দেশবাসীকে শান্ত থাকার আহ্বান প্রধানমন্ত্রী শরাফের : মিসরে খ্রিস্টানদের সঙ্গে নিরাপত্তা বাহিনীর সংঘর্ষে নিহত ২৪

মিসরের নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে বিক্ষুব্ধ কপটিক খ্রিস্টানদের সংঘর্ষে অন্তত ২৪ জন নিহত এবং দু’শতাধিক আহত হয়েছেন। আহতদের মধ্যে ১০৭ জন সাধারণ নাগরিক ও ৮৬ জন নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্য। রোববার বিকালে কায়রোর রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন ভবনের সামনে বিক্ষোভ করার সময় নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে এই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। বিক্ষুব্ধ খ্রিস্টানরা ক্ষমতাসীন সামরিক পরিষদের বিরুদ্ধে স্লোগান দেন এবং দেশটির দক্ষিণাঞ্চলে ক্ষতিগ্রস্ত একটি গির্জা সংস্কারের দাবি জানান। বিক্ষোভকারীরা বলেছেন, তারা শান্তিপূর্ণভাবে তাদের কর্মসূচি পালন করছিলেন; কিন্তু নিরাপত্তা বাহিনী অতর্কিতে তাদের ওপর হামলা চালায়।


এ সময় পুলিশ তাদের ওপর তাজা গুলি ব্যবহার করে। তবে পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, বিক্ষোভকারীরা অস্ত্র বহন করছিল এবং তাদের গুলিতে নিরাপত্তা বাহিনীর তিন সদস্য নিহত হয়েছেন। এছাড়া নিরাপত্তা বাহিনীর দুটি গাড়ি পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে। এরপর প্রশাসন কায়রোর কোনো কোনো এলাকায় কারফিউ জারি করে। রাজধানী কায়রোর কোনো কোনো অংশে কারফিউ বলবত্ থাকবে বলে সরকারি টেলিভিশন থেকে বলা হয়েছে। মিসরের প্রধানমন্ত্রী এসাম শরাফ রোববারের ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করে বলেছেন, যা ঘটেছে তা সাম্প্রদায়িক সংঘর্ষের কোনো ঘটনা নয়। তিনি একে সাম্প্রদায়িক সংঘাত উস্কে দেয়ার চেষ্টা বলে মন্তব্য করেছেন। তিনি জনগণকে যে কোনো ধরনের সাম্প্রদায়িক উস্কানির বিষয়ে সতর্ক থাকার আহ্বান জানান। তিনি দেশবাসীকে শান্ত থাকার আহ্বান জানিয়েছেন। এদিকে মিসরের তথ্যমন্ত্রী উসামা হাইকাল বলেছেন, রোববারের ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করা হবে।
প্রধানমন্ত্রী এসাম শরাফ বলেন, ‘মিসরের খ্রিস্টান এবং মুসলিমদের মধ্যে সংঘর্ষ মানে দেশের নিরাপত্তাকে হুমকির মধ্যে ফেলা।’ ঘটনা নিয়ন্ত্রণে জরুরিভিত্তিতে মন্ত্রিসভার সভা আহ্বান করা হয়েছে। কায়রোয় অবস্থানরত একজন আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমকর্মী জানান, ‘জাতীয় ঐক্যের জন্য মিসরের মন্ত্রী এবং সেনাবাহিনীর ওপর চাপ অব্যাহত রয়েছে।’ কায়রোয় জারি করা সান্ধ্যকালীন কারফিউ আপাতত শিথিল করা হয়েছে। ইতোমধ্যেই প্রধানমন্ত্রী ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। পরিদর্শনকালে প্রতিবাদকারীরা দেশ থেকে সেনাবাহিনী শাসকদের প্রত্যাহার দাবি করেন। রোববার প্রধানমন্ত্রী টেলিভিশন বার্তায় আরও বলেন, ‘জাতীয় ঐক্য এবং নিরাপত্তা ব্যবস্থার জন্য সবচেয়ে বড় হুমকি এ ঘটনা। প্রেসিডেন্ট হোসনি মোবারকের আমলে এমন ঘটনা ঘটেছিল। সে সময় এমন ঘটনার জের ধরেই সেনাবাহিনী এবং জনসাধারণের মধ্যে সম্পর্ক নষ্ট হয়ে যায়।’ সে সময় টেলিভিশনে প্রচারিত সংবাদে দেখা যায়, প্রতিবাদরত বিক্ষুব্ধ জনতা সেনাবাহিনীর বেশ কয়েকটি গাড়ি পুড়িয়ে দিয়েছে। একই সঙ্গে কপটিক হাসপাতালের সামনে অনেক আহতকে পড়ে থাকতে দেখা গেছে। মিসরের মোট জনসংখ্যার মাত্র ১০ শতাংশ হলো কপটিকরা। দীর্ঘদিন ধরেই তারা দাবি করে আসছে, সেনাবাহিনী এবং সরকার খ্রিস্টান নিধনে তাদের ওপর নিপীড়ন চালিয়ে যাচ্ছে।
গত সপ্তাহে আসওয়ান প্রদেশে একটি চার্চে হামলার প্রতিবাদে কায়রোর রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনের কাছে কয়েকদিন ধরে বিক্ষোভ-সমাবেশ করে আসছিল খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের লোকজন। গতকাল বিক্ষোভের একপর্যায়ে নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের সংঘর্ষ বেধে যায়। মিসরের টিভি ফুটেজে দেখা গেছে, রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন ভবনের বাইরে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের তুমুল সংঘর্ষ চলছে এবং বিক্ষোভকারীরা সেনাবাহিনীর বেশ কয়েকটি গাড়িতে আগুন ধরিয়ে দিয়েছে। গত ফেব্রুয়ারিতে সাবেক প্রেসিডেন্ট হোসনি মোবারকের পতনের পর এটাই সবচেয়ে বড় সহিংসতা।
বিক্ষোভকারীরা আসওয়ান প্রদেশের গভর্নরকে অপসারণের দাবি জানিয়েছেন। এছাড়া সামরিক কাউন্সিলের চেয়ারম্যান ফিল্ড মার্শাল মোহাম্মদ তানতাবির পদত্যাগ দাবি করেছেন। বিবিসি অনলাইনের প্রতিবেদনে বলা হয়, সহিংসতা প্রথমে রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন ভবনের বাইরে শুরু হলেও পরে তাহরির স্কয়ারসহ কায়রোর বিভিন্ন অংশে ছড়িয়ে পড়ে। আরও সহিংসতা মোকাবিলায় কায়রোর কিছু অংশে রাতে কারফিউ জারি করা হয়।
বিক্ষোভকারীরা অভিযোগ করেছেন, সাদা পোশাকে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা তাদের ওপর নির্যাতন করছে। মিসরে গত মে মাসে কপটিক চার্চে হামলায় ১২ জন নিহত হয়। এর আগে মার্চে খ্রিস্টান ও মুসলমানদের মধ্যে সংঘর্ষে নিহত হয় ১৩ জন।

No comments

Powered by Blogger.