চরাচর-জয়তু ব্লগিং by সাদেক সামি

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম হিসেবে ফেসবুক কিংবা ব্লগিংয়ের নাম শুনলে সবাই বলবেন, এ হচ্ছে তারুণ্যের প্রতীক। আরব বসন্তের জন্ম দিয়ে এই প্রযুক্তির ফসল এখন প্রতিবাদের বাহন হিসেবে নিজের অবস্থান দৃঢ় করেছে। আর আমাদের দেশে? তরুণ-তরুণীর যোগসূত্র হিসেবেই কি রয়ে গেছে এই মাধ্যম? এমন যাঁরা ভাবেন, তাঁদের সামনে তুলে ধরতে চাই বাংলাদেশের একটি উদাহরণ।


গত ১১ মের ঘটনা এটি। সামহোয়ারইনব্লগে একটি পোস্ট চোখে পড়ে। ব্লগার নিজের নাম দিয়েছেন সর্বনাশা। সর্বনাশের কথাই প্রকাশ হয়েছে সেই ব্লগে। ব্লগার 'সর্বনাশা' (ছদ্মনাম) সে রাতে একটি পোস্ট লেখেন, যার শিরোনাম ছিল- 'ঠিক এই মুহূর্তে আমি সামুর লক্ষাধিক ব্লগারের সাহায্য চাইছি, এখনই ...।'
পোস্টের সারমর্ম ছিল- গত ১০ মে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টস বাংলাদেশের (ইউল্যাব) সামনে রাত ১০টার দিকে কয়েকজন তরুণ একজন মহিলার শ্লীলতাহানি করে। এ ঘটনায় সংশ্লিষ্ট ব্লগার প্রতিবাদ করলে ওই তরুণের সঙ্গী-সাথিরা তাঁকে মারধর করে। ব্লগার এর প্রতিরোধ করতে চাইলে ছেলেগুলো নিজেদের ইউল্যাবের ছাত্র বলে পরিচয় দেয়। মেয়েটি সাহায্য চেয়ে এগিয়ে এসে হাউমাউ করে কাঁদতে থাকে। আশপাশে এরই মধ্যে অনেক লোক জমে যায়। কিন্তু প্রতিবাদের উল্টো ইউল্যাবের ছাত্র, পাশের সিগারেটের দোকানদার, ছাত্রদের গাড়িচালক- সবাই ওই ইভ টিজারদের পক্ষে সাফাই গাওয়া শুরু করে। বলার চেষ্টা করে, 'রাস্তাঘাটে এ রকম হতেই পারে, ওরা হয়তো একটা ভুল করেই ফেলেছে, কিন্তু তাই বলে আমার এত বাড়াবাড়ি করা উচিত হচ্ছে না।'
এর পর পরই ঝড় ওঠে বাংলা ব্লগের দুনিয়ায়। একের পর এক মন্তব্য আর নিন্দায় ভরে ওঠে ব্লগের পাতা। সর্বনাশার এই পোস্টটি প্রায় ৫০ হাজার বার পঠিত হয়েছে। আর মন্তব্য এসেছে এক হাজার ৯৫টি। পোস্টটি প্রকাশের পর দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে অন্যান্য সামাজিক যোগাযোগের ওয়েবসাইটেও। ফেসবুকে এ পোস্টটি আট হাজার ৪৯৪ বার শেয়ার হয়েছে। ব্লগাররা দোষী ব্যক্তি এবং বিশ্ববিদ্যালয়টির প্রতি নিন্দা জানাতে থাকে। ব্লগারদের একের পর এক মন্তব্য দেখে সেদিনই সন্ধ্যায় ইউল্যাব কর্তৃপক্ষ সামহোয়ারইনব্লগে বিবৃতি পাঠায়। বিবৃতিটিতে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ কোনো ধরনের তদন্ত এবং সিদ্ধান্তের বাইরে ব্লগে এ ধরনের অপপ্রচারের বিরুদ্ধে তাদের অবস্থান জানায় এবং পুরো বিষয়টির জন্য একটি সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য পদক্ষেপ নেওয়ার আন্তরিক আগ্রহ প্রকাশ করে।
এরপর ১৪ মে বিশ্ববিদ্যালয়টির রেজিস্ট্রার মো. ফয়জুল আলম স্বাক্ষরিত আরেকটি বিবৃতি আসে সামহোয়ারইনব্লগে। যেখানে বলা হয়, ১৩ মে সংশ্লিষ্ট ব্লগারের সঙ্গে দেখা করে ঘটনার বর্ণনা শোনে ইউল্যাব কর্তৃপক্ষ। বিবৃতিটিতে সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে ব্লগারদের মধ্য থেকে দুজনকে তদন্ত কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত করার আহ্বান জানানো হয়। এ ছাড়া ইউল্যাব ক্যাম্পাসে পোস্টারিং করে এ বিষয়ে সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে তদন্ত কমিটির কাছে তথ্য দেওয়ার কথাও জানানো হয়। সামহোয়ারইনব্লগ কর্তৃপক্ষের উপস্থিতিতে আলোচ্য ব্লগটির লেখকের সঙ্গে ইউল্যাব কর্তৃপক্ষ দেখা করে এবং তার চারটি অনুরোধের সব কয়টি রক্ষায় একমত হয়।
বাংলার তরুণদের প্রযুক্তিনির্ভরতা এবং সমাজসচেতন হওয়ার একটি উদাহরণ মাত্র এটি। সৃষ্টিশীল অনেক কিছুই এখন ফেসবুক ও ব্লগিং থেকে পাওয়া যায়। সামাজিক অবক্ষয় রোধ এবং সামাজিক কল্যাণেও এর ভূমিকা বিশাল। ভবিষ্যতে এই ধারা আরো উন্নত হবে। জয়তু ব্লগিং, জয়তু ফেসবুক।
সাদেক সামি

No comments

Powered by Blogger.