শিশুদের পাঠ্যসূচির ভার কমানো হোক by করুণাময় গোস্বামী
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এরই মধ্যে শিক্ষা মন্ত্রণালয় আয়োজিত একাধিক অনুষ্ঠানে বলেছেন, শিশুদের পাঠ্যসূচির ভার কমানো উচিত। তিনি এ ব্যাপারে শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দিয়েছেন বলে জাতীয় দৈনিক পত্রিকায় খবর প্রকাশিত হয়েছে।
শিক্ষা মন্ত্রণালয় যদি এ ব্যাপারে সত্যি সত্যি উদ্যোগী হয়, তাহলে শিশু শিক্ষার্থীদের জন্য সেটি আনন্দদায়ক ঘটনা হয়ে দাঁড়াবে। এখানে শিশু শিক্ষার্থী বলতে আমরা কাদের বোঝাব, তা বলা শক্ত। কেননা শিশুদের বয়সসীমা জাতিসংঘের ধারণা অনুযায়ী আমাদের দেশেও যে জায়গায় নিয়ে শেষ করা হয়েছে, তাতে তারা এসএসসি পাস করে বেরিয়ে যাবে বা এইচএসসিতে পড়বে। বর্তমান আলোচনায় এতটা ওপরে না গিয়ে অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত পাঠ্যসূচির ভার কমানোর ওপর গুরুত্ব দিয়ে কয়েকটি কথা বলতে চাই। পাঠ্যসূচির ভার কমানোর ব্যাপারটা এ জন্যই বেশি করে প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠছে যে টেঙ্টবুক বোর্ড প্রথম শ্রেণী থেকে অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত যে পাঠ্যসূচি নির্ধারণ করেছে, স্কুলগুলো প্রকৃত প্রস্তাবে এর বাইরেও কিছু বই পাঠ্য করে থাকে। বোর্ডের পাঠ্যসূচির ভার যখন বাইরের বইয়ের ভারের সঙ্গে যুক্ত হয়, তখন সেটা বেশি ভারী হয়ে ওঠে। কেননা বোর্ডের বইয়ের ভারই যথেষ্ট ওজনদার। এই ভারের দুটি দিক। একটি ভার হচ্ছে বইগুলো সত্যি সত্যি বাচ্চাদের পক্ষে বেশ বড়। এ হচ্ছে মাপের ভার। আরেকটি ভার হচ্ছে নিরানন্দের ভার। আমাদের পাঠ্যসূচি যেমনই হোক, এর উপস্থাপনা মোটেই আনন্দদায়ক নয়।
শিশুরা এসব বই পড়ে এমনটা ভাবতে পারে না যে আমি বই পড়ে সত্যি সত্যি কোনো মজা পাচ্ছি। ধরুন, একটি বাচ্চা একটি আম চিবোচ্ছে। কিন্তু কোনো রস পাচ্ছে না, কেবল চিবিয়েই যাচ্ছে, চিবোতে চিবোতে একপর্যায়ে গিয়ে সে সেটাকে ছুড়ে ফেলে দিতে কার্পণ্য করবে না। কিন্তু সামনে পরীক্ষা। জিপিএ-তে পিছিয়ে পড়লে তো চলবে না। রস থাক বা না থাক, এ আম তাকে চিবোতেই হবে। আমরা এই বিদ্যা গলাধঃকরণের সমস্যায় পড়েছি। না পারছি রাখতে, না পারছি ফেলতে। বইপত্র নিয়ে এমন একটা পরিস্থিতি সৃষ্টি হোক তা আমরা কখনো চাইতে পারি না। এ ব্যাপারে আগেও অনেক কথা বলা হয়েছে। তবে সেসব কোনো তাৎপর্যপূর্ণ কাজে আসেনি। এবার প্রধানমন্ত্রী নিজেই যখন এ ব্যাপারে একাধিকবার শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সতর্ক দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন, তখন আমরা বিশ্বাস করতে পারি, মন্ত্রণালয় নিশ্চয় এ ব্যাপারে সতর্ক দৃষ্টি দেবে।
