তালিকাভুক্তির অপেক্ষায় থাকা ৪৮ কোম্পানির হিসাব তদন্তের দাবি

বুক বিল্ডিং পদ্ধতিতে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্তির প্রক্রিয়ায় ও অপেক্ষায় থাকা ৪৮টি প্রতিষ্ঠানের হিসাব বিবরণী তদন্তের দাবি তুলেছেন ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) নেতারা।
নেতারা বলেছেন, এসব কোম্পানির অনেকগুলোরই নিরীক্ষিত হিসাব বিবরণীতে বড় দুর্বলতা রয়েছে। তাঁদের মতে, অনেক ক্ষেত্রে এরা নিজেদের হিসাবে ভোজবাজি বা প্রতারণা (অ্যাকাউন্ট জাগলারি) করেছে। যদি এমন কোনো ঘটনা ঘটে থাকে, তাহলে এসব কোম্পানির তালিকাভুক্তি ও হিসাব বিবরণী তৈরির সঙ্গে যুক্ত সবাইকে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির আওতায় আনতে হবে। তা না হলে বিনিয়োগকারীদের আত্মবিশ্বাস কমে যাবে।
গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে রাজধানীর শেরাটন হোটেলে শেয়ারবাজার-পরিস্থিতি নিয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে ডিএসইর নেতারা এসব দাবি জানান। এতে সংস্থাটির সভাপতি শাকিল রিজভী ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন সহসভাপতি নাসিরউদ্দিন চৌধুরী, পরিচালক ফিরোজ খান, লাইনুন নাহার একরাম ও মাসুদুল হক।
ডিএসইর নেতারা বলেন, বুক বিল্ডিং পদ্ধতির সুযোগ নিয়ে অনেক কোম্পানির শেয়ারই অতিমূল্যায়িত হয়ে বাজারে আসছে। ভবিষ্যতে এ ধরনের কোম্পানিকে বাজারে ঢুকতে দেওয়া হবে না। তালিকাভুক্তির ক্ষেত্রে কোম্পানির গুণগত মানের ব্যাপারে কোনো ধরনের আপস করা যাবে না।
ডিএসইর নেতারা বলেন, ১৯৯৬ সালে শেয়ারবাজারের মহাকেলেঙ্কারির ঘটনায় কিছু ব্রোকারেজ হাউসকে অভিযুক্ত করে হয়েছে। কিন্তু সে সময় যারা নামসর্বস্ব কোম্পানি বাজারে নিয়ে এসেছিল, তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। এমনটি আর হতে দেওয়া যায় না।
নেতারা আরও বলেন, যারা কোম্পানিকে বেশি দাম পাইয়ে দিতে হিসাব প্রতারণা করছে, তাদের এবার শাস্তির আওতায় আনা উচিত।
এ প্রসঙ্গে শাকিল রিজভী বলেন, ‘শেয়ারবাজারে দামের ওঠানামা হবে। এটি স্বাভাবিক নিয়ম। এতে সরকারের কোনো ধরনের সংশ্লিষ্টতা নেই। কিন্তু সরকারের যে বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে, তা হলো, কোথাও কোনো আইনের ব্যত্যয় যাতে না ঘটে। এটি যদি নিশ্চিত করা যায় আর কোম্পানির হিসাব বিবরণীতে কোনো ঘাপলা না থাকলে আমাদের শেয়ারবাজার হবে এশিয়ার সেরা।
বুক বিল্ডিং পদ্ধতি প্রসঙ্গে ডিএসইর সভাপতি বলেন, ‘এ পদ্ধতি সারা বিশ্বে সমাদৃত। কিন্তু আমাদের দেশে এটি নতুন। তাই দাম নির্ধারণে কিছু কিছু ক্ষেত্রে সমস্যা হচ্ছে। এই পদ্ধতি স্থগিত বা বাতিল হোক, এটা আমরা চাই না। তবে পদ্ধতির যেখানে ত্রুটি রয়েছে, সেগুলো সংশোধন করতে হবে।’
ডিএসইর সভাপতি আরও বলেন, শেয়ারবাজারের টাকায় এখন মুদ্রাবাজারে ব্যবসা করছে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো। গত তিন-চার বছরে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো শেয়ারবাজার থেকে কোটি কোটি টাকা মুনাফা করেছে। সেই টাকা এখন আইনি প্রতিবন্ধকতার কারণে আর শেয়ারবাজারে আসতে পারছে না।
শাকিল রিজভী বলেন, ‘আমরা চাই না ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর আমানতের টাকা ফের শেয়ারবাজারে আসুক। কিন্তু গত কয়েক বছরে তারা যে মুনাফা করেছে, সেটা শেয়ারবাজারে ফিরিয়ে দেওয়া হোক। শেয়ারবাজারের মুনাফার টাকায় প্রতিষ্ঠানগুলো এখন চড়া সুদে মুদ্রাবাজারে ব্যবসা করছে।’
শাকিল রিজভী দাবি করেন, শেয়ারবাজারের কোনো টাকা লুটপাট হয়নি। এসব টাকার কিছু অংশ ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান এবং কিছু টাকা কয়েকটি কোম্পানির প্রাথমিক গণপ্রস্তাবে (আইপিও) আটকে আছে। সেগুলোকে আবার বাজারে ফিরিয়ে আনতে হবে।
এ জন্য আইপিও আবেদনের সময়সীমা কমানোরও দাবি জানান ডিএসইর সভাপতি। তিনি বলেন, বর্তমানে মবিল যমুনা লুব্রিকেন্টসের আইপিওতে বেশ কিছু টাকা আটকে আছে।
বিনিয়োগকারীদের হতাশ না হওয়ার আহ্বান জানিয়ে ডিএসইর সভাপতি বলেন, ভালো শেয়ারে থাকেন। ভালো বোনাস ও লভ্যাংশ পাবেন। ক্ষতিগ্রস্ত হবেন না।
বিভিন্ন টিভি চ্যানেলে প্রচারিত টক শোও বিনিয়োগকারীদের আত্মবিশ্বাসে চিড় ধরাচ্ছে বলে তিনি অভিযোগ করেন। এ প্রসঙ্গে ডিএসইর সভাপতি একটি বেসরকারি টেলিভিশনের তীব্র সমালোচনা করেন।
শাকিল রিজভী আরও বলেন, টেলিভিশন চ্যানেলটি অসত্য ও বিভ্রান্তিকর তথ্য পরিবেশন করছে। স্টক এক্সচেঞ্জ-বিরোধী ষড়যন্ত্র করছে। কিন্তু স্টক এক্সচেঞ্জ কোনো ব্যক্তিপ্রতিষ্ঠান নয়, এটি ক্ষতিগ্রস্ত হলে দেশ ও অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
সিকিউরিটিজ আইনে এ ধরনের প্রচারণার গুরুতর শাস্তির বিধান আছে উল্লেখ করে শাকিল রিজভী আরও বলেন, বিষয়টি তাঁরা এসইসির নজরে দিয়েছেন।

No comments

Powered by Blogger.