, এ মহাসড়কের জয়দেবপুর থেকে ময়মনসিংহ পর্যন্ত ৮৮ কিলোমিটার সড়ক চার লেনে উন্নীত করার কাজ শুরু হয়েছে। এরই মধ্যে মাওনা থেকে ময়মনসিংহ পর্যন্ত প্রায় ৬০ কিলোমিটার অংশের কাজ এগিয়ে চলেছে। এ অংশে মাটির কাজ প্রায় ৫০ শতাংশ সম্পন্ন হয়েছে। এ ছাড়া সেতু ও কালভার্টের কাজ ৬০ শতাংশ শেষ হয়েছে। জয়দেবপুর থেকে মাওনা পর্যন্ত অংশের কাজ আইনগত জটিলতার কারণে বন্ধ রয়েছে। দ্রুত এ জটিলতার নিরসন হবে বলে আশা করা যাচ্ছে।

No comments

Powered by Blogger.