এখন সতর্ক দৃষ্টি বলতে আমরা কী বোঝাতে চাইব সে ব্যাপারটি পরিষ্কার করে বলা দরকার। প্রথম কথা হচ্ছে, পাঠ্যপুস্তক অত্যন্ত সুলিখিত হওয়া দরকার। শিশুদের জন্য পাঠ্যপুস্তক নির্ধারণের সময় এ ব্যাপারটি বিবেচনায় রাখতেই হবে যে তাদের কী পড়া প্রয়োজন এবং কতটুকু পড়া প্রয়োজন। যেটুকু প্রয়োজন বলে স্থির করা হলো, সে বিষয়টুকুকে অত্যন্ত আকর্ষণীয়ভাবে পাঠ্যপুস্তকে উপস্থাপিত করা দরকার। এখন সমস্যা হচ্ছে, পাঠ্যপুস্তক বোর্ড একটা পাঠ্যসূচি তৈরি করেছে এবং নিশ্চয় এই সূচি তৈরি করতে গিয়ে জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ের নানা গবেষণার সাহায্য এখানে নেওয়া হয়েছে। এর পরও দেখা যাচ্ছে যে পাঠ্যসূচিটিকে আরো ভারমুক্ত ও আনন্দদায়ক করা যায়। ভারমুক্ত বলতে পাঠ্যবিষয় আরেকটু কমানো এবং আনন্দদায়ক বলতে উপস্থাপনার চিত্তাকর্ষক অবস্থাকে বোঝানো যাচ্ছে। আমাদের দেখতে হবে, কোন পর্যায়ের শিশুর মৌলিক বিষয় জানার পরিধি কতটুকু হবে। সেই মৌলিক বিষয়ের নির্ধারিত সীমা অনুযায়ীই তাদের পাঠ্যপুস্তক রচিত হবে। একবার যদি বিষয়টি ঠিক করে ওঠা যায়, তাহলে পরবর্তী কাজে সহজে হাত দেওয়া যেতে পারে। এর সঙ্গে একটি জিনিসকে অত্যন্ত গুরুত্ব দেওয়ার আহ্বান জানাব। সেটি হচ্ছে প্রান্তিক যোগ্যতা। আমাদের পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের বিবেচনায় এ বিষয়টি যে আছে, তা আমরা জানি। কিন্তু পাঠ্যপুস্তক যাঁরা লিখছেন তাঁদের লেখালেখি দেখে মনে হয়, প্রান্তিক যোগ্যতার প্রশ্নটি যথাযথ গুরুত্ব পায়নি। যেমন_আমরা যদি মনে করি, প্রথম শ্রেণীর শিশুটি 'ক'-সংখ্যক প্রান্তিক যোগ্যতা অর্জন করে দ্বিতীয় শ্রেণীতে উঠবে, তাহলে একেবারেই সুচিন্তিতভাবে স্থির করতে হবে 'ক' প্রান্তিক যোগ্যতা বলতে আমরা কী বোঝাচ্ছি। এখন যেহেতু পঞ্চম শ্রেণীর জন্য জাতীয় পরীক্ষা নেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে, আমরা বলতে পারি যে পঞ্চম শ্রেণীর প্রান্তিক যোগ্যতা অর্জনের ব্যাপারটি অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে নিতে হবে।
