মুক্তিযোদ্ধা হায়দার আলী by মোঃ মিজানুল ইসলাম মিজু
আজ একাত্তরের বীর মুক্তিযোদ্ধা হায়দার আলীর দ্বিতীয় মৃত্যুবার্ষিকী। হায়দার আলীকে নিয়ে লেখার মেধা, জ্ঞান, প্রজ্ঞা ও ধৃষ্টতা কোনোটাই সৃষ্টিকর্তা আমাকে দেননি। এরপরও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে অসুস্থ থাকা অবস্থায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের সর্বোচ্চ ডিগ্রিধারী বীর মুক্তিযোদ্ধা হায়দার আলীর বেঁচে থাকার আকুতি এবং আর্তনাদ আজও ভোলা সম্ভব হয়নি।
মুক্তিযোদ্ধা হায়দার আলীর মতো সৎ মানুষের রাজনীতিতে খুবই প্রয়োজন ছিল। এখন রাজনীতিতে ত্যাগী নেতাদের মূল্যায়ন হয় না দুর্বৃত্তায়ন পরিলক্ষিত হচ্ছে, খাঁটি রাজনীতিবিদরা উপেক্ষিত হচ্ছেন এবং রাজনীতি চলে গেছে ব্যবসায়ীদের পকেটে।
মুক্তিযোদ্ধা হায়দার আলীর ছিল অদম্য সাহস ও মনোবল। ছোটবেলা থেকেই তিনি ছিলেন দেশ, মাটি ও মানুষের জন্য নিবেদিতপ্রাণ। ছাত্রজীবন থেকেই আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। এ দেশের নিপীড়িত মানুষের মুক্তির পথ বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের মাধ্যমে সফল হবে বলে মনে করতেন তিনি। এ দেশের স্বাধীনতার বীর মুক্তিযোদ্ধার সর্বোত্তম চিকিৎসা না পাওয়া_ এটা কারও কাম্য ছিল না। হায়দার আলী মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তার প্রিয় সংগঠন নিয়ে যতটুকু নিবেদিত ছিলেন, আজ তার দ্বিতীয় মৃত্যুবার্ষিকীর আগে তার প্রিয় সংগঠন তার জন্য একটা শোকসভা বা একটা মিলাদ মাহফিল করেছে বলে আমার জানা নেই।
হায়দার আলী যখন একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের কথা, মোটা ভাত, মোটা কাপড়ের কথা, বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা গড়ার স্বপ্নের কথা ঘণ্টার পর ঘণ্টা তার বক্তৃতায় বলতেন, তখন এ দেশের সরলপ্রাণ মানুষগুলো তার মুখের দিকে অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকত। আমি ছাত্ররাজনীতিতে যাদের হাত ধরে এসেছি তাদের মধ্যে হায়দার আলীই অন্যতম। সেই শ্রদ্ধা ও দায়িত্ববোধ থেকে শুধু হায়দার আলীকেই মনে পড়ে।
আজকে যারা হঠাৎ করে আওয়ামী রাজনীতিতে এসেছেন, তাদের কাছে জীবদ্দশায় হায়দার আলী, শামছু মোল্লার কোনো কদর ছিল না। হায়দার আলীদের জন্ম হয়েছিল এ দেশের শোষিত মানুষের জন্য লড়াই-সংগ্রাম করে হাসতে হাসতে নীরবে জীবন দিয়ে চলে যাওয়ার জন্য। হায়দার আলী ও শামছু মোল্লারা এ কাজটাই করে গেছেন। কোনো লোভ, মোহ_ কোনো কিছুই তাদের স্পর্শ করতে পারেনি জীবনে। সংসার জীবনে হায়দার আলীর সচ্ছলতা কোনো দিনও ছিল না। এর পরও তার মুখে হাসি সবসময় লেগেই থাকত। এত কিছুর পরও আদর্শের সঙ্গে কখনোই তিনি আপস করেননি। সারাজীবন আদর্শ রাজনীতি ও সাহিত্যচর্চা করে গেছেন।
আমরা স্বার্থপরের মতো বেঁচে আছি। বীর যোদ্ধা হায়দার আলীর পাশে যেভাবে আমাদের দাঁড়ানো উচিত ছিল, আমরা সেটা করতে পারিনি। এই লজ্জা ও অপরাধবোধ থেকে আমি নিজেকেও বাদ রাখতে পারিনি। এখন একটি প্রার্থনা, আসুন স্বাধীনতাকামী মানুষগুলো একত্রিত হয়ে হায়দার আলীর সোনার বাংলা গড়ার স্বপ্নকে বাস্তবায়িত করি।
No comments