পাঠাগার হোক জ্ঞানচর্চার কেন্দ্রবিন্দু by মুফতি এনায়েতুল্লাহ
দেশে সুশিক্ষার রাজত্ব গড়ে উঠলে অবক্ষয় ও বিপথগামিতা থেকে তরুণ-তরুণীরা রক্ষা পাবে। পড়াশোনা ও জ্ঞানচর্চার দিকে ছাত্রসমাজকে ধাবিত করে শিক্ষার প্রসার নিশ্চিত করতে হবে। জ্ঞানচর্চা ও চরিত্র গঠনের পাঠশালা হিসেবে দেশের প্রতিটি অঞ্চলে মসজিদভিত্তিক পাঠাগার গড়ে তুলতে হবে।
নৈতিকতা ও মূল্যবোধে শিক্ষার্থীদের উজ্জীবিত করতে পাঠাগারই হতে পারে উজ্জ্বল বাতিঘর। গ্রামে গ্রামে সমৃদ্ধ পাঠাগার গড়ে তুলে জ্ঞান-বিজ্ঞানচর্চা জোরদার ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে জ্ঞানস্পৃহা জাগাতে হবে। আর এ লক্ষ্যেই আমাদের যাবতীয় কর্মসূচি হওয়া উচিত।
ইসলামিক ফাউন্ডেশনের তথ্যানুসারে, দেশে দুই লাখ ৭০ হাজার মসজিদ আছে। এর মধ্যে ২৪ হাজার মসজিদে পাঠাগার রয়েছে। ইসলামিক ফাউন্ডেশন এসব পরিচালনা করে থাকে, যা বাস্তবতার নিরিখে খুবই কম। এছাড়াও দেশের সামগ্রিক পাঠাগারের হালচাল খুব একটা সুবিধার নয়। ক্রমেই আমাদের পাঠবিমুখতা অজ্ঞতার দিকেই নিয়ে যাচ্ছে। এ অবস্থা থেকে আমাদের বেরিয়ে আসার চেষ্টা করতে হবে।
পৃথিবীতে জ্ঞানচর্চা ও বিকাশের ক্ষেত্রে পাঠাগারের ভূমিকা অপরিসীম। আর এই পাঠাগার প্রতিষ্ঠা করা ইসলামী সভ্যতার অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। মূলত ধর্মীয় নির্দেশনার কারণেই মুসলমানরা পাঠাগার প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে জ্ঞানচর্চায় আগ্রহী হয়ে ওঠে। মুসলমানদের পবিত্র ধর্মগ্রন্থ কোরআন। যার অর্থই হলো 'অধ্যয়ন'। আর কোরআনের প্রথম নাজিলকৃত শব্দ 'ইকরা' অর্থাৎ 'পড়'। অন্যদিকে হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, 'জ্ঞান অর্জন করা প্রত্যেক মুসলমান নর-নারীর ওপর ফরজ।'
জ্ঞানচর্চার প্রতি ইসলামের এই অবস্থানের কারণেই মধ্যযুগে যখন গোটা ইউরোপ অজ্ঞতার অন্ধকারে ডুবে ছিল, তখন মধ্যপ্রাচ্য, স্পেন, উত্তর আফ্রিকা, গ্রানাডা ও কর্ডোভাসহ মুসলিম দুনিয়ার প্রায় সর্বত্র পাঠাগার প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে জ্ঞানচর্চার প্রতিযোগিতা দারুণভাবে লক্ষ্য করা যায়।
অষ্টম শতাব্দীতে বাগদাদের উমাইয়া ও আব্বাসীয় খলিফারা 'দারুল হিকমা' প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে পেল্গটো, এরিস্টটল প্রমুখ বিশ্বখ্যাত মনীষীর গ্রন্থাবলি গ্রিক ভাষা থেকে আরবি এবং পরবর্তী সময়ে লাতিন ভাষায় অনুবাদ করেন। এর মাধ্যমে মুসলমানরা ইউরোপের জ্ঞান-বিজ্ঞানকে সংরক্ষণ করেছে। শুধু গ্রিক ও ইউরোপই নয়, প্রাচীন ভারতবর্ষে ইসলামের আগমনের আগে প্রচলিত শিক্ষা, জ্ঞান-বিজ্ঞান ও দর্শনেরও সংরক্ষণ করেছে মুসলমানরা এই পাঠাগারের মাধ্যমেই।
মুসলমানদের মধ্যে পাঠাগারের আদি প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে যার নাম সবার আগে চলে আসে তিনি হলেন খালিদ। তিনি গ্রিক বিজ্ঞান, বিশেষ করে রসায়ন এবং চিকিৎসা বিদ্যা অধ্যয়নের ব্যাপারে উৎসাহী হয়ে উঠেছিলেন। ইতিহাস থেকে জানা যায়, প্রিন্স খালিদ এসব বিষয়ে গ্রিক বই অনুবাদ করে নিজের গ্রন্থাগার সমৃদ্ধ করার লক্ষ্যে স্টিফেন নামের একজন অনুবাদকও নিয়োগ করেন।
ইসলামী শাসনামলে মুসলিম বিশ্বে তিনটি খ্যাতিমান জ্ঞানচর্চা কেন্দ্রের একটি হলো মিসরের রাজধানী কায়রো। সেখানকার অসংখ্য পাঠাগারের একটি হলো বায়তুল হিকমা। ৯৮৮ সালে ফাতেমি খলিফা আল আজিজ এটি প্রতিষ্ঠা করেন। এই পাঠাগারে এক লাখ ভলিউম বই ছিল। এর মধ্যে অন্তত ছয় লাখ বাঁধাই করা বইসহ দুই হাজার ৪০০ কোরআন শরিফ ছিল। আর ইউরোপে যখন কোনো স্কুল ছিল না তখন স্পেনের মুসলমানরা জ্ঞানচর্চার জন্য যে অগণিত বই ব্যবহার করত তার নামের তালিকাটিই ছিল ৪৪ খণ্ডে বিভক্ত!