এ ক্ষেত্রে কোন কোন বিষয়ে প্রান্তিক যোগ্যতা কেমন সে বিষয় তো থাকছেই। কিন্তু পাঠ্যসূচি প্রণয়ন, পুস্তক রচনা ও স্কুলে পঠন-পাঠনের ব্যাপারটা এমনভাবে নিশ্চিত করতে হবে যেন পঞ্চম শ্রেণীর ছাত্র তার পাবলিক পরীক্ষায় যখন পাস করবে, তখন সে যেন সঠিক প্রান্তিক যোগ্যতা অর্জন করে। তেমনিভাবে অষ্টম শ্রেণীর ছাত্র যখন পাবলিক পরীক্ষায় পাস করবে, তখন সে যেন তার উপযোগী প্রান্তিক যোগ্যতা অর্জন করে। আজকাল যা দেখা যাচ্ছে, তাতে এসএসসি পরীক্ষায় যারা উচ্চ জিপিএ পেয়ে আসছে, তাদেরও প্রান্তিক যোগ্যতা তাদের ফলাফলের সঙ্গে মোটেই সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। আমি জানি, এই প্রান্তিক যোগ্যতা নিশ্চিত করার ব্যাপারটি খুব কঠিন। এর সঙ্গে একটি বিরাট কর্মকাণ্ডের সম্পর্ক রয়েছে। কিন্তু জাতীয় শিক্ষানীতি যেহেতু গৃহীত হয়েছে, এ ব্যাপারে পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য বিশাল বাজেট এবং বহুমুখী কর্মপদ্ধতি গৃহীত হতে যাচ্ছে, তখন এই প্রান্তিক যোগ্যতা অর্জনের ব্যাপারটি যেন অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা হয়।
এর জন্য একটা তুলনামূলক মূল্যায়নের প্রয়োজন। যেমন_বাংলাদেশে একজন অষ্টম শ্রেণী পাস ছাত্রের প্রান্তিক যোগ্যতার সঙ্গে ভারত, বার্মা, থাইল্যান্ড বা ইন্দোনেশিয়ার অষ্টম শ্রেণী পাস ছাত্রের প্রান্তিক যোগ্যতার স্বরূপটি কী। ক্রমে ক্রমে এ ব্যাপারটিকে ইউরোপ বা উত্তর আমেরিকার প্রান্তিক যোগ্যতা নিরূপণব্যবস্থার সঙ্গে তুলনীয় করা যেতে পারে। তবে সর্বাগ্রে গৃহীত হোক প্রান্তিক যোগ্যতা নিরূপণের ব্যাপার নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ পরিকল্পনা এবং সে অনুযায়ী চিত্তাকর্ষক গ্রন্থ রচনা। শিশুদের যেটুকু শেখানো দরকার, সেটুকু শেখানোই ভালো। তার সঙ্গে একটু জায়গা থাকা দরকার, যেখানে আনন্দের আলো প্রবেশ করতে পারে। আমরা একেবারে সব দরজা-জানালা বন্ধ করে দিচ্ছি। শিশুরা সেই আলোহীন একটা ছোট্ট এলাকায় হাবুডুবু খাচ্ছে। একটা ভয়ংকর অর্থহীন প্রতিযোগিতার মধ্যে টেনে নিয়ে এদের একেবারে সেই রস-কসহীন আম খাওয়ার মতো একটা কিছু খাওয়া-খাওয়ির মধ্যে ঢুকিয়ে দিয়ে মা-বাবা অধীর আগ্রহে বারান্দায় বা মাঠে; মাঠ না থাকলে পথে দাঁড়িয়ে বসে অপেক্ষা করছেন। এর পরিণাম কী সে ব্যাপারে পরে লিখতে চাই। তবে আপাতত এটুকু বলে শেষ করি যে আমাদের দেশের শিশুদের লেখাপড়ার ব্যাপারটি যেন আরো একটু সুচিন্তা এবং আনন্দবুদ্ধির সঙ্গে বিবেচনা করা হয়।
লেখক : শিক্ষাবিদ ও গবেষক
শিশুরা এসব বই পড়ে এমনটা ভাবতে পারে না যে আমি বই পড়ে সত্যি সত্যি কোনো মজা পাচ্ছি। ধরুন, একটি বাচ্চা একটি আম চিবোচ্ছে। কিন্তু কোনো রস পাচ্ছে না, কেবল চিবিয়েই যাচ্ছে, চিবোতে চিবোতে একপর্যায়ে গিয়ে সে সেটাকে ছুড়ে ফেলে দিতে কার্পণ্য করবে না। কিন্তু সামনে পরীক্ষা। জিপিএ-তে পিছিয়ে পড়লে তো চলবে না। রস থাক বা না থাক, এ আম তাকে চিবোতেই হবে। আমরা এই