চিরস্থায়ী জরুরি অবস্থা? by জামান সরদার
যদিও অপ্রীতিকর, রাষ্ট্র পরিচালনায় জরুরি অবস্থা যেন অনিবার্যই। এমন দেশ খুঁজে পাওয়া কঠিন, যেখানে কোনো না কোনো সময় জরুরি অবস্থা জারি হয়নি। বলাবাহুল্য, বাংলাদেশেও বিভিন্ন সময় এমন বিশেষ পরিস্থিতি ঘোষণা করতে হয়েছে। আবার তুলেও নিতে হয়েছে। স্বেচ্ছায় কিংবা চাপের মুখে।
মজার ব্যাপার হচ্ছে, বিরোধী দলে থাকলে জরুরি অবস্থার বিরুদ্ধে আর ক্ষমতায় থাকলে এর প্রয়োজনীয়তা নিয়ে সোচ্চার দেখা যায় রাজনীতিকদের। ফলে জরুরি অবস্থার অবসান হয় না। এই ব্যবস্থায় নিগৃহীত রাজনীতিকই ক্ষমতায় গিয়ে জরুরি অবস্থা জারি করতে কার্পণ্য করেন না। অনেকটা বিশেষ ক্ষমতা আইনের মতো। সব বিরোধী দলই এর সমালোচনা করেছে এবং ক্ষমতায় গিয়ে পূর্ণ সুবিধা নিয়েছে।
অবশ্য কারও কারও জন্য জরুরি অবস্থা সবসময়ই। তবে রাজনীতির সঙ্গে তাদের সম্পৃক্ততা নেই। জরুরি অবস্থায় সবচেয়ে সুবিধাজনক অবস্থানে থাকা বিশেষ বাহিনীরও অংশ নয় তারা। কিন্তু তারপরও দেশে জরুরি অবস্থা জারি থাকুক বা না থাকুক, তারা নিজেদের পক্ষ থেকে ঘোষণা করেই যাচ্ছে।
অস্বীকার করা যাবে না যে শুরুতে জরুরি অবস্থার মতোই ছিল। হরতালবহুল এই দেশে খাদ্য ও চিকিৎসার বিষয়কে সবসময়ই ছাড় দেওয়া হয়েছে। ফলে হরতালের সুনসান রাজপথে খাদ্য ও রোগী কিংবা ওষুধবাহী যেসব গাড়ি ছুটে চলত, সেখানে লেখা থাকত 'জরুরি ওষুধ সরবরাহ'। পিকেটাররা এগুলোকে ছাড় দিত।
তাদের সাফল্যেই উৎসাহিত হয়ে কি-না; যখন হরতালের রাজনৈতিক লাভের চেয়ে অর্থনৈতিক ক্ষতির বিষয়টি বেশি করে আলোচিত হচ্ছিল, তখন রফতানি পণ্যও হরতাল, সমাবেশ, বিক্ষোভের আওতামুক্ত রাখা হচ্ছিল। কাভার্ড ভ্যানে লেখা থাকে_ জরুরি রফতানি পণ্য। সাধারণত সেগুলো ছাড় পেত। পরে যখন দেখা গেল, অ্যাম্বুলেন্সের ভেতরে রোগী নয়, রাজনীতিক পরিবহন হচ্ছে; জরুরি রফতানি পণ্যের নামে যা চলাচল করে, তার সঙ্গে রফতানি বা আমদানির সুদূরতম সম্পর্কও নেই, তখন থেকে ছাড় মেলা অবশ্য কঠিন হয়ে পড়েছে।
এখন জরুরির দোহাই যেন বাঁধ ভেঙেছে। হরতাল নয়, স্বাভাবিক অবস্থায়ও রাস্তায় নামলে ডানে-বামে দেখতে পাওয়া যায় নানা 'জরুরি' পরিবহন। বিদ্যুতের কাজে নিয়োজিত, ওয়াসার মিটার চেক করতে যাচ্ছে, সিটি করপোরেশনের ময়লা পরিবহন_ সবই জরুরি। বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও অধিদফতরের কর্মচারী আনা-নেওয়ার কাজে ব্যবহৃত পরিবহনগুলোও জরুরি। লেখা থাকে_ পরিবার পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের কর্মচারী পরিবহনের জরুরি কাজে নিয়োজিত। পরিবার পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের কাজ কি দমকল বিভাগের মতো যে জরুরি অবস্থা জারি করে পথে নামতে হবে? সেদিন রাস্তায় দেখলাম আরেক কাণ্ড। ঘাসভরা একটি ভ্যান চলছে, সেখানে ভুল বানানে লেখা_ জরুরি ছাগলের খাদ্য পরিবহন!