ইতিহাস থেকে আরও জানা যায়, হালাকু খান বাগদাদ দখল করে 'দারুল হিকমা'তে আগুন ধরিয়ে দিলে মানব ইতিহাসের সবচেয়ে বড় পাঠাগারটি পুড়ে ছাই হয়ে যায়। সেই ছাই দজলা নদীতে নিক্ষেপ করা হলে দীর্ঘ ছয় মাস দজলা নদীর পানি কালো রঙ ধারণ করে।
এসব তথ্য-প্রমাণের মাধ্যমে একটা জিনিস পরিষ্কার, ধর্মীয় বাধ্যবাধকতার কারণে মুসলমানরা জ্ঞানচর্চার ক্ষেত্রে যে ধারার সূত্রপাত করেছিল তা-ই তাদের দুনিয়ার নেতৃত্বে অধিষ্ঠিত রেখেছিল। কিন্তু তারা যখন জ্ঞানচর্চা ছেড়ে দিয়ে মূর্খতাকে গ্রহণ করেছিল তখন তাদের ওপর নেমে এসেছিল নানা রকম জুলুম, নির্যাতন আর লাঞ্ছনা। সুতরাং পাঠাগার গড়ার ক্ষেত্রে অতীতের মুসলমানরা যে ঐতিহাসিক ভূমিকা পালন করে গেছে, নিজেদের স্বার্থেই তার ধারাবাহিকতা রক্ষা করা আমাদের দায়িত্ব। আমরা একটু কষ্ট করলেই আমাদের আশপাশে বা মসজিদকে কেন্দ্র করে চমৎকার সব পাঠাগার গড়ে তুলতে পারি; পারি জ্ঞানের আলোয় সমাজকে আলোকিত করতে।
জ্ঞান অর্জন না করে নিজেকে জানা যায় না, সৃষ্টিতত্ত্ব বোঝা যায় না, আল্লাহতায়ালাকে চেনা যায় না, ক্ষমতাধর হওয়া যায় না এবং নেতৃত্ব দেওয়া যায় না। খ্রিস্টীয় সপ্তম শতাব্দী থেকে দ্বাদশ শতাব্দী পর্যন্ত জ্ঞান-বিজ্ঞানের প্রতিটি শাখায় মুসলমানরা ছিল সর্বেসর্বা। কোরআনের পাশাপাশি তারা জ্ঞান-বিজ্ঞানবিষয়ক সব ধরনের বই পড়েছে, গবেষণা করেছে। তারা আল্লাহতায়ালার সৃষ্ট প্রকৃতির নির্দেশনাবলির ওপর গবেষণার মাধ্যমে সত্য উপলব্ধি করেছে। আত্মশুদ্ধি ঘটিয়েছে। যাবতীয় জ্ঞান-বিজ্ঞানের বই পড়েছে এবং বুদ্ধি ও প্রজ্ঞার শিক্ষা গ্রহণ করেছে।
যখন খ্রিস্টীয় সমাজে বৈজ্ঞানিক উন্নয়নের ওপর নিষেধাজ্ঞা চলছিল, তখন ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে বহু গবেষণা ও আবিষ্কার সাধিত হয়। কর্ডোভার রাজকীয় পাঠাগারে ৪ লাখ বই ছিল। ইবনে রুশদ তখন সেখানে গ্রিক, ভারতীয় ও পারস্য দেশীয় বিজ্ঞানে পাঠদান করতেন। যার কারণে সারা ইউরোপ থেকে পণ্ডিতরা কর্ডোভায় পড়তে যেতেন।
আজ মুসলমানরা এই ঐতিহ্যকে ভুলতে বসেছে। মুসলমানদের সেই সোনালি অতীত ফিরিয়ে আনতে প্রয়োজন জ্ঞানচর্চার কেন্দ্রবিন্দু পাঠাগার প্রতিষ্ঠায় মনোনিবেশ করা।
muftianaet@gmail.com
ইসলামিক ফাউন্ডেশনের তথ্যানুসারে, দেশে দুই লাখ ৭০ হাজার মসজিদ আছে। এর মধ্যে ২৪ হাজার মসজিদে পাঠাগার রয়েছে। ইসলামিক ফাউন্ডেশন এসব পরিচালনা করে থাকে, যা বাস্তবতার নিরিখে খুবই কম। এছাড়াও দেশের সামগ্রিক পাঠাগারের হালচাল খুব একটা সুবিধার নয়। ক্রমেই আমাদের পাঠবিমুখতা অজ্ঞতার দিকেই নিয়ে যাচ্ছে। এ অবস্থা থেকে আমাদের বেরিয়ে আসার চেষ্টা করতে হবে।
