সরকার নিরাপত্তার গ্যারান্টি দিলে বন্ধ রাখার যুক্তি নেই by সফিউল ইসলাম মহিউদ্দীন

আমরা আশুলিয়া এলাকার গার্মেন্টগুলো বন্ধ করতে বাধ্য হয়েছি। কারণ আমাদের নিরাপত্তার প্রয়োজন। আমাদের ওরা ঘিরে ধরে পেটাবে, তা তো হয় না। সরকার আমাদের নিরাপত্তার গ্যারান্টি দিতে পারলে বন্ধ করে রাখার কোনো যুক্তি নেই। এতে আর্থিক ক্ষতির কথা তো এখন মূল ভাবনা নয়। জানমালের নিরাপত্তাই প্রধান বিষয়।


নিরাপত্তা দেওয়ার দায়িত্ব সরকারের।
শ্রমিকরা কেন এমন উচ্ছৃঙ্খল ও মারমুখী হবে, তা আমাদের বোধগম্য নয়। ২০১০ সালের নভেম্বরে স্মরণকালের সবচেয়ে বেশি বেতন বৃদ্ধি হয়েছে গার্মেন্ট সেক্টরে। এখনই বেতন-ভাতার জন্য শ্রমিকরা মারমুখী হয়ে ওঠার কোনো কারণ দেখছি না আমরা। তার পরও যদি কোনো কথা থাকে, অভাব-অভিযোগ থাকতেই পারে। আর তা বলার জন্য শ্রম আইন-আদালত রয়েছে। শ্রম অধিদপ্তর তো আছেই। সেখানে তারা তাদের নেতাদের পাঠিয়ে অভাব-অভিযোগ পেশ করতে পারে। নিয়মতান্ত্রিকভাবে আমরা আলোচনায় বসে তাদের দাবি বা অভিযোগ যৌক্তিক কি না দেখব। যেকোনো সিদ্ধান্তই হোক, তা হবে শান্তিপূর্ণভাবে। শান্তিপূর্ণ পথ পরিহার করে রাস্তায় যে হারে ভাঙচুর ও কারখানার ক্ষতি সাধন করা হয়, তা উদ্বেগজনক। কারখানা বন্ধ করে সমাধান নয়, আত্মরক্ষার্থে আমরা কারখানা বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয়েছি। এ ছাড়া দ্বিতীয় পথ নেই।
আমরা শ্রমিকদের বলেছি, সব কিছুরই সমাধান আছে, হবে। দুজন মন্ত্রী এসেও আশ্বাস দিলেন। তারা কারো কোনো কথাই শুনছে না। তাই এটা স্পষ্ট যে সাধারণ শ্রমিকের চাওয়া-পাওয়া নিয়ে এ সহিংস কর্মকাণ্ড নয়- এর পেছনে রয়েছে গভীর ষড়যন্ত্র। স্বাধীনতাবিরোধী চক্র ও কিছু এনজিও বিদেশি ও দেশি ষড়যন্ত্রকারীদের হয়ে কাজ করছে। আমরা দেখেছি, কিছুদিন আগে হা-মীম গ্রুপের গার্মেন্টে সহকর্মীর মৃত্যুর মিথ্যা গুজব ছড়িয়ে কী ভয়াবহ ঘটনা ঘটাতে যাচ্ছিল। আর প্রায়ই দেখা যায়, প্রথম সারির শিল্প-প্রতিষ্ঠানগুলোতেই অসন্তোষ আর হামলা চলে। অর্থাৎ ষড়যন্ত্রকারীদের টার্গেট হলো এ দেশের অর্থনীতিকে পঙ্গু করা। তা না হলে ৩০ বছরে তিল তিল করে গড়ে তোলা এই জাতীয় সম্পদের ওপর নজর পড়ত না। গার্মেন্ট শিল্প আজ বাংলাদেশের অর্থনীতিকে সচল রাখছে, সমাজের স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে সহায়তা করছে। বিশ্ববাজারে দেশের মান-সম্মান বৃদ্ধি করছে। এসব কৃতিত্ব, দেশের অগ্রগতি যে মহল সহ্য করতে পারছে না, তারাই এসব দাঙ্গা সৃষ্টি করছে। সরকারের উচিত শক্ত হাতে দোষীদের শনাক্ত করে শাস্তি দেওয়া। তা না হলে দেশের এ সম্পদ বিপন্ন হয়ে পড়বে। ট্রেড ইউনিয়ন করার অধিকার শ্রমিকদের দেওয়া হচ্ছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, কেন নয়, ট্রেড ইউনিয়ন করতে হলে অন্তত ৩০ শতাংশ শ্রমিকের সম্মতি লাগে। ট্রেড ইউনিয়ন বিষয়টিই তারা এখনো বুঝতে পারে না। আমাদের দায়িত্ব তাদের সচেতন করা, শিক্ষিত শ্রমিক যত বেশি সংশ্লিষ্ট হবে, ততই মঙ্গল। ট্রেড ইউনিয়ন করতে আমাদের কোনো আপত্তি নেই।
সরকার আমাদের ওপর অন্যায়ভাবে ট্যাক্সের বোঝা চাপিয়েছে। অথচ আমাদের নিরাপত্তা দিতে সরকার ব্যর্থ হচ্ছে। আমরা সরকারের কাছে শুধু চাই নিরাপত্তা, দোষী-চক্রান্তকারীর শাস্তি, নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ ও অবকাঠামো।

No comments

Powered by Blogger.