তিন মাসে সরকারের ব্যাংকঋণ ৮ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেছে by সৈয়দ মিজানুর রহমান

লতি ২০১১-২০১২ অর্থবছরের মাত্র তিন মাসে সরকারের ব্যাংক ঋণের পরিমাণ ৮ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেছে। অতীতে সরকারের ব্যাংক ঋণের আর এমন কোনো রেকর্ড নেই। এছাড়া তফসিলী ব্যাংকগুলোর বাইরেও সরকার বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে বিপুল অঙ্কের টাকা ঋণ হিসেবে নিয়ে নিচ্ছে। ২৬ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সরকার কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকেই ঋণ নিয়েছে প্রায় ৫ হাজার কোটি টাকা।বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্যে দেখা গেছে, গত ২৬ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সময়ে সরকার ব্যাংকিং খাত থেকে ঋণ নিয়েছে ৮ হাজার ১৮২ কোটি টাকা। এর মধ্যে সরকারি-বেসরকারি তফসিলী ব্যাংকগুলো থেকে সরকারের ঋণের পরিমাণ হচ্ছে ৩ হাজার ৩৬৪ কোটি টাকা।


এর বাইরে বাংলাদেশ ব্যাংক সরকারকে ঋণ দিয়েছে ৪ হাজার ৮১৭ কোটি টাকা।
সরকার পরিচালনার ব্যয় মেটাতে ব্যাংকিং খাতের উপর এত বেশি নির্ভরশীল হওয়ার ঘটনা অতীতে আর কোনো নজির নেই বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। এছাড়া ব্যাংকিং খাত থেকে বেপরোয়া ঋণ গ্রহণ সরকারের অর্থ ব্যবস্থা ব্যাংক ঋণ নির্ভর হওয়ার সুস্পষ্ট ইঙ্গিত বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদ ও বিশেষজ্ঞরা। সরকারের চাহিদা মেটাতে গিয়ে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলো এর মধ্যে বেসরকারি খাতে শিল্প বিনিয়োগে বড় আকারের ঋণ দেয়া পুরোপুরি বন্ধ করে দিয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক সরকারের বাড়তি চাহিদা পূরণে ছাপছে নতুন টাকা। যার প্রায় পুরোটাই নিয়ে নিচ্ছে সরকার।
এ বছর অভ্যন্তরীণ ঋণের যে পরিকল্পনা সরকারের আছে তা বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের শেষ অর্থবছরের তুলনায় নেয়া প্রকৃত ঋণের তুলনায় ১১ হাজার ৩৮৮ কোটি টাকা বেশি। চলতি বছর ব্যাংকিং খাত থেকে সরকার দীর্ঘমেয়াদি ঋণ (নিট) নিতে যাচ্ছে ১৭ হাজার ৮৭৮ কোটি টাকার। এর আগে বিগত চারদলীয় জোট সরকারের শেষ অর্থ বছরের অভ্যন্তরীণ ঋণের পরিমাণ ছিল ৯ হাজার ৩৮৯ কোটি টাকা। সে বছর ব্যাংকিং খাত থেকে সরকারি ঋণের পরিমাণ ছিল মাত্র ৩ হাজার ১৭১ কোটি টাকা।
চলতি অর্থবছরের প্রথম মাসেই (জুলাই) মাসে সরকার ব্যাংক থেকে দেড় হাজার কোটি টাকা ঋণ নেয়। অথচ গত অর্থবছর এ সময়ে সরকার ব্যাংক থেকে ঋণ গ্রহণের পরিবর্তে ঋণ পরিশোধ করেছিল। বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ তথ্য মতে, চলতি ২০১১-১২ অর্থবছর ব্যাংক থেকে সরকারের ঋণ গ্রহণ লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ১৮ হাজার কোটি টাকা। এরই পরিপ্রেক্ষিতে সরকার জুলাইয়ে ব্যাংক থেকে ১ হাজার ৫৮৯ কোটি ৪৯ লাখ টাকা ঋণ গ্রহণ করেছে। এর মধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে নিয়েছে ৯৫৮ কোটি টাকা এবং অন্যান্য ব্যাংক থেকে নিয়েছে ৬৩০ কোটি ৫৮ লাখ টাকা।
অর্থনীতিবিদরা মনে করছেন, সরকারের অর্থ ব্যবস্থা ব্যাংক নির্ভর হয়ে পড়লে বেসরকারি খাতের বিনিয়োগের সক্ষমতা কমে যায়, এর ফলে ব্যাংকগুলো সুদের হার আরও বাড়িয়ে দিতে পারে।

No comments

Powered by Blogger.