পৃথিবীতে জ্ঞানচর্চা ও বিকাশের ক্ষেত্রে পাঠাগারের ভূমিকা অপরিসীম। আর এই পাঠাগার প্রতিষ্ঠা করা ইসলামী সভ্যতার অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। মূলত ধর্মীয় নির্দেশনার কারণেই মুসলমানরা পাঠাগার প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে জ্ঞানচর্চায় আগ্রহী হয়ে ওঠে। মুসলমানদের পবিত্র ধর্মগ্রন্থ কোরআন। যার অর্থই হলো 'অধ্যয়ন'। আর কোরআনের প্রথম নাজিলকৃত শব্দ 'ইকরা' অর্থাৎ 'পড়'। অন্যদিকে হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, 'জ্ঞান অর্জন করা প্রত্যেক মুসলমান নর-নারীর ওপর ফরজ।'
জ্ঞানচর্চার প্রতি ইসলামের এই অবস্থানের কারণেই মধ্যযুগে যখন গোটা ইউরোপ অজ্ঞতার অন্ধকারে ডুবে ছিল, তখন মধ্যপ্রাচ্য, স্পেন, উত্তর আফ্রিকা, গ্রানাডা ও কর্ডোভাসহ মুসলিম দুনিয়ার প্রায় সর্বত্র পাঠাগার প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে জ্ঞানচর্চার প্রতিযোগিতা দারুণভাবে লক্ষ্য করা যায়।
অষ্টম শতাব্দীতে বাগদাদের উমাইয়া ও আব্বাসীয় খলিফারা 'দারুল হিকমা' প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে পেল্গটো, এরিস্টটল প্রমুখ বিশ্বখ্যাত মনীষীর গ্রন্থাবলি গ্রিক ভাষা থেকে আরবি এবং পরবর্তী সময়ে লাতিন ভাষায় অনুবাদ করেন। এর মাধ্যমে মুসলমানরা ইউরোপের জ্ঞান-বিজ্ঞানকে সংরক্ষণ করেছে। শুধু গ্রিক ও ইউরোপই নয়, প্রাচীন ভারতবর্ষে ইসলামের আগমনের আগে প্রচলিত শিক্ষা, জ্ঞান-বিজ্ঞান ও দর্শনেরও সংরক্ষণ করেছে মুসলমানরা এই পাঠাগারের মাধ্যমেই।
মুসলমানদের মধ্যে পাঠাগারের আদি প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে যার নাম সবার আগে চলে আসে তিনি হলেন খালিদ। তিনি গ্রিক বিজ্ঞান, বিশেষ করে রসায়ন এবং চিকিৎসা বিদ্যা অধ্যয়নের ব্যাপারে উৎসাহী হয়ে উঠেছিলেন। ইতিহাস থেকে জানা যায়, প্রিন্স খালিদ এসব বিষয়ে গ্রিক বই অনুবাদ করে নিজের গ্রন্থাগার সমৃদ্ধ করার লক্ষ্যে স্টিফেন নামের একজন অনুবাদকও নিয়োগ করেন।
ইসলামী শাসনামলে মুসলিম বিশ্বে তিনটি খ্যাতিমান জ্ঞানচর্চা কেন্দ্রের একটি হলো মিসরের রাজধানী কায়রো। সেখানকার অসংখ্য পাঠাগারের একটি হলো বায়তুল হিকমা। ৯৮৮ সালে ফাতেমি খলিফা আল আজিজ এটি প্রতিষ্ঠা করেন। এই পাঠাগারে এক লাখ ভলিউম বই ছিল। এর মধ্যে অন্তত ছয় লাখ বাঁধাই করা বইসহ দুই হাজার ৪০০ কোরআন শরিফ ছিল। আর ইউরোপে যখন কোনো স্কুল ছিল না তখন স্পেনের মুসলমানরা জ্ঞানচর্চার জন্য যে অগণিত বই ব্যবহার করত তার নামের তালিকাটিই ছিল ৪৪ খণ্ডে বিভক্ত!
