'খাজনার চেয়ে বাজনা বেশি'
ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা শেষ হলো। ঢাকার আগারগাঁওয়ে যে স্থানে দীর্ঘদিন থেকেই মেলা হয়ে আসছিল, এখানে আর বাণিজ্য মেলা হবে না বলে জানিয়েছেন বাণিজ্যমন্ত্রীসহ মেলার কর্তারা। বাণিজ্য মেলার মাঠ হিসেবে পরিচিত জায়গাটিতে শুরু হতে যাচ্ছে নতুন সচিবালয় নির্মাণের কাজ।
এবারের মেলাটি ছিল ষোড়শ আয়োজন। নামে ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা হলেও মেলা যে ১৬ বছরেও আন্তর্জাতিক রূপ নিতে পারেনি, সেটা মেলার টার্ন ওভার থেকেই সম্যক উপলব্ধি করা যায়। এবারের মেলায় তাৎক্ষণিক রপ্তানি আদেশ পাওয়া গেছে মাত্র ২৫ কোটি টাকার। অথচ এই মেলা আয়োজনে খরচ হয় ১৫ কোটি টাকা। মেলা আয়োজনের খরচ আর এই রপ্তানি আদেশের অঙ্ক দেখে 'খাজনার চেয়ে বাজনা বেশি'_এটা মনে হওয়াটাই স্বাভাবিক। বাস্তবিক অর্থেও হয়েছে তা-ই। ১৬ বছরেও একটি মেলার আন্তর্জাতিক রূপ নিতে না পারাটা ব্যর্থতা। কেন ১৬ বছরেও সত্যিকারের আন্তর্জাতিক মেলা হতে পারল না? এর কারণ খুঁজতে গেলে একটি সত্য বোধহয় সবার সামনে এসে পড়ে। মেলায় উৎপাদকদের চেয়ে পরিবেশকদের উপস্থিতিটাই বোধহয় বেশি করে নজর কাড়ে। মেলায় বাংলাদেশসহ ১৪টি দেশের ৫৩১টি প্রতিষ্ঠান অংশ নিয়েছে। ৫০ লাখের বেশি দর্শক সমাগম হয়েছে। কিন্তু যে লক্ষ্যে একটি আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলার আয়োজন, সেই লক্ষ্য কি পূরণ করতে পেরেছে এই বাণিজ্য মেলা। গত ১৬ বছরে কি সেই লক্ষ্য পূরণ হয়েছে? মেলার নীতিনির্ধারকরাও বোধহয় বিষয়টি উপলব্ধি করতে পেরেছেন। সে কারণে একটি নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তাঁরা। ভবিষ্যতে কেবল রপ্তানির জন্য উৎপাদিত দেশীয় পণ্য ও স্থানীয় বাজারে বিক্রির জন্য উৎপাদিত পণ্যকে অগ্রাধিকার দেওয়ার কথা চিন্তা করা হচ্ছে। স্থানীয় পরিবেশকদের কাছ থেকে কিনে বিদেশি পণ্য প্রদর্শনের সুযোগ ভবিষ্যতে থাকবে না বলেও জানা গেছে। তেমনটি করা গেলে সেটা মেলার জন্য কল্যাণ বয়ে আনবে। আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলায় দর্শক হিসেবে যাঁরা যান, তাঁদের অনেকেই এই মেলার জন্য অপেক্ষায় থাকেন। অনেকেই কেবল গৃহস্থালী কাজে ব্যবহারের জন্য জিনিসপত্র কিনতে বাণিজ্য মেলায় যান। কিন্তু আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলার লক্ষ্য ভিন্ন। বাংলাদেশের পণ্য বিদেশের বাজারে পরিচিত করানো এ মেলার অন্যতম লক্ষ্য হওয়া উচিত। সেদিক থেকে এ মেলা কতটা সফল, ১৬ বছরের সাফল্য কী, সেটা আয়োজকরাই ভালো করে বলতে পারবেন। একইসঙ্গে মেলাকে সফল করতে হলে দেশের মধ্যেও কিছু শর্ত পূরণ করতে হবে। দেশীয় শিল্প স্থাপনে উৎসাহ দিতে হবে। দেশে যে শিল্প আছে, সেগুলো রক্ষায় কার্যকর ভূমিকা নিতে হবে। দেশীয় শিল্প বিকাশের পথে যে বাধা আছে, সেগুলো দূর করতে হবে, বাড়াতে হবে উৎপাদন। দেশের পণ্যের সঙ্গে বিদেশি ক্রেতাদের পরিচয় করিয়ে দিতে হবে। তা না হলে প্রতিবছর বাণিজ্য মেলা আয়োজন গতানুগতিক আনুষ্ঠানিকতা হয়েই থাকবে। সে ক্ষেত্রে সব সময় 'খাজনার চেয়ে বাজনা বেশি' হবে।
No comments