এমপিওভুক্তির জট-শিক্ষকদের দাবি মিটুক
দেশের প্রায় পাঁচ হাজার বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বিপুলসংখ্যক শিক্ষক ও কর্মচারী এমপিওভুক্তির অপেক্ষায়; কিন্তু শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের হাতে এ বাবদ অর্থ রয়েছে নামমাত্র পরিমাণ। বৃহস্পতিবার সমকালে 'নতুন এমপিওভুক্তির জন্য মাত্র ১৫ কোটি টাকা :অর্থ সংকটে শিক্ষা মন্ত্রণালয়' শিরোনামের প্রতিবেদনে বলা হয়,
সীমিত অর্থের কারণে চলতি ২০১০-১১ অর্থবছরে মাত্র এক হাজার একশ' নতুন স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসাকে এমপিওভুক্ত করা যাবে। প্রত্যেক সংসদ সদস্য তার নির্বাচনী এলাকা থেকে তিনটি করে প্রতিষ্ঠানের নাম সুপারিশ করবেন। এর বাইরে বিশেষ বিবেচনায় তালিকাভুক্ত হবে আরও ২শ' প্রতিষ্ঠান। এর অর্থ হচ্ছে, আরও প্রায় চার হাজার প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীর জন্য অপেক্ষার প্রহর দীর্ঘায়িত হতে থাকবে। তাদের একটি অংশের জন্য মুশকিল আসান হতে পারে যদি প্রধানমন্ত্রী বিশেষ বরাদ্দ প্রদান করেন। কিন্তু তাতেও সর্বোচ্চ অতিরিক্ত চারশ' শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের দুশ্চিন্তার অবসান ঘটতে পারে। নতুন বছরের বাজেটে শিক্ষা খাতে বরাদ্দ বাড়ানোর বিষয়টিকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব প্রদানের জন্য কেবল এ একটি কারণই যথেষ্ট। গত বছর এমপিওভুক্তির জন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের তালিকা চূড়ান্ত করতে গিয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয় শুধু নয়, গোটা মন্ত্রিসভা এবং প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় কী ধরনের বিব্রতকর পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছিল সে অভিজ্ঞতা এত তাড়াতাড়ি সংশ্লিষ্টরা বিস্মৃত হয়নি বলেই ধারণা করি। এর পুনরাবৃত্তি কিন্তু এবারেও ঘটতে পারে। অর্থের টানাটানি থাকলে কিছু প্রতিষ্ঠানকে তুষ্ট করা যাবে, বেশিরভাগ নাখোশ হবে। তবে তালিকা চূড়ান্ত করার কাজে যদি স্বচ্ছতা থাকে তাহলে পরিস্থিতি সামলে নেওয়ার কাজ কিছুটা সহজ হয়। সংসদ সদস্যরা বিষয়টি বিবেচনায় রেখে নাম সুপারিশ করেছেন নিশ্চয়ই। দেশে শিক্ষার প্রসার ঘটছে। প্রাথমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে শিক্ষার্থী ভর্তির ক্ষেত্রে শতভাগ সাফল্যের দাবি করছে সরকার। এ অবস্থায় মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ের প্রতিষ্ঠানগুলোতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সংখ্যা বাড়তে থাকবে এবং তারই সূত্রে বাড়বে শিক্ষক ও কর্মচারী_ এটাই স্বাভাবিক। বেসরকারি স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসা শিক্ষক-কর্মচারীর বেতন সরকারি তহবিল থেকে প্রদানের পদক্ষেপ প্রশংসনীয়, তবে এর পরিমাণ অভাবের সংসারে নুন আনতে পান্তা ফুরানোর মতোই। বর্তমান যে হারে বেতন-ভাতা দেওয়া হয় তাতে বিশ্ববিদ্যালয় উত্তীর্ণ মেধাবী ছাত্রছাত্রীরা শিক্ষকতা পেশায় আকৃষ্ট হয় না। এ অবস্থা পরিবর্তনের জন্য শিক্ষকদের বেতন-ভাতা আরও বাড়ানোর দাবি দীর্ঘদিনের এবং শিক্ষার মান বাড়াতে হলে এর বিকল্পও নেই। সেরা শিক্ষার্থীদের পেতে এখন সরকারি-বেসরকারি অনেক প্রতিষ্ঠানের মধ্যে চলে তীব্র প্রতিযোগিতা। উপযুক্ত বেতন নিশ্চিত করা না গেলে শিক্ষকতায় গড়পড়তা মানের ডিগ্রিধারীদেরই কেবল পাওয়া যাবে। কিন্তু সরকার অর্থাভাবে যখন নূ্যনতম হারের বেতন-ভাতা দিয়েই সব প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের এমপিওভুক্তির আওতায় আনতে পারছে না তখন বর্ধিত বেতনের ইস্যুটি অলীক স্বপ্ন বলেই মনে হয়। বর্তমান সরকার নতুন শিক্ষানীতি প্রণয়ন করে প্রশংসিত হয়েছে। স্কুলের সব শিক্ষার্থীকে বিনামূল্যে বই প্রদানের পদক্ষেপ যুগান্তকারী হিসেবে স্বীকৃত। শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ আন্তরিকতা ও নিষ্ঠার কারণে নন্দিত। তিনি শিক্ষকদের বেতন-ভাতা বাড়ানো এবং টাইম স্কেল প্রদানের মতো জরুরি পদক্ষেপ গ্রহণে উদ্যোগী হবেন, এটা প্রত্যাশিত।
No comments