নিয়ন্ত্রক সংস্থার নির্দেশনা বীমা খাতকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে

বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স অ্যাসোসিয়েশন (বিআইএ) মনে করে, বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষের (আইডিআরএ) সাম্প্রতিক কিছু নির্দেশনা এ খাতের ব্যবসা-বাণিজ্য ক্ষতিগ্রস্ত করছে। আইডিআরএর এসব নির্দেশনা ও কিছু অতি উৎসাহী কার্যক্রম দেশের বীমা খাতের ব্যবস্থাপনায় সৃষ্টি করছে বিশৃঙ্খলা। এর ফলে আমদানি-রফতানিসহ অন্যান্য ব্যবসা-বাণিজ্যে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে।। এ জন্য এসব নির্দেশনা স্থগিত করে বীমা ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে সিদ্ধান্ত নেওয়ার দাবি জানিয়েছে বিআইএ।


গতকাল সোমবার ঢাকা ক্লাবে বিআইএ আয়োজিত এক প্রেস ব্রিফিংয়ে নেতৃবৃন্দ এসব কথা বলেন। ব্রিফিংয়ে বক্তব্য রাখেন ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি এ. কে. আজাদ এবং বিআইএর চেয়ারম্যান শেখ কবির হোসেন। প্রেস ব্রিফিংয়ের আগে বিআইএ নেতৃবৃন্দ আইডিআরএর সম্প্রতি জারি করা বিভিন্ন সার্কুলার ও বীমা খাতের কর্মকাণ্ড নিয়ে জরুরি বৈঠক করেন। জানা গেছে, বৈঠকে আইডিআরএর জারি করা বীমা কোম্পানির পরিচালকরা অন্য আর্থিক প্রতিষ্ঠানে পরিচালক থাকতে পারবেন না, বীমা কোম্পানির পরিচালকের নিজের বা পরিবারের অন্য কোম্পানির বীমা নিজ বীমা কোম্পানি করতে পারবে না এবং লেনদেনের তথ্য জানতে চাওয়া সংক্রান্ত সার্কুলার, ট্যারিফ রেট নির্ধারণ ও ট্যারিফ রেট অমান্য করার কারণে জরিমানা বিষয়ক কার্যক্রম নিয়ে আলোচনা হয়। এসব সার্কুলারের কার্যক্রম স্থগিত করার জন্য বিআইএ এফবিসিসিআইয়ের নেতৃত্বে অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করবে। প্রয়োজন হলে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গেও তারা বৈঠক করবে। বৈঠকে অংশগ্রহণকারীরা বলেন, আইডিআরএর বেপরোয়া কার্যক্রমের ফলে দেশের অনেক বীমা কোম্পানির কার্যক্রম বন্ধের উপক্রম হয়েছে।
এফবিসিসিআই সভাপতি এ. কে. আজাদ বলেন, আইডিআরএ এরই মধ্যে বেশ কিছু সার্কুলার জারি করেছে যা ব্যবসাবান্ধব নয়, এমনকি বাস্তবসম্মতও নয়। বিশ্বব্যাপী মন্দা চলছে, দেশে বিদ্যুৎ-গ্যাসের অভাবে অনেক প্রতিষ্ঠান ঠিকমতো উৎপাদন করতে পারছে না_ এরকম সময় বীমা খাতের খরচ বেড়ে যায় বা বীমার কারণে ব্যবসা-বাণিজ্যে খরচ বেড়ে যায় এ ধরনের উদ্যোগ কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। আইডিআরএ বীমা ব্যবসায়ী বা উদ্যোক্তাদের সঙ্গে আলোচনা না করেই এককভাবে এসব সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তিনি বলেন, বীমা একটি গুরুত্বপূর্ণ খাত; কিন্তু এ খাতটির নিয়ন্ত্রক সংস্থার দায়িত্ব এমন এক ব্যক্তিকে দেওয়া হয়েছে যার অভিজ্ঞতা ও দক্ষতাসহ অন্যান্য বিষয়ে প্রশ্ন আছে। এরকম একজন ব্যক্তিকে দিয়ে আইডিআরএ চলবে কি-না তা ভেবে দেখা দরকার। আইডিআরএ এরই মধ্যে বেশকিছু জরিমানা করেছে। এ থেকে বীমা খাতের গ্রাহক ও ব্যবসায়ীদের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। এ অবস্থায় বীমা শিল্প টিকিয়ে রাখতে আইডিআরএর জারি করা সার্কুলারগুলো আপাতত স্থগিত করার কোনো বিকল্প নেই। বিআইএ চেয়ারম্যান শেখ কবির হোসেন বলেন, আইডিআরএ যেসব সার্কুলার জারি করেছে তা আমাদের মনঃপূত হয়নি। এসব সার্কুলারের কারণে দেশের বীমা খাত ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। ব্যবসা-বাণিজ্যসহ সামগ্রিক অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। এসব সার্কুলার স্থগিত করার দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, এ ধরনের নীতি-নির্ধারণী সিদ্ধান্ত নিতে হলে আইডিআরএকে অবশ্যই বিআইএর সঙ্গে আলোচনা করতে হবে। তিনি বলেন, বর্তমান সরকার ক্ষমতায় এসে দেশের বীমা শিল্পকে এগিয়ে নিতে নতুন আইন পাস করেছে; কিন্তু আইডিআরএ এই আইনের অপব্যবহার করছে।
জরুরি বৈঠকে বিআইএর উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য এম ময়িদুল ইসলাম, আবদুল আউয়াল মিন্টু, ইউসুফ আবদুল্লাহ হারুন, তপন চৌধুরী, মোজাফফর হোসেন পল্টু, নিজাম উদ্দিন আহমেদ, হাসান আহমেদ, আবদুল বাসেত মজুমদার, আলহাজ মকবুল হোসেন, এফবিসিসিআই সভাপতি এ. কে. আজাদ, এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি মীর নাসির হোসেন, আনিসুল হক, বিজিএমইএ সভাপতি শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন, বিটিএমএ সভাপতি জাহাঙ্গীর আলামীন, ডিসিসিআই সভাপতি আসিফ ইব্রাহিম, ডিএসই সভাপতি শাকিল রিজভী, বিজিএমইএ সহ-সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান, বিকেএমইএ সহ-সভাপতি এএইচ আসলাম সানি, বিএবির ভাইস চেয়ারম্যান আবু নাসের মোহাম্মাদ আবদুজ জাহের প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

No comments

Powered by Blogger.