অবস্থা যখন এই, তখন পরিস্থিতিও আর জরুরি অবস্থায় চলাফেরা করা পরিবহনগুলোর অনুকূলে নেই। যত জরুরি কাজের কথাই লেখা থাকুক, কেউ আর সেগুলোকে সাইড দেয় না। ফলে এই দৃশ্য আর বিরল নয় যে মরণাপন্ন রোগী নিয়ে অ্যাম্বুলেন্স সাইরেন বাজিয়ে চলছে, আর এর সামনে দাঁড়ানো খোলা ভ্যান এতটুকু ছাড় না দিয়ে খাবনামার মাহাত্ম্য বর্ণনা করে চলছে।
জরুরি অবস্থা সাময়িক ব্যবস্থা মাত্র। সুযোগ সন্ধানীরা সেটাকে রাজপথে চিরস্থায়ী করে তুলেছে। এর ফল ভোগ করতে হচ্ছে সবাইকে।
অবশ্য কারও কারও জন্য জরুরি অবস্থা সবসময়ই। তবে রাজনীতির সঙ্গে তাদের সম্পৃক্ততা নেই। জরুরি অবস্থায় সবচেয়ে সুবিধাজনক অবস্থানে থাকা বিশেষ বাহিনীরও অংশ নয় তারা। কিন্তু তারপরও দেশে জরুরি অবস্থা জারি থাকুক বা না থাকুক, তারা নিজেদের পক্ষ থেকে ঘোষণা করেই যাচ্ছে।
অস্বীকার করা যাবে না যে শুরুতে জরুরি অবস্থার মতোই ছিল। হরতালবহুল এই দেশে খাদ্য ও চিকিৎসার বিষয়কে সবসময়ই ছাড় দেওয়া হয়েছে। ফলে হরতালের সুনসান রাজপথে খাদ্য ও রোগী কিংবা ওষুধবাহী যেসব গাড়ি ছুটে চলত, সেখানে লেখা থাকত 'জরুরি ওষুধ সরবরাহ'। পিকেটাররা এগুলোকে ছাড় দিত।
তাদের সাফল্যেই উৎসাহিত হয়ে কি-না; যখন হরতালের রাজনৈতিক লাভের চেয়ে অর্থনৈতিক ক্ষতির বিষয়টি বেশি করে আলোচিত হচ্ছিল, তখন রফতানি পণ্যও হরতাল, সমাবেশ, বিক্ষোভের আওতামুক্ত রাখা হচ্ছিল। কাভার্ড ভ্যানে লেখা থাকে_ জরুরি রফতানি পণ্য। সাধারণত সেগুলো ছাড় পেত। পরে যখন দেখা গেল, অ্যাম্বুলেন্সের ভেতরে রোগী নয়, রাজনীতিক পরিবহন হচ্ছে; জরুরি রফতানি পণ্যের নামে যা চলাচল করে, তার সঙ্গে রফতানি বা আমদানির সুদূরতম সম্পর্কও নেই, তখন থেকে ছাড় মেলা অবশ্য কঠিন হয়ে পড়েছে।
এখন জরুরির দোহাই যেন বাঁধ ভেঙেছে। হরতাল নয়, স্বাভাবিক অবস্থায়ও রাস্তায় নামলে ডানে-বামে দেখতে পাওয়া যায় নানা 'জরুরি' পরিবহন। বিদ্যুতের কাজে নিয়োজিত, ওয়াসার মিটার চেক করতে যাচ্ছে, সিটি করপোরেশনের ময়লা পরিবহন_ সবই জরুরি। বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও অধিদফতরের কর্মচারী আনা-নেওয়ার কাজে ব্যবহৃত পরিবহনগুলোও জরুরি। লেখা থাকে_ পরিবার পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের কর্মচারী পরিবহনের জরুরি কাজে নিয়োজিত। পরিবার পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের কাজ কি দমকল বিভাগের মতো যে জরুরি অবস্থা জারি করে পথে নামতে হবে? সেদিন রাস্তায় দেখলাম আরেক কাণ্ড। ঘাসভরা একটি ভ্যান চলছে, সেখানে ভুল বানানে লেখা_ জরুরি ছাগলের খাদ্য পরিবহন!
অবস্থা যখন এই, তখন পরিস্থিতিও আর জরুরি অবস্থায় চলাফেরা করা পরিবহনগুলোর অনুকূলে নেই। যত জরুরি কাজের কথাই লেখা থাকুক, কেউ আর সেগুলোকে সাইড দেয় না। ফলে এই দৃশ্য আর বিরল নয় যে মরণাপন্ন রোগী নিয়ে অ্যাম্বুলেন্স সাইরেন বাজিয়ে চলছে, আর এর সামনে দাঁড়ানো খোলা ভ্যান এতটুকু ছাড় না দিয়ে খাবনামার মাহাত্ম্য বর্ণনা করে চলছে।
জরুরি অবস্থা সাময়িক ব্যবস্থা মাত্র। সুযোগ সন্ধানীরা সেটাকে রাজপথে চিরস্থায়ী করে তুলেছে। এর ফল ভোগ করতে হচ্ছে সবাইকে।
No comments