আড়িয়াল বিলে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা
প্রস্তাবিত বিমানবন্দর নির্মাণের বিরোধিতার নামে মুন্সীগঞ্জের শ্রীনগরে যা ঘটে গেল, তা নিতান্তই অনাকাঙ্ক্ষিত ও চরম দুঃখজনক ঘটনা ছাড়া আর কিছুই নয়। এতে এক পুলিশ কর্মকর্তা নিহত এবং ম্যাজিস্ট্রেট, সাংবাদিক ও পুলিশসহ শতাধিক ব্যক্তি আহত হয়েছেন। আরো দুই পুলিশ কর্মকর্তার অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানা গেছে।
প্রতিবাদ ও আন্দোলন করার অধিকার সবারই আছে। কিন্তু বিনা উস্কানিতে পুলিশ ফাঁড়িতে আগুন ধরিয়ে দেওয়া কি আন্দোলন? দা-কুড়াল ও অন্যান্য ধারালো অস্ত্র নিয়ে পুলিশের ওপর হামলা করা কি আন্দোলন? এর পরও পুলিশ সেখানে আন্দোলনকারীদের ওপর কোনো গুলি চালায়নি। তারা নিজেদের জীবন দিয়েও এ রকম পরিস্থিতিতে যে ধৈর্যের পরিচয় দিয়েছে, তার কোনো তুলনা নেই। তারা একই সঙ্গে দেশবাসীর প্রশংসা ও সমবেদনার দাবিদার। বাস্তবতার বিবেচনায় প্রায় এক দশক ধরেই একটি নতুন বিমানবন্দর নির্মাণের পরিকল্পনা চলছে। এর আগে ভালুকা ও ত্রিশাল এলাকায় বিমানবন্দর নির্মাণের প্রস্তাব করা হয়েছিল। বর্তমান সরকারও নতুন বিমানবন্দর নির্মাণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সম্ভাব্য জায়গা হিসেবে আড়িয়াল বিলের কথা ভাবা হচ্ছে। যত দূর জানা যায়, পদ্মার ওপারে জায়গা নির্ধারণের বিষয়টিও বিবেচনাধীন রয়েছে। এ ব্যাপারে এখনো কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি। একটি বিমানবন্দর নির্মাণের আগে সম্ভাব্যতা জরিপ, মৃত্তিকা পরীক্ষা, অর্থনৈতিক ও প্রতিবেশগত সমীক্ষাসহ নানা ধরনের প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে হয়। এলাকাবাসীকে মটিভেট করতে হয়। তার কিছুই সেখানে করা হয়নি। অথচ এরই মধ্যে সেখানে রক্তক্ষয়ী সংঘাত ঘটে গেছে। কেন? বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশিত তথ্য থেকে জানা যায়, একটি মহল বিশেষ উদ্দেশ্যে মিথ্যা ও ভুল তথ্য দিয়ে এলাকার লোকজনকে উত্তেজিত করছে। কোনো কোনো পত্রিকায়ও এ ব্যাপারে বিভ্রান্তিমূলক তথ্য ছড়ানো হচ্ছে। এর ফলে গত সোমবার সেখানকার পরিস্থিতি যে অবস্থায় চলে গিয়েছিল, তাতে পুলিশের হয়তো গুলি করা ছাড়া কোনো বিকল্প ছিল না। তার পরও তারা তা করেনি। তারা অসীম ধৈর্যের পরিচয় দিয়েছে। কিন্তু গুলি হলে কি হতো? একটি রাজনৈতিক জোট একে একটি জাতীয় ইস্যু বানিয়ে মাঠ গরম করত। তারা জেনেশুনেই আড়িয়াল বিল এলাকার মানুষকে বিভ্রান্ত করা এবং দাবার ঘুঁটি বানানোর চেষ্টা করছে। প্রাথমিকভাবে সে কাজে তারা কিছুটা সফলও হয়েছে। আর সেই সফলতার পেছনে দু-একজন মন্ত্রী ও আমলার অদূরদর্শী বক্তব্যও আগুনে ঘি ঢেলেছে।
বিমানবন্দরের মতো অবকাঠামো নির্মাণ করতে গেলে কিছু মানুষকে সেখান থেকে উচ্ছেদ করতেই হবে। সেটা ত্রিশালেই হোক, আড়িয়াল বিলেই হোক, ভাঙ্গা, রাজৈর বা মানিকগঞ্জ কিংবা অন্য যেখানেই হোক। কিন্তু দেশের প্রয়োজনে বিমানবন্দর নির্মাণ যদি জরুরি হয়, শুধু কিছু মানুষ বাড়িঘর থেকে উচ্ছেদ হবে_এ কারণে বাধা দেওয়াটা কাম্য নয়। তাদের প্রয়োজনীয় পুনর্বাসন ও ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা করেই সবকিছু করতে হবে। অন্যদিকে রাজনৈতিক কারণে মানুষকে উস্কে দিয়ে পুলিশ ফাঁড়িতে আগুন লাগিয়ে দেওয়া একটি ঘৃণিত অপচেষ্টা মাত্র। আমরা মনে করি, আড়িয়াল বিল এলাকার মানুষের ধৈর্য ধরা উচিত। পাশাপাশি সরকারেরও উচিত প্রস্তাবিত বিমানবন্দরের জায়গা নির্ধারণসহ অন্যান্য ব্যাপারে স্পষ্ট বক্তব্য দিয়ে ধোঁয়াশা কাটানো। যে এলাকায়ই বিমানবন্দর হোক না কেন, গণতান্ত্রিক সরকারের উচিত হবে, সে এলাকার মানুষকে বুঝিয়ে তাদের সম্মতি অনুযায়ীই তা করা।
বিমানবন্দরের মতো অবকাঠামো নির্মাণ করতে গেলে কিছু মানুষকে সেখান থেকে উচ্ছেদ করতেই হবে। সেটা ত্রিশালেই হোক, আড়িয়াল বিলেই হোক, ভাঙ্গা, রাজৈর বা মানিকগঞ্জ কিংবা অন্য যেখানেই হোক। কিন্তু দেশের প্রয়োজনে বিমানবন্দর নির্মাণ যদি জরুরি হয়, শুধু কিছু মানুষ বাড়িঘর থেকে উচ্ছেদ হবে_এ কারণে বাধা দেওয়াটা কাম্য নয়। তাদের প্রয়োজনীয় পুনর্বাসন ও ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা করেই সবকিছু করতে হবে। অন্যদিকে রাজনৈতিক কারণে মানুষকে উস্কে দিয়ে পুলিশ ফাঁড়িতে আগুন লাগিয়ে দেওয়া একটি ঘৃণিত অপচেষ্টা মাত্র। আমরা মনে করি, আড়িয়াল বিল এলাকার মানুষের ধৈর্য ধরা উচিত। পাশাপাশি সরকারেরও উচিত প্রস্তাবিত বিমানবন্দরের জায়গা নির্ধারণসহ অন্যান্য ব্যাপারে স্পষ্ট বক্তব্য দিয়ে ধোঁয়াশা কাটানো। যে এলাকায়ই বিমানবন্দর হোক না কেন, গণতান্ত্রিক সরকারের উচিত হবে, সে এলাকার মানুষকে বুঝিয়ে তাদের সম্মতি অনুযায়ীই তা করা।
No comments