বিদ্যা গলাধঃকরণের সমস্যায় পড়েছি। না পারছি রাখতে, না পারছি ফেলতে। বইপত্র নিয়ে এমন একটা পরিস্থিতি সৃষ্টি হোক তা আমরা কখনো চাইতে পারি না। এ ব্যাপারে আগেও অনেক কথা বলা হয়েছে। তবে সেসব কোনো তাৎপর্যপূর্ণ কাজে আসেনি। এবার প্রধানমন্ত্রী নিজেই যখন এ ব্যাপারে একাধিকবার শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সতর্ক দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন, তখন আমরা বিশ্বাস করতে পারি, মন্ত্রণালয় নিশ্চয় এ ব্যাপারে সতর্ক দৃষ্টি দেবে।
এখন সতর্ক দৃষ্টি বলতে আমরা কী বোঝাতে চাইব সে ব্যাপারটি পরিষ্কার করে বলা দরকার। প্রথম কথা হচ্ছে, পাঠ্যপুস্তক অত্যন্ত সুলিখিত হওয়া দরকার। শিশুদের জন্য পাঠ্যপুস্তক নির্ধারণের সময় এ ব্যাপারটি বিবেচনায় রাখতেই হবে যে তাদের কী পড়া প্রয়োজন এবং কতটুকু পড়া প্রয়োজন। যেটুকু প্রয়োজন বলে স্থির করা হলো, সে বিষয়টুকুকে অত্যন্ত আকর্ষণীয়ভাবে পাঠ্যপুস্তকে উপস্থাপিত করা দরকার। এখন সমস্যা হচ্ছে, পাঠ্যপুস্তক বোর্ড একটা পাঠ্যসূচি তৈরি করেছে এবং নিশ্চয় এই সূচি তৈরি করতে গিয়ে জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ের নানা গবেষণার সাহায্য এখানে নেওয়া হয়েছে। এর পরও দেখা যাচ্ছে যে পাঠ্যসূচিটিকে আরো ভারমুক্ত ও আনন্দদায়ক করা যায়। ভারমুক্ত বলতে পাঠ্যবিষয় আরেকটু কমানো এবং আনন্দদায়ক বলতে উপস্থাপনার চিত্তাকর্ষক অবস্থাকে বোঝানো যাচ্ছে। আমাদের দেখতে হবে, কোন পর্যায়ের শিশুর মৌলিক বিষয় জানার পরিধি কতটুকু হবে। সেই মৌলিক বিষয়ের নির্ধারিত সীমা অনুযায়ীই তাদের পাঠ্যপুস্তক রচিত হবে। একবার যদি বিষয়টি ঠিক করে ওঠা যায়, তাহলে পরবর্তী কাজে সহজে হাত দেওয়া যেতে পারে। এর সঙ্গে একটি জিনিসকে অত্যন্ত গুরুত্ব দেওয়ার আহ্বান জানাব। সেটি হচ্ছে প্রান্তিক যোগ্যতা। আমাদের পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের বিবেচনায় এ বিষয়টি যে আছে, তা আমরা জানি। কিন্তু পাঠ্যপুস্তক যাঁরা লিখছেন তাঁদের লেখালেখি দেখে মনে হয়, প্রান্তিক যোগ্যতার প্রশ্নটি যথাযথ গুরুত্ব পায়নি। যেমন_আমরা যদি মনে করি, প্রথম শ্রেণীর শিশুটি 'ক'-সংখ্যক প্রান্তিক যোগ্যতা অর্জন করে দ্বিতীয় শ্রেণীতে উঠবে, তাহলে একেবারেই সুচিন্তিতভাবে স্থির করতে হবে 'ক' প্রান্তিক যোগ্যতা বলতে আমরা কী বোঝাচ্ছি। এখন যেহেতু পঞ্চম শ্রেণীর জন্য জাতীয় পরীক্ষা নেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে, আমরা বলতে পারি যে পঞ্চম শ্রেণীর প্রান্তিক যোগ্যতা অর্জনের ব্যাপারটি অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে নিতে হবে।