ইতিহাস থেকে আরও জানা যায়, হালাকু খান বাগদাদ দখল করে 'দারুল হিকমা'তে আগুন ধরিয়ে দিলে মানব ইতিহাসের সবচেয়ে বড় পাঠাগারটি পুড়ে ছাই হয়ে যায়। সেই ছাই দজলা নদীতে নিক্ষেপ করা হলে দীর্ঘ ছয় মাস দজলা নদীর পানি কালো রঙ ধারণ করে।
এসব তথ্য-প্রমাণের মাধ্যমে একটা জিনিস পরিষ্কার, ধর্মীয় বাধ্যবাধকতার কারণে মুসলমানরা জ্ঞানচর্চার ক্ষেত্রে যে ধারার সূত্রপাত করেছিল তা-ই তাদের দুনিয়ার নেতৃত্বে অধিষ্ঠিত রেখেছিল। কিন্তু তারা যখন জ্ঞানচর্চা ছেড়ে দিয়ে মূর্খতাকে গ্রহণ করেছিল তখন তাদের ওপর নেমে এসেছিল নানা রকম জুলুম, নির্যাতন আর লাঞ্ছনা। সুতরাং পাঠাগার গড়ার ক্ষেত্রে অতীতের মুসলমানরা যে ঐতিহাসিক ভূমিকা পালন করে গেছে, নিজেদের স্বার্থেই তার ধারাবাহিকতা রক্ষা করা আমাদের দায়িত্ব। আমরা একটু কষ্ট করলেই আমাদের আশপাশে বা মসজিদকে কেন্দ্র করে চমৎকার সব পাঠাগার গড়ে তুলতে পারি; পারি জ্ঞানের আলোয় সমাজকে আলোকিত করতে।
জ্ঞান অর্জন না করে নিজেকে জানা যায় না, সৃষ্টিতত্ত্ব বোঝা যায় না, আল্লাহতায়ালাকে চেনা যায় না, ক্ষমতাধর হওয়া যায় না এবং নেতৃত্ব দেওয়া যায় না। খ্রিস্টীয় সপ্তম শতাব্দী থেকে দ্বাদশ শতাব্দী পর্যন্ত জ্ঞান-বিজ্ঞানের প্রতিটি শাখায় মুসলমানরা ছিল সর্বেসর্বা। কোরআনের পাশাপাশি তারা জ্ঞান-বিজ্ঞানবিষয়ক সব ধরনের বই পড়েছে, গবেষণা করেছে। তারা আল্লাহতায়ালার সৃষ্ট প্রকৃতির নির্দেশনাবলির ওপর গবেষণার মাধ্যমে সত্য উপলব্ধি করেছে। আত্মশুদ্ধি ঘটিয়েছে। যাবতীয় জ্ঞান-বিজ্ঞানের বই পড়েছে এবং বুদ্ধি ও প্রজ্ঞার শিক্ষা গ্রহণ করেছে।
যখন খ্রিস্টীয় সমাজে বৈজ্ঞানিক উন্নয়নের ওপর নিষেধাজ্ঞা চলছিল, তখন ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে বহু গবেষণা ও আবিষ্কার সাধিত হয়। কর্ডোভার রাজকীয় পাঠাগারে ৪ লাখ বই ছিল। ইবনে রুশদ তখন সেখানে গ্রিক, ভারতীয় ও পারস্য দেশীয় বিজ্ঞানে পাঠদান করতেন। যার কারণে সারা ইউরোপ থেকে পণ্ডিতরা কর্ডোভায় পড়তে যেতেন।
আজ মুসলমানরা এই ঐতিহ্যকে ভুলতে বসেছে। মুসলমানদের সেই সোনালি অতীত ফিরিয়ে আনতে প্রয়োজন জ্ঞানচর্চার কেন্দ্রবিন্দু পাঠাগার প্রতিষ্ঠায় মনোনিবেশ করা।
muftianaet@gmail.com
No comments