যেন রুপালি পর্দার নায়ক

পাকিস্তানের ক্রিকেট=মিসবাহ-উল হক!
পাকিস্তানের ক্রিকেট মানেই নাকি নাটক। যে নাটকের পরতে পরতে থাকে উত্থান-পতনের রোমাঞ্চ। তা-ই যদি হয়, মিসবাহই এখন এটির সমার্থক নাম। তাঁর ক্যারিয়ারের মতো উত্থান-পতন-উত্থান আর কজনের হয়েছে বলুন! ২০০১ সালে নিউজিল্যান্ড সফরে জাতীয় দলে অভিষেক। পরের ম্যাচেই বাদ। ১০ বছর পর সেই নিউজিল্যান্ডে মিসবাহ পাকিস্তানের টেস্ট সিরিজজয়ী অধিনায়ক! শুরু আর শেষের এই বিপরীতমুখী চরিত্র তাঁর ক্যারিয়ারজুড়েই।
এক বছর পর লাহোরের ওয়ানডে দিয়ে জাতীয় দলে ফিরলেন। মোটামুটি নির্বিঘ্নে খেলে গেলেন ২০০২-এর পুরোটা। কিন্তু ২০০৩ বিশ্বকাপ দলে ঠাঁই হলো না। আবারও বাদ পড়লেন। বিশ্বকাপে ভরাডুবি আবারও ফিরিয়ে আনল তাঁকে দলে। এবারও জায়গাটা পাকা করতে পারলেন না। বাদ পড়ে গেলেন চার বছরের জন্য। মিসবাহ যেন হারিয়েই গেলেন।
ফিরলেন আবার ২০০৭ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে, ৩৩ বছর বয়সে। যে বিশ্বকাপে নিজেকে নতুন করে চেনালেন। একটুর জন্য শিরোপা এনে দিতে না পারলেও জাতীয় দলে জায়গা ধরে রাখলেন লম্বা সময়ের জন্য। কিন্তু ২০১০ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের পর আবারও বাদ। শ্রীলঙ্কা আর ইংল্যান্ড সফরে নেওয়া হলো না তাঁকে।
ইংল্যান্ড সফরে পাকিস্তানের ক্রিকেটে আবারও ওলট-পালট। স্পট ফিক্সিং ঝড়। এবার মিসবাহ ফিরলেন। ফিরলেন টেস্ট দলের অধিনায়ক হয়ে। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে দুবাই-আবুধাবিতে সিরিজ ড্র করার পর নিউজিল্যান্ডে পাকিস্তান জিতল ১-০ ব্যবধানে। চার বছর আর ১০টি সিরিজ পর টেস্ট সিরিজে জয়ের স্বাদ পেল পাকিস্তান। উপমহাদেশের বাইরে যেটি পাকিস্তানের সাত বছর পর জেতা সিরিজ।
আকস্মিকভাবে নেতৃত্ব পাওয়া মিসবাহর ব্যাটিংও যেন বদলে গেছে। অধিনায়ক হওয়ার আগে ৩৩ টেস্ট ইনিংসে তাঁর গড় ছিল ৩৩.৬০, অধিনায়ক হওয়ার পরের সাত ইনিংসে গড় ১১২.৭৫! মারকুটে মিসবাহ নয়, সেখানে অধিনায়কের দায়িত্বশীলতারই ছাপ বেশি।
পাকিস্তান যে এখনো বিশ্বকাপের অধিনায়ক ঠিক করতে পারল না, সেটার ‘দায়’ তাঁর এই দুর্দান্ত পারফরম্যান্সেরই। অন্য সময় হলে শহীদ আফ্রিদি হতেন অবধারিত পছন্দ। কিন্তু বিশ্বকাপের নেতৃত্ব মিসবাহর কাঁধে তুলে দেওয়ার দাবিটা দিনকে দিন জোরালোই হচ্ছে। শেষ পর্যন্ত যদি তা-ই হয়, আর বিশ্বকাপেও মিসবাহ যদি অবিস্মরণীয় কিছু করে ফেলতে পারেন...এর চেয়ে সার্থক সমাপ্তি আর কী হতে পারে নাটকের!

No comments

Powered by Blogger.