এ ক্ষেত্রে কোন কোন বিষয়ে প্রান্তিক যোগ্যতা কেমন সে বিষয় তো থাকছেই। কিন্তু পাঠ্যসূচি প্রণয়ন, পুস্তক রচনা ও স্কুলে পঠন-পাঠনের ব্যাপারটা এমনভাবে নিশ্চিত করতে হবে যেন পঞ্চম শ্রেণীর ছাত্র তার পাবলিক পরীক্ষায় যখন পাস করবে, তখন সে যেন সঠিক প্রান্তিক যোগ্যতা অর্জন করে। তেমনিভাবে অষ্টম শ্রেণীর ছাত্র যখন পাবলিক পরীক্ষায় পাস করবে, তখন সে যেন তার উপযোগী প্রান্তিক যোগ্যতা অর্জন করে। আজকাল যা দেখা যাচ্ছে, তাতে এসএসসি পরীক্ষায় যারা উচ্চ জিপিএ পেয়ে আসছে, তাদেরও প্রান্তিক যোগ্যতা তাদের ফলাফলের সঙ্গে মোটেই সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। আমি জানি, এই প্রান্তিক যোগ্যতা নিশ্চিত করার ব্যাপারটি খুব কঠিন। এর সঙ্গে একটি বিরাট কর্মকাণ্ডের সম্পর্ক রয়েছে। কিন্তু জাতীয় শিক্ষানীতি যেহেতু গৃহীত হয়েছে, এ ব্যাপারে পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য বিশাল বাজেট এবং বহুমুখী কর্মপদ্ধতি গৃহীত হতে যাচ্ছে, তখন এই প্রান্তিক যোগ্যতা অর্জনের ব্যাপারটি যেন অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা হয়।
এর জন্য একটা তুলনামূলক মূল্যায়নের প্রয়োজন। যেমন_বাংলাদেশে একজন অষ্টম শ্রেণী পাস ছাত্রের প্রান্তিক যোগ্যতার সঙ্গে ভারত, বার্মা, থাইল্যান্ড বা ইন্দোনেশিয়ার অষ্টম শ্রেণী পাস ছাত্রের প্রান্তিক যোগ্যতার স্বরূপটি কী। ক্রমে ক্রমে এ ব্যাপারটিকে ইউরোপ বা উত্তর আমেরিকার প্রান্তিক যোগ্যতা নিরূপণব্যবস্থার সঙ্গে তুলনীয় করা যেতে পারে। তবে সর্বাগ্রে গৃহীত হোক প্রান্তিক যোগ্যতা নিরূপণের ব্যাপার নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ পরিকল্পনা এবং সে অনুযায়ী চিত্তাকর্ষক গ্রন্থ রচনা। শিশুদের যেটুকু শেখানো দরকার, সেটুকু শেখানোই ভালো। তার সঙ্গে একটু জায়গা থাকা দরকার, যেখানে আনন্দের আলো প্রবেশ করতে পারে। আমরা একেবারে সব দরজা-জানালা বন্ধ করে দিচ্ছি। শিশুরা সেই আলোহীন একটা ছোট্ট এলাকায় হাবুডুবু খাচ্ছে। একটা ভয়ংকর অর্থহীন প্রতিযোগিতার মধ্যে টেনে নিয়ে এদের একেবারে সেই রস-কসহীন আম খাওয়ার মতো একটা কিছু খাওয়া-খাওয়ির মধ্যে ঢুকিয়ে দিয়ে মা-বাবা অধীর আগ্রহে বারান্দায় বা মাঠে; মাঠ না থাকলে পথে দাঁড়িয়ে বসে অপেক্ষা করছেন। এর পরিণাম কী সে ব্যাপারে পরে লিখতে চাই। তবে আপাতত এটুকু বলে শেষ করি যে আমাদের দেশের শিশুদের লেখাপড়ার ব্যাপারটি যেন আরো একটু সুচিন্তা এবং আনন্দবুদ্ধির সঙ্গে বিবেচনা করা হয়।
লেখক : শিক্ষাবিদ ও গবেষক
No comments